নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সলিমুল্লাহ খানের সাথে একটি বিকেল এবং কিছু প্রাসঙ্গিক ভাবনা

২৩ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:০৫

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশের প্রখ্যাত বক্তা ও বুদ্ধিজীবী সলিমুল্লাহ খানের সাথে আমার আধাঘণ্টার একটি সৌজন্যসাক্ষাতের সুযোগ হয়। সে ছিল বড় মজাদার সাক্ষাতকার। ভাবলাম, সেই অভিজ্ঞতাটুকু আজকের জার্নালে শেয়ার করা যাক।

আগে কিভাবে এই সাক্ষাৎলাভের উপক্রম হল , তা বলি।

প্রথম ঘটনা ২০১৪ সালের। এক শুক্রবার সকালে শাহবাগের পাঠক সমাবেশে ওনার সাথে আমার প্রথম সরাসরি সাক্ষাৎ। তখন ওনার সাথে কথোপকথনের একফাকে ওনাকে জানাই যে আমার একটি প্রকাশিত বই আছে, শেষ বসন্তের গল্প নামে। উনি আমাকে জানান, জহির রায়হানেরও একটি বই আছে শেষ বিকেলের মেয়ে নামে। আমি আমতা আমতা করি পরবর্তী বাক্যের জন্যে, আরও পরিষ্কার হওয়ার জন্যে যে জহির রায়হানের কথা উল্লেখ করে উনি কি বোঝাতে চাইলেন। মাধ্যমিক পর্যায়ে রায়হানের হাজার বছর ধরে পড়া ছাড়া ওনার আর কোন সাহিত্যকর্মের সাথে আমার পরিচয় ছিল না। যাই হোক, সলিমুল্লাহ সাহেব ওনার একটা ভিজিটিং কার্ড তিনি আমাকে দিয়ে বলেন, আমার বইটি এক কপি যেন ওনাকে দিই। উনি পড়ে দেখবেন।

দ্বিতীয় ঘটনা ২০১৬ সালের। সলিমুল্লাহ সাহেবের একটা ভালো অভ্যাস হল, তার মোবাইলে টেক্সট পাঠালে তিনি রিপ্লে করেন। তা অপরিচিত কারো হলেও। ২০১৬ সালে একটা টক শোতে - এক সুবিধাবাদী বুদ্ধিজীবী, যিনি আমার সরাসরি শিক্ষকও ছিলেন , তাকে সলিমুল্লাহ সাহেব একদম ধুয়ে দেন। আমি সে রাতেই সলিমুল্লাহ সাহেবকে টেক্সট করে তার সাহসী বক্তব্যের জন্যে ধন্যবাদজ্ঞাপন করলে উনি রিপ্লে দেন ইংরেজিতে, বাংলায় যার তর্জমা করলে অর্থ দাঁড়ায় - "এত সিরিয়াসলি নিয়েন না ব্যাপারটা, খানিকটা উইটের সাথে গ্রহণ করেন।" মানুষকে সামনা সামনি, হাসিমুখে বাঁশ দিতে পারাটা একটা বিরল সক্ষমতা, বিশেষত উইটের সাথে, পার্সোনালি না নিয়ে। সলিমুল্লাহ সাহেবের সেই সক্ষমতার সাথে আমার সাক্ষাৎ পরিচয় ঘটে আরও খানিকটা বিলম্বে।

গেল বছর, ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমি নানা কারণে প্রফেশনাল লাইফে বেশ টালমাটাল অবস্থায় ছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা এমন সকল রঙে রূপে আমার সামনে উপস্থিত হচ্ছিল - যার ব্যাপারে আমি আগে ওয়াকেফহাল থাকলে হয়তো কখনোই শিক্ষকতায় আসতাম না। যাক, তো, ২০১৯ এর ফেব্রুয়ারি মাসে আমি আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্যে গুরুস্থানীয় ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ শুরু করি। কারণ, আপনি যত বড় হবেন, দেখবেন পরামর্শ নেয়ার মত লোক তত কমতে থাকবে। আশেপাশে কেবল আপনাকে প্রতিযোগী ভাবা স্বার্থপর, হিংসুটে মানুষের গিজগিজানো বাড়বে। সেই সূত্র ধরেই আমি পুনরায় সলিমুল্লাহ সাহেবকে টেক্সট করি, তার সাথে একবেলা দেখা করবার সুযোগ চেয়ে। এবার আর সত্বর জবাব আসে না। জবাব আসে ছয়দিন পর। ফেব্রুয়ারির বইমেলায় হাঁটছি, এমন সময় একটা ম্যাসেজ এলো। দেখি, সলিমুল্লাহ সাহেব ঐ ম্যাসেজে আমাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন যে, ২০১৯ এর বইমেলায় তার একটি বই এসেছে "প্রার্থনা" নামে। এবং একটি নির্দিষ্ট দিন আমাকে ধার্য করে দেন, তার কর্মস্থলে এসে তার সাথে চা পান করে যাবার।

আমার মূল গল্পের শুরু এখান থেকে।

২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল বেলা আমাকে দেখা যায় ধানমণ্ডির একটি প্রখ্যাত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসিপশনে কিঞ্চিত শঙ্কিত অবস্থায় বসে থাকতে। আমার ব্যাগে সলিমুল্লাহ সাহেবের প্রকাশিত নতুন বই 'প্রার্থনা'। সাথে আমার নিজের প্রকাশিত ছ'টি বই। পাঁচ বছর আগে একটি বই ছিল, সেটা নেড়ে চেড়ে দেখতে চেয়েছিলেন। কালে কালে আরও পাঁচটি বই যোগ হয়েছিল আমার ঝুলিতে, তার সবগুলিই এককপি করে নিয়ে এসেছিলাম ওনাকে উপহার দেবার জন্যে।

সাড়ে চারটা বাজলে রিসিপশনে গিয়ে বলি যে সলিমুল্লাহ স্যারকে একটি ফোন দিয়ে আমার আগমনের কথা জানাতে। পারমিশন পাওয়ার পর লিফটে উঠে গিয়ে দেখি, সলিমুল্লাহ সাহেব নিজেই তার রুম ছেড়ে বাইরে এসে অপেক্ষা করছেন আমাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে। আমি ওনার আতিথিয়তায় মুগ্ধ হই। তবে এও বুঝি, আমার চেহারা আমাকে মার দিয়ে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সাথে আজ চার বছর ধরে জড়িত থাকলেও, আমাকে এখনো দেখে ছাত্রই মনে হয়। এর অসুবিধা এই যে - মানুষ আমাকে সিরিয়াসলি নিতে চায় না। আমার পুরনো আশঙ্কাই ফিরে এলো, সলিমুল্লাহ সাহেবের সাথে আমার সাক্ষাৎকার পর্ব হয়তো ধারণার চেয়েও সংক্ষিপ্ত হতে যাচ্ছে। তাহলে আমার আড়াইশো টাকা সিএনজি ভাড়াটা বাজে খরচের কাতারেই পড়তে চলেছে। এছাড়াও, তার প্রার্থনা বইটা কষে পড়ে এসেছিলাম, তার ওপর খানিকক্ষণ আলোচনা করতে। সে সুযোগও বোধয় হবে না।

ওনার রুমে গিয়ে বসার পর প্রথমেই ওনার বইটা আগিয়ে দিয়ে একটা অটোগ্রাফ চাইলাম। সলিমুল্লাহ সাহেব খুব আন্তরিকতার সাথেই অটোগ্রাফ দিলেন। পরে একে একে আমার ছয়টি বই বের করে তাকে এগিয়ে দেয়া মাত্র চেহারা দেখে মনে হল উনি খানিকটা বিরক্ত। তিনি সবার ওপরের বইটি তুলে ধরে আমার নাম দেখে প্রথম কথাটি যেটা বললেন তা হল - "আপনার নাম সাজিদ উল হক কেন?" আমি উত্তর দিলাম, এটাই আমার পিতৃপ্রদত্ত নাম। তিনি আমাকে বুঝালেন, আরবি না জানার কারণে আমার বাবা এই ধরনের "মানুষ ও বানরের মাঝামাঝি" একটা নাম রেখেছেন। কারণ, প্রকৃত আরবি অনুযায়ী নামটা হবার কথা সাজিদুল হক, অথবা সাজেদ আল হক। আমার নাম এ দুটির মাঝামাঝি।

কেন প্রথমবারেই আমার নামের বানান ধরে আমাকে নাস্তানাবুদ করার প্রয়োজন মনে করলেন সলিমুল্লাহ সাহেব, এটা নিয়ে পরে আমি অনেক ভেবেছি। সলিমুল্লাহ সাহেবের ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে ওনার চরিত্রের ব্যাপারে জেনে, এবং আমার সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা থেকে যে ব্যাখ্যা আমার মাথায় এসেছে, তা হল ওনার মত একজন গুরুস্থানীয় মানুষকে আমার মত অর্বাচীনের নিজের একসঙ্গে ছয়খানা বই উপহার দেয়ার ধৃষ্টতা প্রদর্শন ওনাকে কষ্ট দিয়েছিল। হয়তো তিনি ব্যাপারটাকে ব্যক্তিগত অবমাননা হিসেবেই নিয়েছিলেন।

