নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাতাল হাওয়া - হুমায়ূন আহমেদঃ পাঠ প্রতিক্রিয়া

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:৩৯

দীর্ঘদিন ধরে একটানা একটা বই পড়ে শেষ করা হয় না। সেই রীতি ভেঙ্গে অবশেষে আজ একদিন টানা পড়ে হুমায়ূন আহমেদের লেখা মাতাল হাওয়া উপন্যাসটি শেষ করলাম। শেষ লাইনটি পড়বার শেষ করার পর মোহিত অবস্থায় বইয়ের ফ্ল্যাপে টাঙ্গানো হুমায়ূন আহমেদের ছবির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সাধারণ গোলগাল চেহারার এই লেখকের কি অদ্ভুত এক জাদুকরী ক্ষমতা - মানুষকে হুট করে নিজের গল্পের মায়াজালে আটকে ফেলার! বয়স এখন ২৭। নিজেকে মোটামুটি পরিণত পাঠক মনে করি। অথচ এখনও হুমায়ূনের জাদু চলল আমার ওপর প্রায় সেই টিনএজ বয়সের মতই। মাত্র গতকাল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরী থেকে ধার করা বইটি শুরু করবার পর আর নামিয়ে রাখতে পারি নি। ঘুমানোর আগে বিছানায় শুয়ে শুয়ে পড়লাম, পড়লাম যাতায়াতের পথে - খোলা আকাশের নীচে রিকশায় বসে, রাতে বাড়ি ফিরবার পথে বাসের আলোয়, ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে, আবার অফিস থেকে ফিরে রাতে - কখন নয়? টানা পড়ে ২৩৫ পৃষ্ঠার বইটি শেষ করার পর চিন্তা ভাবনা খানিকটা গুছিয়ে লিখতে বসা।
.
সংক্ষেপে মাতাল হাওয়া নিয়ে আমার বক্তব্য সারি। ২৩৫ পৃষ্ঠার এই উপন্যাস অন্যপ্রকাশের প্রেসজাত। ২০১০ সালে প্রকাশিত এই উপন্যাস হুমায়ূন আহমেদের জীবনের একদম পরিণত বয়সের লেখনীর পরিচায়ক। সময়কাল হিসেবে বেছে নেয়া হয়েছে ৬৯ এর বাংলাদেশ। পটভূমি ময়মনসিং ও ঢাকা। ঘটনা পরম্পরা উপন্যাসে তিনটি। মূল স্রোতে আছে দুঁদে আইনজীবী হাবীব খানের মেয়ে নাদিয়া, নাদিয়ার ভালোবাসার মানুষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক বিদ্যুৎ কান্তি, ময়মনসিংহের ভাটি অঞ্চলের জমিদারপুত্র এবং খুনের মামলার আসামী, নাদিয়ার হবু বর - হাসান রাজা চৌধুরী। শাখা স্রোতে আছে ৬৯ সালের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও লেখকের নিজের আত্মজৈবনিক ঘটনাবলি।
.
উপন্যাসের মূল ক্রাইসিস হল - বিশাল জায়গাজমি ও সহায়সম্পত্তির মালিক একজন ব্যাক্তি একটা খুন করেছে। যে আইনজীবীর কাছে সে সহায়তা করতে এসেছে - বিচক্ষন ব্যাক্তির মত সেই আইনজীবী বুঝে ফেলে যে এই মক্কেলকে তার শুধু বাঁচালে হবে না, অসাধারণ রুপবান এই ছেলেটার সাথে তার মেয়ের বিয়েও দিতে হবে। এদিকে মেয়ের আবার নিজের পছন্দের পাত্র আছে, যে তার ভার্সিটির শিক্ষক। কি হবে? খুনের দায়ে অভিযুক্ত এই অপার্থিব রূপবান তরুণ কি বেঁচে যাবে? তারসাথেই কি বিয়ে হবে উকিল কন্যার? নাকি দুঁদে আইনজীবী এই মামলা হেরে যাবে, এবং তার কন্যার সাথে বিয়ে হবে কন্যার পছন্দের হিন্দু পাত্রের যে কিনা আবার তার ভার্সিটিরই শিক্ষক?
.
উত্তরগুলি খুঁজে বের করতে উপন্যাসটা পড়াই শ্রেয়।
.
তবে দুটো কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতে চাই। হুমায়ূন আহমেদের শ্রেষ্ঠত্ব তার চরিত্র নির্মাণে এবং গল্প বলার ঢঙে। এই উপন্যাসেও আমরা হুমায়ুনীয় চরিত্রগুলিকে দেখতে পাই, খুঁজে পাই আধিভৌতিক ক্ষমতার অধিকারী মুখরা এক বয়োবৃদ্ধ নারীকে, খুঁজে পাই এমন একজন পিতার চরিত্র যাকে ভালোমন্দের মাপকাঠীতে ফেলা যায় না, খুঁজে পাই হিমু প্রকৃতির একজন নায়ককে, রূপার মত আরেকটি নায়িকা, চলতে থাকে ক্রমাগত শিল্লুক ভাঙ্গানি বা ধাঁধাঁ, ময়মনসিং অঞ্চলের লোকজ গানের উল্লেখ, হুমায়ূন আহমেদের ছকে বাঁধা সংলাপের মায়াজাল, বাসতব অবাস্তব পৃথিবীর বিশ্বাসযোগ্য সহাবস্থান, ঘটনার একদম সাজানো পরিপাটি ঘনঘটা। দমফাটানো সেন্স অফ হিউমার।
.
