নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবন নয় মানুষের পিছনে পিছনে ঘুরতে ঘুরতে আজ আমি শেষ বিকালের সন্ধার আলো

আব্দুর রহীম মানিক

আব্দুর রহীম মানিক › বিস্তারিত পোস্টঃ

মহান ভাষা আন্দোলনঃ বীর শহীদদের আত্মত্যাগ, পেক্ষিতে বাংলাদেশ

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৫



প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারী আসে আমাদের মাঝে, প্রকৃতির নিয়ম অনুযায়ী একটা সময়ে চলে যায় । ২১শে ফেব্রুয়ারীর দিন আমরা আমাদের আবেগের সবটুকু ঢেলে দিয়ে সবাই একসুরে গেয়ে উঠি “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারী, আমি কি ভূলিতে পারি” কিন্তু আমরা সত্যিই কি মহান ভাষা আন্দোলনের পেক্ষাপট, ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে যেসব তরুণ তাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ নিঃসঙ্কোচে বিলিয়ে দিয়ে, কালো পিচঢালা রাজপথ কে রক্ত দিয়ে লাল রাজপথে পরিণত করেছিলেন, তাদের চেতনা ও আত্মত্যাগ আমরা মনে রেখেছি ??
নাকি তাদের জন্য বছরের একটি দিন বরাদ্দ রেখে আমাদের চেতনা বহিঃপ্রকাশ করছি ???

ইতিহাস নাকি বারবার ফিরে ফিরে আসে, মানুষ কে শিক্ষা দিতে । কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা বাংলাদেশীরা সেই ইতিহাসের সঠিক শিক্ষা কোন দিন গ্রহণ করতে পারিনি । কেন পারিনি তার কোন উত্তর আমার মতো অবুঝের কাছে নেই ।

১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হওয়ার মূল প্রেরণা ছিল ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলন । ভাষা আন্দোলনের ভিত্তির উপর দাড়িয়ে যে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল, তা এদেশের রাজনীতিবীদ হতে শুরু গ্রামের মাতব্বর পর্যন্ত সকলেই এক বাক্যে স্বীকার করেন । কিন্তু শহীদের রক্তের উপর দাড়িয়ে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ তাদের পরিবারের-আত্তীয় স্বজনের কোন খোঁজ আমরা বা আমাদের কোন সরকার রাখার প্রয়োজন বোধ করেছেন ??
বীর শহীদের স্মৃতি স্বরুপ ২০০০ সাল বা তার পরবর্তী সময়ে একুশে পদক প্রদান করা হয় । এই পদক দিয়ে তারা কি করবে ?

যখন পত্রিকায় দেখি অমুক শহীদের স্ত্রী বিনা চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যবরণ করেছেন, তখন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন জাগে মহান মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লক্ষ শহীদ পরিবার সহ মুক্তিযুদ্ধাদের দায়িত্ব যদি সরকার নিতে পারে তাহলে কি হাতে গোনা কয়েকজন শহীদের দায়িত্ব কি সরকার নিতে পারত না ??
যখন দেখি শহীদ পরিবার সদস্যরা তাদের জীবিকা নির্বাহ করে সাধারণ হকারী করে তখন শূন্য মনে প্রশ্ন জাগে এসব বীর শহীদদের পরিবার দেখে কোন তরুণ দেশের জন্য তার জীবন বাজী রাখবে ?
যখন আমরা ১০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কিনি, তখন কি আমরা পারতাম না এই শহীদ পরিবার গুলো ভরণ-পোষনের দায়িত্ব নিয়ে তাদের একটি সুন্দর পৃথিবী উপহার দিতে । আমরা ১০ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র দিয়ে কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব ???

আজ কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে যে কোন সরকারি স্থাপনা হয় বঙ্গবন্ধু না হয় জিয়াউর রহমানের নামে নামকরণ করা হচ্ছে, আমরা কি পারতাম না তাদের একটা অংশ এসব বীর শহীদদের নামে নামকরণ করতে ??
আমরা আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের দেশটা যতটা না বড় তার চেয়ে বড় রাজনীতি (অপরাজনীতি) । এসব রাজনীতি করে আমরা আমাদের দেশটাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছি ??

