নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম এ হুসাইন

এম এ হুসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইতিহাসের জানালা : কারবালায় ৩৬ ও ৬১ হিজরির দৃশ্যপট এবং মহামানবদের অলৌকিক ও নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণী

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২১

আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী (তাঁর ওপর বর্ষিত হোক অশেষ দরুদ ও সালাম) ৩৬ হিজরিতে বিদ্রোহী মুয়াবিয়াকে দমনের জন্য কুফা থেকে সিফফিনে যাওয়ার পথে কারবালা প্রান্তর অতিক্রম করেছিলেন। হারসামাহ ইবনে সেলিম থেকে বর্ণিত: হযরত আলী কারবালা প্রান্তরে অবতরণ করলেন এবং আমাদের সঙ্গে নামাজ আদায় করলেন। এরপর তিনি সেখানকার কিছু মাটি তুলে নিয়ে ঘ্রাণ নিয়ে বললেন: ধন্য তুমি, হে কারবালার মাটি! তোমার থেকে এমন একদল মানুষ উত্থিত হবে যারা বিনা হিসাবে বেহেশতে প্রবেশ করবে। এরপর তিনি হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘এখানে এবং ঐখানে’
সা’ঈদ ইবনে ওয়াহাব বলেন, আমি বললাম, ‘আপনার কথার তাৎপর্য কী?’ হযরত আলী (তাঁর ওপর বর্ষিত হোক সালাম) বললেন: অত্যন্ত মর্যাদাবান একটি পরিবার এ প্রান্তরে অবতরণ করবে। তাদের ওপর তোমাদের থেকে ভর্ৎসনা এবং তোমাদের ওপর তাদের থেকে ভর্ৎসনা। আমি বললাম, আপনার এ কথার অর্থ কী? তিনি বললেন: এর অর্থ তোমরা তাঁদেরকে (ইমাম হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীদেরকে) হত্যা করবে এবং তাদেরকে হত্যা করার জন্য তোমাদেরকে দোযখে নিক্ষেপ করা হবে।
হাসান বিন কাসির তারা বাবা থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আলী ((তাঁর ওপর বর্ষিত হোক সালাম)) কারবালা প্রান্তরে দাঁড়ালেন এবং বললেন, ‘জাতু কারবি ও বালায়ি- দুঃখ ও বিপদের ভূমি’। এরপর তিনি হাত দিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানের দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং বললেন, এইখানে তারা মাল-সামান নামাবে ও এখানেই তাদের জন্তুগুলো ঘুমানোর স্থান। এরপর আরেকটি স্থান দেখিয়ে বললেন, এই জায়গাটি হল তাদের নিহত হওয়ার জায়গা।
হারসামাহ ইবনে সেলিম (প্রথম বর্ণনাকারী) বলেন: সিফফিনের যুদ্ধ শেষ হল এবং আমি আমার বসবাসের এলাকার দিকে ফিরে এলাম। কারবালা প্রান্তরে হযরত আলীর এইসব ঘটনার বিবরণ আমার স্ত্রীর কাছে বর্ণনা করি। আমার স্ত্রী ছিলেন হযরত আলীর ভক্ত। আমি তাকে বললাম, হযরত আলী কিভাবে গায়েবের ঘটনা জানলেন? আমার স্ত্রী বললেন: আমাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করো না, কারণ ইমাম (হযরত আলী) সত্য ছাড়া অন্য কিছু বলেন না।
ওই ঘটনার বহু বছর পর ৬১ হিজরির মহররম মাসে ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ ইমাম হুসাইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বিশাল সেনাদল পাঠায়। আর আমি (হারসামাহ ইবনে সেলিম) ওই সেনাদলেই ছিলাম। আমি যখন কারবালা প্রান্তরে পৌঁছলাম তখন হযরত আলীর সেইসব কথা আমার মনে পড়ল। হুসাইন বিরোধী সেনা সদস্য হলাম বলে মনে মনে খুবই ব্যথিত হলাম। নিজের ঘোড়াকে ইমামের তাঁবুগুলোর দিকে ছুটালাম এবং তাঁর সামনে উপস্থিত হলাম। তাঁকে সব ঘটনা খুলে বললাম।
