নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুদবুদের ঐ পারের পৃথিবী

২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

আমার মায়ের সব সিদ্ধান্তই হুইমসিক্যাল হয়। হঠাৎ মাথায় ভুত চাপে, সে অনুপাতে সিদ্ধান্ত নেন, কাজ করেন। গত মাস শেষ হবার ঠিক আগের দিন সিদ্ধান্ত দিলেন, আমাদের বাসায় দুধ দেয় যে গোয়ালা, তাকে না করে দেয়া হবে। কারন সে দুধে পানি মেশায়। দুধে পানি কম - বেশী সব গোয়ালাই মেশায়। তবে এখন করোনার সময়। পাশে প্রবাহিত সুতির খাল। মান্ডার পাশ দিয়ে প্রবাহিত এই খালে দুনিয়ার ময়লা ফেলা হয়। এই খালের পানি মিশ্রিত দুধ খাওয়ার অর্থ নেই। অব্যার্থ যুক্তি। কিন্তু তারে না বইলা দেয়ার দায়িত্ব পড়লো আমার কাঁধে। আমি পড়লাম ফাঁপরে। প্রতিদিন দুপুরে, যখন সবাই খেতে বসি বাসায়, ঠিক তখন এই ভদ্রলোক তার দুধ নিয়ে হাজির হতেন। একহাতে ঝোল তরকারি মেখে নীচে যেতাম তার দুধ নিয়ে আসতে। বয়স্ক মানুষ। ষাটের কাছাকাছি বয়স। সঙ্গে তার দশ বছর বয়সী একটি শিশু। তার সন্তান। আমাদের বাসার সামনে একটা কামরাঙ্গা গাছ আছে। ওখানথেকে কামরাঙ্গা পেড়ে খেতো। অন্যান্যদের, সাধারণত দাবড়ানি দিয়ে ধাওয়া দিলেও - এই ছেলেটাকে কিছু বলতাম না। মনে মনে হিসেব করতাম, এই বয়স্ক লোকের সন্তানের বয়স এত কম কেন? দরিদ্র বলে বিয়ে দেরিতে করেছিলেন? সন্তান হচ্ছিল না? নাকি এই ছেলে ওনার আসলে ওনার ছেলে না? আরও একটু পরিচিতি বাড়লে হয়তো জিজ্ঞেস করতাম।

পরেরদিন, যথাসময়ে আবার গোয়ালার ডাক। পায়ে পায়ে নীচে গেলাম। মানুষকে না বলা আমার বরাবরের অস্বস্তির কারন। পকেটে অতিরিক্ত কিছু টাকা। সঙ্গে এই মাসের দুধের দাম।
- 'কাল থেকে আর দুধ রাখবো না চাচা।'
আমার কথায় গোয়ালা বিস্মিত। ওনাকে এর আগে মৃদু অভিযোগ করা হয়েছে ওনার দুধ নিয়ে। কিন্তু না করে দিবো একবারে, এইটা হয়তো কল্পনা করেন নাই।
- 'এই হল আপনার এইমাসের পাওনা টাকা।' ওনাকে ওনার মাসের পাওনা বুঝিয়ে দিলাম, 'আর এই হল আর একমাসের দুধের টাকা। এইটা আপনার জন্যে উপহার।'
গোয়ালা আবারো বিস্মিত।
- ' আমি যেখানে কাজ করি , চাচা, সেখানে কাউকে না নোটিশ দিয়ে ছাটাই করলে সাধারণত একমাসের বেতন এক্সট্রা দিয়ে দেয়। আমিও তাই করলাম আপনার সঙ্গে।'
- 'টাকা দিছেন যখন, দুধ নিবেন না কেন বাবা? কালকে থেকে আপনাদের ইস্পিশাল দুধ দিবো। প্লাস্টিকের বুতলে ভইরা।'
আমার জিজ্ঞেস করতে মন চাইছিল, আগেই প্লাস্টিকের বুতলে ভরা ইস্পিশাল দুধ কেন দিলেন না আমাদের। তাহলে হয়তো আজকের দিন দেখা লাগতো না।
যাই হোক, এরপর স্বল্পকথায় ভদ্রলোককে বিদায় দিলাম, ওনার শিশুপুত্রের মাথার চুলগুলো হাত দিয়ে নেড়ে এলোমেলো করে দিয়ে।

গত একমাস ধরে আমি প্রায়দিন দুপুর বেলা খেয়াল করি, এই গোয়ালা দুধভর্তি পাত্র নিয়ে ভ্যানে করে টুনটুন ঘণ্টি বাজাতে বাজাতে আমাদের বাড়ির সামনের ব্লকের রাস্তা দিয়ে চলে যান। তার সঙ্গে থাকে তার শিশুপুত্র। যতক্ষণ তাকে দেখা যায়, আমি চেয়ে থাকি, এই আশায় যে - হয়তো তিনি একবারের জন্যে তাকাবেন আমাদের বাড়ির দিকে। এটা মনে করে যে, এই বাড়ির মানুষজন তার সঙ্গে একদিন মানবিক আচরণ করেছিল, তাকে না করে দেয়ার সময়।

কিন্তু তিনি তাকান না। কোনদিন না।

আমাদের মত একটু সলভেন্ট মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকদের রোম্যান্টিক বাবলের মধ্যে এই দিন এনে দিন খাওয়া লোকদের বসবাস নয়।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: দুধ বিক্রেতার জন্য মায়া লাগছে।
৬০ বছর বয়স! একটা দশ বছরের শিশু সাথে করে নিয়ে দুধ দিতে আসেন।

২| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৮:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


গোয়ালা লোকটি যদি মানুষের মনকে বুঝতে পারতো, আজীবন ভালো ব্যবসা করতে পারতো; সামান্য বুদ্ধির দরকার, খাঁটি দুধ বিক্রয় করা।

৩| ২৮ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ৯:৩৮

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আবার সেই গোয়ালা হতে আবার দুধ নেওয়া শুরু করেন। কারণ তার প্রতি আপনার মায়া দেখছি

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.