নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এম এ হুসাইন

এম এ হুসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সৌদি রাজাকে ট্রাম্পের বার বার উপহাস ও যুবরাজের সাম্প্রতিক মোসাহেবির রহস্য!!!

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৬

শরৎচন্দ্রের উপন্যাস দেনা-পাওনার প্রধান চরিত্র বা নায়ক জমিদার জীবানন্দের কথা মনে আছে? মন্দিরের পুরোহিতসহ সমাজের উচ্চবিত্ত শ্রেণীর অনেককেই ন্যাংটা করে দিতেন তিনি স্পষ্ট ও রাখ-ঢাকহীন মন্তব্য করে। স্পষ্টভাষী জীবানন্দ যদিও ছিলেন মদপানে অভ্যস্ত তবুও আঁতে-ঘা-লাগানো ও গোমর-ফাঁক-করা তার কথাগুলোর প্রতিবাদ করার সাহস ছিল না অভিযুক্ত ব্যক্তিদের। তবে উপন্যাসের শেষের দিকে তাকে দেখা যায় ভালো মানুষ হয়ে যেতে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনান্ড ট্রাম্পের আচার-আচরণ ও কথা-বার্তা থেকে কেনো জানি সেই জীবানন্দের কথা মনে পড়ে যায় যদিও ট্রাম্প হয়ত কখনও জীবানন্দের মত ভাল মানুষ হবেন না। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রায়ই মিডিয়াগুলোকে অ্যাটাক করে কথা বলেন। তবে তার উচ্চারিত তিক্ত বা অপ্রিয় সত্য কিংবা খাঁটি সত্যগুলো খুবই লক্ষ্যণীয়! প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই নির্বাচনী প্রচার-অভিযানের সময় তিনি বলেছিলেন হিলারিই হচ্ছেন ধর্মান্ধ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস-এর জন্মদাতা জননী। আর সে সময় তিনি একবার বলেছিলেন, সৌদি সরকার হচ্ছে দুধের গাভী, এই গাভী যতদিন দুধ দেবে ততদিন তাকে টিকিয়ে রাখতে হবে!

ট্রাম্পকে অনেকেই পাগলাটে ও অসম্ভব রকমের মুখ-খারাপ লোক বলে নিন্দা করলেও বা তার নারী-ঘটিত কেলেঙ্কারি নিয়ে তার সম্পর্কে হীন ধারণা পোষণ করলেও এটা স্পষ্ট যে লোকটির লজ্জা-শরম না থাকলেও অন্য অনেক মার্কিন বা পশ্চিমা নেতার মত তিনি খুব বেশি কপট বা মুনাফিক নন। অর্থাৎ ভদ্রতার মুখোশ পরে অন্য জাতি বা দেশগুলোকে শোষণ করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প কোনো রাখ-ঢাক করেন না। তিনি যাকে মারতে যান তাকে সরাসরি ছুরি বা অস্ত্র নিয়ে মারতে আসেন। পেছন থেকে ছুরি মারেন না। তাই তিনি ন্যাটো জোটের ইউরোপীয় সদস্যদের বলেন, তোমাদের নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর সবচেয়ে বড় শক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন কাজ করছে তখন তোমাদের কাছ থেকেও অর্থ বা চাঁদা আদায় করতে হবে!

ব্যবসায়ী থেকে প্রেসিডেন্টে পরিণত-হওয়া ট্রাম্পের মুসলিম-বিদ্বেষ, বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য-যুদ্ধ ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে তার বেরিয়ে যাওয়ার পেছনের মূল চালিকা-শক্তি হল অর্থের লোভ। বিশ্বের নানা দিক থেকে অর্থ হাতিয়ে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব কমাতে চান এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে ভোটারদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে আবারও ক্ষমতায় যাওয়ার আশা করছেন।

