![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........
এক
রুবেল সকালবেলা পত্রিকা খুলে চমকে উঠল। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে! এত তাড়াতাড়ি রেজাল্ট দিল! গত সপ্তাহে সে পরীক্ষা দিয়েছে। MCQ সিস্টেমে পরীক্ষা। অবশ্য মেশিনে খাতা দেখতে বেশী সময় লাগার কথা না। সে দ্রুত টেবিলের ড্রয়ার খুলে তার এডমিট কার্ড বের করল। তার রোল নাম্বার ৫৭৩৫। রোল নাম্বার খুঁজতে গিয়ে তার বুকধুকানি শুরু হল। সে কি টিকবে?
সে এক এক করে প্রত্যেকটা নাম্বার দেখল। কোথাও ৫৭৩৫ নাই। তার গলা শুকিয়ে গেল। সে কয়েকবার ঢোক গিললো। ৫৭৩৪ আছে, ৫৭৩৬ আছে কিন্তু তারটা নাই। তার মানে সে টিকেনি! ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তার এখানেই শেষ। সে শূন্য দৃষ্টিতে পত্রিকাটার দিকে তাকিয়ে রইল।
এমন হয়নি তো, পত্রিকায় ভুলে তার রোল উঠেনি?
রুবেল, নাস্তা রেডি......
পাশের ডাইনিং রুম থেকে রুবেলের মা রেহানা ডাকছেন।
রুবেল পাথরের মত বসে রইল।
রুবেল..... রুবেল......
রুবেল সাড়া দিল না। রেহানা দ্রুত পায়ে রুমে ঢুকলেন।
কিরে কি হয়েছে তোর? ডাকছি শুনছিস না? নাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে।
আসছি মা।
এমন মুখ কালো করে বসে আছিস কেন? কি হয়েছে?
কিছু হয়নি। তুমি যাও।
রেহানা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে একবার ছেলের দিকে তাকালেন। টিন-এজ ছেলেদের মতিগতি বোঝা কঠিন। খুব ভোরে দেখলেন, মর্নিং ওয়াক থেকে ফিরে ছেলেটা আনন্দে ঝলমল করছে। এখন কেমন মনমরা ভাব। এতটুকু সময়ের মধ্যে কি এমন হল! তিনি চিন্তিত মুখে ডাইনিং টেবিলে এসে বসলেন।
রুবেলের বাবা ইয়াজউদ্দিন চৌধুরী রুটিতে মাখন লাগাচ্ছেন। তিনি রেহানার দিকে না তাকিয়েই বললেন, রুবেল এল না?
আসছে।
রুবেল ধীর পায়ে ডাইনিং টেবিলে এসে বসল। তার মুখ থমথমে। রেহানা নাস্তা এগিয়ে দিলেন।
বুয়া পত্রিকাটা টেবিলে এনে রাখল। ইয়াজউদ্দিন সাহেব দ্রুত পত্রিকা হাতে নিলেন।
রেহানা কঠিন চোখে বুয়ার দিকে তাকালেন। নাস্তার টেবিলে পত্রিকা দেয়া তিনি পছন্দ করেন না। বুয়াকে কয়েকবার বলেছেন। এই সামান্য কথা সে মনে রাখতে পারে না? রুবেলের বাবা পত্রিকা হাতে পেলে নাস্তা মুখে দিতে ভুলে যান। নাস্তা ঠাণ্ডা হতে থাকে। তিনি গরম গরম নাস্তা বানান ঠাণ্ডা করে খাওয়ার জন্য? তাছাড়া পত্রিকা পড়ার সময় রুবেলের বাবা একটা কথাও বলেন না। অন্য সময় দু’ চারটা কথা বলেন।
রুবেল অন্যমনস্কভাবে রুটিতে কামড় দিচ্ছে। তার খেতে ইচ্ছা করছে না। তার বুক টিপটিপ করছে। বাবা এখন রেজাল্টের খবর জানবেন। তারটা জানতে চাইবেন। রুবেল একবার আড়চোখে বাবাকে দেখল। বাবা নির্বিকার ভঙ্গিতে পত্রিকা পড়ে যাচ্ছেন। তার মুখে কোন ভাবান্তর নেই।
হয়তো খবরটি দেখেননি। তিনি ইদানিং রাজনৈতিক খবর ছাড়া তেমন কিছুই পড়েন না। না দেখলেই ভাল। সকালবেলা নাস্তার টেবিলে এই দুঃসংবাদটা তাকে জানাতে ইচ্ছা করছে না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব পত্রিকাটা পাশে সরিয়ে রাখলেন। রুবেল স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। রেহানা বললেন,
কিরে তুই তো কিছুই খাচ্ছিস না! কি ভাবছিস?
