![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের গৌরবময় ৪৯তম স্বাধীনতা-বার্ষিকী বা স্বাধীনতা ঘোষণার দিবস উপলক্ষে শহীদ পরিবারসহ দেশের সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা শুভেচ্ছা। একইসঙ্গে ২৫ মার্চের গণহত্যাসহ সব ধরনের গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞ, মিয়ানামার, ফিলিস্তিন, কাশ্মির ও ইয়েমেনের জনগণের ওপর গণহত্যা এবং নিউজিল্যাণ্ডের সাম্প্রতিক হত্যাযজ্ঞের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এইসব বর্বরতার শিকার মানুষদের বেদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি এবং গভীর শোক ও সমবেদনা জানাচ্ছি।
বর্তমান ও সমসাময়িক যুগের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় বিশ্বের অনেক দেশ ও জাতি খুব দ্রুত উন্নত হতে এবং তাদের রাষ্ট্রকে উন্নত করতে পেরেছে। ইউরোপের দেশগুলোর কথা বাদ দিলেও এশিয়ার পূর্বাঞ্চলে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মালয়েশিয়ার অগ্রগতিও এক্ষেত্রে জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় শিল্পোন্নত দেশ জাপান ঊনবিংশ শতকের শেষের দিকেও ছিল কৃষি-নির্ভর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অনুন্নত একটি দেশ। সেখানকার সমাজ-ব্যবস্থাও ছিল খুবই রক্ষণশীল এবং প্রাচীন মূল্যবোধ ও প্রথা-কেন্দ্রিক। ১৮৮০ সনের দিকে রাজতান্ত্রিক জাপান সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে পড়াশুনা করতে একদল মেধাবী ছাত্রকে পাশ্চাত্যে পাঠায়। তারা সেখান থেকে ফিরে এসে খুব দ্রুত জাপানকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে পাশ্চাত্যের চেয়েও উন্নত করতে সক্ষম হয়। অন্য কথায় পাশ্চাত্য বিগত ২০০ বছরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষণায় নিয়োজিত থেকে যতটুকু উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয় জাপান মাত্র ২০-৩০ বছরেই এক্ষেত্রে ততটা উন্নত হয় এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে তারা পাশ্চাত্যকেও ছাড়িয়ে যায় খুব দ্রুত। সামরিক শিল্প ছাড়া অন্য সব শিল্পে জাপান এখন বিশ্বে শীর্ষস্থানীয়। সমরাস্ত্রেও তারা চাইলেই পরমাণু বোমা ও ক্ষেপণাস্ত্র এবং রণতরী ও রণ-বিমানসহ এ শিল্পের সব ক্ষেত্রেই অত্যাধুনিক বা সর্বাধুনিক অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা রাখে। সরকার বা নেতৃবৃন্দের সঠিক, লাগসই ও টেকসই উন্নয়ন-নীতি, সুদৃঢ় আত্মবিশ্বাস, সততা, নিষ্ঠা ও অধ্যবসায় ছিল জাপানের সাফল্যের প্রধান চালিকাশক্তি। জাপানিরা কখনও এটা ভাবেনি যে তাদেরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে সব সময়ই পাশ্চাত্যের ছাত্র হয়ে থাকতে হবে। কেবল একবার ছাত্র হয়েই তারা ওস্তাদের বা শিক্ষকের পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। (তবে জাপান আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ক্ষেত্রে মার্কিন সরকারের বশীভূত হয়ে আছে সেই দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে মার্কিন পরমাণু বোমার আঘাত খাওয়ার পর থেকে। অথচ এই নতজানু অবস্থা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ক্ষমতা জাপানের রয়েছে। যেমন, ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জাপান ইরানি তেল কেনা অব্যাহত রেখেছে।)
দক্ষিণ কোরিয়া ও মালয়েশিয়া ছিল অবিভক্ত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক অনুন্নত। কিন্তু এ দুটি দেশ আজ পাকিস্তান, ভারত ও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক গুণ উন্নত। মালয়েশিয়ার জনশক্তি তো বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন কোটি। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ কোটি। আর জাপানের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় সাড়ে ১২ কোটি। জাপানী, কোরিয়ান ও মালয়েশিয়দের তুলনায় বাংলাদেশীদের মেধা, শারীরিক শক্তি, জনশক্তি ও প্রাকৃতিক সম্পদ কি কখনও কম ছিল? তাহলে বাংলাদেশ কেন জাপান, কোরিয়া ও মালয়েশিয়ার মত উন্নত হতে পারবে না? অন্তত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কেন আমরা উন্নত হতে পারব না?
