![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আর্টেমিস ফাউল উপন্যাসের অনুবাদ
বইয়ের নামঃআর্টেমিস ফাউল
লেখকের নামঃইয়ন কলফার
বইয়ের ধরণঃফ্যান্টাসি,ইয়াং এডাল্ট,ফিকশন,চিল্ড্রেন
সূচনা
আর্টেমিস ফাউলকে কিভাবে বর্ণনা করা যায়?
অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সে চেষ্টা করে ব্যার্থ হয়েছে।আসল সমস্যা হচ্ছে আর্টেমিসের মারাত্মক বুদ্ধি।তার ওপরে যতগুলি পরীক্ষা চালানো হয়েছে সবগুলিকে সে চরমভাবে ধাপ্পা দিয়েছে।
অনেক বড় বড় ডাক্তার তার ওপরে পরীক্ষা চালিয়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেছে আর তাদের অনেকেই এখন নিজেদের হাসাপাতালে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে।
কোন সন্দেহ নেই যে আর্টেমিসের প্রতিভা মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার মত।কিন্ত এই মাপের মেধাবী একজন কী কারণে নিজেকে অপরাধমূলক কাজে উৎসর্গ করতে গেল?এই প্রশ্নের উত্তর শুধু একজনই দিতে পারে। এবং সে এ নিয়ে কোন কথাই বলতে চায় না।
হয়তো আর্টেমিসের চরিত্রের ব্যাপারে একটা নিখুঁত চিত্র পাওয়ার জন্য তার সর্ব-প্রথম শয়তানি অভিযানের কাহিনীটা আজকে বর্ণনা করা যায়।
ঐ অভিযানের যাদেরর ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে তাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ এর মাধ্যমে আমি এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছি,আর এই কাহিনী যেভাবে ডালপালা মেলেছে তাতে আপনি বুঝতে পারবেন যে কাজটা মোটেই সহজ ছিল না।
এই কাহিনীর শুরু কয়েক বছর আগে,একুশ শতকের গোড়ার দিকে। আর্টেমিস ফাউল তার পরিবারের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য একটা পরিকল্পনার ছক কষছিল।এমন একটা পরিকল্পনা যাতে আজকের সভ্যতা হুমড়ি খেয়ে পড়বে আর এই গ্রহের এক প্রজাতির সাথে আরেক প্রজাতি যুদ্ধে লিপ্ত হবে।
তখন তার বয়স চলছিল বারো বছর...
* * *
অধ্যায় ১
হো চি মিন শহরে এখন গ্রীষ্মকাল ,আবহাওয়া তাই বেজায় গরম।বলাই বাহুল্য, আর্টেমিস ফাউল এই বাজে আবহাওয়া এত ধৈর্য নিয়ে সহ্য করতেন না, যদি না খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপারে জড়িত থাকতেন।
সূর্য জিনিসটা আর্টেমিসের সাথে ভালো খাপ খায় না।সূর্যের আলোর তলায় তাকে তেমন ভালো দেখায় না।চার দেয়ালের ভিতরে লম্বা সময় মনিটরের সামনে বসে থাকায় তার গায়ের চামড়া হয়ে গেছে সাদা ধবধবা ।তার চেহারা হয়ে গেছে ভ্যাম্পায়ারের মতন ফ্যাকাশে আর আজকের দিনের প্রখর রোদের মতই তার মেজাজটাও এখন চরমে।
'আজকের দিনটা আশা করি আরেকটা বেকার ছুটাছুটি হতে যাচ্ছে না,বাটলার।'নরম আর কাঁটাকাঁটা গলায় বলল সে,'বিশেষ করে কায়রোর ঘটনার পরে।'