সলিমুল্লাহ সাহেবের যে বইগুলি বাজারে আছে, তা বেশীরভাগই তার সম্পাদনায়, বা অনুবাদ কাজ। এছাড়াও, আমার শিক্ষকস্থানীয় অনেকের সঙ্গে পূর্ব আলাপচারিতার দরুন আমার জানা ছিল যে, অরিজিন্যাল/ সৃষ্টিশীল কাজ যারা করে, অর্থাৎ ফিকশান রাইটার শ্রেণীর প্রতি তাদের অনেকেরই একটা চাপা ক্ষোভ কাজ করে। সৃজনশীলতা ঈশ্বরের উপহার। সবাই তা পায় না।

যাক, জিজ্ঞেস করলেন আমি পড়াশোনা কোথায় করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের নাম শুনে তিনি বেশ কিছুক্ষণ বিষোদগার করলেন এই বিভাগের শিক্ষকদের প্রতি - যে তারা কিভাবে কলোনিয়াল প্রোপ্যাগান্ডা এখনো তলায় তলায় ছড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। এখন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি - এটা জিজ্ঞেস করলে আমি আমার কর্মস্থলের নাম বললাম। জানতাম যে দীর্ঘ প্রবাসজীবন শেষ করে আসার পর তিনি আমার কর্মস্থলেই প্রথম অধ্যাপনা শুরু করেছিলেন। কিন্তু মালিকপক্ষের সাথে বনিবনা না হওয়ায় তিনি এখানে বেশীদিন চাকুরী করতে পারেন নি। দীর্ঘদিন তিনি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করার পর তার বর্তমান কর্মস্থল ইউল্যাবে যোগদান করেন। যাক, কোন এক কারণে তিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকপক্ষকেও তুমুল তুলাধুনা করলেন কিছুক্ষণ। আমি সুযোগ খুঁজছিলাম এই অস্বস্তিকর বিষয়সমূহ থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়।

ভাবলাম, যা কিছুই বলছি, যেহেতু তিনি বিরক্তই হচ্ছেন, নিজেকে খানিকটা ভালনারেবল রূপে তার সামনে উপস্থাপন করা যাক। বললাম - স্যার, যদিও আমার পড়াশোনা ইংরেজিতে, তবুও আমার ইংরেজি উচ্চারণ নিয়ে আমি খানিকটা দ্বিধায় থাকি, সেটা নেটিভ এক্সেন্টের মত হয় না বলে। এইবার সলিমুল্লাহ সাহেবকে খানিকটা উৎসাহিত মনে হল। তিনি আমাকে বুঝালেন যে নেটিভদের সংস্পর্শে না থাকলে উচ্চারণ কখনো নেটিভদের মত হয় না। তিনি দশ বছরকাল সময় অ্যামেরিকায় ছিলেন। অ্যামেরিকার টিভি শো গুলি দেখে দেখে তিনি উচ্চারণ শুধরেছেন।

আলোচনার এই পর্যায় থেকে বাকিটুকু সময় তিনি আমার সাথে স্রেফ ইংরেজিতেই কথা বলেন। কেন, এইটা নিয়ে পাঠকের চিন্তার একটা স্পেস ছেড়ে দিচ্ছি।

তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেন - এই যে মাতৃভাষা নিয়ে আমাদের এত হই হল্লা, এত আবেগ, তবুও কেন মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষা দানের ব্যাপারে আমাদের পলিসি মেকিং লেভেলে এত অনীহা? কেন ক্লাসরুম গুলিতে শিক্ষকদের বাধ্যতামূলকভাবে ইংরেজিতেই কথা বলা লাগে? কেন বেশীরভাগ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ইংরেজিতে? কেন দোকানপাট, ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ইংরেজিকরন করা হচ্ছে? একটু উত্তেজিত হয়ে তিনি বলে বসলেন - যারা বাংলা ইংরেজি মিলিয়ে নাম রাখে, তারা শুয়োরের বাচ্চা। ছফা সাহেবের চ্যালাদের রেগে গেলে মুখ ঠিক থাকে না, এটা তাত্ত্বিক বা ঐতিহাসিকভাবে গ্রহণ করাই যায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ঢাকা শহরে আমার স্থায়ী নিবাস আমার মায়ের নামে - রোকেয়া ভিলা। কাজেই সলিমুল্লাহ সাহেবের দোষ যদিও নাই, কিন্তু তবুও গালিটা আমার গায়ের ওপরই যেন ল্যান্ড করলো। আমি প্রসঙ্গান্তরে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।

লেখার প্রসঙ্গ আসতে সলিমুল্লাহ সাহেব কথায় কথায় উল্লেখ করলেন আশির দশকের ঢাবির ছাত্রসমাজের তৎপরতার কথা। তার ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি একটি লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদনার সাথে জড়িত ছিলেন, যেখানে খুব সিরিয়াসধরনের তাত্ত্বিক সামাজিক আলোচনাগুলি হত। সলিমুল্লাহ সাহেব বেশ গর্ব করে বললেন - নাম ছিল সে পত্রিকার "প্রাক্সিস জার্নাল"।

এবার আমার ছাই দিয়ে মাছ ধরার পালা। আমি শিক্ষকস্থানীয় কারো সাথে কখনোই সামনে বা পেছনে অভব্য আচরণ করতে পারি না। কিন্তু মায়ের নামে বাড়ি, আর সলিমুল্লাহ সাহেবের গালির তোড়ে সেদিন মুখ দিয়ে প্রায় বের হয়েই যাচ্ছিল যে - আপনার ছাত্রজীবনে লিটল ম্যাগের নাম প্রাক্সিস জার্নাল রাখার ফলে আপনার কী নিজেকে বর্তমানে একজন শুয়োরের বাচ্চা মনে হয়? কিন্তু আদতে বললাম - স্যার, আপনার ছাত্রজীবনে প্রকাশিত লিটল ম্যাগের নাম মাতৃভাষায় না রেখে প্রাক্সিস জার্নাল রাখার কারণে কি আপনার এখন কোন দুঃখবোধ হয়? তিনি খানিকটা হতচকিত হয়ে বললেন - না। একটু পর চিন্তা করে বললেন প্রাক্সিস টার্মটা গ্রেশিয়ান ফিলসফি থেকে ধার করা। আমি ভাবলাম, আচ্ছা, গ্রীক দর্শনের আরও অনেক চমৎকারী গুণের একটি হল শুয়োরের বাচ্চাকে মানুষের বাচ্চা বানিয়ে ফেলা।

উক্ত দিনের শেষ ভুলটা করলাম এর পর। ঢাবির ইতিহাস বিভাগের এক প্রথিতযশা অধ্যাপক আমার পিতৃস্থানীয়। তিনি আশির দশকে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এছাড়াও সারাজীবন বামপন্থী রাজনীতির সাথে তার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা ছিল। আশির দশক পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির রাজনীতিতে পিঙ্ক পার্টি, তথা জাসদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। আমার চাচা ছিলেন সে দলেরই মুখপাত্র। পোস্ট কলোনিয়াল থিওরির আন্তর্জাতিক মহারথী দিপেশ চক্রবর্তী চাচার বন্ধুস্থানীয়। পাকিস্তানে মুসলিম লীগের পতনের উপর চাচার পিএইচডি থিসিস বাংলাদেশের ইউপিএল থেকে প্রকাশিত, যেটার বঙ্গানুবাদ আমি করেছিলাম ২০১৫ সালে, এবং এর উপর একটি বক্তৃতা করার সুযোগ হয় ২০১৬ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু তে, বাংলাদেশ স্টাডি ফোরামের নিমন্ত্রনে

আমি উক্ত অনুবাদের সূত্র ধরেই সলিমুল্লাহ সাহেবকে আমার চাচার কথা বলেছিলাম।

সলিমুল্লাহ সাহেব এবার ব্যক্তিগত বিষোদগারে লিপ্ত হলেন। তার স্থির ধারণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশে ফেরার পর তার চাকুরী হয়েই যেতো - যদি আমার চাচা খানিকটা চেষ্টা করতেন। কারণ ঢাবির সিনেটে সে সময় চাচার প্রভাব ছিল। সলিমুল্লাহ সাহেব সাংঘাতিক রকমের কটু কথাবার্তা আমার চাচাকে নিয়ে বলেন, আমার ইদানীং সেটা মনে পড়লে দুঃখ লাগে, এবং নিজেকে খানিকটা আত্মমর্যাদাহীন মনে হয়, যে কেন সে সময়ে চুপ ছিলাম। আবার এটাও মনে হয় যে - শিক্ষক শ্রেণীর মানুষদের সামনা সামনি বেয়াদবি করবার অভ্যাস ছোট বেলা থেকে নেই বলেই হয়তো পেরে উঠি নি।

