নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পদ্মাপাড়ের ছেলে। বাড়ি বিক্রমপুর। ছোট গল্প লেখার আনন্দে ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করি!

এ এস রিপন

ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........

এ এস রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপমণি (ছোট গল্প)

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ১১:৫০

এক

ফিরোজা বেগম পঞ্চম শ্রেণীর ‘ক’ শাখায় ঢুকলেন। চেয়ারে বসতে বসতেই তার পুরনো মাথাব্যথা শুরু হল। কিছুক্ষণ নিরিবিলিতে চুপচাপ বসে থাকলে ব্যথাটা কমে। কিন্তু বাচ্চাদের ক্লাশে নীরবতা আশা করা যায় না। মৌমাছির মত গুঞ্জন আছেই। মুখ বন্ধ থাকলেও ওরা বোধহয় চোখ-কান-নাক দিয়ে শব্দ করতে পারে।
তিনি গণিতের তিন নম্বর অনুশীলনী থেকে পাঁচটা অংক করতে দিলেন। তারপর কঠিন গলায় বললেন,
কেউ যদি একটা কথা বলো, সামনে এনে নীল ডাউন করিয়ে রাখবো।
সবাই অংক করতে শুরু করল। তিনি হাত দিয়ে কপালের রগ চেপে বসে রইলেন।
বাচ্চারা অনিয়ম সহ্য করতে পারে না। কিছুক্ষণ পর রনি উঠে চোখ গোল গোল করে বলল,
আপা, মিতু খাতা দেখে করছে।
ফিরোজা বেগম তীক্ষ্ম কন্ঠে বললেন,
তুমি এদিকে এসো।
রনি ভয়ে ভয়ে এগিয়ে গেল।
ওখানে গিয়ে নীল ডাউন হয়ে বসো। আর মিতু তুমি বেঞ্চের উপর দাঁড়াও।
সারা ক্লাশ চুপ। ফিরোজা আপার আরেক নাম নীল ডাউন আপা। রাগলে তিনি নীল ডাউন করাবেনই।
তিনি শান্তভাবে আরও কিছুক্ষণ বসে রইলেন। তার মাথাব্যথা অনেকটা কমে এসেছে। তিনি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন। এখন ক্লাশে কয়েকটা চক্কর দিবেন। তিনি মনে করেন, ক্লাশে চক্কর দিলে ক্লাশ নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে। যদিও ছোটক্লাশ নিয়ন্ত্রণের জন্য চক্করের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তার অনেক দিনের অভ্যাস। চক্কর না দিয়ে থাকতে পারেন না।
চক্কর শেষ করে তিনি তার চেয়ারে বসতে যেয়ে দেখলেন, আশা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর চোখে পলক পড়ছে না। তার ভ্রূকুঁচকে গেল। মেয়েটা এত মনোযোগ দিয়ে বাইরে কি দেখছে! তিনি গম্ভীর গলায় ডাকলেন,
আশা।
আশা ফিরেও তাকাল না। ফিরোজা বেগম চিৎকার করে উঠলেন,
আশা-রাণী।
আশার মধ্যে কোন ভাবান্তর নেই। তিনি গটগট করে হেঁটে আশার সামনে এসে দাঁড়ালেন। সারা ক্লাশ থর থর করে কাঁপছে।
আশা, তুমি বাইরে তাকিয়ে আছো কেন?
আশা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,
আপা, আমি ঘাড় ফেরাতে পারছি না। বলতে বলতেই সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল।

