নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

গতমাসে (ডিসেম্বর ২০২০) পড়া কিছু বই

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৮

বছরের শেষ মাসে এসে পাঁচটি বই পড়েছি। তাদের ব্যাপারে সংক্ষেপে লিখছি।

.

১। বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ - জওহরলাল নেহরু

এ বইটি এ বছরে পড়া সেরা দু'তিনটি বইয়ের একটি। বিভক্ত ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহললাল নেহরু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের দায়ে জেলে থাকা অবস্থায় নিজের কন্যা ইন্দিরা গান্ধীকে ১৯৩১ সাল থেকে নিয়ে ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত যে ১৯৬ টি চিঠি লেখেন, সে চিঠিগুলোর সংকলন এ বই। পৃষ্ঠা সঙ্খ্যা ১০০৯। আনন্দ পাবলিশার্সের প্রকাশনা।
এই ইতিহাস বইটির বৈশিষ্ট্য এই যে, প্রায় প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে নিয়ে ধারাবাহিক বর্ণনায় তিনি ১৯৩৩ সাল পর্যন্ত এসে পৌঁছান। তবে এই বর্ণনা এমন যে, ধরুন, খৃষ্টপূর্ব ৩০০ শতকে সারা পৃথিবীর কি অবস্থা ছিল, সে ব্যাপারে একটা অভারঅল ধারনা তিনি দেন পরপর পাঁচটি চিঠিতে। এমন নয় যে প্রথমে ভারতবর্ষের দুহাজার বছরের ইতিহাস লিখলেন, তারপর চীনের ইতিহাস, তারপর ইউরোপের, তারপর আরবের। একই সঙ্গে একটা শতক জুড়ে কি চলছে গোটা পৃথিবীতে তার একটা সামগ্রিক বর্ণনা এই বইয়ের বিশেষত্ব।
.
বাঙ্গালী মুসলমান পরিবারের সন্তান আমি। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলতে পারি, নেহরু এই ইতিহাসের বইয়ে বায়াজড মতামত দেন নি। তার ক্ষোভ ছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে, আর দুরন্ত আকর্ষণ ছিল সোভিয়েত বিপ্লব ও সমাজতন্ত্রের প্রতি। এ দুটো বিষয় তার অবস্থান বরাবর স্পষ্ট ছিল। ইদানীংকার জেনোফোবিক ইতিহাসের বর্ণনা তার বইয়ে নেই। বরং তাকে আফসোস করতে দেখেছি, মুসলিম শাসনের অধীনে ভারত যদি এলোই, তবে সেটা তুর্কী মুসলিমদের অধীনে কেন হল। তুর্কীদের বদলে যেই আরবরা ইউরোপের রেনেসাঁকে ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করেছে, তাদের সঙ্গে ভারতীয় সভ্যতার পরিচয় হলে তা উভয় জাতির জন্যে সাংস্কৃতিক আদান প্রদানের জন্যে একটা সুবর্ণ সুযোগ হত।
.
১০০০ পৃষ্ঠার বইয়ের এর চে সংক্ষেপে রিভিউ লেখা সম্ভব ছিল না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে চোখ বোলানোর জন্যে দারুণ এক বই এটি।



