![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিন্যান্সে এমবিএ করছি— স্বপ্ন দেখছি। একসময় প্রচুর বই পড়তাম, বইয়ে ডুবে থাকতাম। গল্প নামক হাবিজাবি লিখতাম। তারপর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে বিতর্ক করে বেড়িয়েছি কিছু কাল।
১.
‘তারাতারি ল্যাবে আসো।’, ফলিত তড়িৎ প্রকৌশল গবেষক প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেন তাঁর উচ্ছ্বাসিত কন্ঠের কথাটা ফোনের মাধ্যমে পৌঁছে দিলেন অপর প্রান্তে ফোনে থাকা তাঁর সহকারী আসীফ রাহাতের কানে, ‘গুড নিউজ আছে!’
‘কি গুড নিউজ স্যার?’, আসীফ রাহাত সবেমাত্র ফোনের বিচ্ছিরি রিংটোনের শব্দ শুনে ঘুম থেকে উঠেছে। তাঁর চোখে মুখে ঘুমের রেশ। ঘুম ঘুম জিজ্ঞাসু কন্ঠেই বলল, ‘ডিভাইসটি কি সাকসেসফুলি কাজ করছে?’
‘ব্রিলিয়ান্ট! ঠিক বুঝতে পেরেছো। আমাদের মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসটি প্রতিটি ইনপুটের ঠিক মতো আউটপুট দিতে শুরু করেছে। তুমি তারাতারি ল্যাবে আসো। নিজের চোখে দেখে যাও– এই শতাব্দির অন্যতম সেরা আবিষ্কার!’
‘আসছি স্যার। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আসছি।’, কথাটা বলে ফোনের লাল বাটনে চাপ দিয়ে কল কাটলো আসীফ রাহাত। ঘুমে আচ্ছন্ন শরীরটাকে বিছানা থেকে টেনে তুলল সে। বেড সাইড ডেস্কের উপর রাখা বৈদ্যুতিক ঘড়ির লাল আলো বলে দিচ্ছে– রাত এখন আড়াইটা বাজে।
আসীফ রাহাত তাঁর শরীরের প্রতিটি নিউরনে কোন এক বিশ্বজয়ের অনুরণন টের পাচ্ছে। যদিও ঠিক এই মুহূর্তেই মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসটি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তাঁর, তবুও ল্যাবে যেতে ইচ্ছে করছে না। শরীর চাচ্ছে বিছানায় শুয়ে লম্বা একটা ঘুম দিতে। শরীরের প্রতিটি কোষ মস্তিষ্কের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করতে চাচ্ছে। কিন্তু না, সেটা সম্ভব না। ল্যাবে না গিয়ে উপায় নেই তাঁর। কারণ প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেন খুবই পাগলাটে ধরনের লোক। সিজিওফ্রেনিয়ার রোগী ধরণের একটা ভাব তাঁর মাঝে আছে। আসীফ রাহাত ল্যাবে না যাওয়ার আগ পর্যন্ত একটু পর পর কল দিতেই থাকবেন। সুতরাং এখন ঘুমানোর চেষ্টা না করে ল্যাবে চলে যাওয়াটাই উত্তম। আর এই ডিভাইসের প্রতি আসীফ রাহাতের শ্রমও কম নয়। দিনকে রাত, রাতকে দিন করে এই কাজে নিজের ক্যালোরি খরচ করেছে সে। সুতরাং দিনের শেষে ফলাফল কী দাঁড়িয়েছে তা দেখতে যাওয়া উচিৎ। অবশ্যই দেখতে যাওয়া উচিৎ!
