![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আজ হতে দীর্ঘ দশটি বছর পূর্বের কথা । তখন আমি পঞ্চম শ্রেণীর একজন শান্ত শিষ্ট ভদ্র ছাত্র । অতি ভদ্রতার কারণে কোন দিন পাড়ার ছেলেদের সাথে সেভাবে চলা ফেরা তো দূরের কথা কোন দিন কোথাও দাড়িয়ে দু-এক মিনিট কথা বলিনি । পাড়ার সকলের নিকট আমি ছিলাম অতি মাত্রায় নিরিহ সাধারণ ছেলে । বাড়ীর অতি কড়া নিয়মের কারণে পাড়ার ছেলেদের সাথে কোন প্রকার খেলাধুলায় অংশ নেইনি । রোজ সকালে অতি ভোরে উঠে পড়তে বসা এবং ঠিক সকাল ৭:০০ টার দিকে স্কুলের দিকে রওয়ানা দিতাম আবার ঠিক ১২:০০ টার দিকে স্কুল ছুটির পর সরাসরি বাড়ী ফিরে আসতাম । বাড়ী ফিরে গোসল সেরে দুপুরের খাবার গ্রহণ করে ঘুমিয়ে পড়তাম । বিকালে যখন ঘুম ভাঙ্গত তখন ঠিক সন্ধার পূর্ব মহুর্ত, ফলশ্রুতি তে ফ্রেশ হয়ে আবার পড়তে বসে যেতাম । বড় ভাই মাত্র সম্মান ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফিরে এসেছেন । তিনি ছিলেন বাড়ীর সকলের চেয়ে কড়া হেড মাষ্টার । রাত ১০:০০ টা নাগাদ সকল সাবজেক্ট পড়িয়ে তিনি ক্ষান্ত হতেন । এটাই ছিল আমার প্রাথমিক জীবনের প্রাথমিক রুটিন । তার মাঝে শুক্রবার পাড়ার মাঠে বিকালে ঘুরতে যেতাম । এই দিনটি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় দিন । পাড়ার মাঠে এক কোণে বসে ছেলেদের খেলা দেখতে খুবই আনন্দ লাগতো । পাড়ার ছেলেরা বিশাল মাঠে হরেক রকম খেলায় অংশ নিতো আর আমি সেসব খেলা খুবই মনোযোগ দিয়ে শুধুই দেখতাম, খেলার খুব ইচ্ছে জাগা সত্ত্বে খেলতে পারতাম না কারণ আমার বাড়ী থেকে নিষেধ ছিল পাড়ার ছেলেদের সাথে খেলাধুলায় অংশ নেওয়া যাবেনা, কারণ পাড়ার দুষ্ট ছেলেদের সাথে খেলতে গেলে তারা ইচ্ছেকৃত ভাবে আমার হাত পা ভেঙ্গে দিতে পারে, তাই বাড়ী ১০ নং সর্তক সংকেত ।
তবে এভাবে দিনগুলি খারাপ কাটত না । দেখার মধ্যেও এক ধরণের আনন্দ ও মজা আছে ধরে নিয়ে আমি আমার স্বাভাবিক রুটিন অনুযায়ী দিন যাপন করতে লাগলাম ।
১৪১১ বঙ্গাব্দ এর পৌষ মাসে সারাদেশে ব্যাপক ঘুড়ি উড়ানোর উৎসব চলছে । রীতিমত শুক্রবার দিন বিকালে মাঠের এককোণে ঘাসের উপর বসে ছেলেদের বিভিন্ন রংয়ের ঘুড়ি উড়ানো দেখছিলাম ।
হঠাৎ...
আমার পিছন থেকে একটি ছেলে আমাকে সজোরে ডাকছে, এই মানিক, মানিক, মানিক
আবার সেদিকে কোন খেয়াল নেই, কারণ আমাকে ডাকাঁর মতো কোন ছেলে পাড়ায় ছিল না, যেহেতু আমার পাড়ার কোন ছেলের সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিলো না । তাই কেউ আমাকে ডাকবে আমি কল্পনায়ও ভাবি নাই ।
ছেলেটি আমাকে অনেকবার ডাকাঁর পরও যখন আমি সাড়া দিচ্ছিলাম না, তখন সে অনেকটা বিরক্ত হয়ে আমার পিছন দিক জামা ধরে টান দিয়ে আমার মনযোগ আকর্ষনের চেষ্টা করল । আমি অবাক হয়ে পিছনে ফিরে তাকাতে না তাকাতে ছেলেটি আমাকে প্রশ্ন করে বসল ..এই তুমি মানিক না ????