আমি চাচার সাথে পরবর্তীতে এ বিষয়ে কথা বলি, এবং যেটা জানতে পারি তা হল - সলিমুল্লাহ সাহেব ঢাবির আইন বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করলেও আইন বিভাগে চাকুরী পান নি। পেয়েছিলেন পরবর্তীতে ঢাবির আইবিতে। সেখান থেকে তিনি উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে অ্যামেরিকা চলে যান। এক পর্যায়ে তার চাকুরী চলে যায় আইবিএতে। তার বিবিধ ব্যাখ্যা আমি শুনেছি। সেগুলি এখানে উল্লেখ করতে চাই না।

সলিমুল্লাহ সাহেব বলেন, অ্যামেরিকায় ওনার একটা স্থির জীবন ছিল। আমার চাচার নেমন্তন্নেই নাকি উনি সে নিশ্চিত জীবন ছেড়ে ঢাকায় ফেরত আসেন, কারণ তাকে নাকি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরির। লং স্টোরি শর্ট, ঢাকায় ফেরত আসার পর, চাচার তদবিরে, ঢাবির নবগঠিত উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে ওনাকে প্রভাষকের পদে চাকরির প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু সলিমুল্লাহ সাহেব উষ্মার সাথে সে অফার ফিরিয়ে দেন। কেন ফিরিয়ে দেন তার দু' ধরনের ব্যাখ্যা আমি শুনেছি।

সলিমুল্লাহ সাহেবের কাছ থেকে যে ব্যাখ্যা আমি শুনেছি, তার সাথে আমি নিজেও খানিকটা একমত। তিনি বলেন, অ্যামেরিকার একজন পিএইচডি হোল্ডারকে তারা কোন যুক্তিতে প্রভাষকের চাকরি অফার করে? তিনি নাকি এই প্রস্তাবের উত্তরে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে উত্তর দিয়েছিলেন বলেছিলেন যে, তার নিয়োগ প্রভাষক পদে হলেও তাকে সহকারী অধ্যাপকের বেতন দিতে হবে। যেটা আসলে ঘুরিয়ে না বলে দেয়ার মতই।

চাচার মুখ থেকে যে ব্যাখ্যাটা পেয়েছি তা হল - সলিমুল্লাহ সাহেবের প্রথম রেসপন্স ছিল যে, তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের পড়ানোর যোগ্যতা রাখেন, তাকে লেকচারারের পদ অফার করা হয় কিভাবে। তখন তাকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছিল যে একবার লেকচারার হিসেবে ঢুকলে তার অন্যান্য যোগ্যতা বিবেচনায় দ্রুত প্রোমোশনের ব্যাবস্থা করা যাবে, কিন্তু আগে একবার চাকুরীতে ঢুকে নিন। কিন্তু সলিমুল্লাহ সাহেব রাজি হন নি।

রাজি হননি বটে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সোনার হরিণ অধরা থেকে যাওয়ার দরুন তার মনের দংশনের কারণেই কিনা কে জানে, ঢাবির শিক্ষকদের প্রতি সলিমুল্লাহ সাহেবের প্রচণ্ড হিংসাত্মক বিদ্বেষমূলক আচরণ টিভিতে স্পষ্টতই দেখা যায়।

শেষ একটি বিষয় সেদিনের বৈঠকে যেটা আমি আলোচনায় এনেছিলাম, তা হল - মেহেরজান বিতর্কের একটা সিরিজ ভিডিও ইউটিউবে আছে। ফরহাদ মজহার সাহেব এবং তার ঘনিষ্ঠজনদের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সলিমুল্লাহ খান যে সাহসিকতাপূর্ণ বক্তব্য রেখেছিলেন, যে প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব দেখিয়েছিলেন, ইউটিউবে সে বিতর্ক দেখার পরেই আমি সলিমুল্লাহ খানের অনুরক্ত হয়ে পড়ি। বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, অথবা বৃহদার্থে যেকোনো ধরনের জাতীয়তাবাদই যে সর্বাংশে খারাপ নয়, সেটা তিনি ফ্রাঞ্জ ফানোর দা রেচেড অফ দ্য আর্থের রেফারেন্স দিয়ে বুঝিয়ে বলেছিলেন যে - জাতীয়তাবাদ যদি উপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করার হাতিয়ার হয়, তবে তা অবলম্বন করাই উচিৎ। '৭১ এর বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ ছিল তেমনই কিছু। তিনি বলেন সিনেমার খাতিরে যদি পাকিস্তানি আর্মির সাথে বাঙ্গালী মেয়ের প্রেম স্বীকার করতে আমাদের অসুবিধা না থাকে তবে কালকে দেশের কোন একটা অঞ্চল যদি স্বাধীনতার ঝাণ্ডা উড়ায়ে দিয়ে বলে আমরা বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী চেতনা স্বীকার করি না, তবে তারে অস্বীকার করা যাবে কোন যুক্তিতে।

আমি সলিমুল্লাহ সাহেবকে জিজ্ঞেস করেছিলাম - এত এত বাঘা সব প্রতিপক্ষের মধ্যে বসে স্থিরভাবে তিনি কিভাবে সবাইকে যুক্তি দিয়ে ফালা ফালা করেছিলেন সেদিন?

সলিমুল্লাহ সাহেব হেসে উত্তর দিয়েছিলেন - স্যার, সব উপর থেকে নাজিল হইসিলো!

এক অর্বাচীনের সাথে কি নিদারুণ এক তামাশাই না করলেন প্রিয় সলিমুল্লাহ সাহেব।

যাক , সলিমুল্লাহ সাহেব আমাকে চা দিয়ে আপ্যায়ন করেন, এবং বের হয়ে আসার সময় আমাকে একদম লিফটে করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নীচতলা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসেন। পথিমধ্যে কারো সাথে ওনার কথোপকথনের একপর্যায়ে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার সময় আমার দিকে ইঙ্গিত করে বলেন - ইনি আমার বন্ধু। এটা ওনার অপরিসীম উদারতাই বলতে হয়।

গতবছরেই কয়েকমাসের ব্যবধানে সলিমুল্লাহ সাহেবের সাথে আমার প্রায় বারদশেক দেখা সাক্ষাৎ হয়েছে, যেহেতু ঢাকা ছোট শহর, এবং তার ইন্টেলেকচুয়াল পরিমণ্ডল আরও ছোট। আমি খুব অবাক হয়ে, এবং বিষণ্ণতার সাথে লক্ষ্য করেছি, যতবার আমি ওনার সামনাসামনি হয়েছি, নিজে উপযাচক হয়ে কথা বলতে গিয়েছি, তিনি কখনো আমার সাথে কথা বলতে আগ্রহ প্রকাশ করেন নি। আমি জানি না কেন। হয়তো এটা কারণ হতে পারে যে - বেয়াদবের মত আমার আধডজন বই ওনাকে উপহার দেয়ার বিষয়টা ওনাকে অফেন্ডেড করেছে, যদিও এটার সম্ভাবনা কম। রিসেন্ট একটা ভিডিওতে দেখলাম উনি বলছেন - নোয়াম চমস্কি ভাষাতত্ত্বের কিছুই বোঝে না। এই ধরনের মন্তব্য পাগলামোর পূর্বলক্ষণ কিনা, সেটা নিয়ে পৃথক আলোচনা হতেই পারে, কিন্তু নোয়াম চমস্কিকে যিনি ট্র্যাশ মনে করেন উনি আমাকে মুতে দিলে ভেসে যাবে কাতারের লেখক হিসেবেই ধরার কথা। হয়তো এটাও কারণ হতে পারে যে - আমার চাচার সম্পর্কে প্রচণ্ড রকমের অফেন্সিভ কথা বলার পর তার নিজেরই আর আগ্রহ হয় নাই, বা অস্বস্তি লেগেছে আমাকে দেখে। ধরেন আপনি এক ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে অপর এক মহিলার চরিত্র নিয়ে অনেক বাজে কথা বললেন, পরে দেখলেন ঐ মহিলা তার বৌ, এইরকম আর কি।

জ্ঞানতাপশ আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের একটা তিনমাসের ওয়ার্কশপে আমি পরবর্তীতে অংশ নিই, যেখানে সলিমুল্লাহ সাহেব প্রায় ছ'টি লেকচার দেন। সেখানে ছাত্র - শিক্ষক হিসেবে ক্লাসে বসে আমি সলিমুল্লাহ সাহেবকে শিক্ষক হিসেবে ডিকোড করার সুযোগ পাই।
এখান থেকে খানিকক্ষণ শিক্ষক সলিমুল্লাহ সাহেবের গাঠনিক সমালোচনা হোক।

