![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........
এক
মৌমিতা পার্কের বেঞ্চে বসল। রনি এবং তিন্নি ছুটাছুটি করছে। তিন্নিটা খুব চঞ্চল হয়েছে। বিশাল একটা বেলুন নিয়ে ছুটছে। মাহফুজ মেয়ের পেছনে পেছনে ছুটছে। মেয়েকে ধরতে পারছে না। মৌমিতার হাসি পাচ্ছে। তার সাহেবের শরীর বেশ ভারি হয়েছে। কেমন থপ থপ করে ছুটছে। ক্লান্তিতে হাঁপাচ্ছে। একটুতেই সে এখন হাঁপিয়ে উঠে। মৌমিতা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল।
বসন্তের হাওয়া আসছে। এই হাওয়া গায়ে লাগলে মনটা ফুরফুর করে। মৌমিতা আয়েশ করে বসল। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে দিল। মিষ্টি বাতাস। সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আহ! কি শান্তি! আবেশে তার ঘুম এসে যাচ্ছে।
অনেকক্ষণ সে চোখ বন্ধ করে বসে রইল। এক সময় চোখ খুলল। একটু হাঁটাহাঁটি করা দরকার। মৌমিতা উঠতে চাইল, উঠতে পারল না। তার হাত-পা পাথরের মতো ভারি হয়ে আছে। নড়াচড়াও করতে পারছে না। শুধু ঘাড় ঘুরাতে পারছে। এসব কি? ভয় পেয়ে সে মাহফুজকে চিৎকার করে ডাকল।
‘এই, এদিকে এসো তো!
তার গলা দিয়ে স্বর ফুটল না। আশ্চর্য! এমন হচ্ছে কেন? সে সব কিছু দেখতে পাচ্ছে। শুনতে পাচ্ছে। হঠাৎ মনে হল- সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। সমস্ত জগৎ যেন শব্দহীন।
ঐতো মাহফুজ তিন্নিকে যেন কি বলছে। তিন্নি হেসে ‘কুটি কুটি’। সে তার হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগেও ওদের চেঁচামেচি শুনেছে।
মৌমিতা, কেমন আছো?
কে.... .... কে.....?
মৌমিতা বিস্মিত হয়ে আশে-পাশে তাকাল। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছে। কার কণ্ঠ শুনলো?
মৌমিতা ভয় পেও না। তুমি আমাকে দেখতে পাবে না। কথা শুনতে পাবে।
কে আপনি?
‘আপনি’!! হা.... হা... হা...
হাসছেন কেন?
হাসছি তোমার কথা শুনে। ভেবেছিলাম গলা শুনে তুমি আমাকে চিনতে পারবে। মনে পড়ে - পনের বছর আগে এ রকম এক বিকেলের কথা?
কে ... ফরহাদ!!
দুই
‘তুমি মধুর কেন্টিনে এসে বসে আছো। আর আমি সারা ক্লাশ খুঁজছি।’
ফরহাদ মুখ তুলে তাকাল। মৌমিতা লেকচার খাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে চেয়ার টেনে ফরহাদের মুখোমুখি বসল। টিস্যু দিয়ে কপাল মুছলো।
ক্লাশ করলে না যে!
ফরহাদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বলল, ক্লাশ করতে ভালো লাগে না।
কি ভালো লাগে?
বসে বসে চা খাচ্ছি- এটাই ভালো লাগছে।
হু। বসে বসে শুধু চা খেলে পাশ হবে? ভূ-গোলে তো লাড্ডু পাবে! আতিক স্যার আজ অস্ট্রেলিয়া পড়ালেন।
ভূগোল কি পড়ার জিনিস? ঘুরে দেখার জিনিস।
ঘুরো না কেন? তোমাকে না করেছে কে?
ভাবছি-একদিন বেরিয়ে পড়বো। এই প্যানপ্যানে জীবন আর ভালো লাগছে না। তুমি থাকবে আমার পাশে?
আমাকে আবার টানছো কেন? জীবন নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই।
তা জানি। অনার্স ফার্স্টক্লাশ। মাস্টার্সেও পাবে। বের হয়ে বড় চাকরি। তারপর রাজপুত্র। কি মসৃণ জীবন!
