![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
~অধ্যায় এক~
এক ঘন্টা। ষাট মিনিট। তিন হাজার ছয়শ সেকেন্ড। প্রত্যেক দিনে ঠিক এতটুকু সময়ই আমি পাই।
ঠিক কতক্ষণ যে জেগে থাকি এটার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে আপনাকে আর বিরক্ত করছি না;তারচে আমার গল্পেই ফেরত যাই।আর সত্যি বলছি,এটা আসলেই দারুণ একটা গল্প।এবং এই গল্প বলার জন্য আমার হাতে মাত্র এক ঘন্টা সময় আছে।কিন্ত একটা কথা আগেই বলে রাখি এই সমস্যা সারানোর জন্য অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি আর সেই সাথে অনেক বই পড়ে পড়ে অনেক অনেক ওষুধও গিলেছি...তবে ঐসব করে বিশেষ কোন উপকার পাইনি।প্রত্যেক দিন ভোর তিনটা বাজে জেগে উঠি এবং তার ঠিক এক ঘন্টা পরেই ঘুমিয়ে পড়ি।তারপরে আবারও ২৩ ঘণ্টা ঘুমাই। তারপরে আবারও এই এক জিনিস।আমার এই জীবনকে হয়তো তেমন বেশি কিছু বলা যায় না,কিন্ত শুধু এই একটা জীবনই আমার চেনা।
আমার বয়স ৩৬।
আমার বয়সে,বেশির ভাগ মানুষই সারা জীবনে ২,০০,০০০ ঘণ্টারও বেশি জেগে জেগে কাটিয়েছে। আর আমি সারা জীবনে জেগে ছিলাম ১৪,০০০ ঘন্টার চেয়েও কম।ডাক্তারদের মুখের জবানে যদি বলি,মাত্র তিন জন লোকের অস্তিত্ব আছে যারা আমার এই কন্ডিশনে পড়েছে।হ্যা,কথাটা কন্ডিশনই হবে,ডাক্তারেরা ঠিক এই কথাটাই ব্যাবহার করেছে।এটা কোন রোগ না,কোন অসুস্থতাও না,এটা হল গিয়ে একটা কন্ডিশন।তাইওয়ানের এক অল্পবয়সী মেয়ের এটা আছে।
আর আইসল্যান্ডের আরেকজনেরও এটা আছে।কিন্ত এর নামকরণ হয়েছে আমার নামে।
এই জিনিসটা আমারই সবার আগে হয়েছে কিনা। হেনরি বিন্স... ঠিক এই নামেই ওরা এই জিনিসটাকে ডাকে।আমি মজা করে বলি, আমার নাম হল হেনরি বিন্স আর আমার হয়েছেও হেনরি বিন্স।
সে যাহোক, আপনি হয়তো ভাবছেন যে...যদি আমার এই পুরো জীবনে একটা তিন বছরের বাচ্চার চেয়েও কম সময় পাই তাহলে কথাই বা কী করে শিখলাম আর এতো এতো কথা মুখ দিয়ে বেরুচ্ছেই বা কী করে।তো আসলে, কী বলবো,আমাকে হয়তো এই প্রকৃতির দারুণ একটা বিস্ময় বলা যায়।
আর হয়তো ঈশ্বর আমাকে এই হেনরি বিন্স জিনিসটা দিয়েছেন এটা বলার জন্য– আমার নাম হল হেনরি বিন্স আর আমার হয়েছেও হেনরি বিন্স। – তিনি হয়তো আমাকে ভীষণ রকমের মেধা দিয়ে তার কৃতকর্মের ক্ষতিপূরণ করার চেষ্টা করেছেন।
এখন বাজে তিনটা বেজে দুই। আমার তবে গল্পটা শুরুই করে ফেলা উচিত।
…
আচমকা আমার চোখ খুলে গেল।
আজ এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ।আমি এটা জানি কারণ গতকাল ছিল ১৭ তারিখ।আর আমার ড্রেসারে রাখা ইলেক্ট্রনিক ঘড়িটাও ঠিক এটাই জানান দিচ্ছে।ঐ ঘড়িটার জ্বলজ্বলে সবুজ আলো আমাকে এও বলছে যে এখন বাজে ভোর তিনটা এক।