২। রামকৃষ্ণের জীবনী - রোমো র‍্যোলা
.
এ বছর একটা বড় সময় আমার কেটেছে তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব অধ্যায়নে। নিজের ধর্মের পাশাপাশি বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্ম, এবং তাদের ধর্ম প্রচারকদের জীবন নিয়ে পড়েছি একটা লম্বা সময় ধরে। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা কমিয়ে আনতে আমাদের পারস্পারিক এ বোঝাপড়া আমি জরুরী বলে মনে করি।
.
রোমো র‍্যোলা শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস, এবং তার শ্রেষ্ঠ শিষ্য স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে ফরাসী ভাষায় দুটো জীবনী লেখেন। সেটার প্রথমটির বঙ্গানুবাদ পড়েছি এ মাসে। বঙ্গঅঞ্চল গৌড়ীয় বৈষ্ণব মতবাদের সূতিকাগার হলেও এখানে বামাচারী, শাক্তের সংখ্যাও নেহায়েত কম ছিল না। রামকৃষ্ণ পরমহংসের জন্ম - বেড়ে ওঠা - ভারতের বিবিধ অঞ্চলের হিন্দুধর্মের বড়বড় সংস্কারক, আদি ব্রাহ্ম সমাজের দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, ব্রাহ্মসমাজের আর এক সেক্টের প্রধান কেশবচন্দ্র সেনের সঙ্গে মতাদর্শের আদান প্রদান, ছাত্র নরেনের তার সংস্পর্শে এসে স্বামী বিবেকানন্দে পরিণত হওয়া ইত্যাদি বেশ চিত্তাকর্ষক গল্পের আকারে লেখা বইটিতে।
.
একই সময়ে ভারতে দেওবন্দী মুভমেন্ট চলছিল। ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়ের নেতৃস্থানীয় লোকেদের সঙ্গে শ্রীরামকৃষ্ণের যদি সাক্ষাতের কোন ঘটনা থেকে থাকে তার বর্ণনা মিস করেছি এই বইয়ে। অথবা, ইসলামের ইস্যুটিকেও বা তিনি কিভাবে ডিল করেছেন, তার সরাসরি কোন বর্ণনা নেই, যা থাকা প্রাসঙ্গিক ছিল। কেননা, আমাদের হিন্দু বলি , বা মুসলিম, বা বৌদ্ধ - আমাদের ধর্মীয় আইডেন্টিটির অনেকাংশই গড়ে উঠেছে একে অপরের ঘাতে প্রতিঘাতে। বাংলা অনুবাদকের নিজস্ব ধর্মীয় পরিচয়ও প্রায়ই মূর্ত হয়ে ওঠে বইটির অনুবাদে। শ্রীরামকৃষ্ণের জীবনী দারুণ লেগেছে সব মিলিয়ে। ওনার গভীরতা, মেটাফোর ব্যবহার করে জীবনকে বোঝানোর সক্ষমতা ছিল দারুণ।
.

