নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয়দেশ, এক সঙ্গে বিশ্ব দেখি...

হাসান শান্তনু

সাংবাদিক, গণমাধ্যম গবেষক

হাসান শান্তনু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আবদুল গাফফার চৌধুরীর ফোন এবং অর্বাচীন লেখকের বই

০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১২:৫৬

শ্রদ্ধেয় কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরী ফোন করেছিলেন গত ২৪ ফ্রেব্রুয়ারি রাতে। সদ্য শেষ হওয়া একুশের বইমেলায় প্রকাশিত আমার '৪৩ বছরে গণমাধ্যমের অর্জন-বিসর্জন' বইটি পড়ে তাঁর অনুভূতি, মূল্যায়ন জানাতে ফোন করেছিলেন। এ বিষয়ে ২৫ ফেব্রুয়ারি একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম আমার ফেসবুক ওয়াল থেকে বেশ সোজাসাপ্টা ভাষায়। (http://www.facebook.com/hasan.shantonu.7), (http://www.facebook.com/hasan.shantonu.9)।

গাফফার ভাই অমর ভাষাগানের গীতিকার। পাঠকনন্দিত কলামিস্ট। দশকের বিবেচনায় ষাটের দশকের শক্তিশালী কথাসাহিত্যিক, কবি। বাঙালি জাতি তাঁর কাছে নানা কারণে কৃতজ্ঞ থাকবে আজন্মকাল। আমার মতো নগণ্য সংবাদজীবীর বই পড়ে ফোন করায় বরেণ্য এ ব্যক্তিত্বের কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। '৪৩ বছরে গণমাধ্যমের অর্জন-বিসর্জন' বইটির বেলায়ও তাঁর প্রতি অসংখ্য কৃতজ্ঞতা। কারণ, বইটির কয়েকটি অধ্যায় ‌'এক ধরনের পরিপূর্ণ' করেছে গাফফার ভাইয়ের তথ্য, মূল্যায়ন, বক্তব্য। তাঁর মতো ব্যক্তি সম্পর্কে সোজাসাপ্টা ভাষায় কিছু লেখার স্পর্ধা দেখানোর দুঃসাহস পোষণ করিনি কোনোকালে। তবে মাত্রাতিরিক্ত আবেগের ধাক্কা সামলাতে না পেরে সেদিন স্ট্যাটাসটা দিয়েছিলাম।

একটা সময় ছিল, যখন লন্ডন প্রবাসী গাফফার ভাইয়ের সঙ্গে প্রায় নিয়মিত ফোনে কথা হতো। এক পর্যায়ে মনের ভেতরে জন্ম নেয়া 'অভিমান' থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। 'অভিমান' পর্ব নিয়ে আলোচনার আগে স্বীকার করে রাখছি, তাঁর কাছ থেকে অনেক ঐতিহাসিক তথ্য জেনেছি। আর আমিই বোধহয় ঢাকার একমাত্র সংবাদকর্মী, যাকে লন্ডনে বসে গাফফার ভাই টানা দুই ঘণ্টার একটা সাক্ষাৎকার দেন। ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে ওই সাক্ষাৎকার ছাপা হয় সাপ্তাহিক এখন পত্রিকায়। আমি তখন সর্বজনশ্রদ্ধেয় সাংবাদিক আতাউস সামাদ স্যারের সম্পাদিত এখন পত্রিকার সংবাদকর্মী। এখন'র পাঠকদের নিশ্চয়ই ওই সাক্ষাৎকারের কথা মনে আছে।

গাফফার ভাইয়ের প্রতি 'অভিমানের' কারণগুলো বলছি। চার দলের জোট সরকারের আমলে গাফফার ভাই আতাউস সামাদ সম্পর্কে দৈনিক যুগান্তরে একটা কলাম লেখেন। তাতে দাবি করেন, 'আতাউস সামাদ যুদ্ধাপরাধীদের সমর্থক'। এ প্রসঙ্গে গাফফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার কথা হয় ২০০৭ সালের ফেব্রয়ারিতে ঢাকার চামেলিবাগের ২৩ নম্বর বাড়িতে বসে। গাফফার ভাই তখন ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন।