এবার দৃষ্টি দেব ইউরোপের দিকে। ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেন বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বেশি সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল প্রথমত সামরিক-ধূর্ততা বা কূটনীতি ও পরবর্তীতে বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিতে উন্নতির পাশাপাশি সামরিক শক্তির জোরে। সামরিক বিভাগের সঙ্গে সব সময়ই ব্রিটিশ সরকারগুলোর একটা ভালো সমঝোতা ছিল। রাজনীতিবিদরা সমরনায়কদের দেশে দেশে পাঠিয়ে নিত্য-নতুন উপনিবেশ সৃষ্টির কাজে ব্যস্ত রেখেছে। ফলে তারা সরকারের গদি দখলের চিন্তা মাথায় আনেনি। ব্রিটেনের রাজপরিবারসহ বড় বড় অভিজাত পরিবারের সন্তানরা সামরিক বাহিনীতে যোগ দিত। বেসামরিক ও সামরিক শিল্পসহ বিজ্ঞানের নানা খাতের গবেষণায় তারা বিপুল অর্থ বিনিয়োগ করেছিল দেশে দেশে লুট করা অর্থ দিয়ে। অথচ লন্ডনের চেয়েও এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ ও ধনী রাজধানী ছিল এক সময় বৃহত্তর বাংলার মুর্শিদাবাদ যার সম্পদ লুট করতে সক্ষম হয়েছিল ব্রিটেন।
পাশ্চাত্য বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও সামরিক শক্তিতে উন্নত হয়েই বাদবাকি দেশ ও বিশেষ করে সাবেক উপনিবেশগুলোর ওপর খবরদারি, শোষণ এবং আধিপত্য ধরে রাখার ব্যবস্থা নেয়। এ কাজে তারা ব্যবহার করছে সংস্কৃতি ও মিডিয়া বা যোগাযোগ মাধ্যমকে। তারা তাদের সাবেক উপনিবেশ বা কলোনিগুলোতে রেখে গেছে ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থা যার লক্ষ্য ছিল একদল কেরানি ও আমলা তৈরি করা এবং অনুরাগী বা অনুচর তৈরি করা তথা মনোজগতে উপনিবেশ অব্যাহত রাখা। আর বিদেশীদের ওইসব অনুচর বা দালালদেরকে দেশে দেশে ক্ষমতায় এনে তারা প্রথমেই জাতিগুলো তথা জনগণের মধ্যে এই চিন্তা ঢুকিয়ে দেয় যে আত্মবিশ্বাসী হয়ে কোনো লাভ হবে না, আমাদেরকে চিরকাল পাশ্চাত্যের ছাত্র বা মুরিদ হয়েই থাকতে হবে তথা আমরা কখনও সবক্ষেত্রে স্বাধীন ও স্বনির্ভর হতে পারব না!!!।
পশ্চিমাদের রেখে-যাওয়া বিভ্রান্ত শিক্ষা-ব্যবস্থা ও তৃতীয় বিশ্বের জন্য তাদের তৈরি করা উন্নয়ন-মডেল বা উন্নয়নের উপদেশে সামরিক খাতে উন্নতির কথা বলা হয় না! আমাদের মত দেশগুলোতে তৈরি হল এমন ভোগবাদী বা স্বার্থান্ধ শিক্ষা-ব্যবস্থা যে বাবা-মায়েরা ভাবেন মেধাবী ছেলে-মেয়েদেরকে কেবল চিকিৎসা বা প্রকৌশল বা বেশি অর্থ আয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়েই পড়াশুনা করতে হবে! কম মেধাবীরা বাণিজ্য বা ইতিহাস, ভাষা ও সমাজ-বিজ্ঞানের নানা বিষয়ে পড়াশুনা করবে। সবচেয়ে নিম্নমানের ছাত্ররা পড়বে ধর্ম-বিজ্ঞান! কম মেধাবীরা যাবে সামরিক বিভাগে বা পুলিশে। যদিও জিডি পাইলট বা সেনা-কর্মকর্তা হওয়ার দিকে অনেক মেধাবী ছাত্রের ঝোঁক বেড়েছে এবং বাণিজ্য ও অর্থনীতি বিষয়ের পড়াশুনায় মেধাবী ছাত্রদের অংশগ্রহণও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে অর্থনৈতিক কারণে।
