![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গুপ্তঘাতকের হাতে খুন হওয়া প্রেসিডেন্টের কথা
গুপ্ত-সঙ্ঘ উপস্থিত থাকার হুমকি প্রসঙ্গে :
আমাদেরকে সবসময় ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় ব্যস্ত থাকতে হয়। এই নির্মম ষড়যন্ত্রকারী আড়ালে থেকে আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এই লোকগুলোর নিকট সমর-বিদ্যা, কূটনীতি, গুপ্ত-খবর, অর্থনীতি, বিজ্ঞান এবং রাজনৈতিক কার্যক্রম কোন কিছুই চাপা থাকে না।
—জন এফ কেনেডি, ২৭ এপ্রিল, ১৯৬১ ওয়ালডর্ফ-অ্যাস্টোরিয়াতে দেয়া ভাষণ-কালে।
জীবন এবং মৃত্যু সম্পর্কে কিছু কথা :
অসীমকে স্পর্শ করার ক্ষমতা দিয়েই ঈশ্বর মানুষকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। নিঃসন্দেহে এই প্রজাতিকে মাত্র একদিনের জন্য বেঁচে থাকার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি তিনি! না... মানুষকে অমর হওয়ার জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছিল।
—অ্যাব্রাহাম লিংকন
ঐতিহাসিক দলিল থেকে পাওয়া
মানব ইতিহাসে যত্রতত্র কন্সপিরেসি থিওরির ছড়াছড়ি। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মানুষ স্বভাবতই এমন। আমরা সব সময় বিশৃঙ্খলার মাঝে শৃঙ্খলা খুঁজি। সেই অদৃশ্য-মানবের সন্ধান করি যে পর্দার আড়ালে থেকে আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়ন্ত্রণ করছে। রহস্য-ঘেরা এই সব ষড়যন্ত্রকারীদের কখনও ভিলেন আবার কখনও-বা নায়ক উপাধি দেয়া হয়েছে। এই গুপ্ত-সঙ্ঘের কোনোটি ঐতিহাসিক-ভাবে প্রতিষ্ঠিত; আবার কোনোটি মানুষের কল্পনা ; কিন্তু তারপরেও এই দুটোর রহস্যময়তা নিজেদের মধ্যে এমনি-ভাবে গিঁট পাকিয়েছে যে প্রকৃত তথ্য এবং কাল্পনিক তথ্য দুটো জিনিস একত্রে জট লেগে গিয়ে মিথ্যা ইতিহাসের জন্ম দিয়েছে।
এবং ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায় নাইটস টেম্পলার-ও এর ব্যতিক্রম নয়।
দ্বাদশ শতাব্দীর গোঁড়ার দিকে, নয়জন নাইটকে নিয়ে নাইটস টেম্পলার নামক সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ওরা শপথ নিয়েছিল, পবিত্র ভূমিতে যেসব তীর্থযাত্রী আসা যাওয়া করবে ওদেরকে ওরা সুরক্ষিত রাখবে। শুরু থেকেই ক্ষমতা-প্রতিপত্তি দিয়ে পুরো ইউরোপে প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছিল নাইটস টেম্পলার। কিন্তু তাদের ক্ষমতা দেখে রাজা-বাদশাহ এমনকি পোপ-ও শঙ্কিত হয়ে পড়েন। এরপর ১৩০৭ সালের ১৩ অক্টোবর, ফ্রান্সের রাজা এবং তৎকালীন পোপ ষড়যন্ত্র করে ওই সংগঠনকে ভেঙ্গে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তারা দাবি করেন, এই নাইটরা অনেক জঘন্য পাপ করেছে, যার মাঝে ধর্মবিরোধী কাজ-ও আছে। নাইটস টেম্পলারের বিলুপ্তির পর অনেক কল্পিত কাহিনীর জন্ম হয়, যার ফলে আসলেই তাদের ভাগ্যে কি হয়েছে তা আর জানা যায় না। কিছু মানুষ বিশ্বাস করে, এই সংগঠন আজও গোপনে টিকে আছে। এবং ওরা এমন একটি শক্তিকে সুরক্ষা দিচ্ছে যা আমাদের চেনা দুনিয়াকে পালটে দিতে সক্ষম।
কিন্তু আসুন এসব পৌরাণিক কাহিনীকে এক পাশে রেখে সরাসরি সেই নয়জন নাইটের কাছে ফেরত যাই। অনেকেই জানে না, ওই নয়জন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয় রক্তের সম্পর্ক বা বিবাহের সম্পর্ক দ্বারা আবদ্ধ ছিলেন, অর্থাৎ তারা একই পরিবারের সদস্য। ঐতিহাসিক নথিপত্রে তাদের আটজনের নাম পাওয়া যায়। নবম সদস্যের ব্যাপারে অনেক কল্প-কথা প্রচলিত আছে। ঐতিহাসিকেরা তাকে নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা করেছেন। কিন্তু তার আসল পরিচয় রহস্যের চাদরে ঢাকা। কে সেই সর্বশেষ জন? কেন ইতিহাস সেই সর্বশেষ নাইটকে কখনও অন্যদের মত তুলে ধরেনি?