কই কিছু ভাবছি না তো। খাচ্ছি তো।
ইয়াজউদ্দীন সাহেব হঠাৎ গম্ভীর হয়ে বললেন,
মেডিকেলে তুমি টিকেছো?
রুবেল চমকে বাবার দিকে তাকাল। পরক্ষণেই মাথা নিচু করে ফেলল।
কথা বলছো না যে?
টিকেনি।
রেহানা অবাক গলায় বললেন,
সে কি তুই টিকিস নাই? এইজন্যই সকাল থেকে মন খারাপ! আমি ভাবলাম কী না কী হল। টিকলি না কেন? এতদিন কী পড়লি? তিনমাস ধরে দেখছি কোচিং সেন্টারে দৌড়াদৌড়ি করছিস।
রুবেল কিছু বলল না।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,
শিক্ষা কোন তরল পদার্থ না যে কেউ চামিচে করে খাইয়ে দিবে। নিজে পড়তে হয়।
রেহানা বিরক্ত মুখে বললেন,
ওর নিজে পড়ার সময় কই। আজ ফিজিক্স কোচিং। কাল কেমিস্ট্রির কোচিং! ঢাকা শহরের কোন কোচিং সেন্টার বাদ রেখেছে? সব ভাজা ভাজা করে ফেলেছে। অথচ রেজাল্টের বেলায়------
ইয়াজউদ্দিন সাহেব হতাশ গলায় বললেন,
গ্রাম-গঞ্জ থেকে রিক্সাওয়ালা ঠেলাগাড়িওয়ালার ছেলেপেলে এসে বুয়েট মেডিকেলে পড়ছে, আর তোমার ছেলে এত সুযোগ সুবিধা পেয়েও চান্স পেল না!
রুবেল মুখ কালো করে উঠে গেল।
ইয়াজউদ্দিন সাহেব থমথমে মুখে বললেন,
ওকে যেয়ে এখন জগন্নাথে ভর্তি হতে বলো।
রেহানা ঝাঁঝের সঙ্গে বললেন,
জগন্নাথে কী পড়বে? ওর ডাক্তারী পড়ার সখ।
সখ থাকলেই তো হবে না। সাধ্য থাকতে হবে।
রেহানা ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ফেললেন। এতদিন ধরে ছেলেটা আশা করে আছে ডাক্তারী পড়বে। এখন গোড়াতেই বাতিল।
তিনি ক্ষীণ গলায় বললেন,
তুমি কিছু একটা কর।
আমি কি করবো? অন্যের কাঁধে চড়ে ডাক্তারী পড়ার দরকার নেই। যেখানে চান্স পাবে সেখানেই পড়বে।
বললেই হল? আমার একটা মাত্র ছেলে! জেনারেল লাইনে দিয়ে ওকে কেরানী বানাবো? তুমি ওর ভর্তির ব্যবস্থা কর।
আমি কিভাবে করবো?
রেহানা স্থির চোখে স্বামীর দিকে তাকিয়ে বললেন, তুমি ভালো করেই জান, কিভাবে করবে।
দুই
আসসালামালাইকুম।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল ডাঃ মাহবুব হোসেন ভদ্রলোকের দিকে মুখ তুলে তাকালেন। পরক্ষণেই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ইয়াজউদ্দীন চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। এলাকার বিশিষ্ট এম.পি। তিনি উঠে হাসিমুখে হাত বাড়ালেন।
আরে চৌধুরী সাহেব যে! কি সৌভাগ্য!! কেমন আছেন?
এই আছি। নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত আছি। কলেজের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম, আপনাদের সাথে একটু দেখা করে যাই।
ভালো করেছেন। মাঝে মাঝে আসবেন। আপনি না দেখলে কে দেখবে?
ইয়াজউদ্দীন সাহেব চেয়ারে বসতে বসতে বললেন,
কলেজে কোন সমস্যা-টমস্যা নেই তো?
নাহ!
ভালো। আমি নিজেই এক সমস্যায় পড়েছি। আমার ছেলেটা এবার এইচ. এস. সি পাস করেছে। ‘এ’ প্লাস পেয়েছে।
বাহ! চমৎকার! দেশে পড়াবেন, না বাইরে পাঠাবেন?
ইয়াজউদ্দিন সাহেব হেসে বললেন,
বাইরে পড়ানোর সামর্থ্য কি আমার আছে? আমি গরীব মানুষ।
আপনি গরীব হলে আমরা কী?