৩। মুইনুদ্দিন চিশতী - মেহরু জাফর
.
নেক নিয়তে ভুল কায়দায় লেখা একটি বইয়ের প্রকৃষ্ট উদাহরণ এ বই।
.
মেহরু জাফর পেশায় একজন সাংবাদিক, এবং তার এ বই লেখার পেছনে ইচ্ছে মূলত এটা ছিল যে - খাজা মুইনুদ্দিন চিশতী রাহিমাহুমুল্লাহ কিভাবে তুর্কী আক্রমণের সময়েও ভারতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সচেষ্ট ছিলেন, এটা দেখানো। দিল্লী ও আজমিরের সম্রাট পৃথ্বীরাজ চৌহানকে মহান করে দেখানোর একটা প্রচেষ্টা এই বইয়ে আছে, যা আমি চেষ্টা করেছি ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবার। কারন, আমাদের ধর্মীয় ন্যারেটিভের যে বইই পড়ি না কেন, অধিকাংশতেই জেনোফোবিয়ার চর্চা দেখা যায়। মানে, মুসলিম ইতিহাসবিদ লিখছেন মানেই সেন - বর্মণ সব বাদশাহরাই অত্যাচারী। আবার হিন্দু ইতিহাসবিদরা লিখছেন তো, মুসলমানেরা এসেছে কেবল মন্দির ধ্বংস করতে, তলোয়ার ঘোরাতে ঘোরাতে। এই তো আমাদের টিপিক্যাল বর্ণনা। কিন্তু হিন্দু হোক বা মুসলিম, সম্রাট সবাই যে দোষেগুনেই মানুষ, সবারই কিছু গুণ, কিছু দোষ ছিল - এটা মেনে নিয়ে ইতিহাস পাঠের প্রবণতা থেকে আমরা দূরে। অথচ এই দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা, যে সবাইকে নিজ নিজ কন্টেক্সট থেকে বোঝার প্রচেষ্টা, হয়তো আমাদের মধ্যে হানাহানি, বিবাদ আর একটু কমিয়ে আনত।
.
কিন্তু সমস্যা বাঝে, যখন লেখিকা উপন্যাস রচনার মত গল্প তৈরি করা শুরু করেন। দেখান যে তুর্কী সেনাপতিরা এসে মইনুদ্দিন চিশতী রঃ এর মত একজন বড়মাপের সন্ন্যাসী - বুজুর্গকে মেরে আধমরা করে ফেলে রাখেন। একজন রাজপুত নারী এসে খাজাসাহেবকে উদ্ধার করেন। তাদের মধ্যে ভাবভালোবাসার উদয় হয়। তারপর তারা পরিনয় বন্ধনে আবদ্ধ হন। খাজা সাহেব নাকি কখনো তার স্ত্রীকে ধর্ম পরিবর্তন করতে বলেন নি। দেখানো হয়, খাজাসাহেব শিয়া অরিজিনের বুজুর্গ।
.
লেখিকা মাঝেমাঝেই মইনুদ্দিন চিশতী রঃ এর হয়ে চিন্তা করার, সংলাপ তৈরি করার চেষ্টা করেন, যেটা আমার কাছে এই বুজুর্গকে অসম্মান করা মনে হয়েছে। আমার মত হল এই যে, যেকোনো ধর্মীয় মহাপুরুষ, যারা কালোত্তীর্ণ, তাদের মননে - মস্তিষ্কে ঢোকার মত মেধা আমার - আমাদের নেই। তাদের হয়ে সংলাপ রচনা করবার চেষ্টাটাও, যদি কোন ঐতিহাসিক সত্যের উপর ভিত্তি করে না হয়ে থাকে, তবে তা কেবল ধৃষ্টতাই।
.
খুব আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম, মইনুদ্দিন চিশতী রঃ আধ্যাত্মিক কি বাণী এই বইয়ে লেখিকা উল্লেখ করেন। হতাশ হতে হয়েছে। রেজা আসলান, বা তারেক রামাদানের নাম আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শুনে থাকবেন। লেখিকা রেজা আসলান, তারেক রামাদানের বিবিধ বই থেকে সূফীবাদের নানা ব্যাখ্যা হাজির করে পরে এটা জুড়ে দিয়ে দায় সেরেছেন যে - মইনুদ্দিন চিশতীরো নিশ্চয়ই ধারণা অনুরূপ কিছুই ছিল। রেজা আসলান, আর তারিক রামাদানের মতবাদ যদি আমি জানতে চাই, তাহলে তা তাদের বই সরাসরি পড়েই শেখা সম্ভব। এভাবে কেন?
.
কোরআন, বা রাসুল সঃ সংক্রান্ত মইনুদ্দিন চিশতী রঃ এর কোন মতামত, কোন ব্যাখ্যা এই বইয়ে নেই। বইয়ের শেষে দেয়া রেফারেন্সের ৯৯% ইংরেজ লেখকদের ইতিহাস ভিত্তিক বই। ভারত - ইরান - আফগানিস্তান - তুর্কী - আরব কোন লেখকের বইয়ের রেফারেন্স এই বই লেখার সময় ব্যবহার করা হয় নি।
.
এই বই পড়ার পর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, ইসলাম/সুফিজম সংক্রান্ত ইংরেজিতে লেখা কোন বই আর কখনোই কিনব না, যদি না তা প্রথাসিদ্ধ স্কলারের লেখা বই, বা তার অনুবাদ না হয়ে থাকে।


