![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোনো বইয়ের উৎসর্গপত্র পড়ে কেঁদেছেন কখনো? ধর্মীয় বই ছাড়া আর কোনো বই পড়ার সময় কি মনে হয়েছে, পবিত্র অনুভূতি নিয়ে তা পড়ছেন? আমার বেলায় তা ঘটেছে।
ছোট্ট জীবনে মনের তাগিদে, জানবার আগ্রহে, 'বড় লেখক' হওয়ার অদম্য ইচ্ছেয় অনেক বই পড়েছি। হারিকেনে কেরোসিন পুড়েছি, বিদ্যুতের অপচয় করেছি। রাতের পর রাত জেগে নিজেকে 'প্রস্তুত' করেছি! প্রেম, ভালোবাসার অ্যাখান, বিরহের যন্ত্রণার প্রতিচ্ছবি থেকে শুরু করে সাম্যবাদের লাল বই, বা ইটের মতো ভারী সাম্রাজ্যবাদের দালালির দাপটের খতিয়ানের বইও আছে তালিকায়। কোনো বই পড়ার সময় এরকম শুদ্ধ অনুভূতি মনের ভেতর জন্মায়নি, যেভাবে জন্মেছে ''স্বাধীনতা আমার ভালো লাগে না' পড়ার সময়। বইটির লেখক শ্রদ্ধেয় সাংবাদিক প্রভাষ আমিন।
৬ মার্চ ছিল আমার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। মায়ের জন্য কিছুই করতে পারিনি, এ অপরাধে বছরের সব দিনেই নিজের কাছে নিজে অপরাধী থাকি। কোথাও কোথাও মূল্যবোধের খরার সঙ্গে পার্থিব ভোগবাদের হাতছানির দিকে পা বাড়িয়ে বেঁচে থাকার নিত্য সংগ্রামে জীবন-জীবিকার অভিনয় হয়তো করি। তবু ৬ মার্চ, বা এর আগে-পরের দিনগুলোতে মায়ের জন্য অপরাধবোধ এতো বেড়ে যায়, এই বোধ, অনুভূতির ভাষান্তর অসম্ভব। এ বছরের ৫ মার্চ রাত সাড়ে আটটা। মায়ের জন্য মনটা ভীষণ খা খা করছিল। এটিএন নিউজ চ্যানেলের কার্যালয়ে গেলাম প্রভাষ আমিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে। তিনি তাঁর লেখা বই 'স্বাধীনতা আমার ভালো লাগে না'র একটা সৌজন্য সংখ্যা আমাকে দিলেন পরম স্নেহে। বইটার উৎসর্গপত্রে লেখা- 'মিসেস মাহবুবা খানম
আমার সর্বংসহা মা
অযোগ্য সন্তান আমি তাঁকে কষ্ট ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি
এই বই সেই কষ্টের ক্ষতে প্রলেপ বোলানোর অপচেষ্টা মাত্র'!
উৎসর্গপত্রটি পড়ে মনে হলো এটা তো আমার মায়ের জন্য আমারই বক্তব্য! অপরাধী সন্তানের ভেতর সদাজাগ্রত একটা সত্ত্বার প্রকাশ। বুকের ভেতরটা ভীষণ জ্বলতে লাগল। কষ্টরা কতো সহজে উস্কে ওঠতে পারে একটা বইয়ের উৎসর্গপত্রের কয়েকটা বাক্য থেকে। চোখের কোণে অজান্তেই জমে যায় কয়েক ফোটা অশ্রু। আমাদের 'সর্বংসহা' মায়ের জন্য খারাপ লাগছে। বইয়ের লেখক আরো কিছুক্ষণ বসে থাকতে বলছেন। আমার মনে হচ্ছিল, অশ্রু বুঝি চোখের চারপাশের সীমানা ডিঙ্গিয়ে বেরিয়ে পড়বে।
নিজেকে সামলে নিচ্ছিলাম ভেতরে ভেতরে। আমি তো পুরুষ! পুরুষরা এভাবে আবার কাঁদে নাকি, তাও একটা গণমাধ্যমের কার্যালয়ের ভেতর! না, মায়ের জন্য অনুভূতি, কষ্টের তীব্রতায় চোখের অশ্রু জাতপাত, নারী-পুরুষ মানে না। তাই প্রভাষ আমিন ভাইয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়ে পড়ি।