তবে মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে আছে ইরান ও তার মিত্ররা। অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে খুব বেশি সংঘাতে জড়াতে চায় না ট্রাম্প। ট্রাম্প এরই মধ্যে আপোষ করেছেন উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে।
মধ্যপ্রাচ্যে ধর্ম-ভিত্তিক ওয়াহাবি সন্ত্রাস ছড়িয়ে দেয়ার নাটের গুরু সৌদি সরকারের কাঁধে খুব ভালোভাবেই সওয়ার হতে পেরেছেন ট্রাম্প। ইরান-জুজুর ভয় দেখিয়ে সৌদির কাছে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এক ছবিতে দেখা গেছে ঘাগু ব্যবসায়ীর মতই ট্রাম্প সৌদি যুবরাজকে দেখাচ্ছিলেন অস্ত্রের অ্যালবাম। আর বলছিলেন, দেখ এ পর্যন্ত এই এই অস্ত্র আমরা বিক্রি করেছি তোমাদের কাছে।
সৌদির কাছে মূলত অস্ত্র বিক্রির জন্যই ইয়েমেনে যুদ্ধ বাধিয়ে রেখেছে মার্কিন সরকার। অবশ্য বাবেল মান্দাব প্রণালী নিয়ন্ত্রণও তার আরেকটি বড় উদ্দেশ্য। সৌদি সরকারের কাছে অস্ত্র বিক্রির প্রতিযোগিতায় খুব বেশি পিছিয়ে নেই ইউরোপও। তবে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্য থেকে রিয়াদের কাছে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র বিক্রি করছে ব্রিটেন। ইয়েমেনের সাধারণ জনগণের ওপর ও বেসামরিক স্থাপনার ওপর সৌদি বিমান হামলাগুলো গণহত্যায় রূপ নেয়া সত্ত্বেও দেশটির কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করছে না মানবাধিকারের দাবিদার পশ্চিমা শক্তিগুলো।

আল্লাহর দেয়া সম্পদ তেলের অপব্যবহারে অভ্যস্ত সৌদি সরকারের জন্য ইয়েমেনের যুদ্ধ শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। কারণ তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে হামলা চালিয়েও দারিদ্র ও ক্ষুধাপীড়িত ইয়েমেনের শিয়া হুথি যোদ্ধা ও তাদের সমর্থকদের কাবু করতে পারেনি সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট। অথচ সৌদি আরবের তেল, অর্থ ও অস্ত্রের শক্তি কাজে লাগানো যেত ফিলিস্তিনসহ মুসলিম বিশ্বের নির্যাতিত জাতিগুলোর জন্য। সৌদি সরকার আজও পশ্চিমাদের জন্য দুধ দোহনের ভাল গাভী হয়ে আছে বলেই একে টিকিয়ে রাখছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। এমনকি জায়োনিস্ট বা ইহুদিবাদী ইসরাইলও সৌদি সরকারের ভালো বন্ধুতে পরিণত হয়েছে! (সৌদির দরবারি আলেমরা ইসরাইলের বিরুদ্ধে কথা বলাকে হারাম ঘোষণা করেছেন এবং ইসরাইল সফরের পরামর্শ দিচ্ছেন!) কিন্তু গাভী যখন বৃদ্ধ হয়ে যাবে এবং সৌদির অর্থনীতি যখন আরও দুর্বল হতে থাকবে তখন পশ্চিমারাই হয়তো লাথি মেরে ফেলে দেবে দুধহীন বৃদ্ধ গাভীকে। এরপর গাভীকে নেয়া হবে হয়ত কশাইখানায়! এরপর তারা খোঁজ করবে কোনো নতুন গাভীর!