তোমার জীবন কি অমসৃন?
ফরহাদ কিছু বলল না ম্লান হাসল। কেন্টিনে জোড়ায় জোড়ায় জুুটি এসে বসছে।
মৌমিতা বলল, বিকালে তোমার টিউশনী আছে?
কেন?
শপিং করবো। বসুন্ধরা সিটিতে যেতে হবে। তোমার সময় হবে?
ফরহাদ উদাস গলায় বলল, মার্কেটে ঘুরতে আমার ভালো লাগে না।
কোথায় ঘুরতে ভালো লাগে?
নির্জন কোন দ্বীপে। আমি প্রায়ই ভাবি আমরা জাহাজে করে গভীর সমুদ্রে যাচ্ছি। পথে ঝড় উঠল। প্রচণ্ড ঝড়। সেই ঝড়ে জাহাজ ডুবে গেল। আমরা পরস্পরকে শক্ত করে ধরে আছি। বিশাল এক ঢেউ এসে আমাদেরকে একটা দ্বীপে আছড়ে ফেলল। সেই দ্বীপে কোন জনমানব নেই। শুধু তুমি আর আমি!
মৌমিতা হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়ল।
নির্জন দ্বীপে আমি নাই। তুমি থাকো।
ফরহাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল।
মৌমিতা হাসি থামিয়ে বলল, তুমি একটা অদ্ভুত ছেলে!
আমরা সবাই অদ্ভুত।
তুমি একটু বেশি অদ্ভুত।
হঠাৎ সে গম্ভীর হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর বিষণœ গলায় বলল,
বাবা-মা আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
কি ভাবতে শুরু করেছেন?
জানো না মেয়ে বড় হলে বাবা-মা কি ভাবেন?
তাদের ভাবনা তাদের ভাবতে দাও। তুমি কি ভাবছো?
মৌমিতা চোখ তুলে তাকাল। অপার্থিব শিহরণে ফরহাদের বুকটা চিনচিন করে উঠল। যার চোখে এত কথা, মুখে তার কিছু বলার দরকার নেই!
তিন
রমনার ‘অস্তাচল’। বিকেলের শেষ রশ্মিটুকু নরম ঘাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ফরহাদ মৌমিতার হাত ধরে বসে আছে। মৌমিতা জড়ানো গলায় বলল,
বিকেলের সময়টা এত ছোট কেন? বসতে না বসতে ফুরিয়ে যায়! দুপুরের মতো কেন দীর্ঘ হয় না?
ফরহাদ বলল, বিকেলের সময়টাতে এক ধরনের ‘হাহাকার’ আছে। সূর্যকে হারানোর হাহাকার। পৃথিবী এই ‘হাহাকার’ বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না।
তোমাকে কে বলেছে?
কেউ বলেনি। আমার কাছে তাই মনে হয়।
মৌমিতা অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল।
এক সময় আদুরে গলায় বলল,
এই শোন। আমরা বিয়ে করবো ঠিক দুপুর বারোটায়। তারপর দু’জনে বুড়িগঙ্গায় চলে যাবো। একটা নৌকা ভাড়া করবো। সারা বিকেল নদীতে ঘুরবো। পৃথিবীর ‘হাহাকার’ শুনে তাকে সান্ত্বনা দিবো। বলবো আমরাও তোমার সাথে আছি।
ফরহাদ ম্লান হাসল।
বলল, “আমার চোখেই টলমলে অশ্রু,
তোমার অশ্রু কোথায় রাখি!”
মানে?
পৃথিবীকে শান্ত্বনা দিবো কি? নিজের মধ্যেই হাহাকার।
কেন?
সূর্যের মতো তোমাকেও যদি হারিয়ে ফেলি!
মৌমিতা বলল, সূর্য কিন্তু একই পৃথিবীর কাছে বার বার ফিরে আসে।
ফরহাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
হ্যাঁ, ততক্ষন আমি বেঁচে থাকলে!
মৌমিতা সোজা হয়ে বসল।
ছিঃ, সন্ধ্যে বেলায় কি সব অলুক্ষণে কথা বলো!
ফরহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
মৌমিতা, একটা বিষয় আমি মনে- প্রাণে বিশ্বাস করি।
কি বিষয়?
