নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পদ্মাপাড়ের ছেলে। বাড়ি বিক্রমপুর। ছোট গল্প লেখার আনন্দে ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করি!

এ এস রিপন

ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........

এ এস রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের সেলামী (অনুগল্প)

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯

ঈদের দিন। সকালবেলা। কিছুক্ষন আগে সুমি গোসল করে এসেছে। মা আয়েশা বেগম যত্ন করে তার চুল মুছে দিচ্ছেন।
সুমি বলল, মা আমি ঈদগাহ যাব।
আয়েশা বেগম হড়বড় করে বললেন, শোন মেয়ের কথা! মেয়েরা ঈদগায় যায়?
গেলে কী হয়?
মেয়েদের যেতে নাই।
সুমি মুখভার করে দাড়িয়ে রইল। সে তার পাঁচ বছর জীবনে কখনো ঈদগাহ যায়নি। আয়েশা বেগম সুমিকে ঈদের নতুন জামা পড়ালেন। জামাটা একটু ছোট হয়েছে। তবে সুমির গায়ে মানিয়েছে। তিনি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। ভাগ্য ভালো সময়মতো তিনি কাপড়ের টুকরাটা পেয়েছিলেন। আলমারি এক কোনায় পড়ে ছিল। অনেকদিনের পুরনো কিন্তু ব্যবহার করা হয়নি। তিনি সেই টুকরা নিয়ে রাতদিন খেটে তিনদিনের মাথায় জামাটা বানিয়ে ফেলেন। ছোট্ট জামাটিতে মেয়েটা ঝলমল করছে। তিনি হাসিমুখে মেয়ের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন। বাহ মামুনিকে আজ পরীর মতো লাগছে!
তিনি সুমির কপালে চুমু খেলেন। সুমি মুখ ঘুরিয়ে নিল।
মুখ কালো করে আছ কেন? ঈদের জামা পড়ে কেউ মুখ কালো করে থাকে?
সুমির একটুও ভালো লাগছে না। সবাই সাদা পাজামা পাঞ্জাবী পড়ে মাঠের দিকে যাচ্ছে। তারও যেতে ইচ্ছা করছে।
বাবা বাথরুম থেকে বের হয়ে এলেন।। সুমিকে দেখে বললেন, বাহ সুমির জামাটা তো খুব সুন্দর হয়েছে!
আয়েশা বেগম বললেন, সুমি তোমার সাথে ঈদগাহ যেতে চাচ্ছে।
বাবা হেসে বললেন, তাই নাকি? নামাজ পড়বে সুমি?
সুমি লজ্জা পেল। সে জানে ঈদগায় গিয়ে মেয়েরা নামাজ পড়ে না। সে ইতস্তত করে বলল, নামাজ দেখতে যাব।
বাবা হো হো করে হেসে উঠলেন। কিছুক্ষনের মধ্যে তিনি ঈদগায় রওনা হলেন। সাথে সুমিকে নিলেন।

সুুমি ঈদগায়ের কাছে এসে অভিভুত হয়ে গেল। পাজামা পাঞ্জামী পড়ে শত শত মানুষ লাইন করে বসেছে। ইমাম সাহেব আরবীতে কী যেন পড়ছেন। সে মাঠের ভেতর ঢুকল না। গেটের কাছে দাড়িয়ে রইল। কিছুক্ষনের মধ্যে নামাজ শুরু হল। সে অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। শত শত মানুষ একসাথে উঠে দাঁড়াচ্ছে, বসে পড়ছে। সে এক দেখার মতো দৃশ্য।

নামাজ শেষে বাবা একটা রিক্সা নিলেন। সুমি বাবার পাশে বসল।
বাবা আমরা কোথায় যাব?
আমার এক বন্ধুর বাসায়। ওদের ঈদ মোবারক জানিয়ে আসি।
কিছুক্ষনের মধ্যে তারা বিশাল এক বাড়ির সামনে এলো। বাড়ির সামনে লোহার গেট। সুমি বাবার পেছনে পেছনে ঢুকল। দরজার কাছে এসে বাবা কলিংবেল টিপলেন। কেউ দরজা খুলছে না। বাবা আরও কয়েকবার টিপলেন। হঠাৎ দরজা খুলে গেল। সুমি চমকে উঠল। ঘরের ভেতর তার বয়েসী একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তার গায়ে ফকফকে সাদা জামা। মনে হচ্ছে ছোট্ট এক সাদা পরী। পরী বোধহয় একটু বিরক্ত হল। সে একটু মুখ বাঁকা করে ভেতরে চলে গেল। কিছুক্ষন পর এক লোক এসে তাদেরকে বসার ঘরে নিয়ে গেল।