এক মিনিট চলে গেল।
চাদর সরিয়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম।আমি পুরোপুরি জামা কাপড় পরে রেডি হয়ে আছি।গায়ে পরে আছি ধুসর রঙের একটা ঢিলা পাজামা,মেরুন রঙ এর একটা হুড ওয়ালা সোয়েটার আর লেবু কালারের একটা কেডস।এখন যাবো, রান্নাঘরে।আমার ল্যাপটপটা ওখানের ঐ টেবিলটায় রাখা আছে।মাউস প্যাডে ক্লিক করলাম আর সাথে সাথে মনিটরের কালো পর্দা উধাও হয়ে গেল।তার জায়গা নিল বরফে ঢাকা একটা দুর্গ।গেম অফ থ্রোন্স সিরিজের এই পর্বটা আগে দশ মিনিট দেখা হয়েছে।কী বোর্ডে চাপ দেয়ার সাথে সাথে ভিডিও চালু হয়ে গেল।মনিটরের ওপরে চোখ রেখেই ফ্রিজ থেকে হলদে সস দেয়া রোস্টওয়ালা স্যান্ডউইচ আর প্রোটিনে ভরপুর একটা পানীয় বের করে নিলাম।দুইটাই ইসাবেল আমার জন্য আগেই বানিয়ে রেখেছে।ইসাবেল হল গিয়ে এক মেক্সিকান মহিলা যে রাঁধে,ঘর সাফ রাখে আর সেই সাথে আরও অসংখ্য কাজ করে যেগুলি করার মত সময় আমার হাতে নেই।
মোবাইল ফোনটা তুলে নিলাম।কেউ কল করেনি। শুধু ইনবক্সে তিনটা মেসেজ এসেছে।সবগুলিই আমার বাবার কাছ থেকে পাওয়া।দুইটা হচ্ছে তার কুকুরের ছবি।উনাকে ফিরতি মেসেজ দিলাম এই লিখে যে,কুকুর নিয়ে ঘুরার চেয়ে এবারে উনার একটা মেয়ে সঙ্গী খুঁজে নেয়ার সময় চলে এসেছে।স্যান্ডউইচে আরাম করে কামড় বসিয়ে ,পানীয় গিলতে গিলতে কম্পিউটারে আরেকটা উইন্ডো খুলে আমার ই-ট্রেড একাউন্টে ঢুকলাম।এই একসাথে অনেক গুলি কাজ করা ছাড়া আমার আসলে কোন উপায়ও তো নেই।আমার ডান দিকের নিচের কোণায় রাখা ঘড়ির দিকে তাকানোর লোভটা সামলাতে পারলাম না।
০৩:০৪
চার মিনিট চলে গেল।
কম্পিউটারে আমার স্টকের অবস্থা চেক করলাম,অবস্থা ভালোই মনে হল। গত ২৪ ঘন্টায় ৮,০০০ ডলার কামিয়ে নিয়েছি।
ঐ পেজের কেনা বেচার জায়গায় কিছু সামান্য সমন্বয় করে নিলাম, তারপরে ঐ উইন্ডো বন্ধ করে দিলাম। অকুপিড নামে একটা ডেটিং সাইটে ঢুকলাম, আর কয়েকটা মেসেজ দেখে নিলাম।ভালো কিছু নাই।সাইটে আমার নাম দিয়েছি আমি নম্রমটম্রমটিটা।শুধু যাদের মাথা খারাপ তাদেরই এই নাম আকৃষ্ট করবে। আপনারা হয়তো ভাবতে পারেন ডেটিং সাইটের মেয়ের সাথে আমি কিভাবে দেখা করি।এটা আমার জন্য একটু কঠিনই বটে।অনেক বছর আগে,যেই যেই বই,কফি বা খাবারের দোকান ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে সেগুলিতে গিয়ে ওদের সাথে দেখা করার চেষ্টা নিয়েছিলাম।