সেই রহস্যের উত্তর খুঁজে পেতে চাইলে আমার সাথে অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দিন।
বৈজ্ঞানিক দলিল থেকে পাওয়া
২০১১ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি, টাইম ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে লেখা হয়েছিল : ২০৪৫ সালে অমরত্ব লাভ করতে সক্ষম হবে মানুষ। প্রথম দিকে এই কথাকে কেউ পাত্তা দেয়নি। তবে অন্যান্য বিজ্ঞানীরা-ও পরে একই রকম বিবৃতি দান করেন। যেমন ডক্টর রোনাল্ড ক্ল্যাটজ তার অ্যাডভান্স ইন অ্যান্টি-এজ মেডিসিন বইয়ে লিখেছিলেন :
আগামী পঞ্চাশ বছর বা এরকম সময়ের মধ্যে ধরে নেয়া যায়, মানুষ বড়সড় রোগব্যাধি অথবা খুনখারাবি থেকে দূরে থাকতে পারবে। পূর্ণ সম্ভাবনা আছে যে, চিরকাল বাঁচতে পারবে মানুষ।
দারুণ এক সময়ে বাস করছি আমরা। ঔষধ, জেনেটিক বিদ্যা, প্রযুক্তি এবং আরও অনেক শাস্ত্র অধ্যয়নের মাধ্যমে নিজেদের সামনে নতুন একটি সম্ভাবনা হাজির করতে সক্ষম হয়েছি : অমরত্ব।
কিন্তু কীভাবে এর রূপায়ন করা হবে? এই বইয়ে সেই উত্তর খুঁজে পাবেন আপনি। এই উপন্যাসে যেসব তথ্যের উল্লেখ হয়েছে সেগুলো গবেষণা হতে প্রাপ্ত, যা সোভিয়েত বিজ্ঞানীরা স্নায়ু-যুদ্ধের সময় করেছিলেন। কিন্তু প্রথম পৃষ্ঠা উল্টানোর আগেই, উপরে উল্লিখিত বিস্ময়কর কথাটি আমি সংশোধন করতে চাই। সত্যি বলতে, অমরত্ব-প্রাপ্তির সময়-কালকে বিজ্ঞানীরা অনেক কমিয়ে ধরেছেন।
কারণ অমরত্ব যে শুধু আমাদের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে তাই নয়... চিরজীবন-প্রাপ্ত মানুষেরা ইতোমধ্যে আমাদের চারপাশে ঘোরাফেরা করছে।
প্রস্তাবনা
১১৩৪ সালের গ্রীষ্ম
পবিত্র ভূমি
এককালে ওরা ওকে ডাইনি আর বেশ্যা বলে ডাকতো।
কিন্তু আর নয়।
ঘোড়ার পিঠে চড়ে দুইদিকে দুই পা ছড়িয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিদর্শন করছে মেয়েটি। মুসলমান আর খ্রিস্টানের মৃতদেহ পুরো এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ক্ষুধার্ত কয়েকটি শকুন সেইসব মৃতদেহকে খুবলে খাচ্ছে। অন্যদিকে কয়েকজন লোক মরা মানুষগুলোকে ঘাঁটাঘাঁটি করে তাদের পায়ের বুট, তীরের ডগা নিজেদের জিম্মায় নিয়ে আসছে। ওদের মাঝে কয়েকজন তার দিকে ফিরে চাইলো, কিন্তু তারপরেই দ্রুত মুখ ঘুরিয়ে নিল।
সে জানতো ওরা কী দেখেছিল, আরেকজন নাইট যে এখানে লড়াই করেছিল। মেয়েটির স্তন বর্ম দ্বারা আড়াল করা। ওর ছোট করে ছাঁটা কালো চুল হেলমেটের তলায় ঢাকা পড়ে আছে। সুদর্শন চেহারা হেলমেট দ্বারা আড়াল করা। চলার সময় ওর কোমরে আটকে রাখা দুধারী তলোয়ারটি বারবার ঝাঁকুনি দিচ্ছে।