দুই
আশা-রাণী বসে আছে একটা তুলসী গাছের কাছে। তাকে রূপমণির বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। রূপমণি গ্রামের বিশিষ্ট মহিলা কবিরাজ। তিনি বিশ্বাস করেন, ‘বদজ্বীনের আছরের কারণে মানুষ অসুস্থ হয়। কবিরাজের বিশেষ বিশেষ চিকিৎসায় এসব রোগ ভাল হয়।’
দূর-দূরান্ত থেকে তার কাছে রোগী আসে। কোন কোন দিন তার বাড়ির উঠানে রোগীদের লাইন পড়ে যায়। তাদের হাতে থাকে গাছের কচি লাউ, কুমড়া, ডাব, কাঁঠাল। যাদের অবস্থা ভাল তারা হাঁস-মুরগী নিয়ে আসে।
আশার বাবা সূরুজ মিয়া সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। তার হাতে বড় বড় দুটো ইলিশ মাছ। সে জেলে মানুষ। মাছ ছাড়া কিছুই আনতে পারেনি।
দু’জন মাতারী টাইপ মহিলা তাদের হাতের জিনিসগুলো নিচ্ছে আর খনখনে গলায় বলছে-
বেশী বাত-চিত কইরেন না। মার কাছে আইছেন, বুঝতে পারলে সব বদুরা পালাইয়া যাইবো।
লাইনের মধ্য থেকে একজন জিজ্ঞেস করলো,
বদু কে?
মাতারী বলল,
বদজ্বীন ব্যাটা, বদজ্বীন। মা ওদের দেখতে পান।
সূরুজ মিয়া কোন কথা বলছে না। সে তাকিয়ে আছে মেয়ের দিকে।
‘আহা! মেয়েটা রোদে বসে আছে। মা’র মতো কাঁচা হলুদের রং পেয়েছে। কচি গাল দুটো কেমন রাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
সূরুজ মিয়া ভ্রূকুঁচকে ভাবছে, গায়ের রঙই কি মেয়েটার জন্য কাল হলো?
সবাই বলছে মেয়েটা বাইরে এমন কিছু দেখেছে, রাগী আপার ক্লাশকেও ভয় পায়নি।
আশা রোদে ছটফট করছে। কিন্তু উপায় কি? জ্বীন ছাড়াতে হলে নাকি ছায়ায় বসার নিয়ম নেই।
সূরুজ মিয়া গলা নিচু করে ডাকলো,
খুকী, এই খুকী, পানি খাবি?
আশা ঘাড় ঘুরাতে পারছে না। দেহ ঘুরিয়ে বাবার দিকে তাকাল। চোখে ঘোর লাগা দৃষ্টি। তার বুকটা ছ্যাৎ করে উঠল। মেয়েটার মুখ শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেছে। সকাল থেকে না খাওয়া!
আছড় ছাড়ানোর দিন রোগীকে নাকি খেতে দিতে নাই। তাহলে জ্বীন পোক্ত করে বসে।
এক মাতারি খলবলিয়ে উঠল,
মা পানি খাইতে কইছেন? রোগী এখন মার জিম্মায়। আপনে বাড়ি যান। বাড়ি যাইয়া লম্বা ঘুম দেন। বিকালে আইসা মাইয়া নিয়া যাইবেন। দেখবেন, কেমন কলকলাইয়া হাসতাছে।
রূপমণি ঘর থেকে বের হলেন। মাথা ভরতি ঝাঁকড়া চুল। চোখের দৃষ্টি অসম্ভব তীক্ষ্ম।
তিনি গ্রামের পাশে এক জঙ্গলে ঢুকলেন। তার পিছনে একদল মানুষ। তিনি হাতের ইশারায় কাউকে ঢুকতে নিষেধ করলেন। কিছুক্ষণ পর তিনি বের হয়ে এলেন। তার চাল-চলন ছমছমে। বুকে কাঁপন ধরায়।
বাড়ির উঠানে ঢুকেই তিনি তুলসী গাছকে প্রণাম করলেন। তারপর ধীর-পায়ে আশা-রাণীর সামনে এসে দাঁড়ালেন।
আশা তার বড় বড় চোখ দেখে ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
রূপমণি হঠাৎ তার মাথা ডান-বায়ে জোরে জোরে ঝাঁকাতে শুরু করলেন। তার ঝাঁকড়া চুল মৌমাছির চাকের মত ফুলে উঠল। তারপর আশার বুকে-পিঠে গালে ঠাস ঠাস করে চড় মারতে লাগলেন।
আশা চিৎকার করে উঠলো। সে বারবার হাত দিয়ে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে। দুই মাতারী তার দুই হাত ধরে রেখেছে। রূপমণি তাকে মারছেন আর চিৎকার করে বলছেন,
যেখান থেকে আইছস্, সেইখানে চইলা যা....... চইলা যা......চইলা যা.....।
প্রায় পনের মিনিট এভাবে মার চলল। আশা নেতিয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে সে বমি করতে থাকে। তাকে একটি পাটিতে শুইয়ে দেয়া হল।
সূরুজ মিয়ার মুখ হা হয়ে গেছে। সে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো,
খুকী, খুকী! মা আমার......
রূপমণি গম্ভীর গলায় বললেন,
আছর ছেড়ে গেছে! কিছুক্ষণ পর রোগীর হুঁশ ফিরবো। এখন বাড়ি নিয়া যান।