আমি বললাম হ্যাঁ আমি মানিক, আপনাকে তো চিনলাম না ...???
ছেলেটি বলল আমি সাদ্দাম । তুমি নিতাইগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শাপলা সেকশনের স্টুডেন্ট না ??
আমি বললাম হ্যা কিন্তু আপনাকে তো আমি চিনি না
সাদ্দামঃ আরে বোকা, তুমি আমাকে আপনি করে কেন বলছো, আমি তোমাদের স্কুলেই ৫ম শ্রেণীতে পড়ি । আমি রজনীগন্ধা সেকশনের স্টুডেন্ট । তোমার বড় ভাই আমার ভাইয়ের ভালো বন্ধু ।
আমি বললাম ও আপনি ফজলে রাব্বী ভাইয়ের ছোট ভাই ??
সাদ্দামঃ হ্যাঁ । তা তুমি প্রতি শুক্রবার মাঠে এসে বসে থাকো কেন ?
আমিঃ (প্রশ্ন টা শুনে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম ) আমার খেলতে নয় দেখতে ভালো লাগে । আমার কথা শেষ না হতে ও আমার মুখ থেকে কথা টেনে নিয়ে বলল
সাদ্দামঃ তাই, নাকি বাড়ীর নিষেধ আছে ??? দোস্ত
আমিঃ আরে না , আমার ভালো লাগে না ।
সাদ্দামঃ তুুমি ঘুড়ি উড়াতে পারো ????
আমিঃ আমি কোন ঘুড়ি উড়াই নাই ।
সাদ্দামঃ ঘুড়ি উড়াতে ইচ্ছে করে ???
আমিঃ হুম, করে কিন্তু আমার কাছে তো ঘুড়ি, নাটাই, সুতা কিছু নেই, কিভাবে উড়াবো ???
সাদ্দামঃ তুমি উড়াতে চাইলে আমি সব ব্যবস্থা করব,
আমিঃ ওকে, আমি বাসায় বলে দেখি ।
সাদ্দামঃ না, তোমার বাসায় বলা লাগবে না, তুমি আগামী শুক্রবার একটু তাড়াতাড়ি চলে এসো । ঠিক আছে ??
আমিঃ মাথা নেড়ে সায় দিলাম ।
এরই মধ্যে সন্ধা ঘনিয়ে এলো । দুজন দুজনকে বিদায় বলে বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলাম । বাড়ীর দিকে যাচ্ছি আর ভাবছি আজকের দিনটি আমার অন্যতম স্মরণীয় দিন । ইতিমধ্যে বাড়ী ফিরে এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা গ্রহণ করে পড়ার টেবিলে ভালো ছাত্রের মতো পড়তে বসে গেলাম । কিন্তু কেন জানি আজকে পড়ার টেবিলে মন বসছে না, বারবার সাদ্দামের কথা মনে পড়ছে । ওর কথা গুলো যেন আমার কর্ণ কুহরে বারবার আঘাত করছে ।
ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে বড় আপু আমার পাশে বসে আমার মতিগতি খেয়াল করছে, তা লক্ষ করিনি ।
আপুর ধমক খেয়ে আমার হুশ ফিরে ।
আপুঃ কিরে মানিক, তোর সমস্যা কি ??
আমিঃ কই আপু, কোন সমস্যা নাইতো ।
আপুঃ তা হলে পড়ালেখা বাদ দিয়ে কার কথা ভাবছিস ???
আমিঃ না, আপু কারও কথা ভাবছি না
আপুঃ তা হলে তোর শরীর খারাপ (আপুর কন্ঠে নরম সুর)
আমিঃ হ্যাঁ কিছুটা খারাপ লাগছে ।
আপুঃ তোর কি ক্লাশের পড়া কমপ্লিট ??
