নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিরহতপ্ত ভালোবাসা
প্রীতি কামাল
কতকিছুই বদলে যায় সময় বদলের সাথে সাথে। কিন্তু বদলায় না মানুষের মন। যেমন বদলে যেতে পারেনি অামার প্রিয় বন্ধু নিয়ন। দু'দশক অাগের কাহিনী। প্রখর মেধাবী ছাত্র ছিল নিয়ন। অহংকারের লেশমাত্র ছিলনা তার মাঝে। তবে প্রচন্ড জেদী ছিল। জ্যোতি ছিল তার থেকে একক্লাশ অাগে।একই গ্রামে ছিল ওদের বাস। একবার ১ম হতে পারেনি বলে জ্যোতি ক্লাশ নাইনে না উঠে এইটে রয়ে যায়। নিয়ন ক্লাশ এইটে উঠলে শিক্ষক শিক্ষিকা ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে কৌতুহল বেড়ে যায়। অালোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে এসে যায় নিয়ন অার জ্যোতি। সে সময় ফলাফল ১ম ২য় ৩য় পর্যায় ক্রমে ঘোষনা করা হতো। নিয়ন অামার প্রানের বন্ধু অার জ্যোতি অামার মামাতো বোন। তাই সবার চেয়ে অামার ভাবনাটাই বেশি। জ্যোতি যদি ১ম হতে না পারে তাহলে হয়ত সে পড়াশুনাই বন্ধ করে দিবে অার নিয়ন যদি ১ম হতে না পারে তাহলে সেও জীবন থেকে একবছর হারাবে। অামি কৌশলে নিয়ন অার জ্যোতিকে সন্তুষ্ট রাখার উপায় অাবিস্কারের চেষ্টা করতে থাকলাম। অামি জ্যোতিকে বললাম তুমি শহরে চাচার বাসায় গিয়ে নামকরা স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা কর। জ্যোতি রাজি না, অামি বললাম তাছাড়া দু'বছর পরে এস এস সি পাসের পরতো ঢাকা যাবেই। জ্যোতির স্পষ্ট কথা অামি এমনিতেই হার না মানাহারে পরাজিতা অাবার নিয়নের কাছে পলায়ন পরাজয় অামি মেনে নিতে পারবনা। নিয়নকে বললাম বন্ধু শহরে গিয়ে ভালো স্কুলে ভর্তি হব নিয়নও রাজিনা । অামি ভাবতে থাকলাম। মনে হলো নিয়নকে বৃত্তি পরীক্ষা দিতে বললাম অার জ্যোতিকে বললাম বার্ষিক পরীক্ষা দিতে। নিয়ন বৃত্তি পেল অার জ্যোতি ১ম হয়ে ৯ ম শ্রেণীতে উঠল। যেকজন বৃত্তি দিয়েছিল তাদের রেজাল্ট হয়েছিল ১ম ২য় সাময়িক পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে হলো। এতে নিয়নের রোল নং হয়েছিল ৯। কিন্তু এবার বিপত্তি হলো নিয়ন এইটে থাকবে। অামি বললাম। এক বছর জীবন থেকে নষ্ট করার কোন মানে হয় না। নিয়ন রাজি হল ঠিকই কিন্তু ক্লাসে উপস্থিতি দেয় না। বিপত্তি তো রয়েই গেল। বিষয়টি গভীরভাবে জ্যোতি পর্যবেক্ষণ করার পর নিয়নকে ডেকে বলল অাচ্ছা নিয়ন তুমি ক্লাসে উপস্হিতি দাওনা কেন? অামি যদি জানতাম নিয়ন তুমি কষ্ট পাবে তাহলে অামি পরীক্ষা দিতাম না। ক্লাসে থেকে উপস্থিতি না দিলে বিষয়টি অশোভন লাগে। অার তুমি যদি বল তাহলে অামি হেডস্যারকে বলে অামার অাসনটি তোমার করে দেব। নিয়ন এবার বলল অামি তোমার চেয়ে কম বুঝিনা। নিয়নকে করুনা দেখাতে