আপনাদের কথা আলাদা। আপনারা সমাজের মাথা। অর্থ দিয়ে আপনাদের পরিমাপ করা যাবে না।
প্রিন্সিপাল সাহেব একটু হাসলেন। কিছু বললেন না।
ছেলেটা মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা দিল। কিন্তু টিকতে পারল না।
প্রিন্সিপাল সাহেব ইতস্তত করে বললেন,
আসলে প্রতিযোগিতা এখন এত বেশী কিন্তু আমাদের সীট আগের মতোই আছে।
ইয়াজউদ্দীন সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, সীট বাড়ানোর জন্য কোন উদ্যোগ নিয়েছেন?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেটকে আমি পরপর তিনবার চিঠি দিয়েছি। তাঁরা বলেছেন, বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন রেজাল্ট দেখলাম না।
এটা ভালো কথা না। দেশের ছেলেরা যদি দেশেই পড়তে না পারে, যাবে কোথায়? বাইরে পড়তে গেলে দেশের প্রতি আর মায়া-মমতা থাকে? এদের দিয়ে তখন কি হয়?
ইয়াজউদ্দীন সাহেবের সামনে কেক, সেভেন আপ, আপেল-কমলা দেয়া হয়েছে। তিনি গ্লাসে চুমুক দিলেন।
আমি এসেছি আমার ছেলেটাকে ভর্তি করাতে।
প্রিন্সিপাল সাহেব যেন একটু হকচকিয়ে গেলেন। তার মুখে চিন্তার ছাপ পড়লো। ইয়াজউদ্দীন সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন,
এই কৃত্রিম প্রতিযোগিতায় কেউ না টিকলে তারা কিন্তু ছাত্র হিসেবে খারাপ না।
তা তো অবশ্যই। সীট কম বলে তারা বাদ পড়েছে।
দু’জনে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলেন। ইয়াজউদ্দীন সাহেব বললেন,
আমার ছেলেটাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। ভর্তির জন্য যা যা করা দরকার আপনি করুন।
তা হয় কি করে? এটা তে আমার একার সিদ্ধান্ত না। বোর্ড আছে।
ব্যাপারগুলো আপনি দেখুন। সামনে মেডিকেল কলেজে সীট বাড়ানোর ব্যাপারটা আমি দেখবো।
প্রিন্সিপাল সাহেব ইতঃস্তত করে বললেন,
কিন্তু-------
ইয়াজউদ্দীন সাহেব স্থির দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, আমি কারো কাছে গেলে খালি হাতে ফিরি না।
প্রিন্সিপাল সাহেব একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেললেন।
কি নাম আপনার ছেলের?
মোঃ রুবেল চৌধুরী।
ঠিক আছে। পাঠিয়ে দিন। দেখি কি করা যায়।
ইয়াজউদ্দীন সাহেব মুখে হাসি ফুটিয়ে বললেন, আপনারা জাতির মেরুদণ্ড। আপনারা মেরুদণ্ড গড়ে না দিলে কারা গড়বে?
প্রিন্সিপাল সাহেব একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বললেন,
হ্যাঁ, আমরা তো গড়ার চেষ্টা করছি। আর সবাই মিলে তা ভাঙ্গার চেষ্টা করছে।
তিন
দশ বছর পরের কথা। এক চোখ ধাঁধানো প্রাইভেট ক্লিনিকে কান্নার রোল উঠেছে। মা কাঁদছে। বাবা কাঁদছে। বড় বোন কাঁদছে। তাদের বুকফাটা কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। পনের বছরের একটি ছেলে অপারেশন থিয়েটারে নিথর হয়ে পড়ে আছে।
ডাঃ রুবেল চৌধুরী ঘর্মাক্ত মুখে ছেলেটির নিথর মুখের দিকে তাকিয়ে আছেন। কিছুক্ষণ আগে তিনি ওর অপারেশন করেছেন! তার হাত-পা থরথর করে কাঁপছে!
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫
এ এস রিপন বলেছেন: ঠিক বলেছেন। এখন পত্রিকায় রেজাল্ট দেয় না, অনলাইনে দেয়। আমার সময়ের অভিজ্ঞতা দিয়ে লেখা তো! আর কি কি তথ্যগত ভুল রয়েছে kindly জানাবেন।
পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৮
অভ্রনীল হৃদয় বলেছেন: দমবন্ধ লেখা, অসাধারণ!
১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫১
এ এস রিপন বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৩| ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ২:১৩
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: শেষটা ভালই| প্রথম দুটো পার্ট কেমন বাস্তবতা বর্জিত মনে হল| তবে প্লটে প্রশ্নফাঁশের ব্যাপারটা আনা যেত
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:১৮
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: বিষয়টা ভালোই ছিলো গল্পের। কিন্তু অনেক ভুল রয়েছে। এখন পত্রিকায় রেজাল্ট দেয় না, অনলাইনে দেয়। তথ্যগত ভুলও রয়েছে।