সলিমুল্লাহ সাহেব যে বিষয়ে ক্লাসরুমে লেকচার দেন, সে বিষয়ে সেদিনের প্রধান প্রধান টার্মগুলিকে তিনি প্রথমে সাফিক্স প্রিফিক্সে ভেঙ্গে তাদের আদি ল্যাতিন/ গ্রীক রুট নিয়ে লেকচার দেন লেকচারের সময়ের চল্লিশ শতাংশ সময়। যেটা শিক্ষক হিসেবে আমি নিজেও মনে করি একটা ভালো কাজ। মূল টার্মগুলোর আদি রুট জানাটা উক্ত টার্মকে নৃতাত্ত্বিকভাবে, এবং আরও নানা আঙ্গিকে বোঝার সুযোগ করে দেয়।ক্লাসের বাকি ষাট শতাংশ সময়ের চল্লিশ শতাংশ সময় তিনি উক্ত লেকচার উপলক্ষে যে আর্টিকেল বা বই পড়ে এসেছেন, সেগুলি গুছিয়ে আলোচনা করেন। বাকি বিশ শতাংশ সময় চলে প্রশ্নোত্তর পর্ব, যা প্রায়ই মূল আলোচনার প্রসঙ্গ ছেড়ে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে যা কিছু পড়ছেন, যা ভাবছেন তা নিয়ে ছাড়া ছাড়া আলোচনা করেন, এই সময়টাতে তিনি যাদের দেখতে পারেন না, তাদের প্রচুর গালিগালাজ করেন, এবং খুবই দৃষ্টিকটু ভাবে। জ্ঞানতাপস আবদুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের উক্ত কোর্সে আমি যাদের সাথে ক্লাসরুম শেয়ার করেছি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তাদের অনেকেই শিক্ষকদের দিকে সমালোচনার দৃষ্টিতে তাকাতে অভ্যস্ত ছিল না, যেটা আমাদের বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটা বড় লুপহোল বলে আমি মনে করি। ফলে সলিমুল্লাহ সাহেবের দিকে তাদের দৃষ্টি ছিল যাদুর বাঁশরী বাজানো যাদুকরের দিকে সম্মোহিত স্রোতার মত, যারা সামনা সামনি সলিমুল্লাহ সাহেবের কথা শুনতে পারছেন বলেই নিজেকে ধন্য মনে করেন। ধন্য মনে করাই যায়, আমি নিজেও খুশী, ওনার বক্তৃতা সামনা সামনি শুনে, যেহেতু উনি এতবড় সেলিব্রেটি এবং পোড়া দেশের একমাত্র স্বীকৃত বুদ্ধিজীবী।

কোন রকম সন্দেহ ছাড়া তিনি বাংলাদেশের সবচে তুখোড় টিভি আলোচক। যেকোনো টিভি আলোচনায় তিনি অন্যান্য সব আলোচকদের থেকে ঐদিনের টপিকে বেশী পড়াশোনা করে আসেন। ফলে তার টেক্সচুয়াল আলোচনা হয় অন্য সবার থেকে শানিত। সাথে থাকে তার অনন্য উপস্থাপন ভঙ্গী, এবং মানুষকে অপমান করার আজন্মলালিত সক্ষমতা। ২০১৩ সালে ফরহাদ মজহারের সাথে তার মেরুকরণের ব্যাপারে আমার অর্বাচীন মস্তিষ্ক প্রসূত একটা ধারণা হচ্ছে - যদি উনি ফরহাদ সাহেবের বিরুদ্ধে কথা না বলতেন, তাহলে ওনার আর টিভি চ্যানেলে এসে নিজের বুদ্ধি বিক্রি করার সুযোগ থাকতো ন কারণ টিভিচ্যানেল সহ মেইনস্ট্রিম মিডিয়াগুলি ততদিনে ফরহাদ সাহেবরে থরোলি বয়কট করা শুরু করেছে। ফরহাদ সাহেবের টিভি না হইলেও চলে। ওনার উবিনিগ আছে, করে কর্মে খেতে পারবেন। সল্লিমুল্লাহ সাহেবের টিভিতে চেহারা দেখানোর সুযোগ বন্ধ হয়ে গেলে ওনার ইউল্যাবের রুমটা ছাড়া আর কিছু থাকবে না। নইলে যে ফরহাদ সাহেবকে তিনি একসময় মহাত্মা ফরহাদ মজহার বলে উল্লেখ করতেন, তার সাথে এমন ১৮০ ডিগ্রী ইউটার্ন নেবার কোন কারণ তো আমার বুঝে আসে না। এছাড়াও উবিনিগের মালিকানা ভাগাভাগি সংক্রান্ত কিছু গুজব আমার কানে এসেছে। গুজব, গুজবের জায়গায় থাক। তবে, ২০১০ সালের আগে উবিনিগের সেমিনারে সামনের সারিতে বসে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাকের সাথে গ্রামসি নিয়া প্যাঁচ লাগানোর চেষ্টা করার পর স্পিভাকের - 'আমি থিওরি নিয়া ক্যাচাল পাড়ার জন্যে থিওরি পড়ি না, জীবনের সমস্যা সমাধান করার জন্যে থিওরি পড়ি' - এই ঝাড় খাইতে সলিমুল্লাহ সাহেবকে তো দেখাই যাইত। এগুলো তো ঐতিহাসিক সত্য। ইউটিউবে ভিডিও আছে।

সলিমুল্লাহ সাহেবের আর এক নীতিগত আচরণ আমার বুদ্ধির বাইরে। আমরা যারা ঢাকাভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার নিয়মিত স্রোতা, তারা জানি যে সলিমুল্লাহ 'মহাত্মা' জ্যাক লাকার অনুরক্ত, এবং টীকাকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে যার ক্লাসরুমে বসে আমি পড়ালেখা শিখেছি - সেই শিক্ষক, বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর অনুবাদ, ইউজিসি প্রফেসর ফকরুল আলম স্যারের বিরুদ্ধে তাকে আমি জাহাঙ্গীরনগরের ফুঁকো সংক্রান্ত এক বক্তৃতায় সরাসরি বাজে কথা বলতে শুনেছি, তিনি বলেছিলেন - ফকরুল সাহেবকে আমি জ্যাক লাকার কথা বলা মাত্র ফকরুল সাহেব বলেন - লাকা আমি অমন ভালো বুঝি না। সলিমুল্লাহ সাহেবের অভিযোগ ছিল - হাউ ডেয়ার হি! জ্যাক লাকার সম্বন্ধে এমন মন্তব্য করার ধৃষ্টতা ফকরুল সাহেবের কি করে হল।

ইউল্যাবে যে দিন আমি সলিমুল্লাহ সাহেবের সাথে দেখা করি, সেদিন উনি হাসতে হাসতে আমাকে বলেছিলেন - ঢাকায় ফিরে এসে আমি দেখি কেউ ফুঁকো বিক্রি করছে, কেউ দেরিদা বিক্রি করছে। ফলে আমি লাকা বিক্রি করা শুরু করলাম। আর আমি লাকা বিক্রি করা শুরু করবার পর দেখি বাকিরা লাকা নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। বলেই তিনি অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পড়েন।

এই কথার কি অর্থ? জ্যাক লাকাকে সলিমুল্লাহ সাহেব না বিক্রি করলেও উনি পোস্ট ফ্রয়েডিয়ান সাইকোলজির বিশ্বব্যাপী এক অন্যতম অনুষঙ্গ হয়েই থাকবেন। কিন্তু সলিমুল্লাহ সাহেব যেটা আমাকে বললেন, সে বক্তব্যের পর, এটা ভাবাটা কি অন্যায় যে - লাকাকে স্রেফ নাম ভাঙ্গিয়ে চলার জন্যেই উনি বার বার আউড়ান? বাংলাদেশে 'বুদ্ধিজীবী' দের একশ্রেণীকে যেমন - রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ, নজরুল বিশেষজ্ঞ, লালন বিশেষজ্ঞ, ফুঁকো বিশেষজ্ঞ হতে বিশেষভাবে উদগ্রীব দেখা যায়, যাতে এইসমস্ত বিষয়ে সভা সেমিনার হলেই তারা তাতে সভাপতির আসন অলঙ্কৃত করতে পারেন। হালকা চালে বলা সলিমুল্লাহ সাহেবের কথাতেও কি সেই স্পৃহাই, বুদ্ধিবৃত্তিক অসততাই স্পষ্ট হয় না?

ফকরুল স্যারের মত একজন শিক্ষক, যিনি আজীবন বলে গেসেন আমার জায়গা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে এই পোডিয়ামের পিছে নিভৃতচারী বক্তৃতায়, যার আজীবনের আদর্শ এডওয়ার্ড সায়ীদ, কত অসংখ্য অগণিত মেধাবী ছাত্র ওনার রেফারেন্সে দেশের বাইরে বৃত্তি নিয়ে পড়তে গিয়েছে। আজ যদি প্রশ্ন করি, সলিমুল্লাহ সাহেব টিভিতে দুর্ধর্ষ বক্তৃতা করেন, ওনার রেফারেন্সে কয়জন ছাত্র বাইরে পড়তে গিয়েছে, বা কয়জন ছাত্র/ছাত্রীর চাকরি হয়েছে - সলিমুল্লাহ সাহেব কি উত্তর দেবেন?