রাস্তায় বের হয়ে ধীর পায়ে হাঁটা শুরু করেছে আসীফ রাহাত। এতো রাতে যে রাস্তায় রিকশা, সিএনজি, ট্যাক্সি জাতীয় কোন কিছুই পাওয়া যাবে না – সেটা বেশ ভালোই জানে সে। তাই হাঁটাই হচ্ছে একমাত্র ভরসা।
হাঁটতে হাঁটতে আসীফ রাহাতের মাথায় ঘুরছে প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের সেই বহুল প্রতীক্ষিত মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসের কথা। এটার জন্য গত সাত বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছেন পাগলাটে আধবুড়ো মানুষটা। আসীফ রাহাতও তাঁর সহযোগী হিসেবে কাজে লেগে আছে গত তিন বছর ধরে।
যদিও গত তিন বছরে ডিভাইসের ব্যাপারে চমকে যাওয়ার মতো কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করেনি আসীফ রাহাত। তবুও এই মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসের ফান্ডামেন্টাল হাইপোথিটিক্যাল থিওরিটার প্রতি বেশ আগ্রহ বোধ করে সে। তাই তো এই ডিভাইসের শেষ ফলাফল দেখার জন্য বিনা বেতনে গত তিন বছর ধরে গাধার মতো খেঁটে যাচ্ছে।
যে ডিভাইসটির জন্য আসীফ রাহাত ও প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, সে ডিভাইসের আইডিয়াটা বেশ চমকপ্রদ লাগে রাহাতেরর কাছে। আইডিয়াটি প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনেরই। তিনি নিজে এটা নিয়ে কাজ করেছিলেন প্রায় চার বছরের মতো। তারপর তাঁর সাথে যুক্ত হয় আসীফ রাহাত ।
আসীফ রাহাত ছিল প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু প্রফেসর ড. শ্রীকান্ত কুমার মল্লিকের ছাত্র। আর সে পরিচয়ের সূত্র ধরেই তাঁর সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে সে।
তাঁরা দুজন মিলে ডিভাইসটার নাম দিয়েছে ‘মাইন্ড রিডার এন্ড কন্ট্রোলার - মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২’। যদি এটা সত্যি সত্যি এটা কাজ করে, তবে মানুষের মনের কথা বুঝে ফেলা ও সেই মনটাকে নিয়ন্ত্রন করার কাজে খুব ভালো ভাবে ব্যবহার করা যাবে এটাকে। ‘মাইন্ড রিডার এন্ড কন্ট্রোলার - মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২’ রেডিয়েশন রেঞ্জ হচ্ছে দশ স্কয়ার ফুট। অর্থাৎ, এই ডিভাসের দশ ফুটের মধ্যে থাকা যে কোন টার্গেটেড মানুষের মনকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা রাখে এটি। তাঁর মনের ভেতরে থাকা রাগ, প্রশান্তি, লোভ, উদ্বেগ সহ সবকিছুই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে। আর এ লক্ষ্যেই কাজ এগিয়ে নিচ্ছে তাঁরা।
প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের সাথে সহকারী থাকার দরুণ অনেক শক্তশক্ত কাজ করতে হয়েছে আসীফ রাহাতকে। তবে এর জন্য কোন পারিশ্রমিক বা সম্মানী নেয়নি সে। ভেবেছে এমনিতেই ড. বেলায়েত হোসেন বেশ টাকা ব্যয় করছেন এই গবেষণার কাজে। নতুন করে সহাকরীর বেতন দিতে গিয়ে যেন আরও টাকা খরচ না হয়ে যায় সে চিন্তা থেকেই অর্থ না নেয়া।
প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেন ইতিমধ্যেই নিজের অনেক সম্পত্তিও বিক্রি করে দিয়েছেন। অবশ্য এসব তাঁর মতো ধনী ও শখের গবেষকের জন্য নিতান্তই তুচ্ছ। তবে একটা সাধারণ পরিবারের জন্য এ টাকা সাদা হাতি পোষার টাকা।
আবারও আসীফ রাহাতের ফোনে কল এসেছে ড. বেলায়েত হোসেনের ফোন থেকে। সে ইচ্ছে করেই কলটা রিসিভ করল না। কারণ সে ড. বেলায়েত হোসেনের বাড়ির খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। এখন শুধু শুধু কল রিসিভ করে কথা বলতে ইচ্ছে করছে না তাঁর।
২.