খুব অল্প কয়েকজন মানুষ জানে যে সে আসলে একজন মেয়ে—এবং লুকিয়ে রাখা লিঙ্গের চেয়েও অনেক গোপন কথা মেয়েটির মনের মাঝের গোপন কুঠরিতে রাখা আছে যা অন্য কারুর জানা নেই।
মেয়েটি একজন নাইট। তার অনুচর স্কোয়ারটি রাস্তার ধারে মনিবের জন্য অপেক্ষা করছিল। সামনের ঢালু পথ উঁচু হয়ে স্টোন কিপ দুর্গে গিয়ে মিশেছে। গালিলির নাপথালি পাহাড় খোদাই করে এই স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। দুর্গ পেরিয়ে, লাল রঙা সূর্যটি ধীরে ধীরে দিগন্তের শেষ মাথায় ডুব দিচ্ছে। সূর্যের আভায় যুদ্ধক্ষেত্রে প্রজ্বলিত আগুনের ধোঁয়াকে অস্পষ্ট লাগছে।
তরুণ স্কোয়ার সম্মান জানানোর ভঙ্গিতে হাঁটু গেড়ে বসলো। অন্যদিকে মেয়েটি তার ঘোড়াকে স্কোয়ারের পাশে এনে থামালো।
“ওই লোক ওখানে আছে তো?” জিজ্ঞেস করল মেয়েটি।
ভীত ভঙ্গিতে সায় দিল স্কোয়ার। “লর্ড গডফ্রয় আপনার জন্য ওখানে অপেক্ষা করছেন।”
ছেলেটি ওই পথের দিকে ভুলেও তাকালো না। মাথা নিচু করে বসেই রইলো। মেয়েটির মাঝে অতো অনীহা নেই। আরও ভালো করে দেখার আশায় নিজের মাথার হেলমেটটি খুলে নিলো সে।
এতো দিন চেষ্টার পর অবশেষে পেলাম…
এর জন্য ষোলটি বছর ব্যয় করেছে সে—সেই যখন থেকে তার চাচা জেরুজালেমে নাইট অফ দ্য টেম্পলার নামক সংগঠন প্রতিষ্ঠিত করেন। তখন থেকে এই অসম্ভবের খোঁজ করছে সে। এমনকি তার চাচার মাথাতেও আসেনি কেন এই মেয়ে নাইট অফ দ্য টেম্পলারে যোগ দিতে চাইছে। কিন্তু ওর প্রভাবশালী পরিবারের কারণে এই মেয়েটির অনুরোধ অস্বীকারও করা যায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত এক-রকম বাধ্য হয়েই একে দলে টেনে নিতে হয়। মেয়েটির সত্যিকার পরিচয় লুকিয়ে রাখা হয়েছে। আর ওর চেহারা-ও সবসময় হেলমেটের তলায় ঢেকে রাখা হয়।
ওর পরিবারের অন্য সদস্য—ওর ব্লাডলাইন (কোন ব্যক্তির পূর্বপুরুষ)—সংগঠনটিকে ভেতর এবং বাইরে থেকে নিপুণভাবে পরিচালনা করছে : ধন-সম্পদ, বিদ্যা-বুদ্ধি জড়ো করছে, গোপন সমাধি খুঁড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক সম্পদের অনুসন্ধান করছে। জ্ঞানের খোঁজে মিশর এবং পবিত্র ভূমিতেও হানা দিয়েছিল ওরা। কিন্তু এতো এতো প্রচেষ্টার পরেও, ব্যর্থতাকে ফাঁকি দেয়া সম্ভব হয়নি। এক বছর আগে, ওরা বোন্স অফ ম্যাগির দখল নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। বোন্স অফ ম্যাগি হচ্ছে বাইবেলে বর্ণিত তিন রাজার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। বলা হয় এর ভেতরে মধ্যযুগীয় রসায়ন-শাস্ত্রের গুপ্ত বিদ্যা রাখা আছে।