আমাদের সরকার যে কিছুই করেনি তা আমি বলব না । যা করেছে তা তাদের ত্যাগের তুলনায় অতি সামান্য । প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারী পূর্ব মহুর্তে দৈনিক পত্রিকায় চোখ পড়লে এসব প্রতিষ্ঠানের হাহাকার আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে আমাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন তুলে যায় ।


এইবার আসি ৫২ চেতনার কথাঃ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের অন্যতম পেক্ষাপট ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের আমাদের উপর অন্যায় ভাবে চাপিয়ে দেওয়া উর্দু ভাষার আগ্রাসন । কিন্তু আজকে কি হচ্ছে আমাদের দেশে ?.?
অবাধ তথ্য প্রযুক্তির যুগে আকাশ সংস্কৃতি আমাদের ভাষা আন্দোলনের পেক্ষাপট কে বিলিন করে দিচ্ছে । আজ আমাদের প্রতিটি ঘরে চলছে হিন্দি ভাষার আগ্রাসন । আজ আমাদের প্রজন্ম বাংলা যতটা না শুদ্ধ ভাবে বাংলা বলতে পারে তারচেয়ে অনেক ভালো ভাবে পারে হিন্দি । বছরে একদিন শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে এই আগ্রাসন রুখা যাবেনা, প্রয়োজন সময় দীপ্ত সাহসী সিদ্ধান্ত । যদি আমরা তা না পারি তাহলে হয়ত আমরা বিদ্রোহী নজরুল, শামসুর রহমান, আল মাহমুদ, ফররুখ আহমেদ এর মতো কবি পাবো না যারা আমাদের অন্ধকার রাত্রিতে আলোর মশাল জ্বালিয়ে আমাদের পথ দেখাবে ।

৫২ এর ২১ ফেব্রুয়ারী তপ্ত দুপুরের চেতনা এটা ছিলো না আমাদের অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠবে ইংরেজী মাধ্যম স্কুল, যারা নিজ মাতৃভাষার তুলনায় ভিনদেশী ভাষাকে অধিক গুরুত্ব দিবে । ভিনদেশী সংস্কৃতির সাথে তালমিলিয়ে থার্টিফার্ষ্ট নাইটে ইংরেজী-হিন্দি গানে তরুণ-তরুণীরা ডিস্ক নাচ নাচবে । আমাদের সর্বোচ্চ আদালত তাদের রায় দিবে ইংরেজীতে । আমাদের সিনেমা হল গুলোতে ভিন দেশী সিনেমা প্রচারিত হবে ।

আমি ভিনদেশী ভাষা-সংস্কৃতি শেখার বিরোধীতা করছিনা । বিশ্বয়ানের যুগে এটা শিখার প্রয়োজন পড়তে পারে । তবে আগে আমাকে দেখতে হবে আমার ভাষা-সংস্কৃতি নিজের আত্মস্থ করতে পারছি কিনা ??
যদি নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতির সঠিক প্রয়োগ আমাদের জীবনে ঘটাতে পারি, তাহলে ভিনদেশী ভাষা-সংস্কৃতি শিখব, তার আগে নয় ।


পরিশেষে বলতে চাই যে ব্যক্তি তার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে পারে না, সে বড়ই র্দূভাগা । সুতরাং আমাদের অতীত অনেক সমৃদ্ধ, আমাদের অতীত ভাষা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস । আমাদের অতীত ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে ভাস্বর । তাই আমাদের উচিত আমাদের বীর শহীদের প্রেরণা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া । বীর শহীদের পরিবারের যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে পরবর্তী প্রজন্মকে দেশকে ভালবাসার গুরুত্ব উপলদ্ধি করিয়ে দেশের প্রয়োজনে আত্মত্যাগের জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করা এবং একই সাথে আমাদের জাতীয় চেতনা গুলো ভালভাবে বিকাশ ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী জাতি হিসেবে বিশ্বের কাছে আমার দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরা । যাতে আর কোন পরাশক্তি আমাদের শুকুনের দৃষ্টিতে তাকাতে না পারে । এখনও সময় আছে, আসুন ঘুড়ে দাড়াই, আমরা ঘুড়ে দাড়ালে জাতি ঘুড়ে দাড়াবে । মনে রাখবেন .....

“একতাই শক্তি,একতাই বল
আমরা পেরেছি,আমরা পারব
আমাদের কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবেনা”

“মহান আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবস অমর হউক”
ভাষা শহীদ সালাম,বরকত,শফিউর,জব্বার ও রফিক সহ সকল ভাষা সৈনিক প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.