বাসার চিলেকোঠায় প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের নিজের ডিজাইন করা ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো আসীফ রাহাত। দুই রুমের এই ঘরটা ড. বেলায়েত হোসেন তাঁর গবেষণার জন্য নিজ হাতে ডিজাইন করেছেন।
আসীফ রাহাত ঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে প্রথম বার নক করার পরই দরজা খুলে দিলেন ড. বেলায়েত হোসেন। মনে হচ্ছে আসীফ রাহাতের জন্যই অপেক্ষা করছিলেন তিনি। কারণ সচরাচর তিনি তিন-চার বার নক করার আগে দরজা খুলেন না।
‘চলে এসেছো ইয়ংম্যান। গুড।’, ছোট বাচ্চাদের মতো প্রফুল্ল কন্ঠে বললেন চল্লিশের ঘরে থাকা ড. বেলায়েত হোসেন, ‘ভেতরে আসো । দেখো কি অপেক্ষা করছে তোমার জন্য।’
রাহাত তাঁর পিছু পিছু রুমের ভেতরে ঢুকল । বেলায়েত হোসেন গবেষণার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল আকৃতির মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসটি রাহাতেরর হাতে দিয়ে বললেন,
‘দেখো। রেজাল্ট দেখো। আমার সাত বছর এবং তোমার তিন মোট এক দশকের পরিশ্রমের ফলাফল এখন তোমার হাতে।’
রাহাত ডিভাইসটা হাতে নিয়ে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে এটার দিকে। ভেতরে ভেতরে একটা আনন্দের ঢেউ বয়ে যায় তাঁর। এই সেই ডিভাইস, যার জন্য এতো প্ররিশ্রম!
তবে ডিভাইসটি দেখতে অন্য দিনের মতোই লাগছে। কোন বিশেষ পরিবর্তন নেই। কিন্তু তবুও ডিভাইসটি যে কাজ করেছে সেটা কি করে বুঝলো বেলায়েত হোসেন? জানতে প্রশ্ন করে রাহাত, ‘স্যার, ডিভাইসটি যে কাজ করছে সেটা আপনি কী করে বুঝলেন? আমি তো এটা দেখে কিছুই বুঝতে পারছি না।’
‘রাতে ডিভাইসের সফটওয়্যার বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করেছি । সবসময়ই পজেটিভ সিগন্যাল দিয়েছে। তারপর প্র্যাকটিক্যালি এটা এপ্ল্যাই করেছি বাসার কাজের ছেলে শফিকের উপর। যখন দেখলাম যে এটা শফিকের মন পড়তে পারছে ও ঠিক মতো নিয়ন্ত্রন করতে পারছে, তখনই কনফার্ম হলাম– এটা কাজ করেছে।’
‘ওহ আচ্ছ। কিন্তু স্যার, মাত্র একজনের উপর এপ্ল্যাই করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়াটা কি ঠিক হয়েছে? এটাতে তো ভুলও থাকতে পারে।’
‘এই তো। প্রকৃত উদ্ভাবকের মতো কথা। অবশ্যই আমরা একজনের উপর এপ্ল্যাই করে বসে থাকবো না। আমরা বেশ কয়েক জনের উপর এটা প্রয়োগ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।’
‘পরীক্ষা কবে থেকে শুরু করছি আমরা?’
‘আজ সকাল থেকেই। আর এ জন্যই এই গভীর রাতে তোমাকে ডাকা। সকাল বেলা তুমি আর আমি বের হবো এটা পরীক্ষা করতে। রাতের বাকীটা সময় তুমি চাইলে আমার এখানেই ঘুমিয়ে পড়তে পারো। ওকে?’, বেলায়েত হোসেনের করা প্রশ্নে, রাহাত হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে । অবশ্য না নেড়ে উপায় নেই। কারন এতো রাতে বাসায় ফিরে যাওয়ার মতো মানসিক ইচ্ছে বা শারীরিক শক্তি; কোনটাই তাঁর নেই।
৩.