কিন্ত হাসপাতালের জরুরী রুমে আমাকে তিনবার পাঠানোর দরকার হয়েছিল আর একবার তো এক মহিলা আমাকে মৃত ভেবে তার ভাইকে ফোন করে বলল আমার লাশটা যেন সে সরিয়ে নেয়ার ব্যাবস্থা করে। তারপরেই হাল ছেড়ে দিই।ব্রাউজার বন্ধ করলাম আর তিনটা মিনিট গেম অফ থ্রোন্স সিরিজটা পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দেখলাম।এই সিরিজের টাইরিয়নকে আমার দারুণ লাগে।
৩:১০ এ, পজ বাটনে চাপ দিলাম, এরপরে আমার আইফোন আর ইয়ার ফোন নিলাম
আর বাইরের দিকে ভো করে এক দৌড় দিলাম।
এখন হচ্ছে বসন্তের শুরু আর আলেকজান্দ্রিয়ার বাতাসও বেশ ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা।রাস্তাটা একদম নিশ্চুপ।ভোর তিনটা নিশ্চয়ই সারাদিনের সবচে শান্ত সময়।এমনকি রাতের ঐসব নিশাচর মানুষেরাও নিশ্চয়ই ঘুমে কাদা হয়ে আছে আর সকাল সকাল জাগা মানুষ গুলি নিজেদের বাসায় গুটিয়ে নিয়েছে।
কিন্ত তারপরই মনে হল,এসব ভেবে আর কী হবে।এখন আমি আমার শরীরের প্রতিটা অনুভূতি বুঝার চেষ্টা করতে লাগলাম।আমার উরুর কেঁপে কেঁপে উঠছে আর ঠাণ্ডা বাতাস আমার নাক দিয়ে ঢুকে ফুস্ফুসে পৌঁছে যাচ্ছে।
আমার চারপাশে এই মুহূর্তে যা যা হচ্ছে তার দিকে মনোযোগ দিয়ে রাখার জন্য নিজেকে চাপ দিলাম।আমার তো এতো অতীত-ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবার মতন সময় নাই।আমার এই জীবনটা শুধু বর্তমান দিয়ে ঘেরা।আগে একসময় নিজের সাথে "কী হত যদি" খেলাটা খেলতাম।কী হত যদি আমার একটা স্বাভাবিক জীবন থাকতো?আমি তখন কোথায় থাকতাম?আমার কি বিয়ে হত?আমার কি বাচ্চা-কাচ্চা থাকতো?কিন্ত এসব ভাবতে গিয়ে আমার ২০-৩০ মিনিট শুধু শুধুই নষ্ট হত।এমন সব জিনিস নিয়ে ভাবা যা পাল্টাতে পারবো না।যেটা কিনা অপরিবর্তনীয়।
আমি দ্যা লুমিনারের তিনটা গান শুনলাম, এখন এই ব্যান্ডের গান আমার দারুণ লাগে।এরপরে পাঁচ মিনিট ব্যাবসায় বিনিয়োগ নিয়ে একটা অডিও শুনলাম।
পটোম্যাক নদী আমার বাসা থেকে দুই মাইল দূরে,এই নদীটি ভার্জিনিয়াকে মেরিল্যান্ড থেকে আলাদা করেছে।আর পুরো একটা মিনিট খরচ করলাম দেখার জন্য যে একটা ট্রলার চওড়া ঢেউ কেটে কিভাবে নদী পার হয়ে যাচ্ছে।আগে ভাবতাম এই দৃশ্যটা যদি দিনের বেলায় দেখতাম তাহলে কেমন লাগতো,সূর্যের প্রখর আলো আর সাদা মেঘের নিচে দিয়ে এই পানি দেখতে কেমন লাগতো?কিন্ত আমার দুনিয়ায় দিনের কোন অস্তিত্ব নেই,শুধুই রাত।শুধু অন্ধকার আর অন্ধকার।
আমি যখন ফিরে আসতে লাগলাম, একটা গাড়ি দেখলাম যা পাশের রাস্তায় বাঁক নিচ্ছিল।
