নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হার না মানা হা‌রেই অা‌মি পরা‌জিত

ANIKAT KAMAL

ANIKAT KAMAL › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুব সমা‌জের নৈ‌তিক অবক্ষ‌রো‌ধে করনীয়ঃ

১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:৫০

যুব সমাজ ও অাণুঃসঙ্গ প্রসঙ্গ
অনিকেত কামাল
‌ যে কোন দেশ ও জাতির প্রাণশক্তি হল যুব সমাজ। অাজকের তরুন অাগামী দিনের কর্ণধার। যারা বয়সে নবীণ, মন যাদের বিশ্বাসে ভরপুর, যাদের চোখে স্বপ্নের অাল্পনা, বুকে অদম্য সাহস, হৃদয়ে নব সৃষ্টির উন্মদনা, যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নিচু করে না, যারা জীর্ণ পুরাতনকে ভেঙ্গে চুরে অভিনব কিছু সৃষ্টি করতে চায়, সত্য ও ন্যায়ের পথে সংগ্রাম করে যারা জীবন দিতে দ্বিধাবোধ করে না , নব জীবনের সংগীত রচনায় যারা ব্যস্ত, যৌবনের দূরন্ত বাতাস যাদেরকে চালিত করে তারাই যুবক, তারাই তরুন। তারুণ্যই দেশ ও জাতির প্রধান চালিকা শক্তি, সমাজ বদলের একমাত্র হাতিয়ার। তাদের মাঝে বিরাজ করে অাগামীর সুন্দর সম্ভাবনা। যুগে যুগে তরুন সমাজই অসত্যের বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করেছে। ১৯৫২ সালে তরুণ সমাজ মাতৃভাষার জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিল বলে অামরা পেয়েছি "অান্তর্জতিক মাতৃভাষা দিবস"। ১৯৭১ সালে পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বুকের সতেজ রক্ত ঢেলে দিয়েছিল বলে অামরা স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে অানতে পেরেছি, দেশকে করেছি শত্রুমুক্ত। ১৯৯০ সালের উত্তাল দিনগুলোতে যুব সমাজই স্বৈরচার সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছিল বলে অামরা পেয়েছি পূর্ণ গণতান্ত্রিক স্বাধনিতা। বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ মহামারী সুনামি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এই যুব সমাজই সর্ব প্রথম এগিয়ে এসেছে । অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ের প্রেক্ষিতে যুব সমাজই বাড়িয়ে দিয়েছে কাঙ্ক্ষিত হাত। তারুণ্যের দীপ্তময়ী অহংকারে যুব সমাজ গৌবান্বিত। ভোরের উদিত সূর্যের মত পরিপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় যুব সমাজ যে কোন সময় জাতির ভাগ্যাকাশের কালো মেঘ বিদূরিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। সুস্থ, সুন্দর ও প্রগতিশীল সমাজের বুকে যখনই কোন চক্রান্তের জাল বিস্তার করতে চেয়েছে, তখনই এই যুব সমাজ তা ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। সমাজের অশুভ শক্তি করেছে দূর। অপ্রত্যাশিত ও অবাঞ্ছিত সময়ের বিবর্ণ পরিবেশকে করেছে প্রত্যাশার শুভলগ্ন। জাতির দুর্দিনে, দেশের প্রয়োজনে যুব সমাজই বারবার এগিয়ে এসেছে। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, এই যুব সমাজ তাদের গতিধারা অব্যাহত রাখতে পারছে না। যৌবনের টগবগে অশ্বশক্তির অমিততেজী যুব সমাজ যেন ঝিমিয়ে পড়ছে। কল্যানের সৃষ্টি শক্তিকে ব্যয় করছে অকল্যাণের পথে। মহত্বের মহান পরিকল্পিত ভাবনাগুলো ব্যয় করছে অসত্যের পথে, বিনাশের পথে। এর জন্য কিংবা এসবের জন্য দায়ী কে বা কারা? অামাদের গভীর ভাবে ভাবতে হবে, ভাবতে হবে জাতীয় ও অান্তর্জাতিক পর্যায়ে। খতিয়ে দেখতে হবে অামাদের দুর্বলতা, অামাদের অক্ষমতা কিংবা অামাদের ব্যর্থতা। ভাবতে হবে সমস্যার কথা, তাদের প্রত্যাশার কথা, তাদের মন মানসিকতার কথা, তাদের পাওয়া না পাওয়ার কথা।
পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই এখন যুব সমাজ বিপথে চালিত হচ্ছে। যারা দেশ গড়ার মহানায়ক, স্বাধীনতা - সার্বভৌমত্ব রক্ষার বীর সেনানী, দেশের মঙ্গলে যারা নিবেদিত প্রাণ, দেশ মাতৃকার সেবায় যারা ব্রত, সমাজের রত্ন -মানিক তারাই অাজ বখাটে, মাতাল, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ধান্দাবাজ, চুরি, ডাকাতি, হাইজ্যাক, হত্যা, রাহাজানি, বোমাবাজি, প্রতরণা, চোরাকারবারী ইত্যাদি অাইন বিরোধী জঘন্য কাজে লিপ্ত। এই দৃষ্টান্তই যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের কারণ। অামদের যুব সমাজ অসংখ্য অগণিত কারণে ধ্বংসের রাজ্যে বাস করছে। যে দেশে নীতি, অাদর্শ, মানবিক মূল্যবোধগুলো ধূলোয় গড়াগড়ি খাচ্ছে, বিবেক ও মানবিকতা হচ্ছে পদদলিত, ঘুষ, দুর্নীতি চলছে অবাধে, অসৎ পথে রাতারাতি অর্থের পাহাড় গড়ছে, বিচারের বাণী কাঁদছে নীরবে, অর্থের জোরে- ক্ষমতার দাপটে অন্যায় -অপরাধ হতে পাচ্ছে মুক্তি, অাইনের স্বাভাবিক গতি অপব্যবহারে হচ্ছে সমালোচিত, উচ্চ পদস্থ ব্যক্তি বর্গের ছত্রছায়ায় অপকর্ম চলছে অবাধে, রাজনীতির মঞ্বে দাঁড়িয়ে প্রতিশ্রুতির বাণী যেভাবে শুনানো হচ্ছে, উন্নয়নের ডঙ্কা যেভাবে বাজানো হচ্ছে বাস্তবে সেভাবে অগ্রগতি হচ্ছে না। প্রতিভা কিংবা মেধার প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে না, প্রতারণা অার বিশ্বাস ঘাতকতার পৃথিবীতে অাস্থার শিকড় হচ্ছে শিথিল। দয়া - মায়া , স্নেহ-ভালোবাসা , সহমর্মিতা - সহযোগিতা হারিয়ে যাচ্ছে, সে দেশে যুব সমাজের ধ্বংস অনিবার্য। প্রকৃত অাদর্শ ও মূল্যবোধের অভাবে যুব সমাজ হারিয়ে যাচ্ছে অাঁধারের অতল গহ্বরে। প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের অপসংস্কৃতির বাতাসে দূষিত হচ্ছে অামাদের সভ্য সংস্কৃতি। ম্যাগাজিন - সংবাদপত্রের নগ্নতা যুব সমাজের মানসিক ভাবনাকে প্রভান্বিত করছে। মাদকাসক্তের প্রতি অাসক্তি যুব সমাজের নৈতিক চরিত্রের অধঃপতন ডেকে অানছে। অসুস্থ রাজনীতির বেড়াজালে যুব সমাজ জড়িয়ে পড়ছে। বেকারত্বের তীব্র অভিশাপে জর্জরিত, হতাশাগ্রস্থ যুব সমাজ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত হচ্ছে। শিক্ষাঙ্গনের অস্থিতিশীল পরিবেশে তরুন শিক্ষার্থীরা হচ্ছে দিশেহারা। পরিবারের স্নেহ-ভালোবাসার বন্ধনে ফাটল ধরায় সন্তানেরা চলে যাচ্ছে বিপথে। ভালোবাসার স্বর্গীয় পৃথিবী ব্যর্থতা ও প্রতারণার অাঁধারে ঢেকে যাচ্ছে বিধায় অপ্রাপ্যের বেদনা ভুলতে যুব সমাজ ঘৃণ্য পৃথিবীর দিকে ধাবিত হচ্ছে। কখনো বা কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে নিরাশ হয়ে অসৎ পথে পা বাড়াচ্ছে। কখনো বা সঙ্গ দোষেও যুব সমাজ ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতা - নেত্রীরা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য যুব সমাজকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। টিভি সিনেমা, স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোর অবাস্তব দৃশ্য বাস্তব মনে করে যুব সমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছে। প্রতিযোগিতায় পরাজিত হয়ে অনেকে প্রতিশোধের নেশায় হিংসা-বিদ্বেষের অাগুনকে চরিতার্থ করতে বিভিন্ন ধরনের অসামাজিক কাজ করে থাকে, যা যুব সমাজের ধ্বংসই ডেকে অানে। দারিদ্র্যের নিষ্ঠুর ছোবল হতে মুক্তির উদ্দেশ্যে অনেকে সমাজ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয়, যা যুব সমাজকে বিপথে চালিত করে। এভাবে বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যুব সমাজ প্রতিনিয়তই অনাকাঙ্ক্ষিত ভুলের পথে হারিয়ে যাচ্ছে, চলে যাচ্ছে ধ্বংসের নিঃকষ অাঁধারে।