অথচ সামরিক-বিজ্ঞান অত্যন্ত জরুরি বিজ্ঞান। নানা সূক্ষ্ম কৌশলের সঙ্গে সম্পর্কিত এ বিদ্যা। এখানেও সর্বোচ্চ পর্যায়ের মেধাবী ছাত্রদের আসা উচিত। তৃতীয় বিশ্বের কোনো দেশে গড়ে ওঠেনি উন্নত মানের সামরিক-শিক্ষার বিশ্ববিদ্যালয়! ব্রিটিশরা তা করে যায়নি এবং এখনও তা করতে দেয়া হচ্ছে না! কারণ কি? যদি এসব দেশের মেধাবী ছাত্ররা গবেষণা করে পশ্চিমাদের অস্ত্রের চেয়েও উন্নত অস্ত্র আবিষ্কার করে বসে!!! বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পাশাপাশি সামরিক-কৌশল খাতে গবেষণা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাওয়া উচিত। অন্যদিকে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষা জোরদার হলে সামরিক শক্তিতে উন্নত হয়েই কোনো দেশ অপর দেশের ওপর জুলুম করা বা পরমাণু বোমা ব্যবহার শুরু করবে না! তাই সব শিক্ষার সঙ্গেই থাকতে হবে নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার সংযোগ।
অনেকেই মনে করেন কম মেধাবীরা বা কম বুদ্ধি-সম্পন্ন মানুষেরা বেশি বেশি মাত্রায় সামরিক বিভাগে এলে সহজেই নানা ধরনের লোভের শিকার হয়ে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করে! ফলে ঘুষ ও দুর্নীতিতে তারা অন্যদের পেছনে ফেলে সহজেই চ্যাম্পিয়ন হতে পারে। কারণ তাদের কাছে তো আছে অস্ত্র বা গায়ের জোর! অথচ মোঘল আমলে ভদ্র পরিবার ও বড় বড় পরিবারের সন্তানরা যোগ দিতেন সামরিক বাহিনীতে। সে সময়কার পুলিশে ঘুষ নামের কিছু ছিল না বললেই চলে।
রাজনীতি-বিদ্যা, সমাজ-বিদ্যা, পৌরনীতি, শিল্প-কলা- এসব বিষয়েও সবচেয়ে মেধাবী ছাত্রদের একটা অংশের অংশগ্রহণ জরুরি। রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রশাসন এবং শিল্পকলার ময়দানগুলো যারা চালাবেন তারা যদি কম মেধাবী হন তাহলে তারা তো সহজেই সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল হবেন বা হবেন বিজাতীয় সংস্কৃতি বা অপসংস্কৃতির অনুচর।
নৈতিক ও ধর্মীয় শিক্ষার ক্ষেত্রে মেধাবীদের ঘাটতি থাকলে তারা ধর্মের নামে শেখাবেন কুসংস্কার, উগ্রবাদ এবং মতলববাজ কায়েমি স্বার্থবাদীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে শেখাবেন ভুল ইতিহাস। আজ অনেকেই এমনভাবে ইতিহাস পড়ান মনে হয় যেন বিশ্বের সব কল্যাণ পশ্চিমাদেরই সৃষ্টি, ওরাই শেখায় জ্ঞান-বিজ্ঞান, মানবতা, মানবাধিকার, গণতন্ত্র এবং অন্যদিকে দেশে দেশে সন্ত্রাস ও যুদ্ধের ব্যবসায় পশ্চিমাদের ইন্ধন থাকার বিষয়টি তারা দেখেও দেখেন না! ঠিক যেমন আজকাল অনেকেই বুঝতে পারছেন না বা দেখছেন না যে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশগুলোর স্বাস্থ্য-ব্যবস্থা, খাদ্যাভ্যাস ও খাদ্যের সংস্কৃতিতে প্রভাব ফেলছে ইহুদিবাদীদের নিয়ন্ত্রিত বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলো যাতে তাদের নানা ধরনের নতুন ও পুরনো ওষুধের ব্যবসা রমরমা হয়! নারীর স্বাস্থ্য-সুরক্ষার নামে ও শিক্ষা অর্জনের