ইরাকের সাদ্দাম হোসেন, ইরানের শাহ ও মিশরের হোসনি মোবারকও এক সময় পাশ্চাত্যকে অনেক সার্ভিস দিয়েছিল। কিন্তু তাদের শেষ রক্ষা হয়নি! পাশ্চাত্যের হয়ে এবং আরব রাজা-বাদশাহদের হয়ে সাদ্দাম ৮ বছর ধরে ইরানের সঙ্গে প্রক্সি যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পশ্চিমাদের সাপ্লাই-দেয়া বিপুল অস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্রের ভাণ্ডার সাদ্দামের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। মার্কিন সরকারের পরোক্ষ ইঙ্গিতে মাথা-মোটা সাদ্দাম ঝাঁপিয়ে পড়েছিল কুয়েতের বিরুদ্ধে এবং ভেবেছিল তেল-সমৃদ্ধ কুয়েতকে দখল করে সাদ্দাম যুদ্ধের ধকল কাটিয়ে ইরাককে আবারও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমৃদ্ধ করতে পারবেন। এরপরের ইতিহাস সবারই জানা। সাদ্দামকে কুয়েত থেকে তাড়িয়ে দেয় সম্মিলিত পশ্চিমা শক্তি। জাতিসংঘের মাধ্যমে ইরাককে করা হয় রাসায়নিক অস্ত্রসহ সব ধরনের বিধ্বংসী অস্ত্র থেকে মুক্ত। এমনকি ইরাকের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ধ্বংস করে দেয়া হয়। ফলে ২০০৩ সালে কথিত পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্র ধ্বংসের অজুহাতে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা হলে ইরাক বড় ধরনের কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। যদিও ইরাকি জেনারেলদের আগেই কিনে ফেলা হয়েছিল বিপুল অর্থ ঘুষ দিয়ে!

কুর্দি ও ইরাকের সংখ্যাগুরু মুসলিম সম্প্রদায় শিয়াদের ওপর গণহত্যা চালিয়ে সাদ্দাম ইরাকি জনগণের একটা বড় অংশের কাছেই ঘৃণ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিল। ফলে ইরাকে যেন কোনো গণ-বিপ্লব না ঘটে বা গণতান্ত্রিক শক্তি ক্ষমতায় আসার পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সে জন্য সাদ্দাম-বিরোধী শক্তিগুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখাও ছিল ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেছে ইরাকের ওপর পশ্চিমা শক্তিগুলোর প্রভাবের চেয়ে ইরানের প্রভাবই জোরালো হয়েছে। ইরাকে আইএস বা সাবেক আল-কায়দা ও বাথিস্টদের সম্মিলিত শক্তির উত্থানের প্রতি পশ্চিমা শক্তিগুলো ও তাদের সেবাদাস আরব সরকারগুলোর মদদের কারণেই এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ইরান ধর্মর নামে সন্ত্রাসে জড়িত আইএস নির্মূলে ইরাকিদের সহায়তা দেয়ায় ইরানের ইসলামী সরকার দেশটিতে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

ফিরে আসছি ট্রাম্পের কথায়। ট্রাম্পকে পাগল মনে হলেও আসলে তিনি জাতে মাতাল তালে ঠিক। তিনি তার স্বার্থটা খুব ভালোই বোঝেন। রাজতান্ত্রিক সৌদি সরকারের গণতন্ত্রহীনতা ও অজনপ্রিয়তা তিনি ভালোই আঁচ করতে পারেন। ইয়েমেন যুদ্ধে জড়িয়েই যে সৌদি অর্থনীতি দুর্বল হয়েছে তা নয়। ইরাক ও সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোকে অর্থ ও নানা ধরনের সাহায্য যোগাতে গিয়েও সৌদি অর্থনীতির ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। সাদ্দাম যেমন এ জাতীয় চাপ কমাতে চেয়েছিল কুয়েত দখল করে তেমনি সৌদি সরকারও চেয়েছিল কাতারের কাঁধে সওয়ার হয়ে অর্থনৈতিক অবস্থাকে আবারও চাঙ্গা করতে। কিন্তু কাতার মনে হয় চিরকালের জন্যই সৌদির থাবা থেকে নিজেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে ইরান ও তুরস্কের সহযোগিতার সুবাদে। তাই ট্রাম্প জানেন যে গণ-বিচ্ছিন্ন সৌদি সরকার নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রায় শতভাগ পর-নির্ভরতা ও বিশেষ করে মার্কিন নির্ভরতার কারণে হাল্কা কোনো আঘাতেই মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এ জন্যই ট্রাম্প বলেছেন যে সৌদি সরকার মার্কিন সহায়তা ছাড়া দু সপ্তাও টিকতে সক্ষম নয়। তাই চাঁদার রেটটা কিন্তু বাড়াতেই হবে!

বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাস্তান তথা মার্কিন মাস্তানের ছাতা সরালেই সৌদির নিজস্ব শক্তি বলতে কিছু থাকবে না। অন্যদিকে প্রতিশোধের জন্য নিশ্চয়ই ওৎ পেতে আছে ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরান। কারণ ইরান, ইরাক ও সিরিয়ার সরকার-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা দিয়ে আসছে সৌদি সরকার। তাই কোনো কোনো মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, মার্কিন মদদ ছাড়া সৌদি সরকার কয়েক ঘণ্টার জন্যও টিকে থাকতে পারবে না। এসব মন্তব্য ও হুঁশিয়ারীর তাৎপর্য হল বেশি বেশি চাঁদা না দিলে যে কোনো সময় ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়া হবে! সৌদি আরবে ব্যাপক গণ-অসন্তোষ রয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে কয়েক মিলিয়ন শিয়া মুসলমান ন্যায্য অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। এ ছাড়াও বর্তমান সৌদি যুবরাজের সংস্কার নীতিতে ক্ষুব্ধ ওয়াহাবি রক্ষণশীল আলেমরা। যুবরাজ পাশ্চাত্যের কাছে সৌদি আরবকে প্রগতিবাদের দিকে অগ্রসরমান দেখানোর জন্য সেখানে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দিয়েছেন। সি-বিচে নারীদের খোলামেলা পোশাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিয়েছেন। সম্প্রতি সৌদির সংস্কার বিষয়ে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে কথা বলায় নিখোঁজ রয়েছেন মক্কার পবিত্র মসজিদের ইমাম। অন্য আরও অনেক আলেমও গুম বা খুন হয়েছেন বলে নানা খবর শোনা যাচ্ছে। যুবরাজ আশা করছেন তার এসব পদক্ষেপের ফলে এক শ্রেণীর সৌদি নাগরিক তার সমর্থকে পরিণত হবেন।

এদিকে সম্প্রতি (গত বৃহস্পতিবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৮) সৌদি যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমান বলেছেন, জ্বালানি তেলের বিষয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবিগুলো সৌদি সরকার পূরণ করেছে এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টকে সহযোগিতা দিতে তিনি ব্যাকুল হয়ে আছেন। ট্রাম্প সৌদি সরকারকে জ্বালানি তেলের উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য চাপ দিয়ে আসছেন যাতে তেলের অন্যতম প্রধান উৎস ইরান তেল রপ্তানি কমিয়ে দিলেও বিশ্ব-বাজারে তেলের যোগান কমে না যায় এবং সস্তায় তেল কেনা যায়! ট্রাম্পের সেই দাবি পূরণ করা হয়েছে বলে বিন সালমান ব্লু মবার্গ টিভিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে উল্লেখ করেছেন।

বিন সালমানের এই সাক্ষাৎকারের একদিন আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে উল্লসিত সমর্থকদের এক সমাবেশে বলেছিলেন, আমেরিকার সেনা-সমর্থন ছাড়া রাজা সালমান দুই সপ্তা'ও ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না। তিনি বলেন, মার্কিন সরকারই সৌদি আরবকে রক্ষা করছে। তাই মার্কিন বাহিনীর জন্য সৌদিকে অর্থ দিতে হবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগেও কয়েকবার এ জাতীয় কথা বলেছেন। আর সৌদি সরকারকে দুধের গাভীর সঙ্গে তুলনার কথাটা বার বার সৌদি নেতৃত্বকে স্মরণ করিয়ে দিতে ভুল করছেন না ইরানি নেতৃবৃন্দ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষ থেকে সৌদি আরবের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মাদ জাওয়াদ জারিফ বলেছেন, এই অবমাননা নিজ দেশের নিরাপত্তার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে অর্পণ করার পুরস্কার। তিনি এ ধরনের অবমাননার হাত থেকে রক্ষা পেতে একটি শক্তিশালী মধ্যপ্রাচ্য গঠনের জন্য এ অঞ্চলের দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দেখুন লিংক: [link|http://parstoday.com/bn/news/iran-i64784|