আজকের দিনটিতে তাই ব্যর্থতার আরেকটি ছাপ পড়তে দেয়া যাবে না।
আচমকা হাতে ধরা লাগামে ঝাঁকুনি দিয়ে, নিজের ঘোড়াকে সেই পাথুরে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিলো মহিলা নাইট। সম্মুখবর্তী প্রতিটি পদক্ষেপে মাটিতে পড়ে থাকা মৃতদেহের সংখ্যা বাড়ছে। পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার পর মেয়েটি দেখলো দুর্গের দরজা ভেঙে টুকরো টুকরো। নিশ্চয়ই ইস্পাতের গুড়িটি বারংবার আঘাত হেনে দরজার এই হাল করেছে।
সামনের পথে দাঁড়িয়ে আছেন দু'জন নাইট। ওরা মেয়েটিকে সম্মান জানানোর ভঙ্গিতে নড করলো। দু'জনের মধ্যে তুলনামূলক তরুণ নাইট—ওদের দলে নতুন যোগ দিয়েছে—তার জামায় লাল রং-এর একটি ক্রুশ সেলাই করা। অন্য টেম্পলারদের জামায়ও একই চিহ্ন আঁকা। এর মাধ্যমেই তারা আজকের দিনের রক্তপাতের উদ্দেশ্য বুঝাতে চাইছে।
খ্রিস্টান-মুসলমানের মাঝে ধর্মযুদ্ধ হয়েছিল এখানে।
ধূসর চুলের বয়স্ক যোদ্ধারা অবশ্য তাদের বর্মের উপর শুধু ঐতিহ্যবাহী সাদা জামা চাপিয়েছে। একমাত্র রক্তের ছোপ ছোপ দাগ ছাড়া সেই সাদা জামায় আর কোনো অলঙ্করণ নেই।
“গডফ্রয় আপনার জন্য ওখানে অপেক্ষা করছেন,” বয়স্ক একজন নাইট এই কথা বলে নগরদুর্গের দিকে আঙুল তাক করলেন।
মেয়েটি ওর ঘোড়ার পিঠে চড়ে বিধ্বস্ত দরজার দিকে এগোল। এবং এরপর জামায় কম্পন তুলে স্যাডল থেকে নামল ও। তলোয়ারটিকে ঘোড়ার সাথেই রেখে এল, কারণ মেয়েটি ভালো করেই জানে অতর্কিত আক্রমণ করার জন্য এই দুর্গের কেউ বেঁচে নেই। লর্ড গডফ্রয় বেশ দক্ষতার সাথেই তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। এবং এর প্রমাণ হিসেবেই, সারা কোর্ট-ইয়ার্ড জুড়ে দুর্গ-রক্ষকদের মৃতদেহ পড়ে আছে। কালো দেয়ালের পাশে ওদের লাশ স্তূপীকৃত আকারে শোয়ানো।
যুদ্ধ শেষ।
পড়ে আছে শুধু ধ্বংসাবশেষ।
আঁধারের মাঝে আলোকিত হয়ে থাকা একটি দরজার দিকে এগিয়ে গেল মেয়েটি। সরু একটি সিঁড়ির দেখা যাচ্ছে। সেই সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকল ও। শেষ দিকে এসে উত্তেজনায় মেয়েটির পদধ্বনি দ্রুত থেকে দ্রুততর হল।
ওরা চাওয়া কি সত্য হবে? এতগুলো বছর অপেক্ষার পর…
একটি বড়সড় ঘরে প্রবেশ করল ও। ঘরের দুই পাশে সারি সারি করে রাখা আছে পাথরের শবাধার। অনেক দুর্বোধ্য আঁকিবুঁকি সেখানে। ঝাঁট দিতেই, মেয়েটি লক্ষ করল ওখানে মিশরিয় ভাষায় কিছু একটা লেখা। এই রহস্যময় লেখাটির বয়স খ্রিস্টের জন্মেরও আগের। সম্মুখে, মশালের আলোয় আলোকিত দুইটি মানব-মূর্তিকে দেখা গেল: একজন দাঁড়িয়ে আছে, অন্যজন হাঁটু ভেঙে মাটিতে বসা। হাতে একটি দণ্ড ধরে আছে সে।
