নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পদ্মাপাড়ের ছেলে। বাড়ি বিক্রমপুর। ছোট গল্প লেখার আনন্দে ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করি!

এ এস রিপন

ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........

এ এস রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মনোনয়ন

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৩


সামনে নির্বাচন। এহসান চৌধুরী লোকজনের সাথে দেখা-সাক্ষাতে বের হয়েছেন। প্রাক্তন মন্ত্রী হিসেবে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা এবং দাপট কম নয়। তিনি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন। সাথে তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গ, বডিগার্ড। আশেপাশের লোকজন তাকে সালাম দিচ্ছে। কোন কোন দোকানের মালিক সামনের দিকে ঝুঁকে তাঁকে দেখছে। সালাম দিচ্ছে। তিনি হাসি মুখে সবার সালামের জবাব দিচ্ছেন। কারো কারো সাথে হাত মিলাচ্ছেন। নিজের এলাকা নিজের কাছেই অপরিচিত লাগছে। রাস্তার দু’পাশে অনেক নতুন নতুন দোকানপাট উঠেছে। তিনি অনেকদিন এই রাস্তায় হাঁটেন না। পাঁজেরোয় চড়ে মাঝে মাঝে ঢাকা থেকে আসেন। হুশ করে বেরিয়ে যান। তখন এতো পরিবর্তন তার চোখে পড়েনি।
‘সূবর্ণ হোটেলটা’ এই রাস্তায় ছিল না? হোটেলের মালিকের নামটা যেন কি?
তিনি মালিকের নাম মনে করার চেষ্টা করছেন। নাম মনে পড়ছে না। এই হোটেলে আড্ডা দিতে দিতেই তিনি ‘রাজনীতিতে’ পা থেকে মাথা পর্যন্ত ডুবে যান। দেশে তখন টালমাটাল অবস্থা! প্রতিদিন একটা দুটা খুন হচ্ছে। বোমা পড়ছে। খুন না করেও তিনি খুনের মামলায় ফেঁসে গেলেন। এই রাজনীতিই আবার তাকে রক্ষা করে!
তিনি একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন। তারপর হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলেন।
চিপা একটা গলি থেকে ‘ষণ্ডামার্কা’ এক লোক বের হয়ে এল। লোকটার মাথায় ঝাঁকড়া চুল। মুখে বসন্তের দাগ। সে কিছুক্ষণ আশেপাশে তাকাল। তারপর ধীরপায়ে চৌধুরী সাহেবের সামনে এসে পথ আটকে দাঁড়াল। বাজখাই গলায় বলল,
আসসালামালাইকুম স্যার।
চৌধুরী সাহেব ভ্রূকুঁচকে লোকটির দিকে তাকালেন। থমথমে মুখে বললেন,
ওয়ালাইকুম সালাম।
মন্ত্রীর সাথের লোকজন বিরক্ত চাখে লোকটাকে দেখছে। ব্যাটার সাহস তো কম না! সে বোধহয় মন্ত্রীকে চিনতে পারেনি।
দু’জন বডিগার্ড তাকে ঘিরে ধরলো। তাদের হাত পকেটে ঢুকে গেছে। উল্টা-পাল্টা কিছু দেখলে বিদ্যুৎ গতিতে হাত বের হয়ে আসবে। সেই হাত তখন খালি থাকবে এমন ভাবার কারণ নাই। লোকটা আশেপাশের লোকজনকে উপেক্ষা করে শীতল গলায় বলল,
স্যার, আমি মজিদ। লোকে কয় গলাকাটা মজিদ।
চৌধুরী সাহেব একটু অবাক হলেন। এই সেই ‘গলাকাটা’ মজিদ যার নাম পত্রিকায় বের হয়। তিনি লোকটিকে ভাল করে দেখলেন সাপের মতো শীতল চাহনী। চোখের মণিতে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা। চৌধুরী সাহেব সহজ গলায় বললেন,
তুমি ‘গলাকাটা’ মজিদ?
জি স্যার।
ভালোই হল তোমার সাথে দেখা হয়ে। তোমার ‘কীর্তিকলাপ’ আমি অনেক শুনেছি। একদিন এসো আমার কার্যালয়ে। আলাপ করা যাবে। এই নাও আমার কার্ড।
গলাকাটা মজিদ তাচ্ছিল্যস্বরে বলল,
কার্ড-ফার্ড দিয়া কি হইবো? এই রাস্তা দিয়া যখন যাইতাছেন, কিছু ‘মালপানি’ দিয়া যান। যারাই এখান দিয়া যায় আমারে মালপানি দিয়া যায়। জানেন তো, আমাগো প্রাণ দেহে থাকে না, মালপানিতে থাকে।
মজিদ দাত বের করে খ্যাক খ্যাক করে হাসতে লাগল।
একজন বডিগার্ড মুহূর্তে তার কলার চেপে ধরল।
হারামজাদা, তোর এত বড় আস্পর্ধা! স্যারের কাছে তুই চান্দা চাস! তোর চান্দা চাওয়া....
চৌধুরী সাহেব ইশারা করলেন। বডিগার্ড তাকে ছেড়ে দিল। চৌধুরী সাহেব তার চোখে চোখ রেখে শান্ত গলায় বললেন,
শাবাশ, তোমার মতো বঙ্গ সন্তান আমি খুঁজছি। সামনে ইউপি নির্বাচন। ইনশাল্লাহ আমি তোমাকে আমার দল থেকে মনোনয়ন দিবো!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১০

উধাও ভাবুক বলেছেন: হ্যাঁ, এরাই তো দেশের মন্ত্রী হবে।
শুভকামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.