এসোনা উপদেশ দিতে এসো না। অামি কি করব তা অামিই ভালো জানি। জ্যোতি বলল নিয়ন তুমি কেন রাগ করছ? অামি তোমার বন্ধু হিসেবে বলছি। সত্যিকার অর্থে তুমি যদি অামাকে বন্ধু মনে কর, শুভাকাঙ্খী ভেবে থাক, না হয় সহপাঠি মনে করে থাকো তাহলে অামার কথা রাখরে। অার যদি কথা না রাখ, অনুরোধ টুকু না শোন তাহলে অামিও পড়াশুনা বন্ধ করে দেব। নিয়ন কথা রাখেনি। জ্যোতিও কিছুদিন পর স্কুলা বন্ধ করে দেয়। ব্যাপারটি অামার মাঝে ভীষন পীড়া দিতে অারম্ভ করে। দু'টি সম্ভাবনাময় জীবন এভাবে ধ্বংস হবে অার অামি বন্ধু হিসেবে অাত্নীয় হিসেবে নীরব দর্শক হয়ে চেয়ে থাকব তাতো হতে পারে না। অামি দু'জনকে অালাদা ভাবে বললাম তোমারা যদি জিদের উপর দাঁড়িয়ে থেকে নিজেরা নিজেদের জীবন নষ্ট কর অামি তোমাদের মাঝ হতে চিরতরে হারিয়ে যাব। স্রষ্টার দয়া নিয়ন পরিবর্তন হতে থাকে। কিন্তু টেস্ট পরীক্ষার পর দেখা দেয় অাবারও জটিলতা। ১নং এর জন্য নিয়ন ১ম হতে পারেনি বলে সে অার পড়বেনা, পরীক্ষাও দিবে না । যেহেতু পড়বেনা সেহেতু পরীক্ষা দেবার প্রশ্নই অাসে না। অামি নিয়নকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম এখন পাগলামী করার সময় না । তোমার জন্য যতি যথেষ্ট করেছে যথেষ্ঠ উদার একটা মন অাছে ওর। ওর প্রশংসা অামি শুনতে চাই না। অামি প্রসংশা করছিনা সাফাইও গাচ্ছি না। অামি তোমাকে বলব তুমি যদি এরুপ কর তাহলে জ্যোতিও পরীক্ষা দিবে না। নিয়ন বলল ও পরীক্ষা দিলে কি ! না দিলেই কি? অামি বললাম নিয়ন তুমি অাসলেই একজন স্বার্থপর মানুষ। তুমি অাবারো এমন করবে জানলে জ্যোতি হয়ত টেস্ট পরীক্ষাও দিত না। তোমার কি মনে অাছে মোমিন চ্যালেন্জ করে বলেছিল তোমাদের দু'জনকে এবার পিছনে ফেলে সে ১ম স্থান অধিকার করবে। যদি মোমিন এমন কথা না বলত তাহলে জ্যোতি হয়ত অত ভালো করে পরীক্ষা দিতো না। নিয়ন অামাকে বলল তোমার বোন তো তাই তার পক্ষেই কথা বলবে। অামি অন্তত তোমার চেযে ভালো বুঝি। অামি মনে মনে ভীষন কষ্ট পেলেও নিরাশ হলাম না। অামি ভাবতে থাকলাম কি করা যায়। মাথায় বুদ্ধি এলো অাগামী সপ্তাহে অামার জন্মদিনে সবাইকে দাওয়াত করব। জন্মদিনে লাবনী,শিউলী,রেহেনা,বকর,মমিন, জয়নাল,বেলাল প্রায় সবাই এসেছিল। নিয়ন এসেছিল সবার শেষে। অামি, বকর,নিয়ন,নাজিম. কাজলী,জ্যোতি, অত্রি সারা রাত জেগে অানন্দ করে ও ভবিষ্যত স্বপ্ন সাধনার অালাপ অালোচনা করে কাটিয়ে দিলাম। অামাদের জীবনে স্নৃতিময় রাত বলতে অামরা একবাক্যে সে রাতটিকেই স্মরন করি। সে রাতে জ্যোতি নিয়নের হাত ছুঁয়ে বলেছিল নিয়ন তুমি পাগলামী করনা। তুমি যদি চাও সারা জীবন তোমার পাশে থাকব। কথা দাও তুমি অামাকে কখনো কষ্ট দিবেনা, অামাকে একা ফেলে দূরে