ওদিকে তাকাতেই খেয়াল করল, শেষ শবাধারটিও হাট করে খুলে রাখা। শবাধারটির পাথরের ঢাকনি ভেঙে সেটিকে ফেলে রাখা হয়েছে মেঝেতে। মনে হচ্ছে কেউ একজন দেখতে চেয়েছিল এর ভেতর কোনো ধন-সম্পদ লুকানো অবস্থায় আছে কি-না। তবে ভাঙার পরে দেখে, ওখানে কয়েকটা গাছের শুকনো ডাল এবং লতাপাতা ছাড়া আর কিছু অবশিষ্ট নেই।
মেয়েটি ওদিকে যেতেই লর্ড গডফ্রয়ের চেহারায় হতাশার ছাপ পড়ল। “শেষ পর্যন্ত আপনি তবে এলেন,” তার কণ্ঠে কৃত্রিম আনন্দের সুর।
মেয়েটি নাইটকে উপেক্ষা করল। নাইট তার চেয়ে এক মাথা লম্বা, যদিও ওদের দুজনের চুলের রঙ কাল এবং নাকের আকৃতি ঈগলের মতো বাঁকানো, যেটি আবছা-ভাবে তাদের দক্ষিণ ফ্রান্সের বংশ-ধারাকে প্রকাশ করছে। ওদের দুই পরিবার দূরসম্পর্কের আত্মীয়।
নিচু হয়ে বসে বন্দীকে মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করল মেয়েটি। বন্দীর চেহারা রোদে-পোড়া, ত্বক উৎকৃষ্ট মানের চামড়ার মত মসৃণ। মাথা থেকে নেমে আসা কালো চুলের ফাঁক দিয়ে ওর দিকে স্থির চেয়ে রইল লোকটি। বন্দীকে যদিও মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসতে বাধ্য করা হয়েছে, তারপরেও একে দেখে তেমন একটা ভীত মনে হচ্ছে না। শুধু ওর চোখ-জোড়ায় বিষাদের করুণ ছায়া।
গডফ্রয় এগিয়ে এলো মেয়েটির দিকে, কিছু বলতে চায় সে। অবচেতনে বুঝতে পেরেছে এখানে গুরুত্বপূর্ণ কিছু একটা হচ্ছে। যদিও এই মেয়েটির সত্যিকার পরিচয় সে জানে, তবে ওর মনের গহিনের গোপন কথা সম্পর্কে কিছুই জানে না গডফ্রয়।
“মাই লেডি…” শুরু করলো সে।
এই কথা কানে আসতেই বন্দীর চোখ বিস্ময়ে সরু হয়ে গেল। দৃষ্টি নিবদ্ধ হল মেয়েটির দিকে। বন্দীর চেহারায় বিষাদের ছাপ সরে গিয়ে এক মুহূর্তের জন্য সেখানে আতঙ্কের চিহ্ন দেখা গেল—কিন্তু সেটাও দ্রুত উধাও হয়ে গেল।
মেয়েটির কৌতূহল হল… এই লোক কি আমাদের ব্লাডলাইন, আমাদের গোপনীয়তার ব্যাপারে কোনো কিছু জানে?
ওর চিন্তাকে বেশিদূর এগোতে না দিয়ে গডফ্রয় বলে চলছে, “আপনার দেয়া নির্দেশ অনুযায়ী, অনেক মানুষ খুন করে এই অভিশপ্ত জায়গার দখল নিতে হয়েছে আমাদের। এতো কিছু করেছি শুধু এই লোকের কাছে যেই সম্পদ আছে তা খুঁজে পাওয়ার জন্য। আমি জানতে চাই এই লোকটার পরিচয় কী? আমার মনে হয়, যেই খাটুনি করেছি তাতে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার অধিকার রাখি আমি।”
গর্দভটার সাথে কথা বলে সময় অপচয় করতে চাইল না মেয়েটি। বরং বন্দীকে সরাসরি প্রাচীন আরবি ভাষায় জিজ্ঞেস করল, “কবে জন্মেছিলে তুমি?”