সৌদি সরকারের পরাধীনতার শেকল এতই মজবুত যে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবমাননা নিরবে হজম করতে বাধ্য। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবমাননাকর বক্তব্য প্রসঙ্গে সৌদি যুবরাজ বিন সালমান ব্লুমবার্গকে বলেছেন, ‘যে কোনো বন্ধু আপনার সম্পর্কে ভালো ও মন্দ কথা বলতেই পারে। আমি তো ট্রাম্পের সঙ্গে সহযোগিতার প্রবল অনুরাগী!’ বিন সালমানের মোসাহেবিসুলভ মন্তব্যের কারণ হল মার্কিন সরকারকে তুষ্ট করে তিনি ভবিষ্যতে পুরোপুরি রাজা হওয়ার পথটি মসৃণ ও সহজ করতে চান। এর আগে গুজব বা খবর রটেছিল যে প্রতিদ্বন্দ্বীদের গুলিতে বিন সালমান মারাত্মকভাবে আহত হন বা মৃত্যুর হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছিলেন!
সৌদি সরকার মাঝে মধ্যেই এটা দেখাতে চায় যে তার সব শত্রুতা বা প্রতিযোগিতা কেবল ইসলামী ইরানের সঙ্গেই। তাই মার্কিন সরকারসহ অন্য কোনো মিত্র সরকারের অপমানজনক কথা সহ্য করা বা তাদেরকে চাঁদা দিয়ে চলাটা সৌদি সরকারের জন্য স্বাভাবিক বিষয়! বিন সালমানের কথায়ও মাঝে মধ্যেই তার প্রতিফলন দেখা যায়।

আসলে জনগণের শক্তি ও নৈতিক শক্তি না থাকার কারণেই দুর্বল সরকারগুলো পরাশক্তিগুলোর আচল ধরে বা তাদের লেজুড়বৃত্তি করে টিকে থাকতে চায়। অন্যদিকে পরাশক্তিগুলোও তা বুঝতে পেরে এসব লেজুড় সরকারের কাছ থেকে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, কূটনৈতিক ও সামরিক ফায়দা তুলতে থাকে।
সৌদি সরকারের যদি বিন্দুমাত্র আত্মসম্মানবোধ ও জনগণের শক্তির নিয়ে মাথা উঁচু করার ইচ্ছা থেকে থাকে তাহলে তার উচিত ইরানসহ গণতান্ত্রিক প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্ব করে আঞ্চলিক নিরাপত্তা জোরদার করা এবং পরাশক্তিগুলোর হস্তক্ষেপের সুযোগ বন্ধ করতে সন্ত্রাসী ও বিভেদকামী নীতি পরিত্যাগ করা।
মিশরের সাবেক জাতীয়তাবাদী জনপ্রিয় নেতা নাসের বলেছিলেন: বিশ্বের দেশগুলোতে রাজা বলে আর কিছু থাকবে না, রাজা কেবল টিকে থাকবে তাসের মধ্যেই। ট্রাম্পের অন্যতম অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ট্রাম্প-কার্ড সৌদি রাজতান্ত্রিক সরকারও নাসেরের এই ভবিষ্যদ্বাণীর শিকার হন কিনা তা হয়ত স্পষ্ট হবে খুব শিগগিরই বা অদূর ভবিষ্যতের দিনগুলোতে। #

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.