বসার ঘরের প্রতিটা জিনিস কী চমৎকার! বড় একটা বৈয়ামে রঙ্গিন মাছ ছোটাছুটি করছে। শোকেসে কালো চুলওয়ালা অপূর্ব একটা পুতুল। পুতুলটির চোখ ঘন নীল। মনে হচ্ছে অবাক চোখে তাকে দেখছে। সুমিও অবাক চোখে সবকিছু দেখছে। সুমির অবাক হওয়া দেখে বাবা মিটিমিটি হাসছেন। ভাবখানা এমন, এই হচ্ছে আমার বন্ধুর বাড়ি, দেখে নাও।

অনেকক্ষন পর বাবার বড়লোক বন্ধু এলেন।
আরে সাইফুল সাহেব যে...
বাবা সাথে সাথে উঠে দাড়ালেন। ওনার সাথে হাত মেলালেন। কোলাকুলি করলেন। ভদ্রলোক বেশ নিরাসক্ত ভঙ্গিতে কোলাকুলি করলেন। তারপর সুমির দিকে তাকিয়ে বললেন, এটি কে?
আমার মেয়ে। সুমি এসো, আঙ্কেলকে সেলাম কর।
সুমি ভদ্রলোককে সেলাম করল। উঠে দাড়াতেই তিনি একশ টাকার একটা চকচকে নোট বাড়িয়ে দিলেন।
সুমি ইতস্তত করছে। সে তার এই ছোট্ট জীবনে ঈদের সেলামী দশ টাকার বেশী পায়নি। সে দূরু দুরু বুকে বাবার দিকে তাকাল।
বাবা বললেন, নাও মা, নাও। লজ্জা কিসের? আঙ্কেল যখন আদর করে দিচ্ছেন।
সুমি হাত বাড়িয়ে টাকাটা নিল।

সবাই সোফায় বসেছে। তাদের সামনে ফিননি-সেমাই দেয়া হয়েছে। সুমি ফিননি মুখে দিয়ে হতবাক। এত মিষ্টি! আসার সময় মা তাকে চামিচে করে ফিননি খাইয়ে দিয়েছিলেন। ভাতের চাল-গুড় দিয়ে তৈরী সেই ফিননি এত স্বাদ লাগেনি।
ভদ্রলোক বাবার সাথে খুব একটা কথা বলছেন না। মোবাইলে কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। একসময় তিনি উঠে দাড়ালেন।
সাইফুল তুমি তাহলে থাক। দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে যেও। আমাকে একটু বেরোতে হবে।
ভদ্রলোক চলে গেলেন। বাবা কিছুক্ষন ইতস্তত করে উঠে দাঁড়ালেন। হঠাৎ সাদা পরী তার দলবলসহ বসার ঘরে ঢুকল। হাসতে হাসতে তার সামনে দিয়ে বাইরে চলে গেল। সুমি ওর ঝলমলে জামাটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।

বাড়ি থেকে বের হয়ে সে বাবার সাথে অনেকক্ষন চুপচাপ হাঁটল। বাবা একসময় বললেন, মা তোমার ঐ সেলামীর টাকাটা এখন দাও। কিছুদিন পর তোমাকে দু’শ টাকা দিয়ে দিব।
সুমি একটু ইতস্তত করে লাভের আশায় টাকাটা দিয়ে দিল। বাবা সেই টাকা নিয়ে একটা মুদি দোকানে ঢুকলেন। সেমাই, চিনি, দুধ কিনলেন। তারপর দু’জনে বাসায় রওনা হল।

এরপর দেখতে দেখতে বিশ বছর কেটে গেছে। সুুুমির জীবনে এখনো ঈদ আসে। তবে আগের মতো নয়। অনেক জাঁকজমক, অনেক অনেক আনন্দ আর খুশী নিয়ে। প্রতিবার ঈদের আগে সে সিঙ্গাপুর যায় শপিং করতে। নিজের জন্য, তার বরের জন্য, তার পাঁচ বছরের মেয়ে টুনীর জন্য ট্টলি ভর্তি করে জামা-কাপড় কিনে। শপিং করতে করতে সে কখনো কখনো ক্লান্ত হয়ে বারে বসে। কফি খায়। কোল্ড ড্রিংকস খায়। তখন হঠাৎ হঠাৎ মাথায় ঝিলিক দিয়ে উঠে তার অসহায় বাবার চেহারা। তার চোখ ভিজে উঠে। তার সেই অসহায় বাবা আর নেই! হারিয়ে গেছেন চিরতরে!!



















মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৬

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: ভাল লাগেনি| ম্যাড়ম্যাড়া গল্প| ইদানিং খুব বেশি লিখছেন| পরিমানের দিকে না তাকিয়ে মানের দিক লক্ষ্য দিন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.