কয়েকদিন আগে দেখলাম , উনি টেলিভিশনে বলে চলছেন জাতীয় অধ্যাপক প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী নাকি সামরিক স্বৈরশাসক এরশাদের সাথে গোপন আঁতাত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। উপস্থাপক, সলিমুল্লাহ সাহেবের এই ধারণার ভিত্তি কি জিজ্ঞেস করতে সলিমুল্লাহ সাহেব বলেন, যেহেতু ওনার নাম শর্ট লিস্টেড হয়েছিল কাজেই ওনার কিছু গোপন আঁতাত তো ছিল নিশ্চয়ই। বলিহারি চিন্তা! এদিকে আজীবন বামপন্থী রাজনীতির অকুণ্ঠ সমর্থক , এবং একরঙা ফুলহাতা শার্ট আর মাথার ওপরে শরীফ ছাতা ধরে টিচার্স কোয়াটার থেকে কলাভবন আর কলাভবন থেকে টিচার্স কোয়াটার যাতায়াত করা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার বিএনপি বা আওয়ামীলীগ - কোন সরকারকে বিন্দুমাত্র ছাড় দিয়ে কথা বলেন নি জীবনে কোনদিন। এরশাদের আমলে তাকে ভিসি বানানোর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত ছিল, কিন্তু এরশাদ সরকারের এজেন্ডা তিনি বাস্তবায়ন করতে অপারগতা জানিয়ে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে সরে আসেন। তার নির্ভীক উচ্চারণের জন্যেই দলমত নির্বিশেষে তিনি শ্রদ্ধেয়, জাতীয় অধ্যাপক।

মনে পড়ে, সলিমুল্লাহ সাহেব ক্লাসে বলছেন - এই আবুল কাসেম ফজলুল হক স্যার ভালো মানুষ, কিন্তু তার কথা এত লম্বা করার প্রয়োজন কি? সবাই যে সামনে ঘুমায়ে পড়ে, এইটা উনি বুঝেন না কেন। এই ধরনের কথা সর্বজনের শ্রদ্ধার জায়গা থাকা একজন মানুষের পক্ষে আরেকজন শ্রদ্ধেয় মানুষের বলা শোভা পায়? ভরা মজলিসে? সবার সামনে? আনিসুজ্জামান স্যার, আনু মুহাম্মদ স্যার সহ আরও অনেকের ব্যাপারে তার অনেক ব্যক্তিগত ক্ষোভ। তালিকা লম্বা করে কি ফায়দা।

ডঃ হুমায়ূন আজাদ, ডঃ আহমদ শরীফ - আমার পরিবারের সাথে অবিচ্ছেদ্য দুই নাম। সত্তরের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যয়নরত আমার বাবার সরাসরি শিক্ষক ওনারা দুজন। বাবা দুজনেরই ফ্যান ছিলেন। ফলে আমার অবচেতন শৈশবের একটা অংশ ওনাদের পরিমণ্ডলে কেটেছে। ওনাদের কোলে চড়বার সৌভাগ্যও আমার হয়েছে। হুমায়ূন আজাদ স্যারের ব্যাপারে সলিমুল্লাহ সাহেব অ্যান্ড গং এককথায় ট্র্যাশ শব্দটি উচ্চারণ করেন। আজাদ স্যারের ব্যক্তি মতাদর্শের সাথে আমার পরিণত বয়সের চিন্তার মিল নেই, ওনার গবেষণা পর্যায়ের বইগুলোও নানাভাবে সমালোচিত। কিন্তু আজাদ স্যারের যে সৃজনশীল লেখা, তার কোন জবাব কি সলিমুল্লাহ সাহেবের আছে? আজাদ স্যারের জাস্ট একটা শিশুসাহিত্য - ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না'র শেষ লাইন, আমি এতো ডাকি রাড়িখাল, তুমি হুমাইর দেও না কেন - এর উপযুক্ত কোন বাক্য সলিমুল্লাহ সাহেবের সৃজনশীল কথামালার আদ্যোপান্তে আছে কোথাও?

আমি মনে করি, বাংলার ষোল কোটি জনগণের দুর্ভাগ্য যে সলিমুল্লাহ সাহেব বাংলার বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার অধিপতি। আমি ব্রাত্যজন। আমার মনে করায় কারো কিছু আসে যায় না। কিন্তু উনি ক্রমাগত সব বিষয়ে সুইপিং কমেন্ট করে করে দু' চার কলম লিখতে পড়তে পারা বাংলার মানুষজনদের বিচারবুদ্ধির লেভেল নিয়ে ক্রমাগত হাসি ঠাট্টা করে যাচ্ছেন - এ যন্ত্রনাই বা ভুলি কিভাবে?

তবুও , আমি মনে করি সলিমুল্লাহ সাহেব প্রয়োজনীয়। কারণ পেছনে প্রোপ্যাগান্ডা থাক আর না থাক - তিনি স্পষ্টভাবে প্রত্যেকটা কথা উচ্চারণ করেন। তিনি ফুঁকো, লাকা , ফ্রয়েডের টিকা ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিয়ে যেতে পারেন, আর আমরা শ্রোতারা যেহেতু অকম্মার ঢেঁকি, কুঁড়ের বাদশাহ , নিজেদের তত্ত্ব নির্মাণ - বিনির্মাণের ইতিহাস নিয়ে বোঝাপড়া করবার আগ্রহ নাই - সলিমুল্লাহ সাহেবের পায়ের ধুলো মাথায় নিয়ে ভক্তি গদগদ করে তাকিয়ে থাকতে পারি, কৃষ্ণের প্রতি রাধার নয়নে। শুধু প্রয়োজন উনি যাদের দেখতে পারেন না, যাদের দেখলে ঈর্ষায় ওনার শরীর রি রি করে, তাদের প্রতি আর একটু সহনশীল আচরণ। জিহ্বার আর একটু সংযত ব্যবহার। যা বলি তার সবই মানুষ গিলবে, এমন একটা প্ল্যাটফর্ম পেয়ে গেলেই যা খুশী তাই বলে বেড়ানোটা ভদ্রজনচিত আচরণ নয়। আমার মত দু' একজন নালায়েক বেয়াদব ছাড়া তার সব ছাত্রছাত্রী তাকে প্রায় পূজা করে। তার স্পষ্টবক্তা স্বভাবের জন্যে আরামপ্রিয় - উদারপন্থী বাঙালীর ঘরে ঘরে তার প্রশংসা। দু'চারটে মুদ্রাদোষ তার যা আছে - সেগুলো যদি তার মর্জি হয়, উনি কাটিয়ে উঠেন তবে তাকে বাংলার টেলিভিশন/টকশোপ্রিয় জনতা স্মরণে রাখবে, শ্রদ্ধাভরেই। তদুপরি গুরু যদি দুই কলম লেখার উদ্যোগ হাতে নেন আবার, তাইলে তো কথাই নাই।

আমার সমালোচনার অংশ খেয়াল করবেন, ওনার পাবলিক বক্তৃতা, আর ছাপার হরফে যা আছে তার ওপর ভিত্তি করে লেখা। ওনার সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার সূত্রে নয়। নইলে ঢাকার 'বুদ্ধিজীবী' মহলে ওনাকে নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প প্রচলিত আছে। সেগুলি সজ্ঞানে এখানে বর্জন করা হয়েছে।

শেষ করি সলিমুল্লাহ সাহেবের প্রার্থনা বইটির ৪২ তম পাতায় অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক স্যারের ওপর লেখা প্রবন্ধের একটি উক্তি দিয়ে, যেখানে তিনি রাজ্জাক স্যারকে মেপেছেন প্রফেসর সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যার, আর সৈয়দ আলী আহসান সাহেবের সাথে( সৈয়দ আলী আহসান সাহেব যদ্দুর জানি মেজর জিয়া আর জেনারেল এরশাদের আমলে সব বড়বড় প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন। ওনার সাথে সৈয়দ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারকে এক কাতারে ফেলে বিচার করতে যাওয়ার চেষ্টাটাই কি একটা ফ্যালাসি না? আবার সলিমুল্লাহ খান সৈয়দ আলী আহসান, বা সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী স্যারকে পরিমাপ করেন কিসের যোগ্যতায়, একি তার ইউটিউবে ভিউ সংখ্যার ভিত্তিতে, নাকি অন্যকোন মস্তিষ্কপ্রসূত জটিলতায়, এই প্রশ্ন মনে দানা বাঁধলে কাকে দোষ দিই?

