নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্পকার ও অনুবাদক

সাফি উল্লাহ্‌

জীবন লিখি...

সাফি উল্লাহ্‌ › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলা বনাম বাস্তবতা

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৩

- শালা রাস্তায় এত্তো ভীড় ক্যান? আমি পালাবো ক্যামনে? দৌড় মারলেই তো গাড়ির নিচে। নতুবা পাবলিকের হাতের ভিতর। ধ্যাৎ...
অনেকক্ষণ থেকেই দাঁড়িয়ে আছে আনন্দ সিনেমার সামনে। ভাবছে। কাজ হচ্ছেই না। অনেকবার চেষ্টা করেছে। একটু সময়ের জন্য জায়গাটা ফাকা হয়েছিল। তবুও সে সুবিধা করতে পারেনি। লেগুনা স্ট্যান্ডের সাথে ভেড়ানো পুলিশ ভ্যান দেখা যাচ্ছিল। ওখান থেকেও নিশ্চিত দেখতে পাচ্ছে বলে ওর ভয় হচ্ছে।
নিলয় কয়েকটা আঁটসাঁট বোরকা পরা মেয়ে দেখতে পায়। কামিজের মত টাইট- পাছার কাছে জড়ো হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন ইস্ত্রি করেনি বোধহয়। স্কার্ফটা পলেস্টারের- বুকের অর্ধেকটা জুড়ে আছে। প্লাক করা ভ্রু। লাল টিপ পরেছে। পায়েও আলতা জাতীয় কিছু দিয়েছে মনে হয়।
এদের কয়েকজনকে সে অনেক আগে থেকেই চেনে। যখন জাহানারা গার্ডেনে দারোয়ানের চাকরি করত, তখনও এদের দেখেছে। পরপর আট ন’দিন দেখার পর রাতের পাখি মনে হয়েছিল। কিন্তু রেডিওতে একটা রিপোর্ট শুনে ধারণা পাল্টে যায়।
আজ সেও ওদের মতই। একই উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে আছে। যেহেতু, ওরা নির্বিকার, নিলয়ও তাই করে। হাজার হলেও একই বাসের যাত্রী।
কিন্তু আবার মনে হয়- আমি তো আর অদের মেম্বার না। অদের কাহিনী তো কিছুই বুজবোনা।
যা’ই করুক, নিজেকেই করতে হবে। হঠাৎ চোখে পড়ে- সিনেমা থেকে এক তরুণী বেরিয়ে আসে। চমৎকার লেদারের ব্যাগ। নিশ্চিত বিদেশ থেকে কেনা। হাতের আইফোন ব্যাগে রেখে এগিয়ে আসছে। মোবাইলের দামই তো প্রচুর। আবার চামড়ার ব্যাগ। খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। মনে হয়- ওকে দেয়ার জন্যেই বোকা মেয়েটা এত্তো দামী জিনিস নিয়ে আসছে। কিছুক্ষণের জন্যে বোকা মনে হয়। সুন্দরী বেশি হলেই কি বোকা হতে হবে? নিজেকেই প্রশ্ন করে পাশে তাকায়- কেউ শুনে ফেলল না তো আবার।
- নাহ. ভাবার টাইম না এখুন। যে কুনু সুমায় ওই মেয়িরাও কাজ সারি ফেলতি পারে।
ডানেবায়ে তাকিয়ে ব্যাগে হাত লাগায়। হ্যাচকা টানে ছিনিয়ে নেয় ব্যাগ।
- ধুর... বুকা মেয়ি নাকি। এতো শক্ত করি কেউ ব্যাগ ধরি রাখে? জোরে টান মাল্লে তো ব্যথা পাবে। মুন না চাইলেও টান দিতে হল। এখুন তো আর ফিরি আসার পথ নেই। ব্যথা পালে পাবে। ভুলের মাসুল তো অকেই দিতে হবে। স্বাভাবিক।
