নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নকে বাচাঁনোর জন্যই স্বপ্ন দেখেছিলাম।আজো আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখছি। আবার কাছে একেকটা স্বপ্ন একেকটা লড়াই।হারলাম নাকি জিতেছি?সেটা পরে ভাবনার বিষয়।মূল কথাটা হলো আমি লড়াইটা করতে ভালবাসি।।রক্তে মিশে গেছে নেশাটা................

অরূপ চৌহান

মৃত্যু!সে তো জীবনের অপর নাম!

অরূপ চৌহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

চোরাবালি

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৮

রাত একটা বেজে পনের মিনিট।
ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে সে।
শশী অনেকদিন পর বাড়িতে এসেছে।
স্বভাবতই সবার ভালবাসায় সিক্ত সে।
ডাক্তারি লাইফের নানার গল্প আর নানা বাস্তবতার গল্প করে সবার সাথে।
জনাব ইব্রাহিম।
নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে আড্ডা দিচ্ছেন।
আসরের সিনিয়রের চেয়ারটি নিজস্ব ভাবগাম্ভীযর্তায় অলঙ্কিত করে বসে আছেন।
আজকে সব আলোচনা শশীকে ঘিরে।
তার ডাক্তার লাইফের বিভিন্ন মজার ঘটনা আরও কত কি।
হঠাৎ ইব্রাহিম সাহেব বলে উঠলেন বাবা শশী তোমার ডাক্তারী পড়া আর কতদিন?
-বাবা, আর মাত্র ছয় মাস।তাহলেই ইন্টানি শেষ।
তারপরেই তোমার স্বপ্নের শুরু।
যে স্বপ্ন তুমি দীর্ঘদিন আমাকে দেখিয়েছ।
যেখানেই থাকি না কেন যেন গরীব চিকিৎসাবঞ্চিত মানুষের বিনামূল্য সেবা দিতে পারি।
বাবার স্বপ্ন আর সবার প্রত্যাশা পূরনের গল্প শেষে ঘুমানোর জন্য রুমে আসে শশী।
স্যার শশী বাসায় আছে।
হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে গফুর সাহেব।
তার ছোট মেয়ের শরীরটা খুব খারাপ।
এত রাতে কোথায় যাবেন।
বিকালেই শশীর সাথে দেখা হয়েছিল তার।
স্যার যদি শশী বাবারে একটু দেখতে বলতেন আমার মেয়েটাকে।অনেক কস্ট পাচ্ছে।
অনুরোধ করেন গফুর সাহেব।

