![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
খলিফা হারুন অর রশিদ ভ্রমণে যাচ্ছেন। সঙ্গে বেগম জোবায়দা ও পাইক-পেয়াদা প্রহরীর দল। কোথা হতে কথিত পাগল বা দরবেশ বহ্লুল হারুনের দিকে কিছু বলতে এল। হারুনের অনুমতি পেয়ে কাছে এসে বলল: বেহেশ্ত কিনবে?
: কত দাম?
:লাখ টাকা
: কই তোমার বেহেশ্ত?
বহ্লুল হিজিবিজি আঁকা এক মলিন কাগজ দেখাল।
হারুন অবজ্ঞার হাসি হেসে বললেন: যাও! পাগলামির আর সময় পেলে না!
বহ্লুল সরে গিয়ে এবার কাগজটা বেগমের কাছে ধরল। বেগম কোনো কথা না বলেই গলা থেকে হীরার হার খুলে বহ্লুলকে দিলেন। বহ্লুল চলে গেল।
** ***
বাগদাদের আদালতে প্রচণ্ড ভিড়। জনতার প্রায় সবাইই কাঙ্গাল! লাখ টাকা দেনার দায়ে আলী হুসাইন সওদাগরের বিচার হবে। ধনী বন্ধুরা কেউ আসেনি। অথচ এক সময় তার দস্তরখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম হত। ধনী-গরিব সবাই সেখানে পোলাও কোর্মা খেয়েছে এক সময়! আলী হুসাইনের কারাদণ্ডের ঘোষণা শুনে গরীব-দুঃখী হাহাকার করে ওঠে। হঠাৎ বহ্লুল সেখানে এসে বলে: আমি টাকা দেব। খালাস আলী হুসাইন!
***
রাজপুরীতে খলিফা বেগমকে বলছেন: কতটা বোকা হলে লাখ টাকার হীরার হার দিয়ে একটা পচা কাগজ কেউ কিনতে পারে!!? বেগম বললেন: বেহেশ্ত কিনেছি।
: বহ্লুল একটা পাগল। আর তুমি তারও বাড়া!
: কিন্তু আমি তাকে সত্যবাদী বলেই জানি।
: ও একটা বড় বাটপার!
: কিন্তু আমি তাকে সরল বিশ্বাসে হার দিয়েছি। আল্লাহ আমার দিল দেখবেন।
: তোমরা মেয়েরা যে কি আজব!! মেয়েলোকদের বুদ্ধির এই হল বহর! কথা বলে কোনো লাভ নেই!
***
রাজপুরীতে হাহাকার! জোবায়দা মারা গেছে। হারুনও কাঁদছেন। সমাহিত হলেন রানী। হারুন শেষবারের মত রানীর মুখ দেখতে চাইলেন। কবরে নেমে দেখেন লাশ নেই। আছে বড় এক সুড়ঙ্গ। সুড়ঙ্গ পথে এগিয়ে দেখলেন এখানে যেন এক বেহেশ্তি উদ্যান! এমন মধুর বাতাস ও পাখিদের মিষ্টি কলতান! কিন্তু জোবায়দা কোথায়? সামনে এক বালাখানা। আর তারই এক জানালায় দেখা গেল রানীকে! রানী তার দিকে চেয়ে আছেন। হারুন দৌড় দিয়ে ঢুকতে চাইলেন প্রাসাদে। কিন্তু দারোয়ান বাধা দিল। খলিফার রাগ হল। তবুও অনুনয় বিনয় করে বললেন: আমার সব রাজত্ব তোমায় দেব, আমাকে আমার বেগমের কাছে যেতে দাও। দারোয়ান কর্ণপাতও করল না। হারুন কেঁদে দিয়ে বললেন: জোবায়দা! আমাকে ভেতরে নিয়ে যাও। রানী বললেন: এটা সেই বেহেশ্ত যা আমি হারের বদলে কিনেছি। এখানে অন্যের আসার অধিকার নেই। খলিফা কাতরভাবে কেঁদে উঠলেন। ঘুম ভেঙ্গে গেল। পাশে রানীও ঘুমে। হারুনের বালিশ চোখের পানিতে ভিজে আছে।
** **
ভোর বেলায় দরবারে এসে হারুন প্রথমেই নির্দেশ দিলেন বহলুলকে দরবারে হাজির করতে। বহলুল আসল। খলিফা বললেন:
এস বহ্লুল, এস এখানে আমার পাশে বস।
: কি গো ! কি জন্যে ডেকেছ! গর্দান নেবে নাকি- তোমাদের তো ওই একটাই কাজ! হি হি হি হি!