সকাল বেলা আসীফ রাহাতের ঘুম ভেঙেছে প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের ডাকে। বেশ উত্তেজিত ও প্রফুল্ল দেখাচ্ছে তাঁকে। হাফহাতা হাওয়াই শার্ট, কালো প্যান্ট, বাদামী হ্যাট পরে, মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ হাতে নিয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য একদম প্রস্তুত হয়ে আছেন তিনি। আসীফ রাহাতও দ্রুত তৈরি হয়ে নিচ্ছে।
‘আমাদের প্রথম টার্গেট হচ্ছে আমাদের বাসার কেয়ারটেকার ফিরোজ মিয়া। বেশ ঠাণ্ডা মানুষ। সারাদিন হাসিহাসি মুখ করে বসে থাকতে দেখা যায় তাঁকে। কারো সাথে কখনোই খারাপ ব্যবহার করে নি।’, বাসা থেকে বের হয়ে সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে কথা বলছেন ড. বেলায়েত হোসেন, ‘আমি এনএইচ২ দিয়ে তাঁর মাইন্ড একটু পরিবর্তন করে দেবো। তাঁর লজ্যিক নষ্ট করে রাগিয়ে দেবো তাঁকে। সেই সাথে তাঁর মনের খারাপ দিকগুলোও ফুটে উঠবে। তুমি তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করবে। তারপর দেখি কি হয় ।’, আসীফ রাহাত মনোযোগ দিয়ে তাঁর ইন্সট্রাকশন শুনছে।
সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতেই দেখা হয়ে গেলো কেয়ারটেকার ফিরোজের মিয়ার সাথে। ফজরের নামাজ শেষ করে টুপি মাথায় দিয়ে ফুরফুরে মেজাজে হাটছে। বেলায়েত হোসেন তাঁর পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় ‘লজ্যিক ডিসফাংশন অ্যান্ড অ্যাংগার’ অপশনটি চালু করলেন। রাগিয়ে দিলেন তাঁকে। এবার আসীফ রাহাতের পালা। তাঁর কাজ হচ্ছে ফিরোজ মিয়াকে শান্ত করা।
সে ফিরোজ মিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বিনীত ভঙ্গিতে সালাম দিল। ফিরোজ মিয়া চোখ বড় বড় করে তাকালো আসীফ রাহাতের দিকে। মুখ বাকিয়ে বলল, ‘আপনে আমারে সালাম দেন কেন? আমি কি আপনের দুলাভাই লাগি?’
‘না। তা হবেন কেন? আপনি আমার চেয়ে বয়সে বড়, তাই আপনাকে সালাম দিয়েছি।’, আসীফ রাহাত যথেষ্ট মোলায়েম কন্ঠে বলে, ‘তা কী অবস্থা আপনার?’
‘সেইটা জাইন্যা আপনার কী ফায়দা? আপনে আপনার কামে যান।’
আসীফ রাহাত যতই বিনীত ভাবে কথা বলে ফিরোজ মিয়া ততোই রেগে যায়। এবং একসময় তাঁকে মারার জন্য উদ্যত হয়। আসীফ রাহাত একটু দৌড়ে দূরে যাওয়ার পর ড. বেলায়েত হোসেন। মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২তে ফিরোজ মিয়ার রাগ নিয়ন্ত্রন করে এবং ‘ইরেজ রিসেন্ট মেমোরি’ অপশন চেপে একটু আগের ঘটনাগুলো তাঁর মন থেকে ভুলিয়ে দেন।
আসীফ রাহাতকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আসেন বেলায়েত হোসেন। হাঁটতে হাঁটতে বলেন, ‘দেখেছো রাহাত, যে লোক তোমাকে সব সময় তুমি সম্বোধন করে আদর করতো, সে লোক আজ তোমাকে মারতে চেয়েছে। আর তাঁর কথাগুলো খেয়াল করেছো তুমি? সম্পূর্ণ উদ্ভট কথা। তুমি তাঁকে কিছুতেই থামাতে পারো নি। বরং আমি গিয়ে এই এনএইচ২ দিয়ে এক নিমিষে তাঁকে শান্ত করেছি। নাউ টেল মি, ইজ নট ইট ওয়ার্কিং?’