কোথাও চলে যাবেনা। নিয়ন কথা দিয়েছিল রাখতে পারেনি। বকর বলেছিল এভাগ্য ক'জনার হয়। সাথী বলেছিল সবার হয়না তবে কারো কারো হয়। এস এস সি'র রেজাল্ট হলো ২/৩ বিষয়ে লেটার মার্কস নিয়ে বকর বাবু নিয়ন জ্যোতি প্রীতি পাস করল। সবাই অামরা ভালো ফলাফল করলাম। জ্যোতি ঢাকায় চাচার বাসায়, নিয়ন যশোর মামার বাসায়। বকর রাজশাহীতে ভর্তি হলো। পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে সবার বন্ধুত্বই অটুট ছিল। সাথী বকরের ভালোবাসার সুতীব্র অাকর্ষণ পড়াশুনা শেষ করার পূর্বেই পরিণয় সূত্রে বাঁধা পড়ল। এইচ এস সি'র পর হতে নিয়ন অার জ্যোতির সম্পর্ক ধীরে ধীরে শিথিল হতে লাগল। স্পষ্ট করে নিয়ন কিছুই বলে না। জ্যোতির মাঝেও পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম। যে অামিই এক সময় নেটওয়ার্কের মতো ছিলাম সে অামিও বদলে যেতে থাকলাম। বাবা অসময়ে চলে গেলেন সবাইকে কাঁদিয়ে। সেই থেকে অামিও এলোমেলো। অার অামার এলোমেলোর খেসারত দিতে হল নিয়নকে। অামি গ্রামের ছেলে গ্রামে থাকি। নিয়ন বকরকে ল্যান্ডফোনে জানিয়েছে অার বকর রাজশাহী হতে লোক মারফত অামাকে চিঠি দিয়েছে। অামার অার্থিক অনটন থাকলেও অামি নিয়নের করুন অনুরোধে সাড়া দিলাম। যেদিন যেতে বলেছে তার অাগের দিন অামি নিয়নের কাছে গেলাম। নিয়নের চোখে মুখে হতাশার ছাপ স্পষ্টই বুঝা যাচ্ছিল। রাতে নিয়ন অামাকে বলল তুমিতো জানো বন্ধু ক' মাস ধরে জ্যেতির সাথে অামার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। অামার সময়টাও বেশ খারাপ। তোমার অনাকাঙ্খিত জীবনের ঘটনায় এমনিতেই তুমি দুমড়ে মুচড়ে খড়কুটোর মতই অগোছালো। অপ্রত্যাশিত ভাবে অসময়ে বাবাকে হারালে প্রিয় বোনটাও তোমাকে একা করে নৈ:শব্দের পৃথিবীর স্থায়ী বাসিন্দা হলো। তুমিও কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙ্গে চুড়ে চুরমার হয়ে গেলে। সংসারের দায়িত্ব তুলে নিলে। জীবনের কঠিন বাস্তবতায় । সময়ের কাছে হার মানলে অনেক কিছু থেকে। জ্যোতির সাথে অনার্সের ৩য় বর্ষ পর্যন্ত সম্পর্ক ভালোছিল কিন্তু কোন কারণ ছাড়াই তার সাথে সম্পর্কে চিড় ধরে। অনতিক্রম্য দূরত্বের পাহাড় সৃষ্টি হয়। বিরহতপ্ত যন্ত্রনার করুন অাকুতি অামার ভিতর বাহির প্রতিনিয়ত কুড়েকুড়ে খাচ্ছে। অামি হারিয়ে যাচ্ছি অনাগত ধ্বংসের অতল গহ্বরে। উপায়ন্তর না পেয়ে তোমাকে অাসতে বলা। তাছাড়া অাগামী ৭ তারিখ জ্যোতি বসুন্ধরা সিটি মার্কেটে দেখা করতে বলেছে। ভাবলাম তোমাকে সাথে করে নিয়ে যাব। তাই তোমাকে অাসতে বলা। সিটি মার্কেটের গেটে অাগের থেকেই জ্যোতি অপেক্ষা করছিল। অামাদের দু' জনকে একসাথে দেখে জ্যোতি কিছুটা অবাক হলেও স্বাভাবিক ভাবে