নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সড়ক দুর্ঘটনা ও তার প্রতিকার
অনিকেত কামাল
অত্যাধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার ব্যস্ততম পুথিবীর বাসিন্দা অামরা। বিরামহীন ছুটে চলাই যেন অামাদের ধর্ম। জীবন জীবিকার তাগিদে নয়ত দায়িত্ব কর্তব্যের অাহ্বানে। দিনে অথবা রাতে সময়ের ভগ্নাংশে অামরা সবাই এগিয়ে চলি। এই চলতে গিয়ে বিশেষভাবে নির্ভর করতে হয় যন্ত্রের ওপর। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, যে যন্ত্রটি নিয়ে যেতে পারত অামাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে অথচ সে যন্ত্রাট পৌঁছে দেয় জীবনের অনিভিপ্রেত শেষ ঠিকানায় নতুবা উপহার দেয় পঙ্গুত্বের অভিশাপে ভরা জর্জরিত জীবন। ধারাবাহিক সড়ক দুর্ঘটনার ক্রমাবনতি পরিণতির দুঃসংবাদ অামাদের নিত্য দিনের সুর্যোদয়ের মতই বাস্তব। প্রতিদিনের খবরের কাগজের পাতায় সড়ক দুর্ঘটনার অকাল মৃত্যুর বীভৎস দৃশ্য দেখে অামরা শিউরে উঠি। টিভি চ্যানেলের পর্দায় রক্তাত ট্র্যাজেডি দেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠি। কিংবা বেতারের সংবাদ অথবা লোকমুখে শুনে অথবা স্বচোখে দেখে অামাদের সংবেদনশীল বিবেক সহমর্মিতার কোমল অশ্রু বাঁধভাঙা গতিতে প্রবাহিত হয়। সড়ক দুর্ঘটনার দুঃসংবাদের মতো করুণ, শোকাবহ ও লোমহর্ষক ঘটনা অামাদের সবসময় শুনতে ও দেখতে হয়। ছোট ছোট শিশু সন্তানের বায়না পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে, ঘরের লক্ষ্মী বউটার সংসারের দাবি পূরণের নিশ্চয়তা দিয়ে , অসুস্থ মা-বাবার ওষধ অানার কথা বলে যে মানুষটি বাহিরে গেল কিংবা অাগামীর সুন্দর সম্ভাবনার স্বপ্ন বুনতে বুনতে যে শিক্ষার্থীরা ঘর হতে বেরিয়ে গেল কিংবা একজন শ্রমিক জীবিকার অন্বেষণ করতে কর্মক্ষেত্রে রওনা হল কিংবা যে ব্যবসায়িক ব্যবসার কাজে, ডাঃ সেবার কাজে, শিক্ষক জ্ঞান প্রদীপের অালো ছড়াতে রওনা হন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে হয়ত অাপনজনদের মাঝে অার ফেরা হয়না, হলেও লাশ হয়ে নতুবা চির পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে। ফিরে অাসার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে পরিবারের লোকের উৎকন্ঠা বাড়ে, অপেক্ষার শেষ মুহূর্ত ফুরিয়ে গেলে, ধৈর্যের বাঁধভাঙা অাবেগ - অাকুলতায় খোঁজ নেয় অাত্নীয় স্বজনের বাসায়, খবর নেয় হাসপাতালে, অফিসে কিংবা থানায়। কিন্তু না ততক্ষনে সব শেষ। জীবনের অাশা ভরসা সব ধুলোয় লুন্ঠিত।
পরিবারের একমাত্র বেঁচে থাকার অাশা - ভরসা, ভবিষ্যত অবলম্বন চিরদিনের মতো নিঃশেষ। অাত্নীয়-স্বজন, পরিবার-পরিজন, পাড়া-প্রতিবেশী সবই হয় দিশেহারা। একটি দুর্ঘটনা যেন "বিনা মেঘে বজ্রপাত" এর মতই সব কিছু তছনছ করে দেয়, এলেমেলো করে দেয় পারিবারিক স্নেহের বন্ধন, পথভ্রষ্ট হয় পরিবারের সদস্য।
