নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি পদ্মাপাড়ের ছেলে। বাড়ি বিক্রমপুর। ছোট গল্প লেখার আনন্দে ছোট গল্প লেখার চেষ্টা করি!

এ এস রিপন

ছোটগল্প লেখার আনন্দে ছোটগল্প লিখে যাওয়া........

এ এস রিপন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কর্জ (অনুগল্প)

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৪৫



মিসেস শারমিন পাশের ফ্লাটের কলিংবেল টিপলেন। ভিতর থেকে উঁচু গলা শোনা গেল।
কে?
ভাবি আমি। দরজাটা একটু খুলুন।
মিসেস আনোয়ারা দরজা খুললেন।
কি ব্যাপার আপা?
মিসেস শারমিন বললেন, কোনো ব্যাপার না। হাতে কোন কাজ-টাজ নাই। একা একা বোর লাগছে। ভাবলাম-যাই, ভাবির সাথে একটু গল্প-টল্প করে আসি।
ও আচ্ছা। ভিতরে আসুন।
মিসেস শারমিন ড্রইংরুমে ঢুকলেন। পরিপাটি করে সাজানো ড্রইংরুম। আনোয়ারা বেগম সোফায় বসতে বসতে বললেন, বসুন আপা। আপনি এসে বাঁচালেন। আমিও বোর ফিল করছিলাম। বাসায় একটা মানুষ নাই, মন খুলে দুটো কথা বলবো।
মিসেস শারমিন বলল, কেন, ইভা কোথায়?
ওর কথা আর বলেন না। ওকে নিয়ে একটু সমস্যায় আছি।
কি সমস্যা?
মিসেস আনোয়ারা একটু গলা নীচু করে বললেন, কাউকে বলেন না আবার। ওর জন্য আমেরিকার এক সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে কম্পিউটার সায়েন্সে মাস্টার্স। মা-বাবা সিয়াটলে স্যাটেল। মাঝে মাঝে দেশে বেড়াতে আসেন। ইভাকে দেখে ওদের মনে ধরেছে। কিন্তু ইভার এক কথা। মাস্টার্সের আগে সে বিয়ে করবে না। এখন বলেন, এমন ছেলে হাতছাড়া করা কী ঠিক? ওকে কে বোঝাবে? আরে বাবা পড়তে চাইলে বিয়ের পর পড়া যাবে না। বিয়ে কি পড়া ধরে রাখবে? আপা আপনিই বলুন?
মিসেস শারমিন নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন, আমি আর কি বলবো? আমি নিজেই প্রিতমকে নিয়ে সমস্যায় আছি।
প্রিতমের আবার কি হল?
ও তিন তিনটা ডিগ্রী নিয়ে বসে আছে। আপাতত মোবাইল কোম্পানীতে ছোটখাটো একটা চাকরি করছে। তাতেই পায় নব্বই হাজার। এখন বলুন ওর মতো কোয়ালিটির মেয়ে কোথায় পাই।
মিসেস আনোয়ারা মুখে চিন্তিতভাব এনে বললেন, ঠিকই বলেছেন। ওভার কোয়ালিফাই একটা সমস্যা। কোয়ালিফাই মেয়েই খুঁজে পাওয়া যায় না। চারপাশে শুধু আন্ডার কোয়ালিফাই মেয়ের ছড়াছড়ি। আমার ছোট ছেলেটাকে নিয়েও চিন্তিত। নর্থ-সাউথে ভর্তি হয়ে মাথায় ঢুকছে কোয়ালিটি আর কোয়ালিটি। সারাক্ষন বাসায় ইংরেজীতে কথা বলছে। ইভা কিছটা বুঝতে পারে। আমি মাথামুন্ড কিছুই বুঝি না। আচ্ছা আপা আপনিই বলুন, আমাদের মতো পুরনোরা ইংরেজী কি বুঝবে?
শারমিন আক্তার অবাক হবার ভঙ্গি করলেন।
বলেন কি? বেশ বেয়াদপ হয়েছে তো! সময় করে একদিন আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েন। কষে এক চড় লাগাব। দেখবেন, গড় গড় করে শুধু বাংলা বলছে। হঠাৎ এত ইংরেজী বলছে কেন?
পাশ করেই নাকি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ঢুকবে। দেশ বিদেশে ঘুরবে। তাই আগে ভাগে প্রাকটিস করছে।
ও আচ্ছা। এদিক থেকে আমার ছোট ছেলেটা বেশ ভালো। পড়া শেষে দেশেই চাকরি করবে। ওর কথা হল-দেশের মানুষের টাকায় পড়ে যদি দেশের মানুষেরই সেবা করতে না পারে, তবে সেই শিক্ষার মূল্য কি?
আনোয়ারা বেগম চোখে-মুখে উৎফুল্ল ভাব নিয়ে এলেন। বললেন, বাহ আপনার ছোট ছেলের ধ্যানধারনা তো খুবই চমৎকার! একদম আমার বড় ছেলের স্বভাব পেয়েছে। বিদেশের নাম ও শুনতেই পারে না। এমনকি ঢাকা শহরও ওর পছন্দ না। ও কি বলেন জানেন? ঢাকা শহরে বাস করা মানে একটা গ্যাস চেম্বারে বাস করা। তার মতো শিক্ষিত ছেলেরা যদি গ্রামে গিয়ে বাস করে, তবে গ্রাম বাংলার চেহারাই পাল্টে যাবে। এসব চিন্তা করে হুট করে আমার জন্য মানিকগঞ্জে পঞ্চাশ বিঘা জমি কিনে ফেলল। কত বকলাম! এখন আপনিই বলেন, গ্রামের জমি দিয়ে আমি কি করবো? হালচাষ করবো?
শারমিন আক্তার শব্দ করে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন।
ভাবি জমির কথা কী বলবো! জমি কেনা নিয়ে আমার ফ্যামিলিতে একটা হুলস্থুল কান্ড হয়েছে। আমার মেজ ছেলেটা যে কী! বলা নেই, কওয়া নেই সে হঠাৎ আমার নামে পূর্বাচল সিটিতে একটা প্লট বুকিং দিয়েছে। এত বলি, তোদের বাবা আমাকে যা দিয়েছে তাই খায় কে? এবার তুই তোর ভবিষ্যতের জন্য কিছু কর।
আনোযারা বেগম বললেন, এমন সমস্যায় আমাকেও পড়তে হয়। সেদিন হলো কি, আপনার ভাই আমার জন্য কানাডায়...
শারমিন আক্তার ব্যস্ত ভঙ্গিতে উঠে দাড়ালেন।
ভাবি আজ তাহলে যাই।
আনোয়ারা বেগম বিস্মিত কন্ঠে বললেন, সে কী! এখনই যাবেন? কানাডার ঘটনাটা...
না ভাবি, অন্যদিন শুনবো। আপনার ভাইয়ের আসার সময় হল। ও হ্যা, যে জন্য এসেছিলাম, ভাবি আপনার কাছে পাঁচশ টাকা হবে?
কি বললেন আপা?
ইয়ে...মানে... পাঁচশ টাকা যদি ধার দিতেন। হাত একদম খালি।
না আপা, জানেনই তো আপনার ভাই গত দু’মাস বেতন পাচ্ছে না। হাতে টাকার খুব টানাটানি!


মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৩

আহমাদ সালেহ বলেছেন: হা হা হা..... লাস্টে ধার শুনে বেশ হাঁসি পেল।

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:১০

ইমরাজ কবির মুন বলেছেন:
:P

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.