বলল কেমন অাছ? অামি বললাম কেমন অাছি তা হয়ত তোমার জানার বাহিরে নয়। জ্যোতি নিয়নের দিকে উপহারের প্যাকেটটি বিষন্ন দৃষ্টিতে বাড়িয়ে দিয়ে কিছু না বলে চলে গেলো। অামরা অসহায় স্হির হয়ে দেখলাম জ্যোতি গাড়িতে উঠে চলে গেলো। অামরা বাসায় এসে প্যাকেট খুলে দু'টি ডাইরী পেলাম। একটি ফাঁকা অন্যটি অাদ্যপ্রান্ত পরিপূর্ন। শুরুর দিকে ভালোবাসার পাঁপড়ি মেলা স্বর্গিয় অনুপম সৌন্দর্যের মাধূর্য শেষের দিকে বেদনার মহা কাব্য। ডাইরী হতে জানা যায় জ্যোতির বাবা সিহাব চৌধুরী মেয়ের হাত ধরে মিনুতি করে বলেছিল মারে তুমি নিয়নকে ভুলে যাও। তোমার চাচা তানভীর চৌধুরী অামেরিকা প্রবাসী ছেলে এজাজ চৌধুরীর সাথে তোমার বিয়ের পাকা কথা দিয়ে রেখেছে। জ্যোতি বলল না বাবা তুমি নিয়নকে ভুলে যেতে বলনা। ওকে ভুলে যাওয়া সম্ভব না । নিয়নই যদি তোমার তোমার সবকিছু হয় তাহলে নিয়নের কাছে চলে যাও। অশ্রুভরা ঝাপসা চোখে জ্যোতি বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বাবা মেয়ের হাত টেনে নিয়ে মাথায় স্পর্শ করে বলে । অাজকের পর হতে তুমি অামাকে বাবা ডেকোনা অামি তোমার বাবা না অামি মারা গেলেও তুমি অামার মুখ দেখনা। জ্যোতি একথা শুনার পর অার স্হির থাকতে পারেনা। বাবাকে জড়িয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলে এমন কথা তুমি কখনো বলোনা বাবা। তুমি অামার বাবা না হলে স্বর্গের মহিয়সী মা যে অামায় ক্ষমা করবেন না। তুমি যা বলবে অামি সব শুনব বাবা। কিছুদিন পর স্রষ্টার চিরন্তন সত্যের জগতে পাড়ি দেন বাবা। বাবার কথায় বাবার মাথায় হাত রেখে জ্যোতি কথা দিয়েছিল। কিছুদিন পর জ্যোতির বাবা স্রষ্টার ডাকে সাড়া দেন। চোখের জল শরীরের রক্ত অার কলমের কালিতে লেখা জ্যোতির ডাইরী হতে অনেক কিছুউ জানা যায় । সৃষ্টিকর্তাকে স্বাক্ষী রেখে এক জায়গায় লেখা অাছে নিয়ন অামি যদি কোনদিন অদৃষ্টের বিড়ম্বনায় কিংবা ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাসে হেরে যায় কিংবা তোমার থেকে দূরে চলে যায় তখনো কি তুমি এমনি করে অামাকে ভালোবাসবে অামাকে কি তোমার হৃদয়ের মনিকোঠায় সারা জীবন ধরে রাখবে। ঘটনা ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে থাকে অার নিয়নের জীবনে স্বাক্ষী হয়ে থাকে ডাইরী। অামি নিয়নকে বললাম বন্ধু অনেক দিনতো হলো অামি বাড়িতে যায়, নিয়ন রাজিনা। বলল যেদিন জ্যোতি অামেরিকা যাবে সেদিন দু'বন্ধু এক সাথে বাড়িতে যাব।