নামে এবং যুবক-যুবতীদের স্বনির্ভরতার নামে বিয়েকে খুব বেশি বিলম্বিত করার কালচার জোরদার করা হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাভিচারকে সহজ করে দেয়া হচ্ছে। এভাবে পরিবার ব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়ে জাতিগুলোর জনসংখ্যা, কার্যক্ষম যুবক-যুবতীদের সংখ্যা, যুব শক্তিসহ সার্বিক জনশক্তি, ও নানা ধরনের প্রতিভার বিকাশ বা সম্ভাবনার খাতগুলোর ওপর আঘাত হানছে সভ্যতার মুখোশধারী ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী ও মানবতার শত্রু পুঁজিবাদী গোষ্ঠীগুলো।
আমাদের বুদ্ধিজীবীদের অনেকেই আজ এ ব্যাপারে অচেতন যে জ্ঞান-বিজ্ঞানে প্রাচ্যের জাতিগুলোর ও মুসলমানদের অবদান আজও পশ্চিমা গবেষকদের বিস্মিত করে। মহেঞ্জোদারো সভ্যতা, তক্ষশীলা, নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, অতীশ দিপঙ্কর- প্রাচ্যেরই গর্ব। বাংলাদেশ অঞ্চলের গঙ্গারিডি বা প্রাচীন বাঙ্গালি জাতির বিশাল হস্তি-বাহিনীর ভয়ে প্রবল-পরাক্রান্ত আলেকজান্ডার এ অঞ্চলে আক্রমণ করার পরিকল্পনা বাদ দেন! ইরাক বা মেসোপটেমিয়ার সভ্যতা, ইরান বা পারস্য-সভ্যতা, মিশর, চীন ও জাপানের প্রাচীন সভ্যতাগুলো এবং ইসলামী সভ্যতার কাছে পশ্চিমা সভ্যতাগুলোর অনেক দিক থেকে ঋণী। ইবনে সিনা ও আলবিরুনির মত বিশ্বখ্যাত বহু মুসলিম বিজ্ঞানী ও দার্শনিকদের নানা অবদান থেকে আজও নানা বিষয় শেখার চেষ্টা করছেন পশ্চিমা গবেষকরা। স্পেনের কর্ডোভার মহাকাশ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র, লাহোরের শালিমার উদ্যানে পানি উত্তোলনের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা, ইরানে শেখ বাহাইয়ের নির্মিত হাম্মামে স্বয়ংক্রিয় গ্যাসের মাধ্যমে একটানা কয়েক শতক ধরে পানি গরম রাখার অব্যাহত ব্যবস্থা, স্তম্ভের সাহায্য ছাড়াই বিশাল বিশাল গম্বুজ নির্মাণ, বাংলার মসলিন –এসব পশ্চিমা বিশেষজ্ঞদের হতবাক করে দেয়! মুঘল আমলের ঢাকার নগর-পরিকল্পনা ও বাঁধ ও পয়ঃ নিষ্কাশন ব্যবস্থার চেয়ে ভালো ব্যবস্থা আজও গড়া সম্ভব হয়নি।
তাই জাতিকে আত্মবিশ্বাসী করার জন্য আবারও জানতে হবে, জানাতে হবে বা তুলে ধরতে হবে ও পড়াতে হবে সঠিক ইতিহাস। আজ বাংলাদেশ যদি সামরিক শক্তিতে অত্যন্ত উন্নত বা সম্মানজনক পর্যায়ে উন্নত হত তাহলে মিয়ানমার বাংলাদেশের দিকে রোহিঙ্গাদের দিকে ঠেলে দেয়ার সাহস পেত না। ভারত সীমান্তে লাশ হতে হত না বহু নিরপরাধ মানুষকে।
বাংলাদেশে রাজনৈতি পরিস্থিতিকে গতিশীল ও জাতীয়-উন্নয়নকেন্দ্রীক করার জন্য সুষ্ঠু নির্বাচন ও সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করা সবচেয়ে বড় জরুরি কাজ হয়ে পড়েছে। এটা দীর্ঘ-মেয়াদী বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ ছাড়া আশা করা যায় না। কোনো জাতি যদি সামষ্টিকভাবে জেগে না ওঠে তবে সে জাতিকে জাগানো ও নানা ষড়যন্ত্র ও সংকটের মোকাবেলায় প্রতিরোধী করে তোলা সম্ভব নয়। একটা জাতি যদি রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রসহ নানা ক্ষেত্রে মৃত হয়ে পড়ে তাহলে সেই জাতির স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথগুলো শিগগিরই বন্ধ হয়ে পড়বে। বিদেশী সাহায্য, খয়রাত ও করুণার ওপর নির্ভরশীল, ক্ষমতালোভী, আত্মমর্যাদাহীন ও মেরুদণ্ডহীন রাজনীতিবিদদের দিয়ে বাংলাদেশীরা বিশ্ব অঙ্গনে কখনও সম্মানজনক অবস্থান তথা সোনার বাংলা তো দূরে থাক্ রূপার বাংলাও গড়ে তুলতে পারবে না। একটা জাতির বিপুল অংশ যদি নিরাপত্তার আশায় ও স্বাভাবিক মাত্রার অন্ন, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বাসস্থানের আশায় বিদেশে পড়ে থাকে তাহলে সে জাতি বহির্বিশ্বে মর্যাদা পায় না।
অন্যদিকে কথিত পশ্চিমা উদার-গণতন্ত্রও বাংলাদেশের উন্নতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার মডেল হতে পারে না। বহুদলীয় উদার গণতন্ত্র চালু হলে বাংলাদেশের মত দেশে এক বছরের মধ্যে প্রায় ৩০০ দিনই কেটে যাবে হরতাল ও ধর্মঘটে! ভারত বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়ে কতটা উন্নত হতে পেরেছে? অন্যদিকে চীন বহুদলীয় গণতন্ত্র ছাড়াই ভারতের চেয়ে কম সময়ে অনেক বেশি উন্নত হয়েছে। আবার কেবল অর্থনৈতিক উন্নতিকেই জাতির উন্নতি বলা যায় না। একটি ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হলে সম্পদের সুষম বণ্টনের পাশাপাশি আধ্যত্মিক ও মানবিক উন্নয়নও জরুরি। ন্যায়বিচারবোধ ও জাতীয় ঐক্যের চেতনা জোরদার না হলে একটি জাতি উন্নত হতে পারে না। জাতিকে নানাভাবে বিভক্ত করা যত সহজ ঐক্যবদ্ধ করা তার চেয়েও অনেক কঠিন। কিন্তু দূরদর্শী রাষ্ট্র নেতা হতে হলে জাতির নানা শ্রেণী ও দল-মত এবং সম্প্রদায় নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষমতা থাকতে হবে। জাপান অর্থনৈতিক দিক থেকে উন্নত হলেও জাতীয় মর্যাদাবোধ ও আত্মসম্মানের চেতনা হারিয়ে ফেলায় আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে মার্কিন সরকারের লেজুড়বৃত্তি করতে বাধ্য হচ্ছে।
পরিবারতন্ত্র, রাজনীতির ব্যবসায়ীকরণ, সংকীর্ণ দলবাজি বাংলাদেশের রাজনৈতিক উন্নয়নের পথে বড় বাধা। এখানে শ্লোগান হিসেবে বলা হয় ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশের জাতীয় স্বার্থ বা আন্দোলন বড়। কিন্তু বাস্তবে এর উল্টোটাই দেখা যায়। সংকীর্ণ গোষ্ঠী-স্বার্থ বা দলীয় স্বার্থ এবং ব্যক্তি-স্বার্থ প্রাধান্য পাচ্ছে জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় আন্দোলন এবং দেশ, জাতি ও ধর্মের ওপরে। এমনকি কথিত ইসলামপন্থী দলগুলোও এই রোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারেনি। আমাদের জাতীয়তাবোধ নিয়েও অস্পষ্টতা দূর করতে হবে। বাংলা ভাষাই যদি হয় আমাদের জাতীয়তার মূল ভিত্তি তাহলে ভারতের বাঙ্গালীরা ও বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চলগুলো কেনো বাংলাদেশের সঙ্গে অভিন্ন রাষ্ট্র গড়তে চান না?