সামনে পুলিশ, ডানে মহিলাগুলো, বায়ে গোটাদশেক রিক্সা। পথ শুধু পেছনেই- হলের বারান্দার সামনে দিয়ে যে কোন এক দিকে দৌড় দিতে হবে। দিলও তাই।
কিন্তু এত্তো সুন্দর মেয়ে যে একা বাইরে আসে না- এটা কেন যে তার মনে এল না আগে। এখন নিজেকেই বেশি বোকা মনে হয়। কি আর করার? পেছন ছেলে এক লাথি সোজা মাজায়। তারপর আরেকটা পায়ে। উল্টে পড়ে গেল। মুখটা পড়বি পড় ড্রেনের নোংরা পানির উপরে। বিচ্ছিরি গন্ধ। লাথির চোট হজম করতে একটু নিঃশ^াস নিবে, তাও পারছে না। পঁচা পানির যে গন্ধ!
কোথায় থেকে এতো মানুষ এসে জুটলো- ভাবতে পারেনা। ভাববে কী করে- ঘুষি লাথি আর গালির মাঝে একটুকুও বিরতি নাই। একটার পর একটা পড়ছে। একসাথে অনেকগুলোও পড়ছে। পিঠে, পায়ে, পাছায়- সবজায়গায়। শুধু মুখে মারছে না। মারার জো তো নেই- যে পঁচা কাদা লেগে আছে। তাছাড়া, এখানে রাতে কেউ হেগেছে মনে হয়। গুয়ের গন্ধও আছে।
- পুলিশের হাতে ধরা পড়লেই ভাল হত। কোত্থেকি যে এই হতচ্ছাড়া প্রেমিক উড়ি আলো। জীবনটাই মেসমার করি দিল।
অবশেষে এল পুলিশ। ততক্ষণে জান যায় যায় অবস্থা। তবে, পুলিশের হাতে এসেও ভাল হল না। লাঠি দিয়ে গুঁতা দিয়ে বলে- দিনে দুপুরে চুরি করস। তোর সাহস তো কম না।
নিলয় আস্তে করে বলে- বাদ। এডা বাদ। আবার নতুন করে শুরু। নাইলে খেলব না।
নিলয়ের কথা পুলিশ শুনতে পায়নি। নাকের কাছে কেউ টাটকা গু ঠেসে ধরেছে- এমন ভঙ্গি করে আবার জানতে চায়।
- কী কস?
- স্যার, আমি খেলব না। এভাবে সবদিক থেকে ঘিরি রাকলে পালাব কি করি? উহু... আমি খেলবই না।
পুলিশটার উপর রাগ হয়। জীবনেও বৌ-তোলা খেলেনি মনে হয়। ও ছোটবেলায় কত্ত খেলেছে। সাথি রুবি পিংকিরা খেলত। পরে সাল্টু নাসিরদের সাথে নিলয়ও এসে খেলতে চায়ত। সমান দু’দলে ভাগ হত। তারপর খেলা শুরু। একজন বৌ হত। ওকে ঘিরে বিপক্ষ দলের ক’জন থাকত। বৌয়ের পক্ষের ওরা দূরে একটি ঘরে থাকত। এক দমে কিতকিতকিত করে ঘিরে থাকা দের তাড়া করত। একেকবার একেক জন। একসাথে একজনের বেশি নয়। ছুঁয়ে ফেললেই সে মরা। যখন সে তাড়ছে, সে সুযোগেই বৌ পালিয়ে আসত ঘরে। অনেক সুন্দর খেলা। কিন্তু পুলিশ জানেনা দেখে তার মায়া হয়।
নিলয় ভেবেছিল- এভাবেই পালিয়ে আসতে পারবে। সফলভাবে- কিন্তু তা আর হল না। আর এটা তো বৌ-তোলা খেলা না, এটা তো বাস্তবতা।
- চুতমারানির পুলা, নায়কের মত ব্যাগ লইয়া পালায়। বাপত্তি ব্যাগ!
পুলিশের গালি শুনে মনটা খারাপ হয়। বিড়বিড় করে বলে- খেলার সাথে জীবনের এত ফারাক ক্যান?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.