নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার পৃথিবী নিয়ে আমি ভাল আছি খুব ভালো আছি। সকল অশুদ্ধতাকে নিয়ে সুখে আছি। অশুদ্ধতাই আমার কাছে শুদ্ধতা এখন। শুধু মাঝে মাঝে শ্বেত শুভ্র একটুকরো মেঘের দিকে ভুল করে তাকাই! কিন্তু ভুল করেও আমার ভাল লাগে। আমার পৃথিবী ভুলে ভর্তি। ভুলে ভর্তি পৃথিবী নিয়ে আমার মন্তব

কাল্পনিক হিমু

আমি কেউ না। I am nobody.

কাল্পনিক হিমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিয়ে মানেই ধর্ষণের বৈধতা?

১৯ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১:৩৩

রাত ২ টা ৪৫। ডিউটি ডাক্তার সবে মাত্র বিশ্রাম নেয়ার
জন্য ঘুম ঘুম চোখে চেয়ারে বসেছে। ইমারজেন্সি থেকে
ফোন আসল।
চোখের পাতায় ঘুম ঠেসে, ইমারজেন্সিতে এসে চমকে
যাওয়ার অবস্থা। মহিলা রোগী, পড়নের চাদর রক্তে
ভেজা। মুখের রঙ ফ্যাকাসে, সাদা।
কাপড় দেখেই বোঝা যাচ্ছে নতুন বিয়ে হয়েছে।
কাগজে লেখা, রোগীর নাম ফুলি। হিষ্ট্রি নেয়ার জন্য
ডাক্তার জানতে চাইল, কি হয়েছে?রোগীর সাথে সদ্য
বিবাহিত জামাই, জা এবং আরও দুই একজন এসেছে।
ডাক্তার দেখেই রোগীর বর চোরের মত, রুম থেকে বের
হয়ে গেল। রোগীর সাথের মহিলা তেজের সাথে বলল,
“ডাক্তার হইছেন, বুঝেন না কেরে, সব বলতে হইবো!”
“মালকা বানুর দেশে রে, বিয়ের বাদ্য বাজনা বাজে
রে..”
গাছের মাথায় বাধা মাইকটিতে একটির পর একটি বিয়ের
গান বেজে চলছে। বিয়ে বাড়িতে সবাই ব্যস্ত।
বর পক্ষের যারা এসেছে, কথা বার্তায় অভিজাত ও
ব্যক্তিত্ব দেখানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। দর কষাকষি করার
পরে, কনে পক্ষ থেকে যৌতুক হিসেবে যা পাওয়া গেছে,
তা নেহাত ই কম নয়।
কিন্তু কম হয়ে গেছে কনের বয়স। বাচ্চা মেয়ে, নাম ফুলি
বেগম, সবে মাত্র ১৪ পেরিয়ে ১৫ বছরে পড়েছে। মেয়ের
বাবাও মোটামুটি ভাবে লাল শাড়ি পড়িয়ে মেয়েকে
বিদায় দিতে পেরে খুশি।
মেয়ে হলে তো বিদায় দিতেই হবে। ক্লাস সেভেন পর্যন্ত
মেয়েকে পড়িয়েছে। কম কি! তাছাড়া, শোনা যাচ্ছে
ছেলেও নাকি ভাল।
বাড়ির উঠোনে বসে মুখে পান চিবতে চিবতে ছেলের
মামা বলল, ‘এমন ছেলে কোথায় পাবেন মিয়া। তাছাড়া,
ছেলে মানুষের একটু দোষ থাকলেও সমস্যা নেই, বিয়ের
পর ঠিক হয়ে যাবে।’বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে,
মেয়েকে নিয়ে আসা হল, তার নতুন ঘরে।যে মেয়েটি সবে
মাত্র জীবনের সংজ্ঞা শিখতে শুরু করেছে, শৈশব থেকে
কৈশোরে পা রাখতে যাচ্ছে, কিছু বুঝে ওঠার আগেই,
তার আজ বাসর রাত। পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে সতীত্ব
যাচাই করার উৎসব। আর বিয়ে তো একটি সামাজিক
বৈধতা মাত্র।সমাজ অনেক এগিয়েছে ঠিকই, কিন্তু
বিয়ের সময় মেয়ের মতামতটা এখনও গৌন।
মেয়ের যদি মতামত না নেওয়া হয় বা পরিবারের কারও
ধমকে মতামত দানের পর বিয়ে হয়, তাহলে তাকে ধর্ষন না
বলে উপায় নেই।
ফুলির ইচ্ছে করছে, চিৎকার করে। কিন্তু বাসর ঘরে
চিৎকার যে করা উচিত নয়, এতটুকু বুঝতে শিখেছে। হাত
পা ছুড়ে বরের লালসার যজ্ঞ থেকে বেরিয়ে আসার
মিথ্যে চেষ্টা।
সমাজ বিধীত ‘বর’, যখন আদিম পশুত্ব থেকে বাস্তবে
ফিরে আসে, তখন ফুলি রক্তে ভেজা। তখনও ফিনকির মত
রক্ত যাচ্ছে। ক্রমান্বয়ে সাদা ফাক্যাসে হয়ে আসছে
