নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম এ হুসাইন

এম এ হুসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইউসুফ ও জোলায়খার প্রেম-কাহিনী

১০ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ৮:৫৯

কি ছিল প্রথম সৃষ্টি অস্তিত্ব-জগতের মহাস্রস্টার?
মহাজ্ঞানীদের কেউ কেউ বলেন, প্রথম সৃষ্টি ‘বুদ্ধিবৃত্তি’ বা ‘যুক্তি’ অমর।
কিন্তু তারপর? যুক্তির অগ্নি-আলোয় ছিল তিন শিখা, ওরা তিন সহদোর:
স্রস্টাকে, নিজেকে ও অন্যকে জানার প্রবল বাসনা।
প্রথম শিখা থেকে ‘সৌন্দর্য’ এলো!
দ্বিতীয় শিখা থেকে ‘প্রেম’ জন্ম নিলো,
যুক্তির তৃতীয় শিখা থেকে এলো কেবলই দুঃখ আর বেদনা।
‘সৌন্দর্য’ তাঁর নিজেরই রূপ থেকে এসেছিল!
ওর মুচকি হাসি থেকে লাখো-কোটি ফেরেশতা জন্ম নিলো!
প্রেম আর সৌন্দর্যের মিলনে অনেক আকাশ-মহাকাশ আর ভূমণ্ডল বেরিয়ে এলো!
অথচ সৃষ্টি হয়নি তখনও আদি-মানব আদম, আদি-পিতা তোমার আমার!
এলো আদম ধরায় হলেন প্রতিনিধি স্রস্টার!
‘সৌন্দর্য’ তা জেনে গেল,
তাই সেও মাটির আদমের দেখা পেতে ধুলির ধরায় সফরে এলো!
আদমকে দেখা সেই ‘একই বিষয়’! ‘একই কথা’ তাঁর প্রেমে ফেঁসে যাওয়া!
‘সৌন্দর্য’ ছড়িয়ে পড়ে সবটুকু অস্তিত্বে আদমের! যদিও ছিল না তখনও বিবি ‘হাওয়া’!
এভাবে কেটে যায় বহু-যুগ বহু-কাল! ‘সৌন্দর্য’ আর স্বদেশে ফিরে যায় না!
তারি দুই ভাই প্রেম ও বেদনা ‘সৌন্দর্যে’র জন্য উদ্বিগ্ন হল,
দু-ভাই তাকে খুঁজতে বেরু’ল।
অবশেষে তারা ‘সৌন্দর্য’কে খুঁজে পেল!
ওরা দেখল ‘সৌন্দর্য’ আদমের সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসেছিল!
ওরাও চাইল সেখানে যেতে, কিন্তু পেল না প্রবেশাধিকার!
‘প্রেম’, ‘বেদনা’ ও ফেরেশতাকুল
দেখে আদমের মহা-গৌরব সিজদায় হল প্রণত!
এরপরের ঘটনা- ‘সৌন্দর্য’ নিজের জন্য নতুন জায়গা খুঁজে ফিরে অবিরত!
অবশেষে সে ইউসুফ নবীর কাছে পৌঁছল ও তারি গলায় ঝুলে গেল!
‘সৌন্দর্যে’র ভাইগুলো তাকে নিয়ে অস্থির হল আবার!
কিন্তু ওদের কিছুই ছিল না আর করার!
কারণ, ‘সৌন্দর্য’ ও ইউসুফ অভিন্ন হয়ে গেল!
হতাশ হল দু-ভাই ‘প্রেম’ ও ‘বেদনা’,
তারা একে-অপরের দেশের দিকে দিল রওনা।
‘বেদনা যায় ফিলিস্তিনে (কানানে), ওঠে ‘দুঃখের ঘরে’!
সেখানে ইউসুফের বাবা ইয়াকুব নবীর সঙ্গে হয় সে একাকার!
মিল এমনই হল দু-জনার!
ইয়াকুব বেদনাকে দেয় নিজের দুই চোখ (দৃষ্টিশক্তি) উপহার!
অন্য ভাই ‘প্রেম’ও পথ চলতে চলতে মিশরে এলো!
যেতে যেতে ‘প্রেম’-অস্থির মিশরের প্রধানমন্ত্রীর ঘরে হল সুস্থির!
তাকে দেখে জাগে নানা কৌতূহল জোলায়খার!
সে ছিল স্ত্রী মিশরের প্রধানমন্ত্রীর!
সুধায় সে নারী ‘প্রেম’-এর ঠিকানা নাম-নিশানা:
-এসেছ তুমি কোথা হতে?
বলে প্রেম: এসেছি জেরুজালেম তথা বায়তুল মুকাদ্দাস থেকে!