সমাজ নামক বৃক্ষে ফুটন্ত গোলাপ সদৃশ্য যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধ করতে না পারলে দেশ ও জাতি অচিরেই ধ্বংসের অতল গহ্বরে বিলীন হয়ে যাবে , এতে সন্দেহের কোন অবকাষ নেই। তাই অাসুন, যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় রোধে কালক্ষেপন না করে নিম্নলিখত পদক্ষেপগুলো গ্রহন করি। ক: যুব সমাজ ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ বেকারত্ব । দেশে প্রায় চার কোটি বেকার রয়েছে। প্রায় দু'কোটির মত রয়েছে শিক্ষিত বেকার। এদের জন্য সৃজনশীল কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। খ: স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ব বিদ্যালয়ের পাঠ্যক্রমে নীতি-নৈতিকতা বোধ শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। গ: তরুন সমাজের জন্য রীতিমত খেলাধুলা ও শরীর চর্চার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘ: পরিবারের দায়িত্বশীল ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের উদ্যোগে যুবকদের সৎপথে ফিরিয়ে অানতে হবে। ঙ: সন্তানদের সঙ্গ নির্বাচনে পরিবারের অভিভাবকদের দৃষ্টি রাখতে হবে।l চ: সামাজিক অপরাধ যেমনঃ- মদ, জুয়া, গাঁজা, রাহাজানি ইত্যাদি নিরোধের জন্য কঠোর অাইন করতে হবে এবং অপরাধীর কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছ: পেপার-পত্রিকা, ম্যাগাজিন, অপরাধ চিত্র, চিকিৎসা বার্তা ইত্যাদিতে নগ্ন ছবি পরিহার করতে হবে। জ; যৌনাবেগ অনুভূতি প্রবন লেখাও পরিহার করতে হবে। ঝ: টিভি , সিনেমা, রেডিও, ডিস এন্টিনা, স্যাটেলাইট চ্যানেল গুলোকে অশ্লীলতাপূর্ণ অনুষ্ঠান প্রচার বন্ধ করে গঠন মূলক অনুষ্ঠান উপস্থাপন করতে হবে। ঞ: পর্ণগ্রাফী, সেক্সয়াল ভিডিও, ফোনিং সেক্স টকিং, ইত্যাদি বন্ধ করতে হবে, ট: ফেসবুক সহ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ওয়েব সাইট গুলোর দিকে কঠোর নজরদারী রাখতে হবে যাতে কোন অবস্থাতেই অাপত্তিজনক কোন কিছুই স্থান না পায়। ঠ: শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষার কাম্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ড: মসজিদ, মাদ্রাসা, মক্তবে ভথা ইসলামী প্রতিস্থান গুলোতে অবশ্যই সুন্দর প্রগতিশীল শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢ: ধর্মীয় সভা, সেমিনারে ধর্মের কঠোর নিয়মনীতি যুবকদের মনে অাদর্শ স্থাপনে চেষ্টা করতে হবে। ণ: বিশ্বাসবোধ, সহমর্মিতা, সহযোগিতা, ধৈর্যশীলতা প্রভৃতি মানবিক গুনাবলী অন্তরে স্থাপন করতে হবে।
অত্যাধুনিক চরম সভ্যতার অাজকে বিশ্ব মানবতার মহান বাণী উচ্চারন করলেও পৃথিবীর সর্বত্রই বিরাজ করছে হিংসা- বিদ্বেষ, বিরাজ করছে চরম অশান্তি। একদিকে সভ্যতা বিনির্মানের অাধুনিক প্রাণান্তর প্রচেষ্টা অন্যদিকে ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। ঠিক তেমনি মুখেমুখে যুব সমাজের উন্নয়নের কথা বললেও বাস্তবিক পক্ষে যুব সমাজকে ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছি। যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের মহামারীতে অাক্রান্ত দেশ ও জাতির উন্নয়ন কামনা করতে হলে তাদের অবক্ষয়ে অামাদের সামগ্রীকভাবে এগিয়ে অাসতে হবে। তবেই দেশের হবে উন্নতি, জাতির হবে কল্যাণ। বিশ্ব দরবারে/প্লাটফর্মে অামরাও স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারব। ' ধ্বংসের মালা নয়, বিজয়ের মালা, সম্ভাবনার মালা, সৃষ্টির মালা পরিয়ে দিই যুব সমাজের গলায়। (২৯ অাগস্ট ২০০৫ দৈনিক ইনকিলাব পত্রিকায় প্রকাশিত)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:১৯

ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: অনেক মূল্যবান কথা লিখেছেন।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯

ANIKAT KAMAL বলেছেন: ভাইয়া মূল্যবান হলে তো মন্তব্য পেতাম অাপনার মত করে কেউ অামাকে মনে করে না অনেক না পাওয়া হারানোর মাঝে অাপনিই সান্ত্বনা ধন্যবাদ অাপনাকে নং দিকেন কথা বলব

২| ১১ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৬

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: নব্বইয়ের দশকে যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ ধরা হত মাদককে। মাদক এখনো আছে, ভিন্ন রূপে। বর্তমানের সবচেয়ে ভয়াবহ মাদক হচ্ছে ইন্টারনেট, ফেসবুক, স্মার্টফোন। বাবা-মা ব্যস্ত ক্যারিয়ার নিয়ে। সন্তানদের একাকীত্ব ঘোচাতে তাদের হাতে অত্যাধুনিক ডিভাইস তুলে দিচ্ছে। বেশিরভাগই অত্যাধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করছে আদিম বিনোদনের জন্য। এক ভয়াবহ দুষ্টচক্রে আমাদের সমাজ আটকে গেছে। ভবিষ্যতে এই সমস্যা আরো বাড়বে বই কমবে না।

১২ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১০

ANIKAT KAMAL বলেছেন: কি চমৎকার করেই না অাপনি উপস্থাপন করেছেন, অাপনাকে হাজারও ছালাম ধন্যবাদ ভালো থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.