মোটকথা সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে বাংলাদেশে সর্বাগ্রে সঠিক ও পরিপূর্ণ বা সবদিক রক্ষাকারী সুস্পষ্ট রাজনৈতিক-সামাজিক আদর্শ-ভিত্তিক সরকার গড়ে তোলার মত বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ছাড়াও বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য অন্য যেসব পদক্ষেপ নেয়া জরুরি বা অপরিহার্য সেসবের কয়েকটি প্রধান দিক বা বিষয়কে এখানে সংক্ষেপে তুলে ধরছি:
১. শিক্ষা-ব্যবস্থায় এমন আমূল পরিবর্তন আনা যাতে বিশ্বের ও বাংলাদেশের নানা যুগের ইতিহাসসহ সব বিষয়ের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরা যায়। অন্যদিকে এমন সব পদক্ষেপ নেয়া যাতে পাশ্চাত্য-বন্দনা ও পশ্চিমাদের ওপর নির্ভরতার চেতনা দূর হয় এবং নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নয়নের ব্যবস্থাসহ উৎপাদনমুখী শিক্ষা-ব্যবস্থা চালু হয়। সাম্রাজ্যবাদীদের শোষণ, লুটপাট ও তাদের চালু করা নানা কুপ্রথাগুলোর ধ্বংসাত্মক পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া জরুরি। মেধাবী ছাত্রদেরকে কেবল বিজ্ঞান ও বাণিজ্য শাখার বিশেষ কয়েকটি বিষয়ের পড়াশোনায় নিয়োজিত না রেখে সামরিক-বিদ্যা ও সামাজিক নানা বিজ্ঞানেও পড়াশুনায় আগ্রহী করতে হবে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠা করতে হবে বিশ্বমানের সামরিক গবেষণা-বিশ্ববিদ্যালয়।
২. বাংলাদেশের ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির ওপর উপনিবেশবাদীদের প্রভাব দূর করার কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া এবং প্রকৃত নারী-প্রগতি বা প্রকৃত নারী-স্বাধীনতার ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে পাশ্চাত্যের ধ্যানধারণায় প্রচলিত নারীবাদের নামে বিজ্ঞাপনসহ নানা ক্ষেত্রে নারীদের যেভাবে শোষণ ও অপব্যবহার করা হচ্ছে তা বন্ধ করা। ব্যক্তি ও সামাজিক চরিত্র যাতে প্রকৃত দেশপ্রেম ও মানবতামুখী হয় সেসব ব্যবস্থা নেয়া। ক্ষতিকর পশ্চিমা লাইফ-স্টাইল, খাদ্যাভ্যাস, পশ্চিমাদের অশালীন ও অস্বাস্থ্যকর পোশাক-সংস্কৃতি এবং মদ ও মাদকাসক্তি, সমকামিতা ও লিভটুগেদারসহ নানা ধরনের যৌন অনাচার, স্থানীয় বা দেশীয় নানা অনাচার দূর করার পদক্ষেপ নেয়া।
৩. অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান এবং বেকার সমস্যা দূর করার জন্য কার্যকর পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমে খাদ্য (বীজ ও শস্যসহ), কাপড়, ওষুধ ও অস্ত্রসহ জরুরি সব পণ্যের উৎপাদন দেশের ভেতরেই করার ব্যবস্থা নেয়া। ধীরে ধীরে বা পর্যায়ক্রমে দেশের জন্য দরকার এমন সব পণ্য বা জিনিষ উৎপাদনের লক্ষ্যে রিভার্স টেকনিক বা চাইনিজ বা জিঞ্জিরা পদ্ধতিতে বিদেশী যে কোনো উন্নত যন্ত্রের নির্মাণ-কৌশল বা প্রযুক্তি আয়ত্ত করে তা দেশের ভেতরেই তৈরির ব্যবস্থা করা।
৪. সামরিক ও বেসামরিক খাতসহ কৃষি, শিল্প, পানি, বিদ্যুৎ এবং অন্যান্য খাতে লাগসই বা টেকসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য গবেষণা খাতে যথেষ্ট বাজেট বরাদ্দ করা এবং পরিবেশের জন্য ধ্বংসাত্মক সব বিষয় চিহ্নিত করে সেসবকে প্রতিরোধ বা নিষিদ্ধ করা। জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ওষুধ ও ভেজাল খাদ্য এবং শস্যগুলো চিহ্নিত করে সেসব নিষিদ্ধ করা এবং এ জন্য দেশপ্রেমিক বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত নজরদারি কমিটি গঠন করা ও এ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগকারী ব্যক্তিদের ওপরও বিশেষ নজর রাখা।