বন্দীর ক্লান্ত চোখ ওর দিকে নিবদ্ধ হল। দেখে মনে হচ্ছিল সে সতর্কভাবে চিন্তা করছে মিথ্যা বলবে কি-না, কিন্তু পরে বুঝতে পারলো এমনটা করলে ধরা পড়ে যাবে।
মৃদু স্বরে বললেও মনে হল কুয়ার গভীরতা থেকে উঠে আসছে কথাটি। “আমি জন্মেছিলাম ৯৫ হিজরির মহররম মাসে।”
বিদ্রূপ করতে পারার মত যথেষ্ট আরবি জানে গডফ্রয়। “৯৫ সালে? তাহলে তো এর বয়স এক হাজার বছরের ওপরে।”
“না,” মেয়েটি বলল, মনে মনে হিসাব করছে। “ও যেখান থেকে এসেছে ওখানকার লোকেরা আলাদাভাবে দিন তারিখ গণনা করে। ওদের ক্যালেন্ডার শুরু হয়েছে মক্কায় মহানবী মোহাম্মদ (স) এর আগমনের দিন থেকে।”
“তো, এই লোকের বয়স তাহলে হাজার বছর হবে না?”
“না, অতো হবে না,” বলল ও। “সে দুনিয়ায় এসেছে মাত্র পাঁচশ বিশ বছর আগে।”
চোখের কোণ দিয়ে মেয়েটি দেখল, বিস্মিত দৃষ্টি নিয়ে তার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে গডফ্রয়।
“অসম্ভব,” কাঁপা কাঁপা স্বরে অবিশ্বাসের ভঙ্গিতে বলল সে।
বন্দীর দিকে অপলক চেয়ে রইল মেয়েটি। অনুভব করল, সেই চোখের গহীনে ভীতিকর সব গোপন কথা লুকানো আছে। মেয়েটি কল্পনা করার চেষ্টা করল এতোগুলো বছর যাবত এই লোক কত কিছুর সাক্ষী হয়েছে: পরাক্রমশালী সাম্রাজ্যের উত্থান-পতন, কতশত শহর সময়ের পথ-পরিক্রমায় বালুর মাঝে হারিয়ে গেছে। এই লোক সেইসব গুপ্ত-রহস্য এবং হারিয়ে যাওয়া ইতিহাসের কতটুকু জানে?
কিন্তু এই সব প্রশ্ন করার জন্য মেয়েটি এখানে আসেনি।
এবং ওর সন্দেহ আছে জিজ্ঞেস করলেও এই লোক সেই সব প্রশ্নের জবাব দেবে কি-না।
এরপর যখন লোকটি মুখ খুলল, ওর কথা সাবধান-বাণী হিসেবে এল। আঙুল দিয়ে শক্ত করে হাতের দণ্ডটি ধরে রেখেছে সে। “তুমি যা চাঁচ্ছ তার জন্য দুনিয়া এখনও প্রস্তুত নয়। এটা নিষিদ্ধ জিনিস।”
মেয়েটি এই কথাকে পাত্তা দিল না। “এই সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার তোমাকে দেয়া হয়নি। কোনো মানুষ যদি একে ছিনিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট তেজস্বী হয়, তাহলে সে এটিকে চাইলেই নিজের জিম্মায় নিয়ে নিতে পারে।”
লোকটি তার দিকে কঠোর দৃষ্টিতে তাকাল। “সাপের মন্ত্রণায়, স্বর্গোদ্যানের জ্ঞান-দায়ী বৃক্ষ হতে ফল চুরির সময় ইভ নিজেও (ঈশ্বর-সৃষ্ট প্রথম মানবী) তেমনটাই বিশ্বাস করত।”
“আহ... !” মেয়েটি বড় করে শ্বাস নিয়ে তার দিকে এগিয়ে এলো। “আমার ব্যাপারে তুমি ভুল বুঝছ। আমি ইভ নই। আর আমি জ্ঞান-দায়ী বৃক্ষ-ও খুঁজছি না—আমি খুঁজছি জীবন-দায়ী বৃক্ষ।”
একথা বলেই বেল্ট থেকে একটি ভয়ঙ্কর-দর্শন ড্যাগার বের করে দ্রুতবেগে তার হাতল ঘুরিয়ে বন্দীর গলা চিরে দিল মেয়েটি।
বিস্মিত গডফ্রয় এক পা পিছিয়ে গেল। “কিন্তু এই লোকটির খোঁজেই না আপনি এতদূর এলেন!”