আমিঃ হুম, আপু
আপুঃ তাহলে আমি তোকে বিছানা করে দিচ্ছি, তুই ঘুমিয়ে পড় ।
আমিঃ ওকে আপু
আপু আমাকে বিছানা করে দিলো । আমি কাথাঁ গায়ে দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছি কিন্তু দু চোখের গভীর ঘুম যেন কোন অচেনা দেশে হারিয়ে গেছে । অথচ প্রতিদিন বিছানায় শোয়ার পর পরই আমার ঘুম চলে আসে । ডান কাধঁ, বাম কাধঁ বিভিন্ন কায়দায় ঘুমানোর চেষ্টা করলাম । কিন্তু ঘুম আসছে না । অতঃপর ঘুম বাদ দিয়ে সাদ্দামের কথা গুলো মনে করতে লাগলাম এবং একই সাথে নিজের শরীরে চিমটি কেটেঁ দেখলাম স্বপ্ন দেখছি না তো ??
না স্বপ্ন নয় সত্যি দেখছি এবং আমি বাস্তবে আছি । এভাবে কখন ঘুমিয়ে পড়ছি, তা খেয়াল করিনি ।
খুব ভোরে আম্মুর ডাকে ঘুম ভাঙ্গল । কিন্তু আজকে বিছানা ছেড়ে উঠতে মন একদমই চাচ্ছে না । একই তো রাতে ঘুমাতে অনেক দেরী হয়ে গেছে তার উপর আজকে একটি সুন্দর স্বপ্ন দেখেছি । হঠাৎ মনে হলো আজকে স্কুলে সাদ্দামের সাথে দেখা হতে পারে ভেবে চটপট বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম ।
ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম । বড় ভাইয়া আজকে বাইকে করে স্কুলে পৌছে দিলো । স্কুল গেটে অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকলাম সাদ্দামের অপেক্ষায় । কিন্তু ওর কোন দেখা নাই । অবশেষে স্কুলের ঘন্টা পড়ে গেলো, আমি তাই ক্লাসে চলে গেলাম । একেক টা পিরিয়ড শেষ হয় আর আমার অপেক্ষার প্রহর কমে, কখন ছুটি হবে আর কখন সাদ্দামের সাথে দেখা হবে এটাই শুধু ভাবছি । আজকে ক্লাসে আমাদের কি পড়ানো হয়েছে তা আমি বলতে পারবো না । টিফিনের সময় ক্যান্টিনের দিকে গেলাম কিন্তু ওর দেখা নাই নাই । তা হলে ওর সাথে দেখা হবে না ???? শুন্য ছোট মনে আজকে এটা অনেক বড় প্রশ্ন ।
অবশেষে স্কুলের শেষ ঘন্ট্রি বাজলো । এক দৌড়ে স্কুলের গেটে চলে আসলাম, টার্গেট একটাই সাদ্দামের সাথে দেখা হতে হবে । এত জোরে দৌড় আমি আগে কখনও দেইনি । স্কুলের গেটের চারপাশে তন্ন তন্ন করে যখন সাদ্দাম খুজেঁ পেলাম না, তখন মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেলো । আমি বাড়ীর দিকে রওয়ানা দিলাম । কিছুদুর এগিয়ে যাচ্ছি আর একবার পিছনের দিকে ফিরে তাকাচ্ছি, যদি সাদ্দামের দেখা পাই !!!!!
আজকের বাড়ীর রাস্তাটা অনেকটা অপরিচিত কোন পথ-ঘাট ও অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে । হঠাৎ পিছন দিক থেকে শুনতে পেলাম ...............মানিক, মানিক
মহুর্তে আমি ঘুরে দাড়ালাম এবং দেখলাম সাদ্দাম আমার দিকে ক্ষীপ্ত চিতা বাঘের ন্যায় দৌড়িয়ে আসছে ।
দৌড়িয়ে আসার কারণে ও অনেকটা হাপিয়ে গেছে
আমি অনেক টা অভিমানের সুরে বললাম, তোমাকে আজ কে স্কুলে দেখলাম না যে ?