এটাকে একটা মৃদু বকুনি বলা যায়। ওরা বাটলারের সংবাদদাতার খবরের ওপর ভিত্তি করে মিশরে ভ্রমণ করেছিল ।
'না, স্যার।এই বারে আমি নিশ্চিত। নোওয়েন মানুষটা খারাপ না।'
'হুম্ম,'আর্টেমিস অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে গুন্ গুন্ করে বলল। দৈত্যাকার ফিরিঙ্গির একটা বাচ্চা ছেলেকে স্যার স্যার বলে ডাকা অস্বাভাবিক,অবাক হয়ে যাওয়ার মতই ব্যাপার।এখন তো,বলতে গেলে,একবিংশ শতাব্দী চলছে।দাসপ্রথাও বিলুপ্ত হয়ে গেছে। কিন্ত ওদের সম্পর্ক কোন সাধারণ সম্পর্ক না,আর এরাও কোন সাধারণ পর্যটক না।
তারা দুজনে ডং খাই রাস্তার পাশের একটা রেস্টুরেন্টে বসে স্থানীয় কিশোরদের খেলা করা দেখছিল।
নোওয়েন অনেক দেরি করছিল আর তাদের মাথার ওপরে থাকা ছেঁড়াফাটা ছাতা তেমন একটা ছায়া দিতে পারছিল না।আর্টেমিসের মেজাজ তাই আরও খারাপ হচ্ছিল।কিন্ত তার হতাশ আর গম্ভীর মুখের তলায় গোপন একটা আশা খেলা করছিল।আজকের এখানে আসা কি কোন ফলাফল বয়ে আনতে পারবে?ওরা কি বইটা খুঁজে পাবে?এতোটা আশা করা কি বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে?
একজন ওয়েটার দ্রুতবেগে তাদের টেবিলের দিকে ছুটে এল।
'স্যারদের কি আরও চা লাগবে?'মাথা দ্রুতবেগে উপর নিচ করতে করতে সে জিজ্ঞেস করল।
আর্টেমিস দীর্ঘশ্বাস ফেলল। 'নাটক করা ছেড়ে চেয়ার টেনে বসে পড়ো।'
ওয়েটার সহজাতভাবে বাটলারের দিকে ঘুরে তাকাল,যে ছিল ওখানকার একমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ।
'কিন্ত, স্যার, আমি তো একজন ওয়েটার।'
আর্টেমিস নিজের দিকে মনোযোগ টেনে আনার জন্য টেবিলে জোরে চাপড় মারল।
'তুমি হাতে বোনা চামড়ার জুতা আর একটা রেশমি জামা পড়ে আছ।আঙ্গুলে তোমার তিনটা সোনার আংটি।তোমার ইংরেজিতে এখনও অক্সফোর্ডের হালকা রেশ রয়ে গেছে আর তোমার কয়েকদিন আগের কাঁটা নখ এখনও চকচক করছে।তুমি মোটেও কোন ওয়েটার না।
'তুমিই আমাদের কাঙ্ক্ষিত লোক, নোওয়েন শান, আর এই ফালতু ছদ্মবেশ নিয়েছ আমাদের কাছে অস্ত্র আছে কিনা তা চুপিচুপি দেখে নেয়ার জন্য।'
নোওয়েনের কাঁধ এক পাশে ঝুলে পড়ল।সে বসল আর একটা ছোট্ট কাপে করে সামান্য একটু চা ঢালল।
'তাহলে অস্ত্রের কথায় ফিরে আসা যাক,' আর্টেমিস বলে চলল। 'আমার সাথে অস্ত্র নেই। কিন্ত এই বাটলার,আমার বাটলার,তার কাঁধের পিস্তল রাখার খোপে একটা নয় মিলিমিটারের সিগ সাওয়ার পিস্তল আছে ,বুটের মধ্যে দুইটা ছুরি রাখা আছে,ছোট একটা পিস্তল তার জামার হাতায় আছে,ওর ঘড়িতে গলাটিপে খুন করার জন্য চিকন একটা তার আছে এবং ওর বিভিন্ন পকেটে তিনটা স্টান গ্রেনেড লুকিয়ে রাখা আছে।আর কিছু,বাটলার?'