ইমাম হুসাইন (তাঁর ওপর বর্ষিত হোক অশেষ দরুদ ও সালাম) বললেন: অবশেষে তুমি কি আমাদের সাথে রয়েছ নাকি আমাদের বিরুদ্ধে? আমি বললাম, ‘কোনোটাই না। আমি আমার পরিবারকে কুফায় রেখে এসেছি এবং ইবনে জিয়াদকে ভয় পাচ্ছি।’ তিনি বললেন: যত শিগগিরই পার এ প্রান্তর ত্যাগ কর। তা না হলে মুহাম্মাদ (সা.)’র প্রাণ যে আল্লাহর হাতে তার শপথ করে বলছি, যে কেউ আমাদের সাহায্যের আবেদন শুনবে কিন্তু আমাদেরকে সাহায্য করবে না আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করবেন।
তাই আমি সেই জায়গা থেকে সরে পড়লাম যাতে ইমামের শাহাদাতের দিবসকে না দেখতে হয়। (সূত্র: প্রখ্যাত সুন্নি মনীষী ইবনে আবিল হাদিদের বই ‘শরহে নাহজুল বালাঘা বা নাহজুল বালাঘার ব্যাখ্যা’, সিফফিনের ঘটনা অধ্যায়।)
** * * **
ইসলামী বর্ণনায় এসেছে, কোনো এক সময় মহানবী (তাঁর ও তাঁর পবিত্র বংশধরদের ওপর বর্ষিত হোক অশেষ দরুদ ও সালাম) স্বপ্নে দেখেন যে, বনী উমাইয়্যা তাঁর মিম্বরে বানরের মত নাচানাচি করছে। এ স্বপ্ন দেখে তিনি এমনই শোকাহত হলেন যে, এরপর যতদিন বেঁচে ছিলেন তিনি আর হাসেননি। তাঁর এই স্বপ্ন দেখার পর পবিত্র কুরআনের সুরা বনি ইসরাইলের ৬০ নম্বর আয়াত নাজেল হয়েছিল। ওই আয়াতে বলা হয়েছে:
“এবং (স্মরণ কর) যখন আমরা তোমাকে বলেছিলাম যে, নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক মানুষকে পরিবেষ্টন করে আছেন এবং আমরা তোমাকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলাম তা কেবল মানুষের জন্য পরীক্ষার মাধ্যম ছিল এবং কুরআনে বর্ণিত অভিশপ্ত বৃক্ষটিও। আমরা মানুষকে ভীতি প্রদর্শন করতে থাকি,কিন্তু তা তাদের চরম ঔদ্ধত্যকেই কেবল বৃদ্ধি করে।”তাফসিরে তাবারিসহ কয়েকটি সুন্নি সূত্রমতে, কুরআনে উল্লিখিত ওই “অভিশপ্ত বৃক্ষ” বলতে আবু সুফিয়ানের বংশধর তথা উমাইয়াদের বোঝানো হয়েছে এবং রাসূল (সা.) স্বপ্নে তাঁর মিম্বরে বানরদের নাচানাচির যে ঘটনাটি দেখেছিলেন তার অর্থ উমাইয়াদের মাধ্যমে খেলাফত দখল করা হবে।
পরবর্তীকালে উমাইয়া নেতা মুয়াবিয়া ছলে-বলে-কৌশলে হযরত আলীর শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয় এবং মুয়াবিয়ার গুপ্তচরদের সহায়তায় এক ধর্মান্ধ খারেজিকে দিয়ে হযরত আলীকে শহীদ করা হয়। এরপর ইমাম হাসান (আ)-কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে মুয়াবিয়া। আর এভাবে শুরু হয় মুয়াবিয়ার রাজতন্ত্র। তারপর ইয়াজিদ মুসলিম জাহানের কথিত খলিফার দাবিদার হয়ে ইমাম হুসাইনকে তার আনুগত্য করার নির্দেশ দেয়। আনুগত্য পালনে ইমামের অস্বীকৃতির কারণে ঘটে কারবালার ঐতিহাসিক ও বিশ্ব-ইতিহাসের সবচেয়ে হৃদয়-বিদারক ঘটনা। ইয়াজিদের নির্দেশে মক্কার জনগণকে বশে আনতে কাবা ঘর ধ্বংস করা হয়েছিল এবং মদিনায় তিন দিন ধরে চালানো হয়েছিল গণহত্য ও গণধর্ষণ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.