অামি মনে মনে ভেবেছিলাম নিয়নের কাছে বাড়ির কথা বলে জ্যোতির সাথে দেখা করব কিন্তু সেটা হলোনা। অামি একদিন অসুস্থ হলে নিয়নের সাথে ঘুরতে বের না হয়ে রুমে শুয়ে ছিলাম ছারপোকা বা পিঁপড়ার কামড়কে প্রতিরোধ করার জন্য বিছানা উল্টাতেই একটা ডাইরী অার অনেকগুলো ঘুমের ট্যাবলেট অামাকে ভাবিয়ে তুলল। এর মধ্যে অাবার জ্যোতির ফোন ১ তারিখে দেখা করতে হবে বিমান বন্দরে । অামি বি:বন্দরে নিয়নকে নিয়ে যাবার সমস্ত চেষ্টা অনুরোধ ব্যর্থতায় রুপান্তরিত হলো। এজাজ চৌধুরী জ্যোতিকে নিয়ে যাবার অাগে জ্যোতির মামা তানভীর চৌধুরী একমাত্র ভাগ্নি জ্যোতিকে অামেরিকা নিয়ে যায়। জ্যোতিকে বলে তুমি এজাজকে ভালোভাবে চিনো জানো কারন চেনা অার জানার মাঝে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে । যেদিন তুমি তোমার মতো করে এজাজকে চিনতে জানতে বুঝতে পাররে সেদনিই তোমাকে তার ঘরে তুলে দিব। ফ্রি স্বাধীন দেশে জ্যোতি এজাজের সাথে মিশে পর্যবেক্ষন করতে থাকে। এজাজ ক্লাবে যায় গার্লফেন্ডের সাথে মিশে । জ্যোতির এসব ভালোলাগে না। একদিন ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে গিয়ে জ্যোতির সামনেই গালর্ফন্ডকে কিস করে, জ্যোতিকে বসিয়ে রেখে ঘন্টাখানেক পরে এসে সরি বলে। নির্জনে গার্লফেন্ডের সাথে সময় কাটানোর কষ্টের রাগ অভিমানে ক্ষোভে এজাজকে বলে অাজকের পর হতে তুমি যদি সত্যিকার বাঙালী পুরুষ হয়ে অামার কাছে অাসতে পার এসে । জ্যোতি যখন দেখল মুখোশের অাড়ালে এজাজ পরিবর্তন হচ্ছেনা তখন মামাকে বলে জ্যোতি দেশে চলে অাসে। হঠাৎ বাবুলের ফোনে জানতে পারে জ্যোতি ঢাকায় । বাবুল সব অামাকে বলে অামি নিয়নকে বললাম চল ঢাকা যায় । নিয়ন বেঁকে বসল । নিয়নের কথা। জ্যোতি অামাদের কিছু না বললে অামি কিছু বলবনা । অামি বললাম হয়ত লজ্জায় বলেনি। জীবনে প্রথম বন্ধুর কথা অমান্য করে গোপন অভিযানে নেমে পড়লাম । মখোমুখি হলাম জ্যোতির। ঘটনা সত্য জেনে জ্যোতিকে বললাম তুমি এখন কি করতে চাও বোন? সে বলল অামি এজাজের জন্য অপেক্ষা করব। অামি বললাম এজাজ যদি ভালো না হয়,ফিরে না অাসে? জ্যোতি বলল অামি বাবাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভাঙ্গতে পারব না। অামি জ্যোতিকে বললাম জানো জ্যোতি অাল্লাহ পাক রব্বুল অালামিন পবিত্র কোরঅানে স্বয়ং ঘোষনা করেছেন অামার নাম ব্যতীত কোন কিছুতে শপথ করা যাবে না তাহলে সেটা শিরকের পর্যায়ে পড়ে যায়। এর কয়েকদিন পর গভীর ভাবনার পর্যবেক্ষনী সিদ্ধান্ত নিয়ে জ্যোতি নিয়নের কাছে পত্র লিখে। প্রিয়তম জান অামার, শুভ কামনা জানানোর নি:শেষ অধিকার টুকুও হয়ত অামার নেই তবুও এ অাশায় লিখছি যে এ বিশাল পৃথিবীর বুকে অামার যে অার যাবার কোন জায়গা নেই। ভালোবাসার কাছে অামি কত অসহায় ! অামি ভাগ্যের ঘুর্নিপাকে পরাজিতা ধুতরা ফুলের মত বারবার হেরে গিয়েও ফকিরের মত তোমার ভালোবামায় সিক্ত হতে চেয়েছি। কি অার বলব জান