নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকাশক পপি চৌধুরী

লেখক পপি চৌধুরী

প্রকাশক পপি চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাঙাল (ছোটগল্প)

১০ ই এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১১:৪৮

প্রতিদিনের ন্যায় গোসল শেষে ভিজে গায়ে ন্যাংটো শিপলু দৌড়ে ড্রইংরুমে প্রবেশ করে। অমনি মিনু তোয়ালে হাতে ছুটতে ছুটতে আসে ছেলের গা মুছিয়ে দিতে। একটুতেই ঠান্ডা লাগার ধাত আছে শিপলুর, তাই ব্যস্ত হাতে ছেলের গা মোছাতে চেষ্টা করে।
এতটুকু স্থির নেই শিপলু। সমানে লাফালাফি আর ছুটোছুটি করছে। ছেলের গা মোছাতে মোছাতে হঠাৎ ওপাশের সোফায় বসা সবুজের দিকে দৃষ্টি পড়ে মিনুর, অমনি রাগে-ঘৃণায় মনের ভিতরটা রি-রি করে ওঠে। আজও তার দিকে হ্যাংলার মতো তাকিয়ে আছে ছেলেটি! কতইবা বয়স ওর? বড় জোর পনের কী ষোল? এই বয়সেই মেয়ে মানুষের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকার অভ্যেস করে ফেলেছে! অথচ তাদের নিজের কোন আত্মীয় নয়। শ্বশুরবাড়ির গ্রামের ছেলে। ঢাকায় ডাক্তার দেখাতে এসেছে। থাকার কোন জায়গা নেই তাই পাঁচ ছ'দিন হয় এখানে এসে উঠেছে। মিনু অবশ্য তাতে কোন আপত্তি করে নি। অথচ এখন ছেলেটিকে দেখলেই অস্বস্থি হয়। সারাক্ষণ তার দিকে কেমন যেন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। এমনিতে ছেলেটাকে দেখতে নিরীহ গোছের মনে হলেও যখন তখন ওর এই বেহায়ার মতো তাকিয়ে থাকাটাই বিরক্তিকর।

রাতে ঘুমোতে গিয়ে স্বামীর কাছে প্রসঙ্গ তুলে মিনু জানতে চায়, তোমাদের গাঁয়ের ছেলেটা আর কতদিন থাকবে এখানে?
তা তো কিছু বলে নি। কেবল বলেছিল, অনেকদিন থেকে রাতে প্রায়ই জ্বর হয়। গ্রামে অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে, সুস্থ না হওয়ায় এখানে এসেছে ভালো ডাক্তার দেখাতে।
ডাক্তার দেখাতে ক'দিন লাগে? বিরক্তি ভরা কন্ঠে বলে মিনু।
গতকাল তো বলল, ডাক্তার নাকি কী সব টেস্ট-ফেস্ট করতে দিয়েছে। ওগুলো করা হলে ডাক্তারকে রিপোর্ট দেখিয়ে ওষুধ নিয়ে চলে যাবে।
আমার কিন্তু ছেলেটাকে একেবারেই ভালো লাগছে না।
কেন কী করেছে?
তেমন কিছু করে নি। তবে সারাক্ষণ কেমন করে যেন তাকিয়ে থাকে। আমার খুব বিচ্ছিরি লাগে বিষয়টি।
আর ক'টা দিন দ্যাখো। সে রকম মনে হলে চলে যেতে বললেই হবে।

মিনুর কথার সূত্র ধরে জাহিদও কয়েকদিন লক্ষ্য করে ছেলেটিকে। স্ত্রীর কথার সত্যতা অনুধাবন করতে পেরে একদিন সবুজকে ডেকে জানতে চায়, তোমার চিকিৎসার কতদূর কী হলো?
ডাক্তার সাহেব তো অনেক রকম পরীক্ষা করালেন কিন্তু তেমন কিছু ধরতে পারলেন না। এখনো রাতে আমার জ্বর হচ্ছে। তাই শুনে ডাক্তার সাহেব আরো কয়েকটি টেস্ট দিলেন। মেঝের দিকে তাকিয়ে বলল সবুজ।
দ্যাখো সবুজ, আমাদের ছোট্ট বাসা। এখানে বাড়তি একজন মানুষ থাকা মানে অনেক অসুবিধা। তাছাড়া রিপোর্টেও তেমন কিছু পাওয়া যাচ্ছে না। আমার মনেহয় তোমার এখন গ্রামে ফিরে যাওয়াই ভালো। গ্রামে ফিরে গিয়ে ভালো খাবার-দাবার, দুধ, ডিম খাও দেখবে দু'দিনেই সুস্থ হয়ে গেছো।
জাহিদ কাকার কথা শুনে সবুজ ফ্যাল-ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তার চোখের সামনে ভেসে ওঠে গ্লাসভর্তি দুধ নিয়ে মতির মা চাচীর পীড়া পীড়ির দৃশ্য। তার বাবা খুব পয়সাঅলা নন। তবে তাদের বাড়িতে পুকুর ভরা মাছ, দুধেল গাই, হাঁস, মুরগি, ডিম, কলা, দেশি ফলের গাছ- এসবের কোন কমতি নেই। সে সব প্রসঙ্গে কাকাকে কিছু বলে না সবুজ। বুঝতে পারলো, এতদিন এখানে থাকায় বিরক্ত হচ্ছেন কাকা। তাই লজ্জিত কন্ঠে বলল, কাকা আমি তাহলে কালই গ্রামে ফিরে যাই। অনেকদিন এসেছি, বাবাও হয়তো চিন্তা করছেন।
সে তুমি যা ভালো মনে করো। নিস্পৃহ কন্ঠে বলল জাহিদ।