মুখের রঙ!৩.
ফুলি এখন হাসপাতালের বেডে অচেতন হয়ে শুয়ে আছে।
তাকে যখন হাসপাতালে নিয়ে আসা হচ্ছে, ফুলির চোখে
পড়েছিল যে, শ্বশুর বাড়ির লোকজন কানাকানি করে কথা
বলছে। ব্যাঙ্গাত্তক হাসি তামাশা করছে। যেন সব দোষ
ফুলির। লজ্জায় কারও দিকে তাকাতেও ভয় করে। তারপর
ইঞ্জিন চালিত গাড়ীর ইঞ্জিনের প্রচন্ড শব্দ। আরও
এলোমেলো কিছু মুহুর্ত। কিছুক্ষন পর, সাদা এপ্রোন পড়া
একজন ডাক্তার এসে তার হাত ধরেছে। মনে আছে শুধু
এতটুকুই।ডাক্তার নার্সকে সাথে নিয়ে, ফুলি বেগমকে
পরীক্ষা করলেন। ভয়াবহ রকমের পেরিনিয়াল টিয়ার
(যৌনাঙ্গ ও তার আশ পাশ ছিড়ে গেছে)। তখনও রক্ত
যাচ্ছে প্রচুর। হাতে পালস দেখা হল। খুবই কম। জরুরি
ভিক্তিতে রোগীকে রক্ত দেয়া দরকার। জরুরি অবস্থায়
অপারেশন করে ছিড়ে যাওয়া অংশ অপারেশন করে ঠিক
করতে হবে।
এই ভয়াবহ সংকটাপন্ন রোগীকে নিয়ে হিমসিম খাওয়ার
অবস্থা কর্তব্যরত ডাক্তারের।
ম্যাডামকে ফোন করা হল।
প্রাথমিক ভাবে ম্যানেজ করার জন্য রক্ত দরকার।
রোগীর সাথে যারা এসেছে এতক্ষন ইমারজেন্সী রুমের
সামনে চিল্লা পাল্লা করছিল। ডাক্তার এসে জানালো
জরুরি ভিক্তিতে রক্ত দরকার। তখন সবাই চুপ। কেউ কেউ
কেটে পড়ার জন্য পাশে সরে গেল। কিছুক্ষন পর রোগীর
লোক জানালো, তারা রক্ত জোগাড় করতে পারবে না।
যা হয় হবে!
ডাক্তার তাদের বুঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু লাভ হল
না।
রাত সাড়ে তিনটায় ম্যাডাম আসলেন। তার ধমকে শেষ
পর্যন্ত তারা রক্ত জোগাড় করতে রাজি হল। কিন্তু রক্ত
আর সেই রাতে জোগাড় হল না।
অপারেশন থিয়েটারে ফুলিকে নিয়ে টিয়ার রিপেয়ার
করা হল।
সকালে রোগীর শ্বশুর বাড়ির লোক সবাই উধাও। ফুলির
বাবা আসলেন সেই সকালে, রক্ত জোগাড় হল কোনরকমে।
ছয় দিন পর, রোগীর সেপ্টিসেমিয়া ডেভলপ করলো।
ইনফেকশন রক্তে ছড়িয়ে গেছে। ভাল অ্যান্টিবায়োটিক
দরকার।
রোগীর বাবা এসে বললেন, তারা আর খরচ চালাতে
পারবেন না। ডাক্তার পরামর্শ দিলেন, কোন সরকারি
হাসপাতালে ভর্তি করাতে, তাহলে ঔষুধ কেনার খরচ
কিছুটা বাচবে। কিন্তু, হাসপাতাল মানে তো, কাজকর্ম
রেখে একজনকে রোগীর পাশে থাকতে হবে। রিলিজ
দিয়ে বাসায় নিয়ে যেতে চাচ্ছেন, যা হবার হবে।
রিলিজ নিয়ে ফুলিকে বাসায় নেয়া হল। আরও বেশি
অসুস্থ হওয়ায় চারদিন পরে আবার হাসপাতালে ভর্তি
করা হল। পরদিন ভোর ভোর সময়। একবার চোখ খুলে আবার
বন্ধ করলো ফুলি। সেই বন্ধ শেষ বন্ধ। এই সমাজের প্রতি
ঘৃনায় চোখ জ্বল জ্বল করছিল কি না কেউ দেখেতে
পারেনি। ভোরের স্বল্প আলোয় বিদায় জানালো
জীবনের নিষ্ঠুরতাকে!
ফুলি একিউট রেনাল ফেইলরে মারা গেছে। ঢাকা
মেডিকেলে নিয়ে ডায়ালাইসিসের জন্য বলা হয়েছিল,
তারা রোগী নিয়ে এত ঝামেলা করতে পারবে না।
শ্বশুর বাড়ি থেকে সেই বাসর রাতের পর, কেউ আসে নি।
তাদেরই বা এত চিন্তা কি, একটা বউ মরলে দশটা বউ
পাওয়া যায়!
(প্ল্যাটফর্মে নাসিমা সুলতানা পরশিয়া’র পোষ্ট থেকে
সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। ফুলি একা নয়, এরকম ঘটনা
প্রায়ই দেখা যায়। এই ঘটনা গুলো চক্ষু লজ্জার ভয়ে
প্রকাশ হয় না। কিন্তু সচেতনতা জরুরী।)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে মে, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৬