জন্ম যেমন চিরসত্য, মৃত্যুও তেমনি অবধারিত। মুত্যুকে প্রতিহত করার সাধ্য কারো নেই। এ যেনো সৃষ্টি কর্তার অঘোম বিধান। তবুও অামরা বাঁচতে চাই তিলোতমাএই পৃথিবীর বুকে। কেননা মানুষ তার জীবনকে খুববেশী ভালোবাসে। কোন মুত্যুই অামাদের কাস্য নয়। কিছু মৃত্যু থাকে স্মেুত্যিতে সান্ত্বনার ভাষা খুঁজে পাওয়া যায় না, কিন্তি কিছু কিছু মৃত্যু থাকে যা কখনো মেনে নে'য়া যায় না, যা কখনো কাম্য নয়, খোনে ভাষা স্তব্ধ বিমূঢ়। অামরা কখনই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর অাশা করিনা। অামরা কখনই চাইনা কোন মায়ের বুক খালি করা গগন বিদারী কান্না, দেখতে চাইনা নববধুর সাদাশাড়ী, ভাইয়ের রক্তাত লাশের উপর পড়ে বোনের বুকফাটা অাত্নচিৎকার, দেখতে চাইনা ভেঙে যাওয়া সাজানো সুন্দর সংসার। সৃষ্টির স্বাভাবিক সৌন্দর্যন ম্লান করে দিয়ে শরীরের বিধ্বস্ত অঙ্গ-প্রতঙ্গ নিয়ে যখন একজন মানুষ হুইল চেয়ারে বসে দুঃখের অমানিশায় দিনাতিপাত করে এ দৃশ্য অবলোকন করার মত নয় , এ দৃশ্য অপ্রত্যাশিত। প্রতি বছর অামাদের দেশে অজস্র মানুষ গাড়ির তলায় প্রাণ হারায়। পথের অানাচে কানাচে যেন মৃত্যু ওঁত পেতে তার কালো থাবা বিস্তার করে অাছে। সুযোগ পেলেই ছিনিয়ে নেয় মানুষের মহামূল্যবান প্রাণ। দুর্ঘটনার বহর প্রমাণ করছে রাস্তায় নামলে কারো জীবন এখন অার নিরাপদ নয়।
একক কোন কারণে সড়ক দর্ঘিটনা ঘটেনা, এর পিছনে বহূবিধ কারন রয়েছে। যেমনঃ- ১ চালকের পেরোয়া গাড়ী চালানো । ২ প্রশিক্ষণ বিহীন/স্বল্প প্রশিক্ষণের চালক । ৩ অনভিজ্ঞ হেলপার দ্বারা গাড়ী চালানো। ৪ যান্ত্রিক ত্রুটিযুক্ত গাড়ী রাস্তায় বের করা। ৫ নেশা করে মাতাল অবস্থায় গাড়ী চালানো। ৬ অতিরিক্ত মাল/যাত্রী বহণ করা। ৭ নির্ধারিত গতিসীমার উর্ধ্বে গাড়ী চালালো। ৮ ড্রাইভারের প্রতিযোগিতাপূর্ণ মনোভাব। ৯ ট্রাফিক অাইন অমান্য। ১০ ট্রাফিক অাইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। ১১ হকারদের ফুটপাত দখল। ১২ পথচারীদের অসচেতনতা ১৩ অবরোধ, হরতাল, মিটিং, মিছিল , সমাবেশ, পথসভা ইত্যাদি। ১৪ অতিরিক্ত লোকসংখ্যা ও যানবাহন বৃদ্ধি। ১৫ রাস্তার সংক্রীর্ণতা। ১৬ জনগণের অজ্ঞতা। ১৭ যত্রতত্র যাত্রী উঠানো ও নামানো। ১৮ 'নিরাপদ সড়ক চাই' নিরাপত্তায় উদ্ধুদ্ধকরণে গণসচেতনতা সৃষ্টির অভাব ইত্যাদি ইত্যাদি।
প্রতিকারের ও প্রতিরোধের উপায়ঃ-
ক ট্রাফিক অাইন মান্য । খ সর্বদা নিয়ন্ত্রনের মধ্যে গাড়ি চালানে। গ গাড়ি রাস্তায় বের করার অাগে ভালোভাবে চেকিং করা। ঘ লাইসেন্স প্রদানে কড়াকড়ি অারোপ করা। ঙ অতিরিক্ত মালামাল ও যাত্রী বোঝাই বহন বন্ধ করা। চ ট্রাফিকদের কর্তব্যে অবহেলা না করা। ছ দোষী ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা। জ রাস্তার পরিধী বাড়ানো। ঝ ড্রাইভারের নেশা পরিহার করে সুস্থ স্বাভাবিক মস্তিকে গাড়ী চালানো। ঞ হকারদের ফুটপাত দখল পরিহার করা। ট রাস্তার উপর সাইনবোর্ড ব্যানার স্থাপন না করা। ঠ সকলের সাহায্য সহযোগিতা ও সচেতনতা সৃষ্টি করা ইত্যাদি ইত্যাদি।
সর্বোপরি এ কথা অনস্বীকার্য যে , সড়ক দুর্ঘটনা একটি বিরাট জাতীয় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অাজকের যান্ত্রিক সভ্য পৃথিবী নানা সমস্যায় জর্জরিত। পৃথিবীর সকল দেশেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। কিন্তু বাংলাদেশে এ দুঘর্টনা তুলনামূলকভাবে বেশি। এই অপঘাত মৃত্যুর করাল গ্রাস হতে জনগনকে রক্ষার মানসে সহানুভূতিশীল মন নিয়ে শক্ত হাত প্রসারিত করে প্রস্তাবিত সুপারিশগুলো অাশু বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নিরাপদ জীবন ও দুঘর্টনা মুক্ত সড়ক অামাদের সবারই কাম্য। তাই অাসুন অামরা সবাই বিশ্ব সচেতনতায় সবই মিলে দুর্ঘটনা মুক্ত বিশ্ব গড়ে তুলি।।। দৈনিকে প্রকাশিত অারো তথ্য তত্ত্ব দিয়ে সহোযোগিতা করলে কৃতার্থ হব অামিন
©somewhere in net ltd.