সাদ্দামঃ আমি তো তোমাকে স্কুলে অনেক খুজেছি কিন্তু তোমাকে তো পাইনি ।
আমিঃ স্কুল ছুটির পরও দেখিনি ?
সাদ্দামঃ আরে আর বলো না, আমাদের ক্লাশের জাকির ও জলির পড়া পারে নাই বলে মেডাম সবাই আটকিয়ে রাখছে, তাই দেরী হইছে । তারপর বলো তুমি কেমন আছো ???
আমিঃ আমি ভালো আছি, তুমি কেমন আছো ????
সাদ্দামঃ হ্যাঁ ভালো, তবে আরো ভালো লাগছে তোমার সাথে দেখা হয়ে । তারপর ঘুড়ি উড়ানোর কথা বাসায় বলছো ???
আমিঃ না, বলিনি, চিন্তা করছি বলব না ।
সাদ্দামঃ কেন বলবে না ?
আমিঃ যদি না বলে, তাই বলিনি ।
সাদ্দামঃ ও , আমার মনে হয় আন্ট্রি বলতে পারো, তিনি না বলবেন না ।
আমিঃ ঠিক আছে কে গিয়ে বলব ।
সাদ্দাম কে সালামের মাধ্যমে বিদায় বলে বাড়ীর পথে পা বাড়ালাম । এখন মনে হচ্ছে বাড়ীর পথ খুবই সন্নিকটে । বাড়ীতে পৌছেই নিয়মিত রুটিনের কাজ শুরু করলাম । দুপুরের শান্তিময় ঘুম আজ অনেক আগেই ভেঙ্গে গেল । বিকালের নাস্তা সেরে আম্মুর কাছে আমার কথা ইচ্ছের কথা আমতা আমতা করে বলে ফেললাম । আম্মু যেন আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়ছে । আমি যে পাড়ার কোন ছেলের সাথে মিশেছি তা তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না । যাই হোক আম্মু আমাকে সম্মতি দিলেন । আমি আম্মুর কথা শুনে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে গেলাম ।
সন্ধার পর আবার পড়তে বসে গেলাম । এরপর শুরু হলো আমার দিন গুনা কবে শুক্রবার আসবে, সেই প্রত্যাশায় বসে থাকা । ধীরে সময় তার আপন গতিতে চলে যাচ্ছে আর আমি আমার স্বাভাবিক রুটিন নিয়মিত পালন করে আসছি । প্রতিদিন স্কুলের যাওয়া-আসার পথে সাদ্দামের সাথে কতযে কথা হয়, বলার মতো না । মনে হচ্ছে দুজন দুজনের দীর্ঘকালের পরিচিত বন্ধু !!!
প্রতিদিন টিফিনের কিছু টাকা আমরা জমানো শুরু করলাম সুতা,নাটাই ও ঘুড়ি ক্রয়ের জন্য । এটাই আমার প্রথম জমানো টাকা । এক-এক করে রবি,সোম,মঙ্গল,বুধ পেরিয়ে আসল বৃহস্পতিবার । সেদিন আমি ক্লাশ শেষে আমি সাদ্দামের হাতে ৩০ টাকা তুলে দিলাম জিনিসপত্র ক্রয়ের জন্য । দুজন হাটতে হাটতে বাড়ীর দিকে যাচ্ছি হঠাৎ আমাকে সাদ্দাম প্রশ্ন করে বসল ....
সাদ্দামঃ এই মানিক, ঘুড়ি কি রংয়ের কিনব ?