গভীর আগ্রহ নিয়ে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে যদি পরস্পরকে চায়, তাদের জন্য ‘স্বর্গের উদ্যানে’ একটা প্রাসাদ তৈরি হতে থাকে। চাওয়া যতো গভীর হয়, প্রাসাদ ততো পোক্ত হয়। তারপর উদ্যানের প্রতিটা গাছ, প্রতিটা পাতা, প্রতিটা পাখী চিৎকার করে ডাকতে থাকেঃ
“তোমরা তোমাদের প্রাসাদে এসে বসবাস করো।”
মৌমিতা, আমি মাঝে মাঝে ওদের চিৎকার শুনতে পাই। তুমি পাও?
চার
‘এই কতক্ষণ ধরে রিং দিচ্ছি। মোবাইল ধরছো না কেন?’
ছটফট করে মৌমিতা কথাগুলো বলল।
গোছল করছিলাম।
বাসায় একটু সমস্যা হয়েছে।
কি সমস্যা?
আজ সন্ধ্যায় আমাকে দেখতে আসবে। ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আমি খুব কান্নাকাটি করেছি। মা বলছেন- দেখলেই বিয়ে হয়ে যায় না। তুমিই বল, এখন আমি কি করবো?
ফরহাদ চুপ করে রইল।
কি ব্যাপার? কথা বলছো না কেন?
কি বলবো?
আশ্চর্য, তোমার কোন সাজেশন নাই?
তোমার মনকেই জিজ্ঞেস করো।
মৌমিতা ‘চুপ’ হয়ে গেল।
ফরহাদ বলল,
শোন মৌমিতা। তুমি ভয়াবহভাবে কনফিউজড্। তোমার একদিকে নিশ্চিত নিরাপত্তা, আরেক দিকে আমি। তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না কোন পথে যাবে? তোমার সামনে দুটো পথই খোলা। তাই এত সিদ্ধান্তহীনতা। আমি কারও সাথে প্রতিযোগিতায় যাবো না। সেই যোগ্যতাও আমার নেই। আমার আছে শুধু তুমি আর কল্পনায় একটি নির্জন দ্বীপ! তুমি আমাকে হারানোর ভয় যতোটা পাও, আমি পাই শতগুণ বেশি। তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাস, একটা দুঃসাহসী কাজ করতে পারবে?
মৌমিতা বলল, কি কাজ?
এই মুহূর্তে কাজী অফিসে এসে আমাকে বিয়ে করতে পারবে? আছে সেই সাহস? তারপর আমাদের ভাগ্যে কি আছে- আল্লাহই দেখবেন।
মৌমিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
কাজী অফিসে কখন আসতে চাও?
ফরহাদ বলল, তুমি বল?
বিকেল পাঁচটায় আমি আসবো। তুমি রমনা পার্কে এসো। সেদিন যে বেঞ্চে বসেছিলাম, সেখানে অপেক্ষা করো।
পাঁচ
মৌমিতা তুমি সেই এলে। তবে পনের বছর পর। সাথে স্বামী ছেলে মেয়ে। অপূর্ব সাজানো এক বাগান!
ফরহাদ, ফরহাদ... ফরহাদ শুনো...।
মাহফুজ বলল, এই মৌমিতা, এই মৌমিতা, তোমার কি হয়েছে? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি বিড় বিড় করছো। চল উঠো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।এক
মৌমিতা পার্কের বেঞ্চে বসল। রনি এবং তিন্নি ছুটাছুটি করছে। তিন্নিটা খুব চঞ্চল হয়েছে। বিশাল একটা বেলুন নিয়ে ছুটছে। মাহফুজ মেয়ের পেছনে পেছনে ছুটছে। মেয়েকে ধরতে পারছে না। মৌমিতার হাসি পাচ্ছে। তার সাহেবের শরীর বেশ ভারি হয়েছে। কেমন থপ থপ করে ছুটছে। ক্লান্তিতে হাঁপাচ্ছে। একটুতেই সে এখন হাঁপিয়ে উঠে। মৌমিতা ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলল।
বসন্তের হাওয়া আসছে। এই হাওয়া গায়ে লাগলে মনটা ফুরফুর করে। মৌমিতা আয়েশ করে বসল। দু’হাত দু’দিকে ছড়িয়ে দিল। মিষ্টি বাতাস। সে চোখ বন্ধ করে ফেলল। আহ! কি শান্তি! আবেশে তার ঘুম এসে যাচ্ছে।
অনেকক্ষণ সে চোখ বন্ধ করে বসে রইল। এক সময় চোখ খুলল। একটু হাঁটাহাঁটি করা দরকার। মৌমিতা উঠতে চাইল, উঠতে পারল না। তার হাত-পা পাথরের মতো ভারি হয়ে আছে। নড়াচড়াও করতে পারছে না। শুধু ঘাড় ঘুরাতে পারছে। এসব কি? ভয় পেয়ে সে মাহফুজকে চিৎকার করে ডাকল।
‘এই, এদিকে এসো তো!