যাক, উক্তিটি হোল

"অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক লেখার মত কিছুই লেখেন নাই - এ কথা অসত্য নয়। তারপরেও আপনারা যাই বলেন না কেন আমি কিন্তু এক ডজন সৈয়দ আলী আহসান কিংবা দুই গ্রোস ( এক গ্রোসে ১৪৪, দুই গ্রোসে ২৮৮) সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী লগে একজন না - লেখক আব্দুর রাজ্জাকের বদলা নিতে রাজি হব না। জানি এ তুলনাটাও কারো কারো কাছে হাসির খোরাক বৈ নয়।"

এই উক্তির শেষ লাইনটি সলিমুল্লাহ সাহেবের দিব্যজ্ঞানের পরিচায়ক তো বটেই, আর প্রথম লাইনগুলি তার কিসের পরিচায়ক, তা পাঠকদের নির্ণয় করার জন্যেই ছেড়ে দিই।

সলিমুল্লাহ সাহেবের মানসিক ও শারীরিক সুস্বাস্থ্য কামনা করি।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: সলিমুল্লাহ সাহেবের সাথে সাথে আপনিও ভালো থাকুন। সুস্থ থাকুন। এই কামনা করি।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার প্রতিও একই কামনা।

২| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:০৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: তাঁর সাথে আমার কোনো ব্যক্তিগত সংশ্লেষের সুযোগ হয়নি। কিন্তু স্পষ্ট বক্তব্যর জন্য আমি তাঁকে পছন্দ করি। কবির প্রার্থনা নিয়ে মেলায় তাঁর বক্তব্য ইউটিউবে শুনেছি। একইভাবে বাংলা বিভাগের শিক্ষক মোঃ আজমের একটা বইয়ের আলোচনাও দেখেছি। আপনি যেভাবে অন্তরালের খবর পড়লেন, সেভাবে পাইনি তাঁকে।

২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রার্থনা কবিতার বই নয় যদিও। এই বইয়ের ওপর যে আলোচনা তিনি বাংলা একাডেমীর লেখকের মঞ্চে বসে করেন, সেটাও ব্যক্তিগত বিষোদগারের একটা দুঃখজনক বহিঃপ্রকাশ। কয়েকবার আবেদন করার পরেও বাংলা একাডেমীর সদস্যপদ না পাওয়ায় বাংলা একাডেমীর ওপর ওনার বিশেষ ক্ষোভ আছে। কিন্তু সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলির আলাদা মেকানিজম আছে, সেটা আসলে গুণী - নির্গুণ বিবেচনা করে ফাংশান করে না। ওখান থেকে সুবিধা নিতে হলে প্রাতিষ্ঠানিক লিখিত এবং অলিখিত নিয়ম মেনেই আপনাকে চেষ্টা করতে হবে। সলিমুল্লাহ খানের মত মানুষের পক্ষে এরকম তোয়াজ তোষামোদ করা খানিকটা মুশকিলই।

তবে, নিজেকে ক্রমাগত বঞ্চিত মনে করতে থাকার ফলে তার চিন্তার যে বিপর্যয় ঘটছে তার সবচে স্পষ্ট বহিঃপ্রকাশ আজম সাহেবের প্রমিত বাংলা সমাচার শীর্ষক বইটির ওপর আলোচনা সভায়, যা আয়োজন করেছিল 'বানান' নামের একটি সংস্থা, যা ফরহাদ সাহেবের ঘনিষ্ঠরা পরিচালনা করেন। উক্ত আলোচনায় সলিমুল্লাহ সাহেব লম্বা সময় ধরে প্রথম আলো পত্রিকা, তার সহযোগী সম্পাদক সাজ্জাদ শরিফ এবং সব শেষে নোয়াম চমস্কিকে ধোলাই দেন, এবং মন্তব্য করেন, নোয়াম চমস্কি আসলে ভাষাতত্ত্বের কিছুই বোঝে না।

সলিমুল্লাহ সাহেবকে দূর থেকে চিনলেই ভালো হতো কিনা, এ নিয়ে আমি কিঞ্চিত সন্দিহান। কারণ ওনার জার্নালিস্টিক কমেন্টে ভরা প্রবন্ধের সংকলন প্রার্থনায় তার কিছু কিছু মানুষকে টেনে নীচে নামানো আর কিছু কিছু মানুষকে টেনে ওপরে তোলার চেষ্টা এতটাই দৃষ্টিকটু, এতটাই স্বজনপ্রীতিতের আঁশটে গন্ধে ভরা, দুঃখ লাগে। এই বয়সে এসে নিজের সম্মান শ্রদ্ধা এভাবে উনি না খোয়ালেও পারেন।

কিন্তু ওনার সৌভাগ্যও এই যে - বাংলাদেশের মানুষ ইউটিউবের ভিডিওর মাধ্যমেই ওনাকে চেনে, জানে; কথার পরম্পরা মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে উনি কি বলতে চাইছেন তা জাজ করতে চেষ্টা করে না, অথবা তার লেখা পড়ে ওনার বক্তব্য বোঝার মত শ্রমসাধ্য কাজে তাদের আগ্রহ নেই। কাজেই, বাংলাদেশের একটা বিশাল বড় সংখ্যক মানুষের জন্যে তিনি গুরুস্থানীয় ব্যক্তির স্থানেই থাকবেন।

৩| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০৬

নেওয়াজ আলি বলেছেন: Best wishes

২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ভাই, কিছু মনে নেবেন না। দেখলাম, আপনি স্বল্প দিন ধরে আপনার এই একাউন্ট ব্যাবহার করছেন। আপনি যে অ্যাপ্রচে ব্লগিং করছেন, এই অ্যাপ্রচে আপনি বেশীদিন ব্লগিং করে যেতে পারবেন না। আপনার নিজেরই ক্লান্তি এসে যাবে। একসময় ছেড়ে দেবেন। কোন লেখার সাথে প্রাসঙ্গিকতা ছাড়া এসে বেস্ট উইশেস জানিয়ে যাওয়া, বা সবার লেখার শেষেই অসাধারণ, বা অনন্যসাধারণ কমেন্ট করে গেলে আপনাকে ব্লগার হিসেবে কেউ সিরিয়াসলি নেবে না। কাজেই সবার পোস্টে কমেন্ট করে বেড়ানোর বদলে নিজের জন্যে - সমাজের জন্যে যা কিছু উপকারি এমন সব মানসম্মত কিছু লেখা লিখুন। মানুষ আপনার লেখা পছন্দ করবে। আজ থেকে বছর পাঁচেক আগে এমন অনেক ব্লগার ছিল, যারা তাদের রুচিশীল , মানসম্মত সঙ্গের - লেখনীর দ্বারা আমাদের এমনভাবে প্রভাবিত করে গেছে, তারা আজ ব্লগে নেই, কিন্তু তাদের কথা ব্লগটা খুললেই মনে পড়ে। তাদের মতো একজন হয়ার চেষ্টা করতে দোষ কি? শুভকামনা আপনার জন্যে।

৪| ২৩ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৪৯

পদ্মপুকুর বলেছেন: আপনিতো মনে হচ্ছে হাতে ছাই নিয়েই ধরেছেন তাঁকে....
দেখেশুনে আপনার কথাই সত্য মনে হচ্ছে- কিন্তু ওনার সৌভাগ্যও এই যে - বাংলাদেশের মানুষ ইউটিউবের ভিডিওর মাধ্যমেই ওনাকে চেনে,

২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: যাক, সলিমুল্লাহ সাহেবকে অসম্মান করবার জন্যে, বা ছাই দিয়ে ধরব বলেই এই লেখাটি লিখেছি, এমনটা যেন মনে করবেন না ভাই। উনি সম্মানিত মানুষ। ওনার থেকে আমাদের শেখার এবং প্রত্যাশার অনেক কিছু আছে বলেই এ লেখাটি, যে বিষয়ে তার চাটুকারেরা তাকে কখনো স্মরণ করিয়ে দেবেনা বলে আমি লিখলাম। আশা করি তিনি তার পরবর্তিত কর্মগুনে শীঘ্রই সলিমুল্লাহ সাহেব থেকে সলিমুল্লাহ স্যার হয়ে উঠতে পারবেন।

৫| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৭:২২

আলাপচারী প্রহর বলেছেন: উনাকে আমার কখনোই পূণাঙ্গ লেখক মনে হয় নাই।

২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: এ মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে আমার কিছু লেখা মুশকিল এ জন্যে যে, আমি তার প্রার্থনা বইটি বাদে আর কোন বই পড়ি নি। কিন্তু প্রার্থনার সলিমুল্লাহ খান পরিত্যাজ্য।

৬| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৮

পদ্মপুকুর বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে, প্রিয়তে নিলাম।

৭| ৩০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:৫৪

পদ্মপুকুর বলেছেন: সম্প্রতি বেহাত বিপ্লব পড়ছি।

৩১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:৫২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সূচিপত্রের প্রাবন্ধিকদের নাম দেখে কি ধারণা পেলেন বইটি সম্পর্কে?