আমি তাঁকে বলি, 'আতাউস সামাদ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চান। তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষের। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর পরিবারের অবদান অসামান্য।' তখন গাফফার ভাই স্বীকার করেন, 'আতাউস সামাদ সম্পর্কে আমিও তা জানতাম। বঙ্গবন্ধুরও বিশেষ স্নেহভাজন ছিলেন সামাদ। তবে ঢাকা থেকে কেউ একজন তাঁর সম্পর্কে আমাকে ভুল তথ্য দিয়েছেন'। আমি তখন বললাম, 'গাফফার ভাই, আপনার আগামী কোনো লেখায় আতাউস সামাদ সম্পর্কে সংশোধনী দেবেন আশা করি।' গাফফার ভাই আমাকে কথা দিলেন। তবে রাখেননি।

বরং, ২০১০ সালে তিনি দৈনিক কালের কণ্ঠে ফের আতাউস সামাদ সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্যের একটা কলাম লিখলেন। তাঁর লেখার জবাব আতাউস সামাদ দেন কালের কণ্ঠেই। সামাদ স্যার নিজের লেখায় উল্লেখ করেছিলেন আমার নামটিও। তিনি লেখেন, 'গাফফার ভাইয়ের সঙ্গে আমার সবশেষ কথা হয় ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তখন আমার বাসায় বসে টেলিফোনে তাঁর সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন সহকর্মী হাসান শান্তনু। সাক্ষাৎকার নেয়া শেষ হলে টেলিফোনের অন্য প্রান্ত থেকে আমি গাফফার ভাইয়ের সঙ্গে দুই-তিন মিনিট কথা বলেছিলাম।'

অভিমানের আরেকটা কারণ বলি। ২০১০ সালে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকায় এক পাতার বিশেষ আয়োজন ছাপা হয় প্রয়াত সাংবাদিক আবদুস সালামকে নিয়ে। সেখানে চিন্তাবিদ, অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর নামে একটা লেখা ছিল। তাঁর সঙ্গে আলাপ করে লেখাটি দাঁড় করায় আমি, লেখাটির নিচে আমার নামটাও ছিল। আমার দেশ'র ওই আয়োজন দেখে গাফফার ভাই আমাকে ফোন করেন। এর দুইদিন পর দৈনিক ইত্তেফাকে দেখি, আমার দেশ'র ওই আয়োজন নিয়ে গাফফার ভাই ঢাউস এক কলাম লিখেছেন। তাতে আমার নামটি যথারীতি রাখলেন। যা পড়ে পাঠকের মনে হতে, 'এই অকাজ, ষড়যন্ত্রের সঙ্গে আমিও জড়িত'! যা দেখে খুব বিষন্ন বোধ করেছিলাম।

২০১২ সালে আতাউস সামাদের মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে গাফফার ভাই কালের কণ্ঠে অনন্য সাধারণ একটা কলাম লেখেন। লেখাটা পড়ে গাফফার ভাইয়ের প্রতি 'অভিমান' অনেকটা কেটেছে। তবু তাঁকে আর ফোন আগের মতো দেয়া হয় না। অভিমান থাকুক, বা না থাকুক, গাফফার ভাইয়ের কলাম পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকি। তিনি আমার প্রিয় কলামিস্টদের মধ্যে একজন। তাঁকে নিয়ে বাঙালির গর্বের আরেকটা জায়গা হচ্ছে, বাঙালি হলেও 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি' গানটির জন্য তিনি এখন প্রায় পুরো বিশ্বের নাগরিক। কারণ, ২১ ফেব্রয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এ দিনে প্রায় পুরো বিশ্বে গাওয়া হয় গাফফার ভাইয়ের লেখা গান।

'৪৩ বছরে গণমাধ্যমের অর্জন-বিসর্জন' বইটি ঢাকার 'বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার' থেকে কেউ একজন গাফফার ভাইয়ের জন্য লন্ডনে পাঠিয়েছেন। 'বঙ্গবন্ধু রিসার্চ সেন্টার'র কাছে এরজন্য কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি। '৪৩ বছরে গণমাধ্যমের অর্জন-বিসর্জন' প্রকাশ করেছে প্লাটফর্ম প্রকাশন। বইটির রকমারি.কম'র লিংক- http://www.rokomari.com/book/93614

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫৪

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: স্যার আমার ও অতি প্রিয় একজন কলামিস্ট।স্যার অনেক ভালো থাকুন।

০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৮

হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, মন্তব্য করায় ধন্যবাদ, সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ১২:২১

সালমান মাহফুজ বলেছেন: জেনে আমারও ভালো লাগল ।

০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৯

হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, মন্তব্য করায় ধন্যবাদ, সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.