জনাব ইব্রাহিম ভেতরে যান।
ছেলের দরজায় নক করেন।
এত রাতে বাবা!
কি হয়েছে,চমকে ওঠে শশী!
বাবা, এত রাতে?
কি হয়েছে?
কিছু বলছিলা?
ছেলের কাধে পরম মমতার হাতটি রেখে জিজ্ঞেস করেন বাবা ঘুমিয়েছিলা?
না বাবা প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।
এখন যদি একটি কাজ দি তোমায় রাগ করবে নাতো?
কি বলো বাবা রাগ করবো কেন কি করতে হবে বলো।
তোমার গফুর চাচার ছোট মেয়ের খুব ওসুখ।একটু যেতে হবে তাদের বাসায়।
বাবা এতো আমার জন্য সৌভাগ্যের।
যে স্বপ্ন নামক কতর্ব্য তুমি আমায় দিয়েছো আজ তা পালন করার সুযোগ পেয়েছি আমি।
জনাব ইব্রাহিমের এই মুহূর্তে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে থাকতে ইচ্ছে হয়।
হৃদয়ে আনন্দের ফল্গুধারা বইছে তার।
গফুর চাচার বাড়ির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে যায় শশী।
প্রচন্ড অসুস্থ মেয়েটি।
প্রচন্ড শীতে শ্বাসকস্টের সমস্যা দেখা দিয়েছে।
কিছুটা চিকিৎসা আর ওষুধ খাওয়ানোর পরে এখন কিছুটা স্বস্তি বোধ করছে।
গফুর চাচার বাড়ি থেকে বের হয় শশী।
বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দেয় সে।
ফজরের আযান শুরু হয়েছে।
রাতের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে |
ভোরের আলো ফুটতে শুরু করছে।
একলা হাটতে বেশ কষ্ট হচ্ছে তার।
গা শিরশিরে বাতাসে একটু কাপন ধরছে শরীরে।
তবুও তার অন্য এক প্রফুল্লতায় মন ভরে যায়।
পরের জন্য যে হৃদয় কল্যাণকামী তার তো এমন কাজে প্রফুল্ল হওয়ারই কথা।
ফজরের নামায পড়ে ঘুমাতে যায়।
-অান্টি শশী কই।
-ওকি এখনও উঠেনি?
-এত বেলা করে উঠে?
-ডাক্তারদেরতো এতো বেলা ঘুমাতে নেই।
একনাগাড়ে কথা গুলো বলে চলে রুকাইয়া।
শশীর খালাতো বোন।
হয়ত প্রিয়তম সঙ্গীনিই হবে কিছুদিন পর।
পারিবারিক সিদ্ধান্ত তো সেটাই।
খালামণির কাছে খবর পেয়ে দেখা করতে আসে সে।
মা ...মা ....
জুনিয়র ডাক্তারের কথায় সিনিয়র ডাক্তারের ঘুম ভাঙলো না।
কথাগুলো বলতে বলতে রুম থেকে বের হয়ে আসে ইকবাল।
শশীর ছোট ভাই।ভাইয়ের মত তার ও ডাক্তারি পড়ার ইচ্ছা।তাই বাড়ির সবাই তাকে জুনিয়র
ডাক্তার বলে ডাকে।
আপু তুমি ?
কখন এলে?
-এইতো।এখনি।
-তুমি আসায় ভালোই হলো।
ভাইয়া তো এখনো ঘুম থেকে উঠেনি।
তুমি ডাকলে নিশ্চয় উঠবে।
-চলো দেখি।
এই যে সিনিয়র ডাক্তার।
ঘুমটা কখন ভাঙবে শুনি?
-কথাটা হৃদয়ের বন্ধ দরজায় ধাক্কাচ্ছে।
ঘুমের ঘোরেই ভাবছে শশী।আরে এতো মায়াবিণী।
আমায় এমন করে ডাকে কেন?
ধমনী গুলো সজাগ হয়ে যায়।ঘুমের ঘোর হালকা হয়ে যায়।
উঠে দেখে রুকাইয়া।
একটু অপ্রস্তুত হয়ে উঠে।এমনটা হয়ত আশা করেনি।
আরে কখন এলে।
-এইতো।এলাম।
তোমার কথা শুনে এসেছি।
কেমন আছো?
-দাড়াও।একটু ভেবে নি।
আচ্ছা বলোতো রাতে বাবার দেয়া দায়িত্ব পালন শেষে ঘুম ভেঙেই যদি কেউ দেখে
স্বপ্নের কেউ একজন তার সামনে বসে তাহলে কেমন লাগবে?
-হুম,ছাড়ো দুষ্টুমি।ঢের হইছে।
চলো বাইরে সবাই আছে।
ওখানেই গল্প করি।
ভাইয়া তোর টিকিট পেয়েছি।আধাঘন্টা পরেই গাড়ি।
তুই তাড়াতাড়ি রেডি হ।
ছুটি শেষে আবার ফিরে যাচ্ছে শশী।
নিজের স্বপ্নের বাকিটা পূরণ করতে।
সবাই দাড়িয়ে আছে।বিদায় জানিয়ে যাচ্ছে সে।
তবুও কেন যেন মনের কোথায় একটু কষ্ট জেগে ওঠছে তার।আজ কেন যেন অন্যরকম মায়া লাগছে তার।
মন সাড়া দিচ্ছে না।
বাস ছুটে চলেছে ঢাকা পানে।কিন্তু অস্থিরতা কাজ করছে তার মনে।কিছুতেই যেন শান্তি পাচ্ছে না।শুধু বারবার সেই প্রিয়মুখগুলো মনে পড়ছে।