তার গলা দিয়ে স্বর ফুটল না। আশ্চর্য! এমন হচ্ছে কেন? সে সব কিছু দেখতে পাচ্ছে। শুনতে পাচ্ছে। হঠাৎ মনে হল- সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। সমস্ত জগৎ যেন শব্দহীন।
ঐতো মাহফুজ তিন্নিকে যেন কি বলছে। তিন্নি হেসে ‘কুটি কুটি’। সে তার হাসির শব্দ শুনতে পাচ্ছে না। কিছুক্ষণ আগেও ওদের চেঁচামেচি শুনেছে।
মৌমিতা, কেমন আছো?
কে.... .... কে.....?
মৌমিতা বিস্মিত হয়ে আশে-পাশে তাকাল। কাউকে দেখা যাচ্ছে না। ভয়ে তার গলা শুকিয়ে আসছে। কার কণ্ঠ শুনলো?
মৌমিতা ভয় পেও না। তুমি আমাকে দেখতে পাবে না। কথা শুনতে পাবে।
কে আপনি?
‘আপনি’!! হা.... হা... হা...
হাসছেন কেন?
হাসছি তোমার কথা শুনে। ভেবেছিলাম গলা শুনে তুমি আমাকে চিনতে পারবে। মনে পড়ে - পনের বছর আগে এ রকম এক বিকেলের কথা?
কে ... ফরহাদ!!
দুই
‘তুমি মধুর কেন্টিনে এসে বসে আছো। আর আমি সারা ক্লাশ খুঁজছি।’
ফরহাদ মুখ তুলে তাকাল। মৌমিতা লেকচার খাতা হাতে দাঁড়িয়ে আছে। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। সে চেয়ার টেনে ফরহাদের মুখোমুখি বসল। টিস্যু দিয়ে কপাল মুছলো।
ক্লাশ করলে না যে!
ফরহাদ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উদাস ভঙ্গিতে বলল, ক্লাশ করতে ভালো লাগে না।
কি ভালো লাগে?
বসে বসে চা খাচ্ছি- এটাই ভালো লাগছে।
হু। বসে বসে শুধু চা খেলে পাশ হবে? ভূ-গোলে তো লাড্ডু পাবে! আতিক স্যার আজ অস্ট্রেলিয়া পড়ালেন।
ভূগোল কি পড়ার জিনিস? ঘুরে দেখার জিনিস।
ঘুরো না কেন? তোমাকে না করেছে কে?
ভাবছি-একদিন বেরিয়ে পড়বো। এই প্যানপ্যানে জীবন আর ভালো লাগছে না। তুমি থাকবে আমার পাশে?
আমাকে আবার টানছো কেন? জীবন নিয়ে আমার কোন ক্ষোভ নেই।
তা জানি। অনার্স ফার্স্টক্লাশ। মাস্টার্সেও পাবে। বের হয়ে বড় চাকরি। তারপর রাজপুত্র। কি মসৃণ জীবন!
তোমার জীবন কি অমসৃন?
ফরহাদ কিছু বলল না ম্লান হাসল। কেন্টিনে জোড়ায় জোড়ায় জুুটি এসে বসছে।
মৌমিতা বলল, বিকালে তোমার টিউশনী আছে?
কেন?
শপিং করবো। বসুন্ধরা সিটিতে যেতে হবে। তোমার সময় হবে?
ফরহাদ উদাস গলায় বলল, মার্কেটে ঘুরতে আমার ভালো লাগে না।
কোথায় ঘুরতে ভালো লাগে?