গত ৬ দিনের মধ্যে আমার দেখা প্রথম গাড়ি।গাড়িটা হল একটা ফোর্ড ফোকাস।একদম নতুন।ফোর্ডের স্টক দুপুর একটা দুই এ বন্ধ হয়ে যায়।এটা অবশ্য শুধু বলার জন্যই বলা।
২৮ মিনিটের সামান্য একটু কম সময়ের মধ্যে আমার চার মাইল দৌড় শেষ হল।আর যখন বাসায় ফিরে আসলাম তখন বাজে ৩:৩৮।
আর বাইশ মিনিট বাকি আছে।
চার মিনিট হালকা ব্যায়াম করলাম।
পাঁচ মিনিট লাগিয়ে গোসল দিলাম।
যখন আগের দিনে যেই পোশাক পরে ছিলাম সেই রকম পোশাক পরে যখন রান্নাঘরের দিকে রওনা দিলাম তখন বাজে ৩:৪৮।
আর বারো মিনিট।
ফ্রিজ থেকে সালাদের বাটি নিলাম: সবুজ শাক,গাজর আর টোম্যাটো। স্বাস্থ্যকর জিনিস।একটা আপেল, দুইটা চকলেট কুকি,আর বড় একটা গ্লাসে করে দুধ নিলাম।টেবিলে বসলাম আর কিন্ডলে ক্লিক করলাম।"একাকী যোদ্ধা" নামে একটা উপন্যাস পড়তে শুরু করলাম,এই উপন্যাসে নৌ বাহিনীর এক গেরিলা যোদ্ধা থাকে যে এক বন্দুকযুদ্ধে বেঁচে যায়।সে এখন আফগানিস্থানের পাহাড়ি এলাকায় তালিবানের সাথে লড়াই এ ব্যস্ত আছে।চরম জিনিস।
আস্তে আস্তে খেলাম,প্রতিটা শব্দে চোখ বুলিয়ে নিলাম।
চকলেট বিস্কুটে রাত ৩:৫৮ তে শেষবারের মত কামড় বসালাম।
আমার কিন্ডল অফ করলাম, উঠে দাঁড়ালাম,আর বেড্রুমের দিকে হাঁটা ধরলাম।
আমার বিছানায় বসলাম রাত ৩:৫৯ এ।
ঠিক তখনই একটা মেয়ের চিৎকার শুনলাম।
উঠে দাঁড়ালাম আর জানালার দিকে দৌড় লাগালাম। আমার ঠিক সামনের বাসায় র্যাঞ্চ স্টাইলের একটা বাসা আছে।একটু আগে যেই ফোর্ড ফোকাস দেখেছিলাম সেটা রাস্তার ঠিক সামনেই পার্ক করা।ওখানে যে কে থাকে সেই ব্যাপারে আমার কোনই ধারণা নেই।আমি ওদের কখনই দেখিনি।অবশ্য এই কথাটা আমার সব প্রতেবেশীদের ব্যাপারেই বলা যায়।
আমি জানি যে আমার এখনই বিছানার দিকে চলে যাওয়া উচিত।কারণ যে কোন সময়েই ঢলে পড়ে যেতে পারি।কিন্ত পারলাম না,জানালার সামনে সেঁটে থাকলাম।
আমার এই জানালার শার্সিতেই আটকে যাওয়ার ঝুঁকি আছে।আমি তাই সেকেন্ডের কাটা গুনতে লাগলাম।
হঠাৎ গেট খুলে গেল আর একজন মানুষ দ্রুত পায়ে হেঁটে বের হয়ে এল।
তিনি যখন ফোর্ডের দরজা খুললেন,তখন তিনি রাস্তার আলোর ঠিক নিচে এসে দাঁড়ালেন।যেন আমার এই তাকিয়ে থাকা উনি ধরতে পারলেন,আর তাই উপরের দিকে তাকালেন।আমাদের দৃষ্টি বিনিময় হল।তারপরে তিনি গাড়িতে উঠলেন আর গাড়ি চালিয়ে চলে গেলেন।
মেঝেতে পরে যাওয়ার আগে আমার শেষ চিন্তা ছিল ঐ মানুষটার খোদাই করা মূর্তির মত আকৃতি। আর ঐ মানুষটার চোখের স্থিরদৃষ্টি যেটা আমার দেহ ভেদ করে চলে যাচ্ছিল।
মানুষটা ছিল মার্কিন যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১২:৫৯
রকিব_উল্লাহ বলেছেন: বাংলা PDF পাওয়া যাবে??