৮| ২০ শে এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ১২:৪১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: উনি যা বলেন জনসমক্ষেই বলেন তাই এটা কোনও সমস্যা না কারণ যাদের গায়ে লাগে তারা আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পায়। এদেশে বুদ্ধিজীবীরা তোষামোদি করতে যেয়ে কারও বিরুদ্ধে সত্য কথা বলতে পারে না। বুদ্ধিজীবীদের মধ্যেও দলাদলি আছে তাই নিজের দলের বিরুদ্ধে কেউ বলতে চায় না। উনার কথা কটু শোনালেও উনি স্পষ্টভাষী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও শুনি অনেক দলাদলি আছে। বাংলা একাডেমীতেও দলাদলি আছে। তাই একতরফাভাবে ওনাকে সমালোচনা করা যায় না। আবার আমলাতান্ত্রিক অনেক প্রক্রিয়ার কারনে অনেক মেধাবী বঞ্চিত হন। তবে অনেক জ্ঞানী মানুষ জ্ঞানের ভারে অহংকারী হয়ে জান। অহমের সমস্যা থাকে। উনার মধ্যেও হয়ত অহঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। হুমায়ুন আজাদের মধ্যে এর চেয়ে বেশী অহঙ্কার ছিল। তার পরেও হুমায়ুন আজাদ এই দেশের জন্য সম্পদ। তবে ১০০% ভারসাম্যপূর্ণ মানুষ পাবেন না। সলিমুল্লাহ খানের সীমাবদ্ধতা মেনে নিয়ে ওনার মেধা থেকে জাতিকে উপকৃত হতে হবে।

২০ শে এপ্রিল, ২০২০ রাত ১১:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: জানেন, অন্ধভক্তদের নিয়েই সব মুশকিল।

বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের একটা বড় অংশকে সলিমুল্লাহ খান তাদের পেছনে গালি দেন, জিঘাংসার বশবর্তী হয়ে, জনসমক্ষে নয়। আর জনসমক্ষে কিছু বললে বা কিছু করলেই লেভেল প্লেয়িং এর ফিল্ড তৈরি হয়, এমত বক্তব্যের সাথেও আমি একমত নই। জ্যামের মধ্যে রিকশায় বসে কখনো হিজড়া সম্প্রদায়ের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছেন? দুজনেই সামনা সামনি, কিন্তু হিজড়ার সাথে লড়াই করে পারবেন? সলিমুল্লাহ সাহেব এমন লোকদের সম্বন্ধে খারাপ কথা ক্রমাগত বলেন গেছেন, যারা তার চে' বয়সে বড়, জাতির প্রতি তাদের কন্ট্রিবিউশন ওনার চে' কমসে কম দশগুণ বেশী, এবং সর্বোপরি তারা ভদ্র , সজ্জন প্রকৃতির মানুষ। ক্লাসরুমে বসে নিজের ছাত্রছাত্রীদের সামনে শুয়োর কুকুরের বাচ্চার মত শব্দ উচ্চারণ করে গালিগালাজ করে না। সলিমুল্লাহ খান করেন।

হুমায়ূন আজাদ সাহেবের সাথে সলিমুল্লাহ সাহেবের তুলনাও মানতে পারলাম না। হুমায়ূন আজাদ তার চিন্তাভাবনা থান ইটের মত মোটা একএকটা বই লিখে প্রকাশ করে গেছেন। আজাদ সাহেবের প্রকাশিত বই সংখ্যায় এত বেশী যে সেগুলো সামান্য ওপর থেকে আপনার দিকে তাক করে ছুঁড়ে মারলে আপনার মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ৯৫ %। সলিমুল্লাহ সাহেবের লেখায় আগ্রহ নেই। ওনার প্রকাশিত বই প্রায় সবই অনুবাদ, বা সম্পাদনা। আর প্রার্থনা, ওনার ডায়রির মত।

উনি বুদ্ধিমান বাকপটু মানুষ। উনি জানেন যে বাংলাদেশের বেশীরভাগ মানুষ দু'পায়ে হাঁটে , কিন্তু আসলে ঘাস খায়, এবং প্যান্টের নীচে একটা নেজ লুকিয়ে রাখে। ফলে উনি দুনিয়ার সকল বিষয়ে আমাদের জ্ঞান দিয়ে বেড়ানোর দুঃসাহস দেখান। উনি আরও জানেন, এই জাতির ৯৫ শতাংশ মানুষের মেরুদণ্ডের হাড় ভাঙ্গা। সলিমুল্লাহ সাহেবের এসব সুইপিং কমেন্টের ব্যাপারে বইপত্র পড়ে কখনই তারা তর্কের টেবিলে বসবে না বা চ্যালেঞ্জ করবে না। জানেন বলে উনি আমাদের সাথে ছাগলের মতই ডিল করেন।

আপনি বলছেন উনার মধ্যে 'হয়তো' অহঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে। আমার কথায় 'হয়তো' নেই। আমি সরাসরি বলছি উনি অহঙ্কারি। এবং আমার এই সিদ্ধান্ত ওনার ব্যক্তিজীবন বাদ দিয়ে, ওনার প্রকাশিত লেখা, নানা সময়ের বক্তৃতা, এবং ক্লাসে বসে শোনা লেকচারের ওপর ভিত্তি করে।


আমার মন্তব্যের প্রতিমন্তব্য করার আগে আপনি 'সত্য কথা বলার সাহস', 'স্পষ্টভাষী', 'হুমায়ূন আজাদ এই দেশের সম্পদ' 'সলিমুল্লাহ খানের মেধা' , 'জাতিকে উপকৃত করা' - ইত্যাদি বলতে কি মিন করেন, আজাদ সাহেব বা সলিমুল্লাহ খানের লেখা , বা বক্তৃতা থেকে রেফারেন্স দিয়ে আমাকে বোঝালে তারপর আপনার সাথে আরও আলাপ করা যাবে।

৯| ২১ শে এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১১:৩৭

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমি ওনাদের কিছু বই পরেছি। সলিমুল্লাহ খানের কথা টিভিতে অনেক শুনেছি। বইয়ের চেয়ে টিভি শো অনেক মানুষের কাছে পৌছায় এবং তাৎক্ষনিক ভাবে ভুল ধরে দেয়ার সুযোগ থাকে। উনি মিথ্যে কথা বললে তার প্রতিবাদ হত বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে এবং উনার গ্রহণযোগ্যতা কমে যেত সাধারণ মানুষের কাছে। তবে মনে রাখবেন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি সমালোচনার শিকার হয়েছেন (রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র প্রমুখ) )। তার মানে এই না ওনারা জ্ঞানপাপী। হুমায়ুন আজাদ ও সলিমুল্লাহ খান হাজার হাজার পাতার লেখা লিখেছেন তাই সেগুলি নিয়ে ব্লগে বিস্তারিত আলাপ করা সম্ভব নয়। আপনি অভিযোগ এনেছেন। তাই প্রমানের দায়িত্ব আপনার। আপনার অভিযোগ গুলি ওনার ব্যক্তি জীবন সংক্রান্ত যার সাক্ষী আপনি। তার ভিত্তিতে আপনি এসব ব্লগে লিখছেন। আপনার কথা কতটা নিরপেক্ষ এবং পক্ষপাতশূন্য তা প্রমাণিত নয়। আপনার মত আরও হাজার জন যখন বলবে তখন মানুষ বিশ্বাস করবে।

সত্য কথা বলার সাহসঃ উনি কোনও রেখে ঢেকে কথা বলেন না (আপনি এর বিপরীত প্রমাণ দেখান)
স্পষ্টভাষীঃ কথা ঘুরিয়ে বলেন না। (আপনি এর বিপরীত প্রমাণ দেখান)
হুমায়ুন আজাদ দেশের সম্পদঃ উনি দেশের সম্পদ (আপনি প্রমাণ করুন যে এটা মিথ্যা )
সলিমুল্লাহ খানের মেধাঃ উনি মেধাবী (আপনি প্রমাণ করুন যে উনি মেধাবী না)
জাতিকে উপকৃত করাঃ উনার লেখা ও কথা থেকে জাতি উপকৃত হয়। কারণ উনি একজন ভালো সমালোচক। (জাতি উপকৃত হয় নাই আপনি প্রমাণ করুন।)

১০| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ৮:১১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: এই লেখাটি পূর্ণাঙ্গভাবে না পড়ে, স্রেফ মন্তব্য পড়ে, এবং সলিমুল্লাহ সাহেবের প্রতি অকুণ্ঠ ভক্তি থেকে অনেকেই আড়ঠ্যাকা দিয়ে ঝগড়া বাঁধাতে চাইতে পারেন। এমতাবস্থায় আমি আমার পুরো চিন্তার সার নীচের একটা প্যারায় সীমাবদ্ধ করছি।

সলিমুল্লাহ সাহেবের সর্ববিষয়ে বিশেষজ্ঞ মন্তব্য করবার , এবং প্রায়ই নানা সুইপিং কমেন্ট করে বেড়ানোর স্পর্ধা থেকে বোঝা যায় তিনি বাংলাদেশের ৯৯ শতাংশ মানুষকে ছাগল মনে করেন। আমার এতে আপত্তি আছে। আপনার/আপনাদের যদি এতে আপত্তি না থাকে, তবে সে অনাপত্তি দয়া করে এখানে এসে জাহির করবেন না। করলেও, আমার দিক থেকে কোন সাড়াশব্দের আশা না করাই ভালো।