'ছোট্ট একটা ভারী দন্ড,স্যার।'
'ওহ,হ্যা।ভারী একটা দন্ড তার জামার সাথে লাগানো আছে।'
নোওয়েন কাঁপা-কাঁপা হাতে চায়ের কাপে চুমুক দিল।
'ভয় পাবেন না, জনাব শান,' আর্টেমিস হাসলো।'ঐ অস্ত্র আপনার ওপরে প্রয়োগ করা হবে না।'
নোওয়েনকে দেখে মনে হল না যে তার ভয় কেটেছে।
'না,' আর্টেমিস বলে চলল। 'আমার বাটলার অস্ত্র ছাড়াই আরও শয়ে শয়ে উপায়ে মানুষ খুন করতে পারে।যদিও আমি নিশ্চিত যে আপনাকে কুপোকাত করতে তার একটাই যথেষ্ট।'
নোওয়েন তখন পুরোপুরি ভয় পেয়ে গেল।আর্টেমিস প্রায়ই মানুষের ওপর অমন করে প্রভাব বিস্তার করে।ফ্যাকাশে একজন তরুণ কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলছে আর তার শব্দ ভান্ডারও একজন বয়স্ক মানুষের মতই সমৃদ্ধ।নোওয়েন ফাউলের নাম আগেও শুনেছে - অপরাধ জগতে এই নাম শুনেনি কে ? - কিন্ত সে ভেবেছিল তাকে আর্টেমিস সিনিয়রের সাথে কারবার করতে হবে,এই বাচ্চা ছেলের সাথে না। যদিও "বাচ্চা" বললে এর প্রতি অবিচারই করা হয়।আর ঐ বিশালদেহী,বাটলার।এটা নিশ্চিত যে সে একটা মানুষের মেরুদন্ড ঐ অতিকায় হাত দিয়ে গাছের ডালের মত কড়াৎ করে ভেঙে ফেলতে পারে। নোওয়েন ভাবতে শুরু করল,যত টাকাই দেয়া হোক এই অদ্ভুতুড়ে লোকদের সাথে এখানে আর এক মুহূর্ত থাকা ঠিক হবে না।
'এখন তাহলে ব্যাবসার কথায় আসা যাক,' আর্টেমিস বলল,একটা ছোট্ট রেকর্ডার টেবিলের ওপরে রাখল।'তুমিই তো আমাদের বিজ্ঞাপনের জবাব দিয়েছিল।'
'হ্যা, মিস্টার...মাস্টার ফাউল। আপনি যার খোঁজ করছেন...তার খোঁজ আমার জানা আছে।'
'তাই?তোমার মুখের কথায় কী আর বিশ্বাস করা যায়?তুমি তো আমাদেরকে সোজা ঘাপটি মেরে বসে থাকা শত্রুদের মধ্যে নিয়ে যেতে পারো।আমাদের তো আর শত্রুর অভাব নাই।'
ঠিক ঐ সময়ে বাটলার তার মালিকের কানের পাশে উড়তে থাকা একটা মশাকে ছোঁ মেরে ধরে তার প্রাণ বায়ু বের করে ফেলল।
'না, না,' নোওয়েন তক্ষুনি তার মানিব্যাগ টেনে বের করে আনল। 'এখানে, দেখুন।'
আর্টেমিস ছবিটা খেয়াল করে দেখল।তার বুকের ধুকপুক আওয়াজটাও সে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছিল।এটা দেখে সে একটু আশান্বিত হয়ে উঠল।কিন্ত আজকের দিনে তো কম্পিউটার আর স্ক্যানার দিয়ে যেকোনো কিছুই জাল করা যায়।ঐ ছবিতে দেখা যাচ্ছে যে ছায়াঘেরা অন্ধকার থেকে একটা হাত বেড়িয়ে এসেছে।নানান কারিকুরি করা সবুজ একটা হাত।
(চলবে)
অনুবাদ করেছেন © আরিফ জামান
©somewhere in net ltd.