‘কিন্তু স্যার, ওনার ব্রেইনের স্থায়ী স্মৃতির সেলে তো এই তথ্যগুলো এখনো সংরক্ষিত আছে।’, আসীফ রাহাত কৌতূহল প্রকাশ করে, ‘আমরা তাঁর মস্তিষ্কের ক্ষণস্থায়ী মেমোরি ইরেজ করতে পেরেছি শুধুমাত্র।’
‘এই তথ্যগুলো তাঁর স্থায়ী মেমোরি সেলে থাকবে ঠিকই। কিন্তু কখনোই সে এই ঘটনা গুলো কোথায় ঘটেছে তা মনে করতে পারবে না। যেহেতু সে এই কাজগুলো সজ্ঞানে বাস্তবে কোনদিন করার চিন্তাও করে, তাই বাস্তবতার কথা মাথায় রেখে এক সময় সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন যে, এগুলো সবই ছিল তাঁর সাবকনসাস মাইন্ডের খেলা। এক ধরণের ভিজুয়াল হেলুসিনেশন।’, ড. বেলায়েত হোসেন ব্যাখ্যা করেন।
৪.
আসীফ রাহাত আর ড. বেলায়েত হোসেন গলির মধ্যদিয়ে হাঁটছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজনের উপর এটার সফল প্রয়োগ হয়ে গেছে। প্রত্যেকটিই সফল। ড. বেলায়েত হোসেনকে বেশ প্রফুল্ল লাগছে। উনি হৃষ্ট মনে এক্সপান্ডিং ইউনিভার্স নিয়ে আলোচনা করছেন। ‘একদম আদিতে এই মহাজগৎ বিন্দুতে সীমাবদ্ধ ছিল। তারপর আচমকা হলো বিগব্যাং। বিন্ধুতে শুরু হলো মহাজগৎ। সেই জগৎ এক জায়গায় থেমে রইল না। বাইরের দিকে এক্সপান্ড করতে শুরু করল। যে নক্ষত্ররাজি পৃথিবী থেকে যত দূরে, সে নক্ষত্ররাজি তত দ্রুত ছুটছে। পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরের নক্ষত্র ছুটছে আলোর গতিতে। আমাদের মেটাসাইফোসিয়াস ডিভাইসটিও একদিন এক্সপান্ডিং ইউনিভার্সের মত অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যাবে।’
এমন সময় মোটরবাইকে করে যাচ্ছিল তারিক। সে হচ্ছে ড. বেলায়েত হোসেনের এলাকার পাতি নেতা ফিরোজের ডানহাত। বেশ কিছু দিন ধরেই এলাকায় উন্নয়ন করার নামে ড. বেলায়েত হোসেনের কাছে চাঁদা চাচ্ছে সে। কিন্তু বেলায়েত হোসেন দেন নি। আজ তাই বাইক থামিয়ে পথ আগলে বলল, ‘বিজ্ঞানী চাচা, কী অবস্থা? শরীর স্বাস্থ্য ভালো? আমরা এলাকায় একটা ভালো কাজ করতে চাই। সবাই সাহায্য করতে রাজি। শুধু আপনে ঘাড় ত্যাড়ামি করতাছেন।’
‘চাঁদার কথায় পরে আসছি। তার আগে তোমাকে একটা ম্যাজিক দেখাই! দেখবে?’, কথাটা বলে পকেটে হাত দিয়ে মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ বের করলেন তিনি। সেখান থেকে লোভ ও হিংস্রতার অপশনগুলো ডিসফাংশন করে শ্রদ্ধা একটিভ করে দিলেন। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই তারিক তাঁর মনের নিয়ন্ত্রণ হারালো। হাঁ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ড. বেলায়েত হোসেনের দিকে। সত্যি সত্যি ম্যাজিক টাইপের কিছু দেখার প্রত্যাশায় ছিল সে। তবে ম্যাজিকটা আর টের পাওয়া হলো না তাঁর।
মনের নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ড. বেলায়েত হোসেনকে সালাম দিয়ে বাইক নিয়ে চলে গেলো। আসীফ রাহাত আর ড. বেলায়েত হোসেন দু’জনেই তাকিয়ে রইলো বেচারার চলে যাওয়ার পথে। অন্যদিকে আসীফ রাহাতের মুখের হাঁ-টা এখন বেশ বড় হয়ে গেছে। ডিভাইসটি একদম সঠিক ভাবে কাজ করছে দেখে অবাক তো আর কম হয় নি সে!