: না বহ্লুল! তুমি বেহেশ্ত বিক্রি করবে?
: নাগো না! তোমার বাদশাহী দিলেও না!
: তাহলে বেহেশ্ত কিসে পাওয়া যায়?
: সরল বিশ্বাসে। আমি যাই। # (এ গল্পটি এক সময় বাংলাদেশ স্কুল টেক্সট বুক বোর্ডের অষ্টম শ্রেণীর পাঠ্য ছিল। কিসসা ও কাহিনী শীর্ষক বইয়ের এ গল্প ছাত্র-জীবনে পড়েছিলাম। ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘রকমারী’ বই থেকে নেয়া হয়েছিল এ গল্প।)
এ গল্প থেকে হারুন সম্পর্কে কিছু ধারণা পাওয়া যায় বহ্লুলের মাধ্যমে (দ্র: কি গো ! কি জন্যে ডেকেছ! গর্দান নেবে নাকি- তোমাদের তো ওই একটাই কাজ! হি হি হি হি!)। বহ্লুল ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী ও মহানবীর (সা) আহলে বাইত বা পবিত্র বংশধারার অনুরাগী। কিন্তু পাগলের ভান করে চলতেন সরকারের চোখে ধুলো দিতে। পাগলের ভান করেই তিনি হারুনের বিচারমন্ত্রী বা কাজি হওয়ার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিলেন। সরকার এসব জেনেও কিছু করতে পারত না। কারণ আইনের দৃষ্টিতে পাগলের বিচার করা যায় না। মামুনের বাবা হারুন ছিলেন আব্বাসিয় বংশের প্রথম দিকের অন্যতম খলিফা। কথিত এই খলিফাদের বংশ এসেছে মহানবীর (সা) চাচা হযরত আব্বাসের (রা) বংশ-ধারা হতে। এরা উমাইয়া বংশের রাজতান্ত্রিক ও ইয়াজিদি ধারার শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের বিদ্রোহের সময় তাতে যোগ দিয়েছিলেন এবং আলী-হাসান-হুসাইন-ধারার নবী-বংশকে ক্ষমতায় বসানো হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে উমাইয়া বিরোধী গণ-আন্দোলনকে বেগবান করতে সক্ষম হন। কিন্তু উমাইয়ারা উৎখাত হলে তারা আসল নবী-বংশকে ক্ষমতায় না বসিয়ে নিজেরাই নবীর বংশধর হওয়ার দাবিদার হয়ে ক্ষমতা দখল করে এবং নবী-বংশের প্রেমিকদের ওপর উমাইয়াদের মতই, এমনকি তাদের চেয়েও কখনও কখনও অনেক বেশি নৃশংস আচরণ করে। ঠিক যেমন আজকাল অনেক দেশে গণতন্ত্রের নামে চেপে-বসা অনেক সরকার চরম স্বৈর-শাসনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। নবী বংশের অনেক প্রখ্যাত ইমামকে আব্বাসিয় কথিত খলিফারা শ্রদ্ধা দেখানোর নাম করে মদিনা থেকে ডেকে এনে গৃহবন্দি করতেন ও গোপনে হত্যা করতেন।
©somewhere in net ltd.