'স্বাধীনতা আমার ভালো লাগে না' বইটি হাতে পেয়ে কেন জানি মনে পড়ে, মায়ের শেষ বিদায়ের দিনটির কথা। ধবধবে সাদা কাফনে মোড়ানো মায়ের পুরো শরীর। চারপাশের বাতাসে আগর বাতির গন্ধ! মায়ের যে শরীর সংসার জীবনে টানা খেঁটে গেছে আমাদের জন্য, সেই শরীরটা কতো আশ্চর্যজনকভাবে নীরব। ছিন্ন শাড়িতে মা যে শরীরটাকে কোনো রকমে ঢেকে রাখতেন, তা ঢেকে দিয়েছিলাম সেদিন কাফনে।
আমাদের বড় আপা মায়ের কাছে বসে কাঁদছিলেন পায়ের ওপর থেকে কাফনের কাপড়ের অংশ সামান্য সরিয়ে মায়ের পা ছুঁয়ে। মায়ের পা দুটি সামান্য নগ্ন হয়। মায়ের নগ্ন পায়ের সেই দৃশ্যটি আমার কাছে ঈশ্বরের মতো পবিত্র মনে হয়। যেমন ৫ মার্চ রাতে পবিত্র মনে হয়েছে, প্রভাষ আমিন ভাইয়ের বইয়ের উৎসর্গপত্রটি।
এটিএন নিউজের কার্যালয় থেকে বের হয়ে ওই রাতে হাঁটতে যাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। হাতের আঙ্গুলে চেপে ধরে রেখেছিলাম প্রভাষ আমিন ভাইয়ের দেয়া বইটি, বুকের ভেতর চেপে আছে মায়ের জন্য সামান্য রকমেও সামান্য কিছু করতে না পারার ব্যর্থতা। হঠাৎ করে কেন জানি কলকাতার বামঘেঁষা কবি তুষার রায়ের একটা কবিতার দুটি লাইন মনে পড়ে- 'গনগনে আঁচের মধ্যে শুয়ে রুমাল নাড়ছি, এই শিখা নিভে গেলে ছাঁই ঘেটে দেখে নেবেন পাপ ছিল কীনা...'
'স্বাধীনতা আমার ভালো লাগে না' বইটি নিরেট প্রবন্ধের, ব্যক্তি জীবনের গভীরতম ঘটনাকে ঘিরে সংবেদনশীল জীবনবীক্ষণ নয়। তবু বইটি যে পবিত্র অনুভূতি আমার ভেতর জাগিয়েছে, পৃথিবীর আর কোনো বই তা পারেনি।
জানি, এ লেখায় বইটির প্রতি অবিচার করছি। কেননা, ঐতিহ্য প্রকাশনীর প্রকাশিত এ বই দেশীয় গণমাধ্যমের মূল চরিত্রের প্রতিচ্ছবি। যা বর্ণিত হয়েছে বিশ্লেষণী ভাবনায়, ভণিতা শূণ্য উপস্থাপনায়। যা লেখকের আদর্শ সাহসী উচ্চারণ। এমন উচ্চারণ এর আগে তাঁর মতো এদেশের আর আর কেউ করেননি।
বইটি নিয়ে অন্যদিন আলোচনা করব। এর আগে আপনাদেরকে অনুরোধ করছি, রকমারি.কম'র মাধ্যমে ঘরে বসে বইটি সংগ্রহ করুন। এর জন্য ফোন করতে হবে এ নম্বরে- ০১৫১৯ ৫২১৯৭১।
হা.শা.
দৈনিক যায়যায়দিন,
ভালোবাসা সড়ক,
তেজগাঁও, ঢাকা।
০৭.০৩.১৫ খ্রি.।
০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৩
হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, মন্তব্য করায় ধন্যবাদ, সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
২| ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৩
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ভাল লাগা জানিয়ে গেলাম।
০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:৪৫
হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, মন্তব্য করায় ধন্যবাদ, সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
৩| ০৭ ই মার্চ, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৭
সুমন কর বলেছেন: ভাল লাগল।
০৭ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৮:৩৯
হাসান শান্তনু বলেছেন: ভাই, মন্তব্য করায় ধন্যবাদ, সঙ্গে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই মার্চ, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫
সুদীপ্ত সরদার বলেছেন: ভালো লেগেছে