![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার ছোটবেলাটা যেমন কেটেছে। (টাকা-পয়সার দিক দিয়ে।)
.
আমি ছোটবেলায় টাকা তেমন একটা একেবারেই পেতাম না। ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফোর পর্যন্ত তো আমাকে নগদ টাকা একেবারেই দেয়া হত না। ক্লাস ফাইভ থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত আমাকে টিফিনের জন্য ২ টাকা দেয়া হত। এবং ক্লাস নাইন-টেন-এ আমাকে দেয়া হত পাঁচ টাকা।
.
যখন কলেজে উঠি, তখন আমাকে দেয়া হত ২০ টাকা। আমার কলেজ ছিল মালিবাগ মোড়ে, ঢাকা বিজ্ঞান কলেজ। তো... ওই কলেজে যাওয়ার জন্য যাতায়াত খরচ হিসেবেই ১২ টাকা খরচ হয়ে যেত। ক্লাসের ফাঁকে খাওয়ার জন্য হাতে থাকত মাত্র ৮ টাকা।
.
এমনকি আমি যখন অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, তখনও আমাকে এই ২০ টাকাই দেয়া হত। অনার্স পড়ার জন্য আমাকে যেতে হত খিলগাও-এ। এখানেও যাতায়াত ভাড়া হিসেবে আমার খরচ হত ১২ টাকা।
.
তো, আমার স্বভাব হচ্ছে, আমি চুরি করতাম না। টাকা বাঁচানোর জন্য তাই আমাকে অন্য একটা কৌশল বের করতেই হত। আমি সৎ একটা কৌশলই বেছে নিলাম। আমি যখন খিলগাঁও-এ অনার্স পড়তাম, আমি ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে হেঁটে খিলগাঁও-এ যেতাম। আবার, ৫ কিলোমিটার পথ হেঁটে হেঁটে আমি খিলগাঁও থেকে আসতাম। আমার কাছের বন্ধুরা জানে যে, আমি এই কাজ করতাম। এবং এভাবেই দৈনিক ১০ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে আমি আমার টাকাটা হালাল করে নিতাম।
.
আমার কিন্তু আরও দুটো ভাই ছিল। একজন আমার চেয়ে ৪ বছরের বড়। আর আরেকজন আমার চেয়ে ৫ বছরের ছোট। তবে, এই দুইজন আবার আমার মতন এত বোকাটে টাইপের সৎ ছিল না। আমার বড় ভাই বাপের ড্রয়ারের থেকে নিয়মিত টাকা চুরি করত এবং বাপের হাতে মাইর খেত। আমার ছোট ভাই আলমারি থেকে টাকা চুরি করত। এবং আমি দেখেছি, এদের হাতে খরচ করার মতো প্রচুর টাকা থাকত। তবে, আমি তো চুরি করতে পারতাম না। নৈতিকতায় আটকাত কিনা!
.
আবার, আমি আমার বাবাকে দেখতাম। তিনিও এই দুটো ছেলেকেই বেশি বেশি করে টাকা দিতেন। কেন দিতেন? আমি অন্য মানুষের মুখে শুনেছি... আমাকে তিনি টাকা দিতেন না। কারণ, আমার নাকি চাহিদা নেই। আর, ওদেরকে দিতেন, কারণ, ওদের নাকি চাহিদা বেশি। আমি দেখতাম... আমার ভাইয়েরা খুব দামী দামী সব মোবাইল হ্যান্ডসেট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাঞ্জা মারছে। হ্যান করতেছে, ত্যান করতেছে।
আবার, আমার মা-বাবা মুখে বলতেন, তারা নাকি তাদের সব ছেলেকেই সমান চোখে দেখতেন। তবে, তাদের কাজ কর্মে কিন্তু সেটা প্রকাশ পেত না।
.
তা সে যাহোক। ভাই এবং বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা বন্ধ করি। তারা যা করার করেছেন।
.