৫. চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-সেবা খাতে দেশীয় হার্বাল প্রযুক্তিসহ প্রাচ্যের ঐতিহ্যবাহী কার্যকর চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর উন্নয়ন ঘটানোর ব্যবস্থা করা এবং পশ্চিমা চিকিৎসা পদ্ধতির নানা ত্রুটিগুলো তুলে ধরে গোটা চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য-সেবা ব্যবস্থায় সংস্কার আনা। ওষুধ-নীতি ও হাসপাতালগুলোর কার্যক্রমেও প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে হবে।
৬. ব্যাংকিং ব্যবস্থাসহ অর্থ ও মুদ্রা ব্যবস্থায় সংস্কার আনা এবং সেসবকে শোষণ ও লুটপাটের আওতামুক্ত করে জনকল্যাণমুখী করা। অর্থনীতির নানা রন্ধ্র থেকে ব্যাংক ঋণের অপব্যবহার ও ঋণের অর্থ আত্মসাৎসহ সব ধরনের দুর্নীতি ও প্রতারণার শেকড় দূর করার জন্য বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপ নিতে হবে।
৭. সক্ষম সব যুবকদের জন্য সামরিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা অথবা বিনামূল্যে দুই বছরের জন্য জনসেবা বা দেশসেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নেয়ার ব্যবস্থা করা।
৮. পুলিশ, সামরিক বাহিনী ও প্রশাসনসহ সরকারি চাকুরিতে এত উচ্চ বেতন দেয়া যাতে কেউ দুর্নীতিগ্রস্ত হওয়ার অজুহাত না পায়।
৯. গতিশীল ও পরিবেশ-বান্ধব নগর-পরিকল্পনা প্রণয়ন যাতে রাস্তাঘাট, আবাসিক ঘরবাড়ি, পার্ক, স্কয়ার, বাধ ও পয়ঃনিস্কাশন প্রণালী এবং অফিস-আদালতসহ নানা স্থাপনা বা ভবনের আকৃতি, নির্মাণ-কাঠামো টেকসই, মজবুত ও পরিবেশ-উপযোগী হয়।
১০. গ্রামাঞ্চলে শিক্ষা খাতসহ নানা খাতে এমনসব সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যাতে নগরমুখিতা কমে যায়। খাল-খনন, বনায়ন, নদ-নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং সুন্দরবনসহ নানা প্রাকৃতিক অভয়ারণ্য রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেয়া।
১১. মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠাগারসহ বহুমুখী শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, চিকিৎসা-সেবা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা রাখা।
১২. সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধী স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করা। জনগণের শক্তির ওপর নির্ভর করে বিশ্বের মজলুম ও সংগ্রামী দেশ বা জাতিগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ ও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলা ও জালিম শক্তিগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়া। মুসলিম ও অমুসলিম সব দেশের সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি হবে হবে ন্যায়-বিচার, পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সম্মানের ভিত্তিতে। জনগণের শক্তি নিয়ে বাইরের শত্রুতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। বিদেশী অর্থ, সাহায্য ও খয়রাতের সঙ্গে যে অধীনতা ও দাসত্বের শর্তও জড়িয়ে যায় তা লক্ষ্য রেখে স্বাধীন অর্থনৈতিক, পররাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক নীতিকে বিন্যস্ত করতে হবে।
১৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমও চালু রাখতে হবে সর্বস্তরে।
১৪.বাজার. হাসপাতাল, হোটেল ও রেস্তোরাঁসহ খাদ্য-পরিবেশন কেন্দ্রগুলোতে স্বাস্থ্য-সম্মত খাবার দেয়া হচ্ছে বা বিক্রি করা হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত করতে হবে। কারাগারগুলোকে করতে হবে আত্ম-সংশোধন ও উন্নয়নের কেন্দ্র। #
©somewhere in net ltd.