মানবী বলেছেন: নাহ্, মোটেও তা নয়।
বিয়ে মানে কাল্পনিক হিমুদের মতো চমৎকার ছেলেদের অসাধারণ মা বাবা পাওয়া(আপনার মা'কে নিয়ে লেখাটা পড়েছি :-)

ধর্ষণের মতো জঘণ্য কাজটি বিবাহ বন্ধনের বাইরেও হচ্ছে। ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে নিষ্পাপ শিশুরাও রেহাই পায়না। তাই বিয়েকে দোষারোপ করাটা কোন ভাবেই যৌক্তিক নয়!!!

ভালো থাকুন কাল্পনিক হিমু।

২| ২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১:০৪

কাল্পনিক হিমু বলেছেন: ধন্যবাদ মানবী
আসলে মা এই শব্দের মূল্য আমরা কেও বুঝি না , আর হয়তো বুঝতেও চাই না ।

আমাদের সমাজের দোষ নাকি আমাদের কোন ভুল আমরা কেও নিদিষ্ট করে বলতে পারবো না সত্যি , তবু সবাই এক্তিত হয়ে ভাল থাকতে চাই ।

৩| ২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১:৫১

মানবী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ।
মন্তব্যের উপরে সবুজ তীর চিহ্নে ক্লিক করে জবাব দিলে মন্তব্যের সাথে সাথে জবাবটা প্রকাশিত হয়, মন্তব্যকারীর কাছেও বার্তা পৌঁছে যায়।

ভালো থাকুন।

২১ শে মে, ২০১৭ রাত ১:৫৭

কাল্পনিক হিমু বলেছেন: সমাজ আমাদের তাই আমাদের প্রত্যেকের দায়িত নিজ নিজ থেকে পালন করার চেস্টা করবো ।

৪| ৩১ শে মে, ২০১৭ রাত ১০:৫৭

সামু পাগলা০০৭ বলেছেন: অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি টপিক নিয়ে লিখেছেন। পোষ্ট ম্যারেটিয়াল রেপের মতো ভয়াবহ আর কিছু হতে পারেনা একজন মেয়ের জন্যে। সেতো পুলিশের কাছেও যেতে পারবে না। সেই মানুষটির কাছে সে রাতের পর রাত ধর্ষিত হবে, কিন্তু উফফ পর্যন্ত করতে হবেনা। সমাজের খুশি, পরিবারের খুশির জন্যে সব কষ্ট সে সহ্য করবে। সেই মানুষটিকেই স্বামী, বাচ্চার বাবা হিসেবে......ছি! ছি! একজন মেয়ে হিসেবে এসব লিখতেও ঘেন্না বোধ হয়! যেসব মেয়েরা এর মধ্যে দিয়ে জীবনের প্রতিটি দিন কাটিয়ে দিচ্ছে তারা কিভাবে সহ্য করছে আল্লাহই জানেন।

অবশ্য সব পুরুষ এক নয়। আপনার মতো সচেতন পুরুষও রয়েছেন! আপনাকে ধন্যবাদ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে লেখাটি লেখার জন্যে।

শুভকামনা জানবেন।

০২ রা জুন, ২০১৭ রাত ১১:৫১

কাল্পনিক হিমু বলেছেন: লেখাটি পড়ার জন্য এবং বোঝার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.