মৌলানা জালালউদ্দিন রুমীর একটি কবিতা

১৪ ই জুলাই, ২০১৮ রাত ২:১৬

চিরন্তন প্রেম
মৌলানা রুমী (১২০৭-১২৭৩)

না চাইলে প্রেমাস্পদ প্রেমিক কখনও দেয় না হৃদয়
হৃদয় অত সহজ নয়।
ভালবাসা চায় সৌন্দর্য, চায় অনিন্দ্যতা রূপ-মাধুর্যের
রূপও কম কাঙাল নয় প্রেম-ঐশ্বর্যের।
‘এই’ হৃদয়ে যখন আলো পড়েছে ভালবাসার
‘ওই’ হৃদয়েও জেগেছে আকুলতা তাকে কাছে পাবার ।
নিশ্চিত হতে পার তুমি
হৃদয়ে তোমার বেঁধেছে জমাট খোদার প্রেম যখন
খোদাও ভালবাসেন তোমায়, হৃদয় তোমার খোদার আসন
এক হাতে বাজে কি কখনো তালি?
লক্ষ্য আর বিধানের স্বর্গীয় প্রজ্ঞায় আমরা প্রিয়-প্রিয়া পরস্পরের
এ নিয়তির লিখনে প্রতি অংশের আছে যুগল বিশ্ব চরাচরের।
জ্ঞানীর চোখে- আকাশ পুরুষ, নারী ধরণী
আকাশের দান লালন করে নারী-অবনী ।
আকাশ পাঠায় তাপ যখন হারায় ধরণী তা
ফিরিয়ে দেয় আকাশ অবনীর হারানো সজীবতা-আদ্রতা ।
‘স্বামী-আকাশ’ জীবিকা যোগায়
‘বউ-ধরণী’ ব্যস্ত শিশু আর ঘর-কন্নায় ।
এ যুগল বুদ্ধিমান-বুদ্ধিমতী
স্পষ্ট তা তাদের কাজে অতি।
সুখ যদি না পেত ওরা
থাকতো কি তারা
জড়িয়ে পরস্পর?
ফুল আর গাছ কিভাবে হবে বিকশিত ধরণী ছাড়া?
ফলাতে ফল আকাশের জল আর তাপ নয়কি ধরণী-নির্ভর?
নর ও নারীতে দিয়েছেন কামনা স্রষ্টা শেষ দিন পর্যন্ত
যাতে টিকে থাকে তাদের মিলনে বিশ্ব-মানব-প্রজন্ম ।
বিধাতারই নিয়মে এ বিশ্বের প্রতি যুগল কামনা-নির্ভর ।
দিন আর রাত দেখতে যেন প্রতিদ্বন্দ্বী একে-অপরের
কিন্তু ওরাও একই লক্ষ্য-অভিসারী
অভিন্ন দায়িত্বের টানে ওরাও বেঁধেছে জুটি ।
রাত্রি ছাড়া পায় না কোন ‘আয়’ পুরুষ-প্রকৃতি
রাত্রি ছাড়া দিবস কিছুই পাবে না ব্যয়ের ।
আত্মা বলছে তার নিম্নস্থ পার্থিব অংশকে
‘আমি স্বর্গীয় বলে নির্বাসন আমার
বেশী তিক্ত তোমার নির্বাসনের চেয়ে’ ।
দেহ চায় সবুজ লতাগুল্ম আর প্রবহমান পানি
এসবই ছিল তার উৎস-খনি।
আত্মা চায় জীবন ও সত্তা জীবন্ত
উৎস তার অসীম হিয়া প্রিয়া অনন্ত।
আত্মার সাধ মর্যাদা আর ঊর্ধ্ব-গমন
দেহ চায় ধন আর আত্মমগ্নতার উপকরণ।
তাইতো মহাত্মা চায় আত্মা ভালবাসুক আত্মাকে
তাইতো শুনি কোরানের বানী
‘তিনি তাদের ভালবাসেন তারাও ভালবাসে তাঁকে।’
যে কথা সার- যখনই কেউ কাউকে চায়
কাঙ্ক্ষিতের আত্মাও সেদিকে ধায়,
প্রেমিকের কামনায় প্রেমিক নিজেই অস্থির-অশান্ত
কিন্তু প্রেমাষ্পদের কামনা তাঁকে করে সৌম্য প্রশান্ত ।
ভালবাসা রাঙায় প্রেমিকার কপোল লুটে নেয় প্রেমিকের হৃদয়
আম্বর ভালবাসে সোনার কাঠি আশা নিয়ে কিছুই না পাবার
অথচ সোনার কাঠি দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে করছে সংগ্রাম বারবার।
(আর. এ. নিকলসনের অনুবাদ থেকে যথাসাধ্য ভাবানুবাদ)

১২ টি +২/-০