‘রাহাত, এখন তুমি তাহলে বাসায় চলে যাও। বিকেলের দিকে তুমি আর আমি আবার এটা নিয়ে বসব। আরো কিছু কাজ বাকী আছে। ফাইনাল এক্সপ্রিমেন্ট করতে হবে। রয়্যাল সায়েন্স কমিটি, ইউরো সায়েন্টিস্ট, আমেরিকান এ্যাসোসিয়েশন অব সায়েন্সের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। এমআইটির এক অধ্যাপক আছে আমার ছাত্র। ওকেও মেইল করে জানাতে হবে। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এটাকে পরিচিত করিয়ে দেয়ার প্ল্যান আছে আমার ।’, ড. বেলায়েত হোসেনের কথায় হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ে আসীফ রাহাত। কথা শেষ করে রিকশায় করে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয় সে।
রিকশায় যেতে যেতে মাথায় ঘুরতে থাকে মাইন্ড রিডার এন্ড কন্ট্রোলার মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসটির কথা। জিনিসটা সত্যিই খুব কাজের হয়েছে। এটা যদি জায়গা মতো ব্যবহার করা যায় তাহলে জীবনে উন্নতি সুনিশ্চিত। চাকরীর ইন্টারভিউ বোর্ডে চাকরীদাতার মাইন্ড পাল্টে দিলাম; হয়ে গেল চাকরী। পাওনাদারের সাথে দেখা, মাইন্ড পাল্টে দিলাম; সে ভুলে গেল তাঁর টাকার কথা।
তবে এসব মানুষের ক্ষেত্রে এই ডিভাইস ব্যবহারের চেয়ে জরুরী আরেকজন মানুষ আছে যার উপর জিনিসটা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা দরকার। সে হচ্ছে আসীফ রাহাতের ইউনিভার্সিটির জুনিয়র ঐন্দ্রিলা মালকোভা। খ্রিষ্টান মেয়ে।
ঐন্দ্রিলার সাথে গত অনেক দিন ধরেই সম্পর্ক করার চেষ্টা করে যাচ্ছে আসীফ রাহাত। সুন্দরী আর অহংকারী মেয়েটা পাত্তাই দেয় নি তাঁকে। বরং ফর্সা গায়ের রঙওয়ালা ও পয়সাওয়ালা ছেলেদের সাথে গিয়ে গাঁ ঘেঁষাঘেঁষি করেছে। দেখলেই মেজাজ গরম হয়ে যায় আসীফ রাহাতের। কিন্তু কিছুই করার ছিল না তাঁর । ঐ মেয়েকে তো আর জোর করে ভালোবাসাতে পারবে না। তাই শূন্য হাতেই ফিরেছে প্রতিদিন।
কিন্তু এখন আর শূন্য হাতে ফিরতে হবে না তাঁকে । মেটাসাইফোসিয়াস এনএইচ২ ডিভাইসটা একবার শুধু ঐন্দ্রিলার উপর এপ্ল্যাই করতে হবে। ব্যাস। কাজ শেষ।
আর সে লক্ষ্যেই সাথে সাথে কল করে ড. বেলায়েত হোসেনকে। ডিভাইসটা একদিনের জন্য চায়। কিন্তু বেলায়েত হোসেন মুখের উপর ‘না’ বলে দিলেন। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, এই ডিভাইস তিনি কাউকেই দেবেন না।
কথা শুনেই মেজাজ চটে যায় আসীফ রাহাতের। এই ডিভাইসের জন্য কি সে কোন কষ্ট করে নি? তবুও কেন তাঁকে এই ডিভাইসটা একদিনের জন্য দিতে পারবে না ড. বেলায়েত হোসেন? ভেবেই ক্রোধে ফুঁসে উঠে আসীফ রাহাত।
৫.