মেয়েটি একটান দিয়ে ড্যাগারটি বন্দীর গলা থেকে টেনে আনল। ছুরির ফলা থেকে তখনও রক্ত চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে। মৃতদেহকে লাথি দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তার নিথর আঙুল থেকে দণ্ডটি নিজের জিম্মায় নিয়ে এল সে।
“এই লোকটিকে খুঁজছিলাম না,” মেয়েটি বলল, “আসলে ওর কাছে থাকা এই দণ্ডটি খুঁজছিলাম আমি।”
গডফ্রয় মনোযোগ দিয়ে মেয়েটির হাতে ধরা জলপাই কাঠের দণ্ডটির দিকে চেয়ে রইল। এর নিম্নভাগে তাজা রক্ত বইছিল তখন। দণ্ডটিতে অস্পষ্টভাবে কিছু একটা খোদাই করা : লতানো সাপের মত মুচড়াতে মুচড়াতে সেটি দণ্ডের হাতল পর্যন্ত গিয়ে ঠেকেছে।
“এই জিনিসটা কী?” নাইট অবাক চোখে জিজ্ঞেস করলো।
প্রথমবারের মতো মেয়েটি গডফ্রয়ের দিকে পুরোপুরি ঘুরল—এবং তার বাম চোখ বরাবর ছুরি বসিয়ে দিল। এই লোক অনেক বেশি দেখে ফেলেছে। নিথর দেহ মাটিতে পড়ে যেতেই মেয়েটি তার চূড়ান্ত প্রশ্নের জবাব দিল। তার হাতে তখন বহু-প্রাচীন কাঠের দণ্ডটি উঁচু করে ধরা।
“দেখো... এই দণ্ডের নাম বাঁকাল ইসু,” মেয়েটি ফিসফিসিয়ে বলল। “একসময় এটি মুসা (আ) এর কাছে ছিল, পরে একে বহন করতেন ডেভিড এবং এই দণ্ডটির মালিক হচ্ছেন যীশু খ্রিস্ট।”
৪ জুলাই:
আজ থেকে পাঁচ দিন পরে
খুনি রাইফেলের টেলিস্কোপিক সাইটের মাঝে চোখ রেখে সেটিকে প্রেসিডেন্ট জেমস টি গ্যান্টের বুক বরাবর তাক করল। দূরত্বটা আরও একবার চেক করে নিল সে—সাতশ মিটার—এরপর স্নাইপার রাইফেলের মাঝ দিয়ে প্রেসিডেন্টের বাম কানের পেছনের হাড়ের ওপর ফোকাস করল। খুনি জানে, গুলি করার জন্য ওটাই সবচেয়ে মোক্ষম জায়গা। ইয়ার-পিসের মাঝ দিয়ে মঞ্চের চারপাশে থাকা লোকজনের উচ্চস্বরে হাসাহাসি এবং উৎসবমুখর সঙ্গীত-ধ্বনি ভেসে আসছে। তবে এসব কিছুকে পাত্তা না দিয়ে খুনি ওর টার্গেট, ওর মিশনের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করল।
আমেরিকা নামক দেশটির জন্ম হয়েছিল ৪ জুলাইয়ে। আর এই ৪ জুলাই তারিখেই তিনজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট মৃত্যু বরণ করেছেন।
থমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, এবং জেমস মনরো।
আজ মারা যাবে চতুর্থ জন।
বিন্দুমাত্র আঙ্গুল না কাঁপিয়ে, ট্রিগার টেনে দিলেন কমান্ডার গ্রে পিয়ের্স।
২| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৩:৫১
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
জেমস রলিন্সের অনুবাদ করছেন? প্রথমেই স্যালুট জানাই সে জন্য। রলিন্সের বই অনুবাদ করে ভালভাবে অর্থ প্রকাশ করার খুবই বড়সর প্যারার কাজ।
যাই হোক, এটা কি বই হিসেবে আসছে না?
শুধু প্রিভিউটা দিলেন??
২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৩
আরিফুজ্জামান১৯৮৭ বলেছেন: বই হিসেবে আসছে।
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
অপু তানভীর বলেছেন: কবে নাগাত আসবে বই আকারে ?
সিগমা ফোর্সের বইয়ের অপেক্ষা করে থাকি !
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৪০
এপিটাফের গল্পগুচ্ছ্ বলেছেন: পড়ে ফেলতে হয় তো