দ্বিতীয়ত - ইতিহাসের সাথে গল্প মেশানো নিয়ে হুমায়ূন আহমেদের দুর্বলতা নিয়ে আগে বহুবার লিখেছি। এটা নতুন করে উল্লেখ করার কিছু নেই। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের ঘটনাবলীর সাথে উপন্যাসের মূল চরিত্রগুলিকে মিশিয়ে দিতে পারলে ভালোই করতেন। সে কাজ একদমই করেন নি তিনি। এছাড়াও বইটার দুর্বলতা হয়তো এটাই যে - হুমায়ূন আহমেদের রেগুলার পাঠক আঁচ করে ফেলতে পারবেন কি ঘটতে যাচ্ছে পরবর্তীতে।
.
তবুও, সবমিলিয়ে দারুণ সুখপাঠ্য একটি বই।
.
হুমায়ূন আহমেদকে তীব্র সমালোচনার তীরে বিগত দু' তিন বছর ধরে ক্রমাগত বিদ্ধ করে এসেছি। তারপর, যৌবনের প্রথম ধাক্কা সামলে নেয়ার পর একটু স্থির হলাম, বন্ধ করলাম মানুষের ব্যাপারে হুটহাট শেষ মন্তব্যটি জুড়ে দেয়া। হুমায়ূন আহমেদ পড়ার অন্য এক চোখ আমার তৈরি হল, যা আগে ছিল না।
.
পৃথিবীতে বিভিন্ন রকম মানুষের মত করেই একেকজন লেখক একেকরকম হন। কেউ লেখনীতে পাঠকের বুদ্ধিবৃত্তির জায়গায় আঘাত হানতে চান, কেউ লেখালিখির নামে করেন ভাঁড়ামো, কেউ কাব্যিক, কেউ কথায় কথায় যৌন সুড়সুড়ি, কেউ হন বিশুদ্ধ গল্পকথক - যার জ্ঞান বিলানোর কোন ইচ্ছা নেই। যার আগ্রহের মূলে রয়েছে মানুষকে কেবলই গল্প বলে যাওয়া। হুমায়ূন আহমেদ খুব খুশীমনে সামিল হয়েছিলেন শেষোক্ত দলের লেখকদের মাঝে। পাঠক হিসেবে আমাদের কোন অধিকার নেই আমাদের নিজেদের চাহিদা তার কাঁধে চাপিয়ে দেয়ার - যে আপনি এভাবে এভাবে লেখেন না কেন...
.
পরিশিষ্টঃ হাওড়বাওর, হাসনরাজার দেশের এক মেয়ে ছিল। অ্যাডগার অ্যালান পো'র কবিতা অ্যানাবেল লি পড়ার পর এককথায় যে বিবিএ পড়া ছেড়ে দিয়ে ঢাকা ভার্সিটিতে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয় ২০১১ সালে। সনটি বই 'মাতাল হাওয়া'র কনটেক্সটে গুরুত্বপূর্ণ। মাতাল হাওয়া বইটি প্রকাশের একবছরের মাথায় সে ঢাবির ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হয়। সহপাঠী হিসেবে আমার সাথে তার পরিচয় হয়। তার সাথে আমার প্রথম পরিচয়ের সময়গুলি এখনও আমার চোখে ভাসে। এক ঝড়ের রাতে আমার প্রথম তার সাথে ফোনে কথা। সে রাতে শেভ করতে গিয়ে আমি আমার গালে বেশ বড়সড় ক্ষত করে ফেলেছিলাম। তারপর, দীর্ঘ একসপ্তাহ তার মুখ থেকে আমার নিরবচ্ছিন্নভাবে শুনতে হয় যে গাল কাটলে কাউকে এত সুন্দর লাগতে পারে, তার জানা ছিল না। প্রেমে পড়লে মানুষ অন্ধ হয় শুনেছিলাম। এই প্রথম কাছ থেকে চোখে দেখলাম। একদম নিরুদ্দেশের মত লক্ষ্যবিহীনভাবে আমরা প্রথম হেঁটে বেড়াই যে জায়গাটায়, আমি এখন সেখানের শিক্ষক। ঢাকা ভার্সিটির চারুকলা।
.
তার কাছ থেকেই আমি মাতাল হাওয়ার গল্প শুনি। সে আমাকে বইটা পড়তে দেবে বলেছিল। অন্য অনেক বই আমি তার কাছ থেকে নিয়ে পড়লেও মাতাল হাওয়া বইটা আর তার কাছ থেকে আর নেয়া হয়ে ওঠে নি। চারবছর পর এক মাতাল হাওয়া আমাদের বিচ্ছিন্ন করে দেয়। কাল সন্ধ্যায় - বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র লাইব্রেরীর বেশ কয়েকটি বইয়ের মধ্যে কনফিউশন তৈরি হলে যে কারণে মাতাল হাওয়াকে বেছে নেয়া - তা সেই অসম্ভব সুন্দরী এবং ভালো মনের মানুষটি।
.
আমাদের জীবন ক্রমাগত সমস্ত ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করে নিঃসঙ্গ হয়ে ওঠার এক নিষ্ঠুর চলমান প্রক্রিয়া। হুমায়ুন আহমেদের মাতাল হাওয়াতেও তারই ছাপ। বাঁচে নি শেষ পর্যন্ত কেউই। গল্পের নায়িকা নাদিয়া না, দুই নায়ক - পদার্থবিজ্ঞানের চাকুরিচ্যুত তরুণ প্রভাষক বিদ্যুৎ বা ময়মনসিংহের ভাটিঅঞ্চলের জমিদার সন্তান হাসান, সবাই মৃত্যুর ঠোঁটে চুমু খায়। কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ অজান্তে। এখানেই হয়তো উপন্যাসের চরিত্রগুলির সাথে আমরা নিজেদের একাত্ম করতে পারি।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ২:৩৮