-ঠিকানা আর বাড়ির নাম?
-রুহাবাদ ও ‘সৌন্দর্যের ধাম’!
-পেশা কি তোমার?
- ভ্রমণ পেশা আমার!
এরপর নিজের ও ভাইদের কাহিনী বলে ‘প্রেম’, শুনে জোলায়খা!
‘সৌন্দর্যে’র প্রেম-কাহিনী বলে ভাই কাটায় সময়,
চাঁদ-মুখোদের সুলতান ইউসুফ নবীর সঙ্গে ‘সৌন্দর্যে’র প্রণয়!
শুনে বলে জোলায়খা: ইউসুফ তো আছে মিশরেই!
শুনে মহা-খুশি ‘প্রেম’ ঝুলে পড়ে জোলায়খার গলায়, বলে শোনো আমার এ আকাঙ্ক্ষা!-
যেভাবেই হোক যাব আমরাও সেখানে- ইউসুফকে দেখবোই!
'প্রেমে'র সঙ্গে একাকার জোলায়খা ইউসুফের মাঝে দেখল 'সৌন্দর্য'!
এলো তার মনে মহা-প্রেম যেন মহা-ঐশ্বর্য!
কিন্তু মিশরের জনতা নিন্দার তুফান ছড়ালো!
ইউসুফ আজ মিশরের প্রধানমন্ত্রী- এ খবর ফিলিস্তিনেও গেল!
শুনে নবী ইয়াকুব সপরিবারে এলেন মিশরের রাজ-দরবারে!
দেখেন ইউসুফ-জোলায়খা রাজ-সিংহাসনে বসে আছেন হেলান দিয়ে!
তাদের একজন হয়ে গেছেন 'চরম সৌন্দর্য’!
অন্যজন হয়েছেন 'চরম প্রেম'।
ইয়াকুব নবীর সঙ্গে আসা ‘দুঃখ’-কে দেখল দুই ভাইয়ে।
এভাবে আবারও মিলে গেল তিন ভাই- 'দুঃখ', 'সৌন্দর্য' আর 'প্রেম'।
(সূত্র ও কিঞ্চিত ব্যাখ্যা: খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতকের ইরানি দার্শনিক ও আরেফ বা আধ্যাত্মিক রহস্যবাদী মনীষী শেইখ শিহাবুদ্দিন সোহরাওয়ার্দির ‘প্রেমের বাস্তবতা বিষয়ক রচনা’ বা 'রিসালাত ফি হাক্বিক্বাতাল ইশক' শীর্ষক বই থেকে নেয়া একটি উত্তর-আধুনিক স্টাইলের রহস্যময় প্রতীকে ভরপুর গল্পের যথাসাধ্য ভাবানুবাদ ও পদ্যরূপ।
সোহরাওয়ার্দি তার কথিত আলোকিত-ধারার দর্শনসহ নানা আধ্যাত্মিক তত্ত্ব তুলে ধরার জন্য রহস্যময় প্রতীকে ভরা গল্প-ভিত্তিক বেশ কয়েকটি বই লিখেছেন। যেমন, 'জিবরাইলের পাখা বা পালকের আওয়াজ', 'পিপড়া বা উই পোকার কথোপকথন', 'প্রেমের বাস্তবতা বিষয়ক রচনা' এবং সাফির-ই সিমোর্গ' বা 'সিমোর্গের দূত', 'লাল বুদ্ধিবৃত্তি' বা 'আক্‌লে সোর্খ' ইত্যাদি। অল্প-বিদ্যা-ভয়ঙ্করী টাইপের লোকজন ও ধর্মান্ধদের নিন্দা আর শাসকদের কোপানল এবং সেন্সরশিপ এড়ানোর জন্য আধুনিক ও বর্তমান যুগের অনেক সৃষ্টিশীল লেখক যেমন রহস্যময় প্রতীক ও উপমা ব্যবহার করেছেন তেমনি সুদূর অতীতের কোনো কোনো মনীষীও একই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন! )

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ দুপুর ১২:৪০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: বাহা!! অপূর্ব। বেশ ভালো লাগলো প্রেমকাহিনী ।


শুভকামনা রইল।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৮

এম এ হুসাইন বলেছেন: ধন্যবাদ জনাব পদাতিক চৌধুরি। আপনার জন্যও রইল শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.