ঋণস্বীকারঃ
১। রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনেকটা মোঃ আজমের মত, চমস্কি ভাষাতত্ত্ব বুঝেন না

২। প্রফেসর ফকরুল আলমের উপর অপবাদ (জ্যাক লাকা সংক্রান্ত আলোচনার অংশে খুঁজে দেখুন)

বাংলা একাডেমীর বইমেলা প্রাঙ্গনে সলিমুল্লাহ খানের ভাষা

কোলকাতার অডিয়েন্সের সামনে সলিমুল্লাহ খানের ভাষা

১১| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১০:৪১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ব্লগ একতরফা লেখার জায়গা না। যেহেতু পাবলিকের উদ্দেশে লিখেছেন তাই পোস্ট করলে মন্তব্য আসবেই। যুক্তি ও পাল্টা যুক্তি চলবে এটাই স্বাভাবিক। মন্তব্য সহ্য করতে না পারলে না লেখাই ভালো।

০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১১:৩৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: কার কি করা উচিৎ না উচিৎ, এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে বেড়ানো বন্ধ করে নিজের কাজে, চিন্তায়, লেখায় ফোকাস করেন। নইলে আজীবন কমেন্টে কাইজ্জা করে কাটাতে হবে।

১২| ০৩ রা মে, ২০২০ রাত ১১:৫১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: পোস্ট করে মন্তব্যের জবাব দিতে পারছেন না। তাই অন্য প্রসঙ্গে চলে যাচ্ছেন। পোস্ট বেশী দিলেই সে মহাজ্ঞানী এরকম মনে করার কোনও কারণ নাই। আর অপরিচিত লোকের সাথে ভাষা শালীন হওয়া উচিত।

০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ১২:০৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: এই ব্লগ , আমার লেখা এবং চিন্তার ধারাবাহিকতা সাজিয়ে রাখার জায়গা। ব্লগ পোস্টের সংখ্যা দিয়ে যে নিজেকে বিচার করে, সে একটা থরোলি লাইফলেস মানুষ।

কি জবাব দেবো, কাকে জবাব দেবো? পারসনালি নিয়েন না। ধরেন আপনি কাউকে বললেন - ভাই অমুক আপনারে ইনডাইরেক্টলি একটা ছাগল মনে করে। সে আপনারে বলল - বললে বলুক। সে আমার গুরু। তার রাইট আছে। বরং আপনি প্রমাণ কইরা দেখান দেখি যে আমি আসলে একটা ছাগল না।

এমতাবস্থায় আপনি এইটা প্রমাণ করার দায়িত্ব নিবেন যে ঐ লোক নির্বোধ না? এমন লোকের সাথে কথা বলার রুচি হবে আপনার?

১৩| ০৪ ঠা মে, ২০২০ দুপুর ১২:৫০

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: শেষের লাইনের উত্তরে মনে হলো দাম্ভিক স্ববিরোধিতা। কিন্তু পরে মনে হলো এমন একজন জ্ঞানী মানুষ তিনি এটা কিভাবে করতে পারেন।

পরে মনে হলো হার্ড বিহেভিয়ারে একটা টার্ম আছে (নীশে এটা কয়েনড আপ করেন) মাস্টার মোরালিটি। যদিও ডিটেইলে কিছু ডিফেরেন্স আছে।

তারপর যেটা বুঝতে পারলাম আমার ব্যাকগ্রাউন্ড এটা না তার ওপর আমি এদের নাম জীবনে প্রথম শুনছি দু একজন ছাড়া। এদের ওপর পড়ালেখা কিছুই নাই। সেহেতু কোনোজাজমেন্টে যাওয়াটা ভুল।

তবে আপনার স্বকীয় চিন্তা চেতনা এবং তার দর্শন নিয়ে লিখতে পারেন। শেখা যাবে।

০৪ ঠা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পেছনের মন্তব্যের ওপর ভিত্তি করে এই লেখায় কোন আলোচনায় অংশ নেবো না সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আলাপে যাওয়ার জন্যে আমার মূল রচনা থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করেই এগোনো বাঞ্ছনীয়।

আমার চিন্তার প্রকাশ আমার সাহিত্যকর্মে। ব্লগে কিছু গল্প আছে, মন চাইলে পড়ে দেখতে পারেন। রকমারিতে কিছু বই আছে। বঙ্গীয় শিল্পকলার ইতিহাস পড়াই বলে ব্লগে ওটা নিয়ে ধারাবাহিক ভাবে লিখছি, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে।

বর্তমানে কি পড়ছি তা জানানো যায়। আমাদের এই অঞ্চলের ভাবুকতার পথরেখা নিয়ে পড়াশোনা করছি ইদানীং। এপ্রিল মাস কেটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক নীরুকুমার চাকমা স্যারের লেখা বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শনের ইতিহাস নিয়ে লেখা একটি বই, এবং পারভেজ হোসেনের সম্পাদনায় মিশেল ফুঁকো পাঠ ও বিবেচনা। পয়লা মে থেকে নিম্নোক্ত বইগুলি থেকে প্রতিদিন এক অধ্যায় করে পড়ছিঃ জাহাঙ্গীরনগরের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইনের লেখা বাংলার দর্শন প্রাক - উপনিবেশ পর্ব, ফরহাদ মজহারের লেখা ভাবান্দোলন, আহমেদ মাজহার - পারভেজ হোসেন সম্পাদনায় লালন ফকির পাঠ ও বিবেচনা, এবং শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগেশ্বরী শিল্প প্রবন্ধাবলী।

আমি অহংকারি নই, আলহামদুলিল্লাহ। তবে ঘুরে ফিরে একই কথা বার বার বুঝিয়ে বলতে ক্লান্তি, বিরক্তি আসে সবার মতই। মুখোমুখি আলোচনায় একপর্যায়ে উঠে দাঁড়িয়ে বুঝিয়ে দেয়া যায়, আর আগ্রহী নই। ব্লগে সে উপায় নেই। কার সাথে কথা বলছি, তার বুঝের মাত্রা কি, রেফারেন্স ধরতে পারবে কিনা, এটাও বোঝা যায় না। এইজন্যে এখানে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা তৈরি হয় বেশী।

না পড়ে জাজ করতে চেষ্টা করছেন না দেখে খুশী হলাম। এটা একটা প্রবণতা যা আজকাল আর দেখা যায় না বলেই চলে। শুভকামনা।

১৪| ০৪ ঠা মে, ২০২০ রাত ৮:৪৭

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: পারভেজ হোসেন কোনটা? নেদারল্যান্ডে এসাইলাম মারছে ও নাকি??আগে ব্লগে লেখতো নিয়মিত??

আপনারে তখনই জাজ করবো যখন আপনি শিশুকামী জামাত জঙ্গিবাদ শোষকশ্রেনীর নগ্ন পদলেহনকারী কেউ হবেন বা তার সম্পর্কে ইনিয়ে বিনিয়ে অজুহাত দেবেন। এছাড়া একজন সুশিক্ষিত চিন্তাশীল মানুষকে শ্রদ্ধা করি, শেখার চেস্টা করি। যে বই গুলোর নাম দিলেন, চেস্টা করবো। টেকনিকাল লাইনের লোক হওয়ায় দর্শন বুঝতে আমার গলদঘর্ম হয়। বেসিক কিছু বুঝতেই চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। বোকার জন্য চেস্টা করেছিলাম এরিস্টটলের দর্শন বোঝার জন্য ইবনে রুশদ গাজ্জালীর কিছু প্রবন্ধ বই সংগ্রহ করে পড়ার। মনে হলো এগুলো বোঝা এত দ্রুত সম্ভব হবে না। এত এত টার্ম ... কিছুক্ষন পর মনে হলো বড় বড় ফ্রেমওয়ার্কের ব্যুতপত্তিগত ডিসকোর্স এগুলো থেকেই।

বাদ দিয়েছি। তার চে কিছুদিন আপনাদের মতো মানুষের প্রবন্ধ পড়ে দেখি পুরোনো পড়া গুলো অনুধাবন করতে পারি কিনা।

কে কি বললো সেসব নিয়ে গা করবেন। বারোয়ারী মানুষের হাটে এরকম থাকবেই। আপনার ভালো জানার কথা কারন আপনার লেখা পড়ে মনে হলো আপনে ভার্সিটির হলে থেকেছেন। সেখানে তো আরো অনেক ক্যাচাল পিডাপিডি র্যাগিং।

জেন রেসি, আপনার মতো আরো কিছু আছে এরা আছেন বলেই ব্লগে কিছু লিখতে ইচ্ছে হয়। হাত খুলুন। পড়বে ধীরে ধীরে... আপনাদের মতো ক্ষুরধার মেধাবী নই বলেই সময় নেই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.