নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমাদের গ্রামে কিনু দর্জি ছিলেন। ঈদ মৌসুম আসলে তিনি বেজায় ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। পাঞ্জাবির হাতা এবং পাজামার পা কোথায় লাগাতেন খেয়াল থাকতো না। তিনি ছিলেন রসিক প্রকৃতির মানুষ। এই গল্পটি আমার জন্মেরও আগে, তবে প্রয়াত আব্দুল কুদ্দুস ভাইয়ের মুখেই শুনেছি। কুদ্দুস ভাইয়ের বাড়ির পাশেই কিনু দর্জির বাড়ি। বলা যায় দু’পা ফেললেই দর্জি বাড়ি। কুদ্দুস ভাইয়ের বয়স নাকি তখন ৮/১০ বছর। তখন তো গ্রামে বেশ অভাব। ফলে বছরে ওই একবারই পা জামা আর পাঞ্জবি তৈরী হতো। অনেকে তো বিয়ে করার জন্য চেয়ে চিন্তে পাঞ্জাবি, টুপি ও জুতা হাওলাদ করতেন, যা আমার বয়সেই দেখেছি। যাই হোক ঈদের দিন সাত সকালে শিশু আব্দুল কুদ্দুস ভাই দর্জি বাড়ি হাজির। মানুষের ভিড় সামাল দিয়ে দর্জির হাতের নাগালে যাওয়া শিশু কুদ্দুস ভাইয়ের পক্ষে সম্ভব নয়। এদিকে ঈদের জামায়াতের তোড়জোড় চলছে। কুদ্দুস ভাই দর্জি বাড়ির হাটনেই (বারান্দা) বসে আছেন। এমন সময় কিনু দর্জির মনোযোগ হলো তার দিকে। গলা খেকিয়ে বলে উঠলেন “এই তুই কুদ্দুস না” ? কুদ্দুস ভাই মাথা নাড়িয়ে সায় দিলেন। দর্জি কাপড়গুলো দুমড়ে মুচড়ে কুদ্দুস ভাইয়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, এই নে যা বাড়ি যা। তখন তো আর গ্রামে কাপড় ইস্ত্রি করার ব্যবস্থা ছিল না। কুদ্দুস ভাই কাপড়গুলো মেলে ধরে কেমন যেন অসঙ্গতি পেলেন। শিশু কুদ্দুসের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কিনু দর্জি নিজেই পা জামা আর পাঞ্জবি পরিয়ে দিলেন। হায়! একি? পা জামার পা পাঞ্জবির হাতায় আর পাঞ্জবির হাতা পা জামার পায়ে লাগানো ! নতুন জামার গন্ধ শিশু কুদ্দুস ভাইকে আহলাদিত করলেও তার চোখে পানি। কি ভাবে এই পা জামা আর পাঞ্জবি পরে ঈদগাহে যাবেন ? কিনু দর্জির নিজের ভুল স্বীকার তো করলোই না বরং কুদ্দুস ভাইকে কোলে বসিয়ে বললেন, “এই পা জামা আর পাঞ্জবি পরে তুমি যখন ঈদগাহে যাবা, তখন তোমার বন্ধুরা এই অতিরিক্ত সাইজ দেখে বলবেন ওই দ্যাখ কুদ্দুস আসছে”। ঈদের জামায়াতের আর দেরি নেই। অগত্যা কুদ্দুস ভাই পা জামার পা পাঞ্জবির হাতায়, আর পাঞ্জবির হাতা পা জামার পায়ে লাগানো নতুন কাপড় নিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন।
০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:০৬
আসিফ ইকবাল কাজল বলেছেন: আপনি ঠিকই বলেছেন। সেই শৈশব আর কৈশর এখনকার ছেলে মেয়েদের নেই
২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩০
BM Khalid Hasan বলেছেন: ওইসময়টাতে মানুষের আবেগ ছিল। প্রযুক্তি দেরিতে পাল্টাতো তাই জেনারেশনের পর জেনারেশন একই চর্চা করতো। ঈদের আগের কয়েকদিন ছেলে বুড়ো সবাই এক্সাইটেড থাকতো, ঘর গুছাতে রেডি হয়ে যেতো। এখন একটা নরমাল দিনের সাথে ঈদের দিনের কোনো তফাত মনে হয়না। অনেকেই সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকে। জাস্ট পাঞ্জাবির সাথে একটা সেলফি আপলোড করাই ঈদের সেলিব্রেশন!
৩| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭
নাহল তরকারি বলেছেন: দর্জি।
০৯ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৪
আসিফ ইকবাল কাজল বলেছেন: এই পরিস্তিতির উত্তরণ আর হয়তো হবে না। হলেও আমরা দেখে যেতে পারবো বলে মনে হয় না। ধন্যবাদ আপনাকে, ঈদ মুবারক
©somewhere in net ltd.
১| ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬
বাংলার ইতিহাস ৯০ বলেছেন: সেই ছোট্ট বেলার ঈদ আর ফিরে আসবে না। আপনার লিখনিতে কিছু সময় হলেও স্মৃতিতে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম