নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফয়জুল মহী I মোহাম্মদপুর । ঢাকা ।

নেওয়াজ আলি

হে পরমেশ্বর,এই নশ্বর নিখিল সৃষ্টিতে রেখো না ওই মানুষ যার ভিতর নরত্বের অভিনিবেশ নাই ।

নেওয়াজ আলি › বিস্তারিত পোস্টঃ

টুকরো টুকরো স্মৃতিতে অতীত ও কয়েকজন স্যার I

০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৩:৪৪




কেমন আছেন হাজ্বি সাহেব। এই কথাটা বলেই আমার বাবাকে জড়িয়ে ধরতেন লেমুয়া বাজারে। আমি সালাম দিয়ে পাশে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতাম আর দেখতাম উনাদের কথায় একে অপরকে শ্রদ্ধা ভালোবাসা এবং মার্জিত ভাব। উনি আমার বাবার সিনিয়র তবে লেমুয়া স্কুলের ছাত্র দুইজনে। মীর স্যার করৈয়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক। যার ব্যক্তিত্ব আগুনের মত, এখনকার এই ছাইপাঁশ মাতব্বরদের জন্য উনার ব্যক্তিত্বটাই যথেষ্ট ছিলো। স্কুল বন্ধ হলেই আমি বাড়ি চলে যেতাম আর আমার বাবা প্রতি শুক্রবার চিটাং হতে আসতেন এবং স্যারও প্রায় শুক্রবার বাড়ি যেতেন। এই কারণে প্রায় সময় দেখা হতো বাজারে, কিন্তু স্যার যখন বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেন তখন মনে খটকা লাগতো। উনি হজ্ব করেন নাই আর কেউ এটা ডাকেও না, তাহলে মীর স্যার কেনো ডাকে। তবে তারচেয়েও ভয়ে থাকতাম আমার পড়াশোনার কথা জিজ্ঞাসা করবে, তাই চুপ থাকা ।

মীর স্যারের সততা, প্রজ্ঞা, মেধা, মহানুভবতা এবং দক্ষতা আমার চেয়ে জ্ঞানী গুণী লোকেরা বলবে। উনার বিচার বিশ্লেষণ করতে গেলে এই মহান লোকের মানবিকতার সাগরে ডুবতে হবে আমাকে। শুধু এইটুকু বলবো মীর স্যার নিজেই একটা করৈয়া স্কুল। আমি, আমার স্ত্রী এবং বাবা ফেনী ট্রাংক রোড়ে বড় মসজিদের সামনে দাড়ানো, স্যার আসরের নামাজ পড়ে মসজিদ হতে বের হলেন আমি দেখেই সালাম করতে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন কারণ অনেক বছর পরে দেখা। সেই আগের মত বাবাকে হাজ্বি সাহেব ডাকতেছেন। সেই আগের মত শ্রদ্ধা ভালোবাসা ।

আমি স্যারকে কোথাও বসতে বললাম উনি বসলো না। আমি স্কুলের কথা জানতে চাইলাম, উনার কথা জানতে চাইলাম, বাবাকে বলেন হজ্ব করতে যেতে উনি যাচ্ছে না । স্কুলের কথা বলায় প্রদীপটা টপ করে নিভে গেলো। আমি কথা পাল্টাতে চাইলাম তারপরও উনি বলেন সাজেদুল্ল্যা স্যার দায়িত্বে আছেন। তবে স্বাধীনতা নাই। বুঝতে আর বাকি রইলো না প্রিয় স্কুল এখন লংষ্কা আর শাসন করে রাবণ। তবে রাবণ সীতার রূপে মুগ্ধ হয়ে অপহরণ করলেও ইজ্জতে হাত দেয় নাই। সব আমলে রাজনীতিক রাবণেরা মসজিদ, মন্দির, স্কুল ,কলেজ মাদ্রাসার ইজ্জত নিলামে তুলে আর এতে কিছু শিক্ষক নামের মানুষ সহায়তা করে।

বাড়ি গিয়ে ধরলাম বাবাকে মীর স্যার আপনাকে হাজ্বি কেনো ডাকে। উনি ফিরে গেলেন দেশ স্বাধীনের আগে স্কুল জীবনে। স্মৃতি মানুষকে কাতর করে, আবেগী করে। লেমুয়া স্কুলে পড়ার সময় নাটক করেছেন আর সেই নাটকে অভিনয়ে চরিত্রের নাম হাজ্বি ছিলো। তাই স্যার আমার বাবার সিনিয়র হলেও নাম ধরে ডাকে না।

টি ইসলাম হতে বাসে উঠে দেখি ভিতরে গোপাল স্যার বসা। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। ডেকে পাশে বসতে বললেন। আমি নানার বাড়ি হতে ফেনী যাচ্ছি,তখন ফেনী কলেজের ছাত্র আমি। স্যার আমার পুরো খবর নিবে, উপদেশ দিবে ভালো কেমন করে লাগবে! তবে মনে মনে খুশি আমি ভাড়া স্যার দিবে বলে। কথায় কথায় বললেন এক বেয়াদব ছাত্র দেলোয়ার স্যারের সাইকেল ভেঙ্গে ফেলেছে। দেলোয়ার স্যার খুব অপমানবোধ করেছে। এমন হলে শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে হবে। আমি বললাম আপনার সাথে কেউ এমন করবে না, স্কুলের সব ছেলে নিয়ে গিয়ে ওই ছেলেকে ধরে নিয়ে আসা উচিত, তাকে শিক্ষা দেওয়া উচিত। স্যার হাসলেন কিছু বললেন না। বেয়াদব আগেও ছিলো এখনো আছে তবে পার্থক্য এখন বেয়াদবি রাজনৈতিককরণ করা হয়েছে যার কারণে বেয়াদব কালো চমশা পরে বাপও চিনে না।

তুমি এত আগে আগে হাটছো কেনো। আমি তাকে বলি।
তুমি আরো পিছনে থাকো তাই ভালো, মেয়েটা বলে।
আমি দশ/বার হাত পিছনে আর কত পিছনে থাকবো।
কারণ এই সময় নেপাল স্যার স্কুল হতে বাসায় যায়। নেপাল স্যার তখন ছাগলনাইয়া পাইলট হাই স্কুলের শিক্ষিক। স্যারের বাসা মেয়েটার বাসার পাশে আবার স্যার আমার বাবার সহপাঠী এবং এক গ্রামের আমরা । ভালো করে চিনে দুইজনকে এবং একসাথে দেখলে বেকায়দায় পড়তে হবে। একদিন ঠিক দুইজনকে রাস্তায় পেয়ে গেলো স্যার। দুরে দুরে দেখে কিছু বললো না শুধু বললো কেনো এসেছি ছাগলনাইয়া।

আমি বিয়ের দাওয়াত দিতে গিয়ে দেখি স্যার প্রধান শিক্ষক। দাওয়াত দিলাম পরিবারের সবাইকে। সেই পুরাতন রাস্তায় হাটতে ৯২/৯৪ সালের স্মৃতি এসে পা জড়িয়ে যাচ্ছে। জানি না মেয়েটা তার স্বামীর হাত ধরে এখন হাটে কিনা। এই কয়েক বছর আগেও নেপাল স্যারের সাথে দেখা করতে গিয়েছি উনি বাঁশপাড়া হাসপাতালের (নাম মনে নেই) দায়িত্বে আছেন । আমি সাথে নিয়ে চা পান করতে চাইলাম। হোটেলে গেলেন কিন্তু কিছুই খেলেন না কারণ উনার ডায়াবেটিস, আমার বিল দিয়ে দিলেন। একটা কার্ড দিয়ে বললেন তোর বাবাকে ফোন দিতে বলিস। এখন আমারও ডায়াবেটিস। মীর স্যার শেষ বয়সে, গোপাল স্যার নেই, আমার বাবা শেষ বয়সে। এইসব স্যারের কথা ভুলা যাবে না জীবনের শেষ অবদি। শিক্ষালয়ও আজ শেষ বয়সে ছাত্র, শিক্ষক এবং পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন কারণে। দেখে হৃদয় রক্তক্ষরণ হয় তবে কিছু বলতে মানা কারণ আমি আপনি এবং আমরা দয়াহীন, বিবেকহীন ।

মুহুরীগঞ্জ হাই স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যার আমার নানা হয় বলে মজা করেই কথা বলতেন। মুহুরীগঞ্জ ক্রিয়েটিভ ইন্টারন্যাশনাল কলেজে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হয়ে ছিলো উনাকে। আমার স্ত্রী দুই বছর কলেজের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু কলেজ টিকে নাই কারণ স্থানীয় রাজনীতি। স্যারই কলেজ বন্ধ করে দিতে বলেন। কতো কষ্ট, কতো টাকা সব জলে গেলো। অতীত জীবনে স্যারের উপদেশ এই মেয়ের চেয়েও আরো ভালো মেয়ে বিয়ে করাবো ভুলতে পারিনি। ভুলতে পারবো না মুহুরীগঞ্জ কলেজে আমার স্ত্রীকে অনেক সহযোগিতা। কিন্তু এই সমাজে ভালো কাজ মূল্যহীন।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২১ রাত ৯:০৬

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: স্যারের প্রতি শ্রদ্ধা।
নেওয়াজভাই কেমন আছেন?

২| ০৬ ই মে, ২০২১ ভোর ৪:২৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে । আমি ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন।

৩| ০৮ ই মে, ২০২১ রাত ১১:১৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: শ্রদ্ধাষ্পদ শিক্ষকদের প্রতি আপনার মন থেকে উঠে আসা শ্রদ্ধাঞ্জলি ভাল লেগেছে।
"বেয়াদব কালো চশমা পরে বাপও চেনে না" - কথাটা বেশ বলেছেন!
পোস্টে দ্বিতীয় ভাল লাগা + +।

১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫১

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি।
ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন

ঈদ মোবারক

৪| ১২ ই মে, ২০২১ রাত ১১:৪৮

সোহানী বলেছেন: স্যারের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। ভালো লাগলো আপনার স্মৃতিকথা।

১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি।
ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন

ঈদ মোবারক

৫| ১৩ ই মে, ২০২১ দুপুর ১:৫০

নির্জন অঙ্কন বলেছেন: দারুণ বলেছেন

১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি।
ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন

ঈদ মোবারক

৬| ১৪ ই মে, ২০২১ রাত ১:৫২

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:

স্যারদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা
সে সাথে রইল

১৪ ই মে, ২০২১ বিকাল ৩:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল সুখ শান্তি আর সমৃদ্ধি।
ঘরে থাকুন,সুস্থ থাকুন

ঈদ মোবারক

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.