প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনকে খুন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আসীফ রাহাত। একদিনের জন্য নয়, চিরিদিনের জন্য এই ডিভাইসের মালিক হবে সে। সেই লক্ষ্যেই সন্ধ্যে বেলা ড. বেলায়েত হোসেনের বাড়িতে যায় সে। কোমরে গুঁজে রেখেছে ছয় ইঞ্চি ফলার ভাজ করা ধারালো ছুরিটা।
তাঁর মাথায় মাস্টারপ্ল্যান আঁকা। তা হচ্ছে, ল্যাবের ভেতরে গিয়ে বেলায়েত হোসেনকে পিছন থেকে ছুরি দিয়ে আঘাত করবে সে। তারপর ঘরের ভেতর বিভিন্ন রাসায়নিক দাহ্য পদার্থ ও বিস্ফোরক এনে একটা ছোট বিস্ফোরণ ঘটাবে। পরে সবার কাছে প্রচার করে দেবে যে, গবেষক প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেন বিস্ফোরক নিয়ে গবেষণা করার সময় রাসায়নিক বিক্রিয়ার দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। সাপও মরল লাঠিও থাকলো!
প্ল্যান মোতাবেক প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের ল্যাবে ঢুকে আসীফ রাহাত। আলাভোলা ধরণের লোকটি পিছন ফিরে কী একটা করছেন। গুনগুন করে গানও গাইছেন। দেখলেই মায়া লাগে। সুযোগটা একদম হাতে পেয়ে যায় আসীফ রাহাত। কোমর থেকে ছুরিটা বের করে বেলায়েত হোসেনের ঘাড়ের কাছে বসিয়ে দিতে যায় সে। তবে তার আগেই আসীফ রাহাতের হাতটা ধরে এক ধাক্কায় ছুরিটা কব্জা করে নেন বেলায়েত হোসেন। রাহাত ধস্তাধস্তি করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ছুরির দখল নিতে চাইছে। কিন্তু চল্লিশের কোঠায় থাকা লোকটার সাথেও শক্তিতে কুলিয়ে উঠতে পারছে না সে।
এরই মাঝে প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেন রাহাতের গলার কাছে ছুরিটা বেশ ভালো ভাবে পজিশন করে ফেলেছে। তাঁর হাত দু’টোও পেছনে নিয়ে এমনে ভাবে ধরছে যেন মনে হচ্ছে একটু নড়াচড়া করলেই হাত ভেঙে যাবে। তারপর একটা কুৎসিত হাসি দিয়ে বললেন, ‘রাহাত আমি ভেবেছিলাম তুমি এই ধরণের কিছু একটা করবে। আর এটা দেখার জন্যই আমি অপেক্ষা করে আছি। মোটামুটি প্রস্তুতই ছিলাম আমি তোমাকে নিয়ে।’, রাহাত জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। বেলায়েত হোসেন আবার বলতে শুরু করে, ‘তুমি ভেবেছো ঐ ডিভাইস কাজ করতে শুরু করেছে? ভুল। তোমাকে ধোঁকা দেয়ার জন্য এই নাটক সাজিয়েছি আমি। দারোয়ান, এবং চাঁদাবাজের ব্যাপারটাও সাজানো। তাঁরা সবাই আমার পেইড। শুধু তোমাকে পরীক্ষা করার জন্য আমার এতো পরিশ্রম।’
