![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........
বেলা বাড়ার সাথে সাথে শিরিন বেগমের মেজাজও চিড়বিড় করে বাড়ছে। তিনি বার বার ঘড়ি দেখছেন। অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে কিন্তু কাজের বুয়াটা এখনও আসছে না। তিনি সোফায় অস্থিরভাবে বসলেন।
কেন যে কাল রাতে এতগুলো কাপড়-চোপড় ভিজালেন? এখন যদি বুয়া না আসে? অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে তার বেলা হয়ে যাবে। এতক্ষণ পড়ে থাকলে কাপড়গুলো পঁচবে। তিনি সাফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। তার পাঁচ বছরের ছেলে মিঠু এসে আঁচল চেপে ধরল।
মা আইসক্রীম খাবো। মা আইসক্রীম.....
এত সকালে তোমার আইসক্রীম খাওয়ার সখ হল? এখন যাও, বিরক্ত করো না।
শিরিন বেগম বারান্দা থেকে কাপড়ভরতি বালতিটা নিয়ে দুমদাম করে কলতলায় এলেন। পিছনে পিছনে মিঠু এল। শিরিন বালতি থেকে এক একটা কাপড় নামিয়ে কাঁচতে শুরু করলেন। রাগে তার তালু জ্বলছে।
এই হা-ভাতেগুলো কাজ চাওয়ার সময় কি মিষ্টি মিষ্টি কথা! কাজ পেয়ে লাট-সাহেব।
‘মা’, মিঠু ডাকলো।
একটা টাকা দাও না। আইসক্রীম খাবো।
শিরিন মুখ না তুলেই বললেন, সকাল বেলাই তুই এমন আইসক্রীম আইসক্রীম করছিস কেন? যা এখান থেকে।
মিঠু গেল না। অভিমানী চোখে মা’র দিকে তাকিয়ে রইল।
শিরিন কাপড় কাঁচছেন আর গজগজ করছেন- আমার হয়েছে জ্বালা। সবদিক আমাকে সামলাতে হবে। যেন সংসার আমার একার!
মিঠু কাঁদো কাঁদো গলায় আবার বলল, মা, আইসক্রীম খাবো। একটা টাকা দাও না!
তোকে না এখান থেকে যেতে বললাম। আমি কি টাকা নিয়ে বসে আছি?
মা----
হঠৎ তার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে গেল।
যা এখান থেকে-----
বলেই তিনি মিঠুকে একটু ধাক্কা দিলেন। কলতলাটা ছিল পিচ্ছিল। মিঠু ছিটকে কলের উপর গিয়ে পড়ল।
সঙ্গে সঙ্গে কলের হ্যান্ডেল লেগে তার থুঁতনি কেটে গেল। গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। শিরিন বেগম চিৎকার দিয়ে উঠে মিঠুকে ধরলেন।
আমার বাবুর কি হল! আমার বাবু------
তিনি মিঠুকে বুকে চেপে ধরলেন। মিঠু তার চোখ ঝাপসা হতে হতে দেখল, মা জলভরা চোখে চিৎকার করছেন। সেই চিৎকার ক্ষীণ হতে হতে স্তব্ধ হয়ে গেল। সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে।
শিরিন বেগম পাগলের মতো চিৎকার করে উঠলেন, আমার বাবুকে আমি মেরে ফেলেছি! আল্লাহ, আমার বাবুকে আমি মেরে ফেলেছি!
তার বুক ফাটা আর্তনাদে প্রতিবেশীরা ছুটে এল। তারা এসে পানির ঝাপটা দিতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পর মিঠুর জ্ঞান ফিরল।
শিরিন জলভরা চোখে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার চোখে একরাশ অপরাধবোধ আর উদ্বেগ। মিঠু চোখ খুলতেই তার মুখে হাসি ফুটল।
তারপর....., দেখতে দেখতে বিশ বছর পার হয়ে গেছে।
মিঠু এখন পঁচিশ বছরের টগবগে যুবক। আমেরিকায় ফটোগ্রাফির উপর পড়াশোনা করছে। একজন নামকরা ফটোগ্রাফার হিসেবে ইতিমধ্যে আমেরিকার মতো দেশে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। তার তোলা ছবি দিয়ে ফটোগ্রাফির উপর দুটো বইও প্রকাশিত হয়েছে। নাম ‘ইনোসেন্ট আর্থ’ এবং ‘ওয়াইল্ড বিউটি’।
তার ছবিতে কি নেই? নারীর সৌন্দর্য্য, ফুলের সৌন্দর্য্য, শিশুর হাসির সৌন্দর্য্য, উড়ন্ত পাখির সৌন্দর্য্য, সমুদ্রের ঢেউ ভেঙ্গে পড়ার সৌন্দর্য্য। সৌন্দর্য্যের একটু আভাস পেলে সে ক্যামেরা হাতে ছুটে যায়- প্রকৃতির আনাচে-কানাচে, পাহাড়ে-জঙ্গলে, সমুদ্রে, মরুভূমিতে। সীমাহীন মমতা দিয়ে একের পর এক ছবি তুলে।
‘ইন্টারন্যাশনাল ফটোগ্রাফ এক্সিবিউশনে’ প্রতিবছর তার ছবি স্থান পায়। বেশ কয়েকবার তার ছবি বছরের ‘শ্রেষ্ঠ ছবি’ হিসেবে পুরস্কৃতও হয়েছে। পুরস্কার ঘোষণার পর সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেছেন-
আপনার তেলা ছবির মধ্যে আপনার প্রিয় কোনটি?
মিঠু রহস্যময় ভঙ্গিতে হেসে উত্তর দিয়েছে, আমার প্রিয় ছবি আমি এখনও তুলিনি। আমি জানি এই ছবি আমি আমার জীবনে কখনও তুলতে পারবো না এবং তোলার চেষ্টাও করবো না।
সাংবাদিকরা তার এই বক্তব্যকে সেলিবেট্রিদের হেয়ালী ধরনের কথা বলেই ধরে নিয়েছেন। মানুষ সেলিব্রেটি হয়ে গেলে অনেক রকম হেয়ালী টাইপ কথাবার্তা বলে। এসব বলে নিজের প্রতি আকর্ষণ বাড়ায়।
কিন্তু মিঠু জানে- সে কোন হেয়ালী ধরনের কথা বলেনি। সিয়াটলে নিজ রুমে বসে সে যখন জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখে কিংবা ছবি তুলতে তুলতে সে যখন ক্লান্ত হয়ে ঘাসের উপর শুয়ে পড়ে, আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ছোটকালের একটি দৃশ্যের কথা মনে পড়ে।
“অসম্ভব মায়াবী একটি মুখ জলভরা চোখে তার দিকে ঝুঁকে আছে! একই মুখে কান্না আর হাসি। রোদ আর বৃষ্টি যেন! পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ একটি দৃশ্য!!”
২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩
এ এস রিপন বলেছেন: Thank you.
©somewhere in net ltd.
১|
২২ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২৯
নাল বলেছেন: Valo likhesen.