তিন

রোগীকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছে। তার হুশ ফিরেছে কিন্তু বমি বন্ধ হচ্ছে না।
রাত আটটার দিকে তাকে ‘সদর থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে’ নিয়ে আসা হল। দশ কিলোমিটার পথ আসতে-আসতেই রোগী অচেতন।
ডাক্তার রোগীর পাল্স দেখলেন। চোখ খুলে টর্চ ফেললেন। তারপর ধীরে ধীরে চোখ বন্ধ করে দিলেন।
উৎসুক গ্রামবাসী ডাক্তারের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। ডাক্তার একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন,
সব শেষ হওয়ার পর নিয়ে এসেছেন!
সূরুজ মিয়া স্তব্ধ হয়ে মাটিতে বসে পড়ল। তার কাছে মনে হচ্ছে- প্রবল বেগে মাটি দুলছে। কিছু ধরতে না পারলে সে ছিটকে পড়ে যাবে।


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৩৭

আহলান বলেছেন: দুঃখজনক ... !

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৪

এ এস রিপন বলেছেন: এমন দুঃখজনক ঘটনা এখনও গ্রামে-গন্জে ঘটে। ........ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:২৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর গল্প| এরকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে| ঘটত| আরো ঘটবে যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয়|
ভাল লাগল গল্পটা| একটা ব্যপার বুঝলাম না, স্কুলে ঘটছে কান্ডটা, স্কুল থেকে তো কাছাকাছি কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা| কিন্তু এমন হয়| অসচেতনা সবখানেই

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:০০

এ এস রিপন বলেছেন: ঠিক বলেছেন ভাই-স্কুল থেকে তো কাছাকাছি কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু যা সহজ-স্বাভাবিক তা আমরা অনেক সময় করি না! ......পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:২৯

Tas DE Sun বলেছেন: বড়ই অমানবিক

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৫

এ এস রিপন বলেছেন: ঠিক...। পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

৬| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: গ্রাম গঞ্জের এই ব্যাপারটা একদম বাজে লাগে। কিছু থেকে কিছু হলেই জ্বীন-ভূতের আছর, কবিরাজ-ভূত তাড়কবাজের কাছে নেওয়া লাগবে।
আদতে একটা ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেই হয়ে যেত।

ভাল ছিল লেখাটা।

৭| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:২৪

কিরমানী লিটন বলেছেন: আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর গল্প| এরকম ঘটনা হরহামেশাই ঘটছে| ঘটত| আরো ঘটবে যদি ব্যবস্থা নেয়া না হয়|
ভাল লাগল গল্পটা| একটা ব্যপার বুঝলাম না, স্কুলে ঘটছে কান্ডটা, স্কুল থেকে তো কাছাকাছি কোন হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা| কিন্তু এমন হয়| অসচেতনা সবখানেই

অনেক ভালো লিখনির সমাবেশ, শুভকামনা রইলো ...

০১ লা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৪

এ এস রিপন বলেছেন: কিরমানী লিটন ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ.......পড়ার জন্য!

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.