স্বপ্ন সতীর্থ বলেছেন: আপনার বলার ঢঙটাও পছন্দ হয়েছে।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১০:০৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:১৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো রিভিউ।

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৪

Ashfi Tuhin বলেছেন: অনেক ভাল লাগল পড়ে। ধন্যবাদ ভাইয়া।।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:২৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ তুহিন!

৪| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:০৪

বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: রিভিউ বা মাতাল হাওয়া নিয়ে কিছু বলার নেই। বলতে চাই পরিশিষ্ট নিয়ে। ঘটনা বিস্তারিত জানতে চায় বোকাসোকা মানুষেরা। কিচ্ছু বুঝি নাই, একদম হাচা কথা। ডিটেইল প্লিজ ;) +++

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ডিটেইলসে বলার তেমন কিছু নাই আসলে। আমার অনেকগুলি হারানো প্রেমের মধ্যে একটা এইটা। আর সেই সময়ের ঘটনাগুলি খুব স্পষ্ট ভাবে উঠে আসছে আমার , ধরেন সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে নিয়ে এপ্রিল ২০১৫ পর্যন্ত এই ব্লগে করা পোস্টগুলিতে - গদ্যে বা কবিতায় খণ্ড খণ্ড ভাবে উঠে এসেছে সেই সময়ের কথাগুলি। ইচ্ছে থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। :)

৫| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:৫৩

আমি তুমি আমরা বলেছেন: মাতাল হাওয়ায় 'ভাদু' চরিত্রটির আগমনের পর থেকেই কেমন যেন অস্বস্তি কাজ করছিল। সেটারই চূড়ান্তরূপ দেখা যায় শেষে নাদিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে।

বছর চারেক আগে পড়েছিলাম। বেশ ভাল লেগেছিল।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৭ সকাল ১১:৩২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.