দোস্ত একটা কথা জানিস।
-কিরে কি হইছে?
ইন্টার্ন ব্যাচকে নিয়ে ট্যুরে যাবে ।
-কোথায়?
এবার নাকি ট্যুর হবে সিলেটে।
জায়গাটা বেশ ভালো রে।
জাওয়া যায়।কবে যাবে?
সামনে রবিবার।
ঠিকআছে চাঁদা কাকে জমা দিতে হবে?
জামান স্যারকে।
আজ খুব সকাল উঠেছে।
ফজরের নামায শেষ করে প্রিয় ক্যাম্পাসের মাঠে হাটছে সে।
আজ বড়ই ভালো লাগছে তার।
আজ রাতেই তাদের সিলেট যাত্রা।
হয়ত ডাক্তারি লাইফের একাডেমিক শেষ ট্যুর এটা।
তাই এটার বিশেষত্ব একটু আলাদা।
সিলেটের জাফলং।
প্রাণ খুলে বুক ভরে শ্বাস নিচ্ছে সবাই।
স্রষ্টার কি অপার সৃষ্টি।
অপরুপ সৃষ্টিলীলায় হৃদয় জুড়িয়ে যায়।
অপরূপ এই লীলাভূমির বুক জুড়ে একটু দুরন্তপনার ইচ্ছা জাগে স্বভাবতই।
শান্ত নদীর পাশে বিশাল বালির বুক জুড়ে ছুটছে শশী আর জিসান।
একটু জোর কদমে হেটে চলেছে।
হঠাৎ,জিসান.....জিসান।
দোস্ত বাচাঁ।
দ্রুত ফিরে তাকায় জিসান।
দেখে বালুতে পা আটকে যাচ্ছে শশীর।
তবে কি চোরাবালিতে আটকে যাচ্ছে শশী।
ভাবে জিসান।
পা মুক্ত করার প্রানান্তকর চেষ্টা করে।
কিন্তু কোনক্রমেই যেন উঠতে পারছে না।
যত চেষ্টা করে ততই ভিতরে আটকে যেতে থাকে শশী।
বন্ধুকে বাচানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠে জিসান।
কিন্তু এমন বিপদে বাচানোর তৎক্ষনাৎ কোন কিছু ভাবতে পারছে না।
মাথা যেন ভারি হয়ে যাচ্ছে।
মনে হচ্ছে কোন একটা পাথরে চাপা পড়ে যাচ্ছে সে।
শেষমেষ বন্ধুকে রেখেই পিকনিক স্পটেই দিকে প্রাণপণে দৌড়াতে থাকে জিসান।
জীবন প্রদীপ নিভে যাওয়ার আগেই বন্ধুর জন্য সাহায্যের ব্যবস্থা তাকে করতেই হবে।
তবে কি জীবন বায়ু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় কোমর পর্যন্ত আটকে গেছে শশী।
মস্তিষ্কের সমস্ত ধমনী যেন ফুলে উঠেছে।
কিছুই চিন্তা করতে পারছে না।
আশেপাশে কাউকেই দেখতে পাচ্ছে না।নিজে কোন ভাবেই এ বিপদ থেকে মুক্তি পাচ্ছে না।
দিগন্তবিস্তৃত খোলা আকাশের দিকে মুখ উচিয়ে তাকায় সে।মহান রবের পানে সাহায্যের জন্য
আকুতি জানায়।
কিন্তু প্রকৃতি হয়ত একটু বেশি ই ট্র্যাডেজী পছন্দ করে।
তাই বাবার স্বপ্ন পূরনে যে ডাক্তারটি তার কর্তব্য এর জগতে প্রবেশ করতে যাচ্ছিল
তার হয়ত এখানেই ইতি হচ্ছে।
মহান প্রভুর দরবারে শুধূ নিজের পাপের ক্ষমার জন্য করুন প্রার্থনা জানায় একবার।
প্রায় পুরোটাই হারিয়ে যাচ্ছে সে।
আর কোন পথ খোলা নেই।একবার চোখ বুজে সে।
শুধু প্রিয় মানুষদের কথা মনে পড়ে তার।
মনে পড়ে দরদী মায়ের মুখ,বাবার স্বপ্নের কথা আর রুকাইয়ার মুখ।
হয়ত এ জীবনে অার বুনে রাখা স্বপ্ন গুলো বাস্তবে রূপ পাবে না।
নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার।
বেশি সময় নেই আর বাকি।
ডুবে যাচ্ছে সে।
ডুবে যাচ্ছে প্রকৃতির খেয়ালে তৈরি হওয়া মৃত্যুফাঁদে।
বুজে গেল দুটি চোখ,প্রদীপ নিভে গেল আরও একটি প্রানের।
আর সেই সাথে চোরাবালিতে হারিয়ে গেল বাবা,রুকাইয়া সহ শত মানুষের স্বপ্নগুলো।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:৩৫

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: আগা মাথা কিছুই বোঝা যায় না। কয়েক লাইন পড়ে বাদ দিছি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.