আমিঃ তোর যেটা ভালো লাগে, সেটাই কিনিস ।
সাদ্দামঃ আরে না, তুই বল
আমিঃ তাহলে নীল রংয়ের ঘুড়ি কিনিস
সাদ্দামঃ ওকে, তাহলে আজকের মতো যাই
আমিঃ ঠিক আছে ভালো থাকিস বন্ধু
হঠাৎ নিজেই চমকে উঠলাম এই প্রথম কাউকে বন্ধু বলে সম্বোধন করলাম । নিজের অজান্তেই খুব ভালো লাগল ।
ঘড়ির কাটা এক মিনিট দুই মিনিট করে এগিয়ে চলল আর বৃহস্পতিবার পেরিয়ে, একটি লাল টকটকে সূর্য, নতুন একটি স্বপ্ন নিয়ে আমার জীবনে উদয় হলো । শুক্রবার আমার স্বপ্ন পূরণের দিন । শুক্রবার আমার আকাশে স্বাধীন ভাবে উড়ার দিন ।
জুমার নামাজ আদায় করে এবং দুপুরের খাওয়া-দাওয়া সেরে বিছানায় ঘুমাতে গেলাম, কিন্তু আজ আমার চোখে ছিটে ফোটাঁ ঘুম নেই । কখন বিকেল হবে আর কখন আমি মাঠে যাবো আর কখন ঘুড়ি উড়াবো এই চিন্তা করতে লাগলাম । আস্তে আস্তে সময় পেরিয়ে বিকেল হবে ঠিক তার পূর্ব মহুর্তে আমি চুপিচুপি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম । বাসা থেকে বেরিয়ে এক দৌড় দিয়ে মাঠে চলে আসলাম । কিন্তু সাদ্দাম এখনো আসেনি । আমি মাঠের চারপাশ কয়েকবার রাউন্ড দিলাম । তখন দূর হতে দেখতে পেলাম একটি ছেলে নাটাই ঘুড়ি হাতে একটি হলদে রংয়ের শার্ট পড়ে মাঠের দিকে আসছে । আমি তার দিকে কিছুটা এগিয়ে গেলাম । আমার বুঝতে অসুবিধা হলো না এটা সাদ্দাম । আমি যে তখন কত খুশি হয়েছিলাম তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না । সাদ্দাম এক মুখ হাসি নিয়ে আমাকে বলল কিরে চলে আসছিস ???
আমিঃ হুম ।
সাদ্দামঃ কখন আসছিস ?? ঘুড়ি পছন্দ হয়েছে ???
আমিঃ কিছুক্ষণ আগে আসছি আর ঘুড়ি তো আমার পছন্দ মতো কিনছিস, ভালো না লেগে যাবে কোথায়
সাদ্দামঃ চল সব কিছু রেডী করি
আমিঃ চল ............
আমরা কিছুটা বাতাসের অপেক্ষা করতে লাগলাম । এরই মধ্যে আরও অনেক ছেলে ঘুড়ি উড়ানোর জন্য মাঠে চলে আসছে । আমাকে সাদ্দাম দুটি ছেলে কে দেখিয়ে বলল ওদের চিনিস ???
আমিঃ না, তবে কোথাও দেখছি মনে হচ্ছে
সাদ্দামঃ হ্যাঁ, ওরা আমাদের স্কুলের বড় ভাই । আমাদের এক ব্যাচ সিনিয়র । লম্বা করে চিকন ছেলেটা হলো ইয়াছিন ভাই আর মোটাটা হল তালেব ভাই । ওরা মাঞ্জা সুতা ঘুড়ি উড়ায় । চল বাতাস এসে গেছে ঘুড়ি উড়িয়ে দেই ...
আমিঃ চল ...