নির্জন কোন দ্বীপে। আমি প্রায়ই ভাবি আমরা জাহাজে করে গভীর সমুদ্রে যাচ্ছি। পথে ঝড় উঠল। প্রচণ্ড ঝড়। সেই ঝড়ে জাহাজ ডুবে গেল। আমরা পরস্পরকে শক্ত করে ধরে আছি। বিশাল এক ঢেউ এসে আমাদেরকে একটা দ্বীপে আছড়ে ফেলল। সেই দ্বীপে কোন জনমানব নেই। শুধু তুমি আর আমি!
মৌমিতা হাসতে হাসতে ভেঙ্গে পড়ল।
নির্জন দ্বীপে আমি নাই। তুমি থাকো।
ফরহাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলল।
মৌমিতা হাসি থামিয়ে বলল, তুমি একটা অদ্ভুত ছেলে!
আমরা সবাই অদ্ভুত।
তুমি একটু বেশি অদ্ভুত।
হঠাৎ সে গম্ভীর হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর বিষণœ গলায় বলল,
বাবা-মা আমাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন।
কি ভাবতে শুরু করেছেন?
জানো না মেয়ে বড় হলে বাবা-মা কি ভাবেন?
তাদের ভাবনা তাদের ভাবতে দাও। তুমি কি ভাবছো?
মৌমিতা চোখ তুলে তাকাল। অপার্থিব শিহরণে ফরহাদের বুকটা চিনচিন করে উঠল। যার চোখে এত কথা, মুখে তার কিছু বলার দরকার নেই!
তিন
রমনার ‘অস্তাচল’। বিকেলের শেষ রশ্মিটুকু নরম ঘাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ফরহাদ মৌমিতার হাত ধরে বসে আছে। মৌমিতা জড়ানো গলায় বলল,
বিকেলের সময়টা এত ছোট কেন? বসতে না বসতে ফুরিয়ে যায়! দুপুরের মতো কেন দীর্ঘ হয় না?
ফরহাদ বলল, বিকেলের সময়টাতে এক ধরনের ‘হাহাকার’ আছে। সূর্যকে হারানোর হাহাকার। পৃথিবী এই ‘হাহাকার’ বেশিক্ষণ সহ্য করতে পারে না।
তোমাকে কে বলেছে?
কেউ বলেনি। আমার কাছে তাই মনে হয়।
মৌমিতা অনেকক্ষণ চুপ করে বসে রইল।
এক সময় আদুরে গলায় বলল,
এই শোন। আমরা বিয়ে করবো ঠিক দুপুর বারোটায়। তারপর দু’জনে বুড়িগঙ্গায় চলে যাবো। একটা নৌকা ভাড়া করবো। সারা বিকেল নদীতে ঘুরবো। পৃথিবীর ‘হাহাকার’ শুনে তাকে সান্ত্বনা দিবো। বলবো আমরাও তোমার সাথে আছি।
ফরহাদ ম্লান হাসল।
বলল, “আমার চোখেই টলমলে অশ্রু,
তোমার অশ্রু কোথায় রাখি!”
মানে?
পৃথিবীকে শান্ত্বনা দিবো কি? নিজের মধ্যেই হাহাকার।
কেন?
সূর্যের মতো তোমাকেও যদি হারিয়ে ফেলি!
মৌমিতা বলল, সূর্য কিন্তু একই পৃথিবীর কাছে বার বার ফিরে আসে।
ফরহাদ ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
হ্যাঁ, ততক্ষন আমি বেঁচে থাকলে!
মৌমিতা সোজা হয়ে বসল।
ছিঃ, সন্ধ্যে বেলায় কি সব অলুক্ষণে কথা বলো!
ফরহাদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
মৌমিতা, একটা বিষয় আমি মনে- প্রাণে বিশ্বাস করি।
কি বিষয়?
গভীর আগ্রহ নিয়ে একটি ছেলে এবং একটি মেয়ে যদি পরস্পরকে চায়, তাদের জন্য ‘স্বর্গের উদ্যানে’ একটা প্রাসাদ তৈরি হতে থাকে। চাওয়া যতো গভীর হয়, প্রাসাদ ততো পোক্ত হয়। তারপর উদ্যানের প্রতিটা গাছ, প্রতিটা পাতা, প্রতিটা পাখী চিৎকার করে ডাকতে থাকেঃ
“তোমরা তোমাদের প্রাসাদে এসে বসবাস করো।”
মৌমিতা, আমি মাঝে মাঝে ওদের চিৎকার শুনতে পাই। তুমি পাও?