কিভাবে তোমাকে বুঝাব! কি সৌভাগ্য অামার জীবন নাট্যের জটিল প্লাটফর্মে সকল ক্যালকুলেশানকে তাচ্ছিল্যের বাতাসে উড়িয়ে, সকল সমীকরনকে কবর দিয়ে, অবিচেছদ্য সম্পর্কের মোহনীয় বন্ধনকে নীরব তলোয়ারে কতল করে অামি ভুল করেছি নিয়ন। জানো এখন অার কোন যুক্তিতেই অামার মুক্তি মিলেনা, কোন ভাষাই অার অামাকে সান্ত্বনা দিতে পারে না। অামি কি কেবলই স্রষ্টার খেলার পুতুল মাত্র। কি দোষ অামার ,কি অপরাধ অামার, কি ভুল অামার। খুব জানতে ইচ্ছে করে কতটুকু স্বপ্ন সুখের হাত ছানিতে,কতটুকু বিলাসী জীবনের লোভনীয় অভিসারে মানুষ বদলে যেতে পারে? অপরাধের কাঠগড়া অার ভুলের সিড়িতে দাঁড়িয়ে অনুশোচনার অশ্রুকালিতে শেষ বারের মত তোমাকে লিখছি। তুমি ভালো অাছতো? বিবেকের দংশিত বিষে অাজ অামি নীলকন্ঠ। কষ্টের যাঁতাকলে পিষ্ট অাবেগের বোবা কান্না ঝরে পরে অামার নিস্ফল জীবনের অক্ষম অাঙ্গিনায়। এখন অামি ক্লান্ত ভীষন ক্লান্ত ভীষণ ক্লান্ত। অনুভূতিহীন জড় পদার্থের মত একরাশ শূন্যতার পানে চেয়ে বেঁচে অাছি। এই হয়ত অামার নিয়তি। নিয়ন নোংরা ভালোবাসার এ পৃথিবীতে যদি তোমার অামার পবিত্র ভালোবাসার ফসল রেখে যেতে পারি তাহলে কেষ্টের পরিধি একটু হলেও কমতে পারে। অামি শুধু বাঙালী বধু হয়ে তোমার বুকে রয়ে যেতে চাাই। অাজই ডির্ভোস লেটার ডা: এজাজের নামে পাঠিয়ে দিয়েছি। সত্য বলতে কি নিয়ন স্বপ্নের একটু বিলাসী সাধ অামাকে হাতছানি দিয়ে ডেকেছিল। অামার পবিত্র প্রেমের অমূল্য সম্পদ এখোনো তোমার জন্য অক্ষত রয়েছে। তুমি বিশ্বাস কর নিয়ন অামি তোমার ছিলাম তোমার অাছি তোমারই রব। অামায় ক্ষমা করে তোমার বুকে একটু ঠাঁই দাও। তোমার স্ত্রী হয়ে তোমায় ভালোবেসে অামার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করতে দাও। অনেক কষ্ট অামি তোমাকে দিয়েছি কিন্তু তার চেয়ে বেশি কষ্ট অামি পেয়েছি নিয়ন। এ পৃথিবীতে সত্য বলে যদি কিছু থেকে থাকে তোমাকে ভীষন ভালবাসি এটাই চিরন্তন সত্য। অামি অার এ দহন জ্বালা সহ্য করতে পারছিনা।শেষ বারের মতো ভালবাসার অাঁচল পেতে তোমাকে ভিক্ষে চাচ্ছি। ভালো থেকো। ইতি প্রতীক্ষার চাতকী জ্যোতি। চিঠি পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে জ্যোতি। ওদিকে জ্যোতির চিঠি পৌছার একদিন অাগে হৃদয় বিদারক রোড একসিডেন্টে নিয়ন মারা যায়। চিঠিটি রাতের অাধাঁরে নিয়নের কবরে দিয়ে অাসি অামি।ছুটে যায় জ্যোতির কাছে ঢাকায়। জ্যোতি সব শুনে পাথরের মতো স্তব্দ হয়ে যায়। অামি জ্যোতিকে অার কখনোই স্বাভাবিক করতে পারিনী। নিজেকে একটা প্রচন্ড অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ভাবতে থাকলাম..,,,01931212324থে সা
©somewhere in net ltd.