সাদ্দাম নাটাই হাতে একটি জায়গা দাড়িয়ে থাকল আর আমি ঘুড়ি হাতে নিয়ে কিছু দূর গিয়ে একটা পর্যায় ছেড়ে দিলাম । আর ঘুড়ি বাতাসের বেগে উড়ে চলল । মনে হচ্ছিল ঘুড়িটা ছেড়ে দিলে কোন দূর আকাশে হারিয়ে যাবে । দূর আকাশে যখন আমাদের নীল ঘুড়ি টা উড়ে চলছিল তখন আমি বসে বসে নিশ্চিন্ত মনে দেখছি এমন সময় সাদ্দাম আমাকে ডাক দিয়ে নাটাই টা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো । আমি নাটাই হাতে পেয়ে সত্যিই যেন কোথায় হারিয়ে গেলাম । মনে হচ্ছিল আমি কোন স্বপ্নপুরীর দেশে বেড়াতে এসেছি । আমার কাচাঁ হাতে নাটাই ভালোই কন্ট্রোল করছিলাম । কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে একটি হুলুদ ঘুড়ি এসে আমাদের নীল ঘুড়ি টা কেটে দিয়ে দূর অজানায় পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করল । আমি নিঃশব্দে মাটির উপর বসে গেলাম । এটা দেখে দূর হতে সাদ্দাম দৌড় দিয়ে আসল । আমার হাত শক্ত করে ধরে বলল, কিরে বসে পড়লি কেন ?? ঘুড়ি উড়ালে কাটা পড়তেই পারে এতে মন খারাপের কি আছে ?? উঠ চল বাসায় যাই, সন্ধ্যা হয়ে আসছে । আমি কোন কথা বলতে পারছিনা, ভাবিনি এত সহজে ঘুড়ি টা চলে যাবে । এমন সময় পিছন থেকে ইয়াছিন ভাই সাদ্দাম কে ডেকে দাড়াঁতে বলল, আমরা উভয় থমকে দাড়ালাম, তাদের চেহারা দিকে তাকিয়ে আমার খুব জিদ হচ্ছিল আমার এত শখের ঘুড়ি টা তারা কেটেঁ দিয়েছে ।
তারা উভয়ে কাছে এসে সাদ্দামের সাথে কথা বলতে লাগল....
ইয়াছিন ভাইঃ কিরে সাদ্দাম মন খারাপ ?? বিশ্বাস কর তালেব তোদের ঘুড়ি টা ইচ্ছে করে কাটেঁ নাই
সাদ্দামঃ না, ভাই ঠিক আছে । কিছু মনে করিনি ।
তালেব ভাই ঃ সাদ্দাম,তোর পাশের ছেলেটা কেরে ??
সাদ্দামঃ ওর নাম মানিক, আমাদের স্কুলে পড়ে আমার সাথে, শাপলা সেকশনে ।
ইয়াছিন ভাইঃ ওর মন হয় বেশী খারাপ হয়েছে নারে ?
সাদ্দামঃ জ্বী ভাই, আজ জীবনে প্রথম ঘুড়ি উড়াতে আসছে তো, তাই একটু মন খারাপ ।
এমন সময় তালেব ভাই এগিয়ে এসে আমার সাথে কথা বলা শুরু করল
তালেব ভাইঃ দুঃখিত ছোট ভাই , তোমার ঘুড়ি টা আমি ইচ্ছে করে কাটিঁ নাই ।
আমিঃ না, ভাই ঠিক আছে ।
তালেব ভাইঃ আগামী শুক্রবার এসো তোমাকে আমাদের ঘুড়ি উড়াতে দিবো । তাহলে আজকের মতো আসি । ওকে ভালো থেকে । এই বলে তারা চলে গেলো ।
সাদ্দাম আমাকে বলল দোস্ত মন খারাপ করে থাকিস না । তোর মন খারাপ থাকলে আমার ভালো লাগবে না । আমরা আবার আগামী শুক্রবার নতুন করে ঘুড়ি উড়াবো । চিন্তা করিস না, আবার নীল ঘুড়ি কিনব ।
আমি বললাম ঠিক আছে দোস্ত । কথা বলতে বলতে আমরা আমার বাড়ীর প্রায় নিকটে চলে আসলাম । যাওয়ার সময় সাদ্দাম আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে গিয়েছিল
“দোস্ত মনে রাখিস, রাস্তায় চলতে গেলে তুই পড়ে যেতেই পারিস
এটা পরাজয় নয়, কিন্তু সেখান উঠে ঘুড়ে না দাড়াঁতে পারা পরাজয়”
ওর এই কথাটি মনে বারবার উচ্চারিত হতে লাগল । ইতিমধ্যে আমি বাড়ী চলে আসছি । ফ্রেশ হয়ে পড়ার টেবিলে বসে, আজকের দিনটি কে স্মরণ ও সাদ্দামের শেষ কথাটি মনে করে নতুন একটি স্বপ্ন বুনা শুরু করলাম ।
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:২২
আব্দুর রহীম মানিক বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:০৩
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
+++++
ব্লগে স্বাগতম। শুভব্লগিং।