চার
‘এই কতক্ষণ ধরে রিং দিচ্ছি। মোবাইল ধরছো না কেন?’
ছটফট করে মৌমিতা কথাগুলো বলল।
গোছল করছিলাম।
বাসায় একটু সমস্যা হয়েছে।
কি সমস্যা?
আজ সন্ধ্যায় আমাকে দেখতে আসবে। ছেলে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার। আমি খুব কান্নাকাটি করেছি। মা বলছেন- দেখলেই বিয়ে হয়ে যায় না। তুমিই বল, এখন আমি কি করবো?
ফরহাদ চুপ করে রইল।
কি ব্যাপার? কথা বলছো না কেন?
কি বলবো?
আশ্চর্য, তোমার কোন সাজেশন নাই?
তোমার মনকেই জিজ্ঞেস করো।
মৌমিতা ‘চুপ’ হয়ে গেল।
ফরহাদ বলল,
শোন মৌমিতা। তুমি ভয়াবহভাবে কনফিউজড্। তোমার একদিকে নিশ্চিত নিরাপত্তা, আরেক দিকে আমি। তুমি সিদ্ধান্ত নিতে পারছো না কোন পথে যাবে? তোমার সামনে দুটো পথই খোলা। তাই এত সিদ্ধান্তহীনতা। আমি কারও সাথে প্রতিযোগিতায় যাবো না। সেই যোগ্যতাও আমার নেই। আমার আছে শুধু তুমি আর কল্পনায় একটি নির্জন দ্বীপ! তুমি আমাকে হারানোর ভয় যতোটা পাও, আমি পাই শতগুণ বেশি। তুমি যদি সত্যি আমাকে ভালোবাস, একটা দুঃসাহসী কাজ করতে পারবে?
মৌমিতা বলল, কি কাজ?
এই মুহূর্তে কাজী অফিসে এসে আমাকে বিয়ে করতে পারবে? আছে সেই সাহস? তারপর আমাদের ভাগ্যে কি আছে- আল্লাহই দেখবেন।
মৌমিতা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
কাজী অফিসে কখন আসতে চাও?
ফরহাদ বলল, তুমি বল?
বিকেল পাঁচটায় আমি আসবো। তুমি রমনা পার্কে এসো। সেদিন যে বেঞ্চে বসেছিলাম, সেখানে অপেক্ষা করো।
পাঁচ
মৌমিতা তুমি সেই এলে। তবে পনের বছর পর। সাথে স্বামী ছেলে মেয়ে। অপূর্ব সাজানো এক বাগান!
ফরহাদ, ফরহাদ... ফরহাদ শুনো...।
মাহফুজ বলল, এই মৌমিতা, এই মৌমিতা, তোমার কি হয়েছে? অনেকক্ষণ ধরে দেখছি বিড় বিড় করছো। চল উঠো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১
এ এস রিপন বলেছেন: মনে অনুভতি আছে বলেই মন খারাপ হয়। ভাই পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:২৫
এডমিন আতিক বলেছেন: ভাই মৌমিতা তো আমার G.F এর নাম
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৬
এ এস রিপন বলেছেন: কাকতালীয়ভাবে নাম মিলে গেছে। তবে দোয়া করি ঘটনা যেন না মিলে! ভাই পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৩| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লেগেছে| তবে ছ্যাকা খাওয়া গল্প ভাল লাগে না, নস্টালজিক করে এমন লেখাও পড়তে ইচ্ছে করে না
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এ এস রিপন বলেছেন: আমারও ভালো লাগেনা। কিন্তু সমস্যা হল- ওটাই মনে দাগ কেটে থাকে। ভাই, পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫
অগ্নিপাখি বলেছেন: ভালো লাগলো। একই সাথে মনটাও খারাপ হয়ে গেল ফরহাদ এর জন্য।
লেখায় + এবং প্রিয়তে।
ভালো থাকবেন।