রাহাতের শরীরে কিছুটা স্থবিরতা এসেছে । তাঁর চোখে মুখে প্রশ্ন; কেন এসব করেছে ড. বেলায়েত হোসেন? কিন্তু মুখে কিছুই বলতে পারে না সে। বলার প্রয়োজনও পরে না। তার আগেই বেলায়েত হোসেন বলতে শুরু করেন, ‘এই গবেষণা আমাকে কিছুই দেয় নি। তাই নিষ্ফল এই কাজ থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ব্যবসা করবো। আর একজন বিশ্বস্ত সহকারী রাখবো। ঠিক সহকারী নয়– পার্টনার চেয়েছিলাম আমি। আর বিশ্বস্ততার হিসেবে আমার প্রথম পছন্দ ছিলে তুমি। তাই শেষ বারের মতো তোমাকে বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তুমি অকৃতকার্য। তুমি বিশ্বাস ধরে রাখতে পারো নি। তুমি বিশ্বাসঘাতক। সেই সাথে জীবন ঘাতকও বটে।’
আসীফ রাহাত কাঁতর কন্ঠে কিছু বলতে চায়। ড. বেলায়েত হোসেন সে সুযোগ দেন না। নিজেই আবার বলতে শুরু করেন, ‘রিপালশান সিনেমার রোমান পোলনাস্কিকে চিনো? অনেক বিখ্যাত মানুষ। পৃথিবীময় তাঁর খ্যাতি। কিন্তু উনি আমার কাছে কী জন্য পরিচিত জানো? একজন ধর্ষক হিসেবে। উনি ১৩ বছরের এক মেয়েকে ধর্ষন করেছিলেন। তুমিও অনেকটাই উনার মত। সারাজীবন ভালো ভালো কাজ করলে, আর শেষে করে বসলে প্রতারণা! তাই তোমার সে প্রতারনার শাস্তি আমি নিজে হাতে তোমাকে দিচ্ছি। ডোন্ট বি মাইন্ড, প্লিজ!’
কথাটুকু শুনে আবারো ছটফট শুরু করে দেয় রাহাত। বেলায়েত হোসেনকে পিছনের দিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায় সে। কিন্তু বেলায়েত হোসেন আর শক্তি খরচ করতে রাজি নন। হাতে থাকা ছয় ইঞ্চি ফলার ছুরিটা আসীফ রাহাতের বুকের বাঁ পাঁশে কয়েকবার ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফিনকী দিয়ে রক্ত রক্ত বের হচ্ছে। প্রফেসর ড. বেলায়েত হোসেনের শার্ট রক্তে ভিজে যাচ্ছে। তিনি সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে ছুরিটা চালিয়ে দেন আসীফ রাহাতের কন্ঠনালীতে। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারিত করেন, ‘গুড বাই মিস্টার আসীফ রাহাত!’
২| ১৩ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১০
বিজন রয় বলেছেন: ব্লগে স্বাগতম।
৩| ২৯ শে আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫১
পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো, আপনার মাইন্ড রিডার এন্ড কন্ট্রোলারর - মেটাসাইফোসিয়ার, ওরফে আসিফ রাহাত।
প্রতিমন্তব্য করতে আমাদের কমেন্ট বক্সের ডানদিকে সবুজ বাটনে চাপ দিলে একটি নুতন স্পেস আসবে। তার মধ্যে উত্তর লিখে জমা করলে আমাদের নোটিফিকেশনে দেখাবে। সেই সঙ্গে অন্যের পোস্টেও প্রচুর কমেন্ট করুণ । আশাকরি দ্রুত সেফ হবেন।
শুভকামনা রইল।
©somewhere in net ltd.
১|
১৭ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ১২:২৩
কাওসার চৌধুরী বলেছেন: বাহ!! চমৎকার একটি লেখা পোস্ট দিয়ে ব্লগিং শুরু করলেন। সামুতে স্বাগতম। শুভ কামনা রইলো।