পরদিন খুব ভোরে বাসার সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠার পূর্বেই চলে গেল সবুজ। মিনু ঘুম থেকে জেগে আপদ বিদেয় হয়েছে দেখে মনে মনে স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল। বুয়া তার দিকে একটি হলুদ খাম বাড়িয়ে দিয়ে বলল, সবুজ ভাই যাওনের কালে এইডা আপনেরে দিতে কইয়া গ্যাছে।
বিরক্তির সাথে হাত বাড়িয়ে খামটি নিয়ে নিতান্ত তাচ্ছিল্যভরে বিছানার তোষকের নীচে রেখে দিল মিনু।

বেশ কয়েক মাস পরের কথা। একদিন অফিস থেকে ফিরে বিকেলে চা পান করতে করতে স্ত্র্রী মিনুকে বলল, কয়েক মাস পূর্বে আমাদের বাসায় সবুজ নামে গ্রাম থেকে একটি ছেলে এসেছিল তোমার মনে আছে মিনু?
মনে থাকবে না কেন। সেই যে সারাক্ষণ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকতো, সেই ছেলেটি তো?
হ্যাঁ। ছেলেটি গত পরশু মারা গিয়েছে।
চায়ের কাপে চুমুক দিতে গিয়ে হাতটা থেমে গেল মিনুর। ছেলেটির ওপর যত বিরক্তিই থাক এই মুহূর্তে তার মৃত্যু সংবাদে মনের মধ্যে কেমন যেন করে উঠলো।
কী হয়েছিল? বিষণ্ন কন্ঠে জানতে চাইলো মিনু।
গ্রামে ফিরে যাওয়ার পর নাকি আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। ওর বাবা সাধ্যমতো চিকিৎসাও করিয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার বদলে ছেলেটি দিন দিন শুকিয়ে যেতে থাকে। অবশেষে গতরাতে মারা গিয়েছে। অফিসে আজ আমাদের গ্রামের হাশেম এসেছিল। সেই দিলো সংবাদটি!

সবুজের মৃত্যু সংবাদ শোনার পর থেকে নিজেকে কেমন যেন অপরাধী মনে হতে লাগলো মিনুর। এসময় হঠাৎ সবুজের চিঠির কথা মনে পড়ে গেল তার। উঠে গিয়ে তোষকের তলা থেকে চিঠিটি বের করে এনে মেলে ধরলো চোখের সামনে।

`মিনু কাকীমা,
আমার ছালাম নিও। সাত মাস বয়সের সময় আমার মা মারা যায়, তাই মা কেমন হয় জানতাম না। তোমাকে দেখার পর কেবলই মনে হয়েছে- মা বোধহয় তোমার মত হয়। তাই তো তুমি যখন শিপলুকে আদর করতে তখন আমি তৃষ্ণার্ত চোখে তাকিয়ে দেখতাম তোমাকে...'

চিঠিটার এতটুকু পড়তে গিয়ে চোখদুটো জলে ভরে ওঠে মিনুর। দৃষ্টিটা ঝাপসা হয়ে আসে। শাড়ির আঁচলে চোখ মুছে পুনরায় পড়তে শুরু করে,

`বাবার আদরে বড় হয়েছি। মাকে দেখি নি কখনও। তাই মায়ের অভাবও অনুভব করি নি কোনদিন। তোমাকে দেখার পর মায়ের অভাববোধটা খুব বেশি অনুভব করছি। কাকীমা, তুমি কি শিপলুর মতো আমারও মা হবে?'
ইতি-
সবুজ

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৮:০৩

প্রেতরাজ বলেছেন: খুব ভাল লেগেছে।

২| ১১ ই এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ৯:২১

সুফিয়া বলেছেন: ভালা লাগল পপি আপা আপনার গল্প।

ভাল থাকুন।

৩| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৬:২৫

প্রকাশক পপি চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে প্রেতরাজ।

৪| ১২ ই এপ্রিল, ২০১৫ ভোর ৬:২৬

প্রকাশক পপি চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ সুফিয়া আপা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.