এখন এই যে, আমাকে এত কম টাকায় চলতে হত। এতে কিন্তু এক অর্থে ভালোই হয়েছে। আমি এই কম টাকাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আমাকে যদিও নগদ টাকা একেবারেই দেয়া হত না। কিন্তু তারপরেও আমার খাবার এবং কাপড় চোপড়ের তেমন কোনো অভাব হয়নি। খাবার এবং কাপড়টা আমি বাসা থেকেই পেতাম। তো, আমি দেখলাম, পেটে যদি যথেষ্ট পরিমাণ খাবার থাকে, তাহলে নগদ টাকা ছাড়াও কিন্তু দুনিয়ায় খুব ভালো করেই চলাফেরা করা যায়। আমি দেখলাম, ভালো থাকার জন্য আসলে খুব বেশি টাকা লাগে না। টাকা জিনিসটা দরকার, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু খুব বেশি টাকা আসলেও লাগে না।
.
তো, ছোটবেলা থেকেই যেহেতু আমাকে খুব অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে দিয়ে বড় করা হয়েছে। এবং, আমিও ওই অল্প পরিমাণ টাকাতেই নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি... সেই কারণে যেটা হয়েছে, সেটা হচ্ছে, আমার অতিরিক্ত টাকা আর্ন করার ইচ্ছেটাই একদম মরে গিয়েছে। আমি এখন জাস্ট খেয়ে পরে বাঁচার মতোন কিছু টাকা আর্ন করতে পারলেই খুশি।
আমার ধারণা, আমার বাবা-মা আমাকে নগদ টাকা তেমন একটা দিতেন না, তার কারণ, তারা আমাকে উৎসাহ দিতেন, যেন আমি নিজেই টাকা আর্ন করি।
কিন্তু বাস্তবে যেটা ঘটেছে, সেটা হয়তো তারা নিজেরাও আশা করেননি। আমি দেখতে পাচ্ছি, বেঁচে থাকতে হলে খুব বেশি টাকা লাগে না। অল্প টাকায় চলাফেরা করতে করতে অভ্যস্ত মানুষ আমি। তাই, অতিরিক্ত টাকার পেছনে আমি ছুটি না।
১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪০
আরিফুজ্জামান১৯৮৭ বলেছেন: আমি তো লিখেছিই। ২ টাকায় চলাফেরা করা মানুষ আমি। যেহেতু আমি বুঝে গিয়েছিলাম, চলাফেরা করতে খুব বেশি টাকা লাগে না। তাই, আমি টাকার জন্য আর সেভাবে ছুটিইনি। মনে হয়েছে, দরকারটা কী। এত টাকা দিয়ে করুমডা কী?
২| ১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১১:৩৩
পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনার উপলব্ধি বা ঘটনাক্রম ঠিক আছে। তবে, ছোটবেলায় ছেলেমেয়ের চাহিদার দিকে একদমই খেয়াল না করাটাও অনেকসময় বিরুপ ফল নিয়ে আসে। আমার ছোটবেলায় আমার বা আমার ভাইবোনের কোনো চাহিদাকে পাত্তা দেয়া হয়নি। বাবা মায়ের সামর্থ্য ছিলো না তা নয়, কিন্তু দুনিয়ার প্রতি নির্মোহ সৃষ্টিতে আমাদের ছোটবেলার যেকোনো চাহিদাকে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। ফলে আমাদের চাহিদা এখন পর্যন্ত কম থাকলেও নিজের মধ্যে কিছুটা হীনমন্যতা তৈরী হয়েছে বলে ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়।
আমাদের সমাজে সাধারণত বাচ্চাদের হয় অতি আদর না হয় একদম অনাদর করা হয়। যার কোনোটির ফলই ভালো হয়না।
৩| ১৮ ই জুন, ২০২০ দুপুর ২:৫৯
নেওয়াজ আলি বলেছেন: এখন আর আগের মত না। মা বাবা বাচ্চাদের পড়াশোনা অনেক সচেতন আবার বাচ্চাদেরও চাহিদা বেড়েছে অনেক
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই জুন, ২০২০ সকাল ১০:২২
রাজীব নুর বলেছেন: ছোটবেলায় এবং বড় বেলায় আপনার আর্থিক ভাগ্য খারাপ ছিলো। তবে বড় হয়ে আপনি টিউশনি করতে পারতেন।