.
৪। আহমদ ছফা উপন্যাস সমগ্র - মাওলা ব্রাদার্স
.
আহমদ ছফার এ বইয়ে ওনার ৮ টি উপন্যাসই আছে, আমি পড়ে সারতে পেরেছি ৭ টি। ওনার ওঙ্কার, গাভী বিত্তান্ত - ইত্যাদি উপন্যাস তো বিখ্যাত, সবাই তার নাম জানে। একই সঙ্গে পড়লাম ওনার একজন আলী কেনান, মরণ বিলাস, অলাতচক্র, এবং পুষ্প বৃক্ষ বিহঙ্গ পূরাণ। আমার বরং সবচে পছন্দ হয়েছে ওনার লেখা একদম প্রথম উপন্যাস - সূর্য তুমি সাথী। কারন ছফার বাকি সবগুলি উপন্যাসে ছফা প্রায় সশরীরে হাজির। সূর্য তুমি সাথী উপন্যাসের কাহিনীই খানিকটা কাল্পনিক। ফিকশনাল। অর্ধেক নারী অর্ধেক ঈশ্বরীটা এখনো পড়া হয় নি। এই উপন্যাস পড়েই ছফাকে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক নারী বিদ্বেষী বলেছিলেন।
.
ছফার ফেমিনিজম নিয়ে নয়, বরং এই বাংলায় নারীবাদের চর্চা যেভাবে হয়েছে, যে এলিট ক্লাস নারীবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছে, তাদের নিয়েই মনে হয় আপত্তি ছিল। এছাড়াও ছফা সাংঘাতিক রাজনীতি সচেতন লেখক ছিলেন, এতে তো কোন সন্দেহ নেই। এরশাদ, বা বিএনপি সরকারের আমলে তিনি আওয়ামী লীগ, বা বঙ্গবন্ধুর এমন সব সমালোচনা করেছেন, তার উপন্যাসগুলিতেই (একজন আলী কেনান, বা অলাতচক্র), যেটা তিনি পরবর্তীতে করলে সম্ভাবনা ছিল তাকে দেশদ্রোহী ঘোষণা দেবার। ছফার উপন্যাসগুলো অতোটা আলোচনায় নেই, যতটা তার বাঙ্গালী মুসলমানের মন, বা বুদ্ধিবৃত্তির নতুন বিন্যাসের মত প্রবন্ধসমূহের আছে, এটা একদিক থেকে ছফার জন্যে ভালোই।
.
ছফার উপন্যাস আমার ভালো লাগে নি, এই কারনে যে, এগুলো পড়লে মনে হয় ছফার ডায়রি পড়ছি। যেভাবে প্লট তৈরি করে জমিয়ে গল্প বলেন ইলিয়াস, বা হাসান আজিজুল হক, অথবা শহিদুল জহির - তার কোন প্রচেষ্টা ছফার মধ্যে দেখা যায় না। ছফা তার প্রবন্ধেই অনন্য, ক্ষুরধার, মননশীল।
.


৫। হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি - গোলাম মুরশিদ

.
স্রেফ বাঙ্গালী জাতির ইতিবৃত্ত পড়বার জন্যেই বইটি কেনা, এবং একটু একটু করে পড়ে চলা। ৫২০ পৃষ্ঠার এ বইয়ের ৪/৫ অংশ পড়ে শেষ করেছি। শেষ দুটো চ্যাপ্টার এখন বাকি। প্রথমা পুরস্কারে ভূষিত বইটার সমস্যা বলুন, আর গুণ বলুন, সেটা এটাই যে - এত এত তথ্য এতে ঠেসে পোরা, দাগিয়ে - নোট নিয়ে পড়তে পড়তে মাথা ঘুলিয়ে যায়। নীহাররঞ্জন, বা দীনেশচন্দ্র সেনের ইতিহাস বইয়ের সঙ্গে এই বইয়ের একটা তফাৎ হল - মুরশিদ সাহেব এখানে ধারাবাহিক ইতিহাসের বর্ণনায় না গিয়ে বাঙ্গালী সংস্কৃতির এক একটি অনুষঙ্গ তুলে ধরে তার ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন বাঙ্গালীর ভাষা, বাঙ্গালীর পোশাক, বাঙ্গালীর ধর্ম, বাঙ্গালির পালা পার্বণ, বাঙ্গালীর খাবার, বাঙ্গালীর প্রেম ও বিয়ে - এরকম।
.
সংগ্রহে রাখা, এবং একটু একটু করে নিয়মিত পড়ে চলার মত একটি বই। পশ্চিমবঙ্গে মুরশেদ সাহেবের প্রতিষ্ঠা আছে বলে বাংলাদেশে ফরহাদ মজহার, বা সলিমুল্লাহ খান সাহেব মুরশেদ সাহেবের ওপর বেশ বেজার। ফরহাদ মজহারের ভাবান্দোলন বইটি পড়েছি এ বছর। এ বইটির প্রথম ৬০ পাতা নিয়ে যে সূচনা - তার একটা বড় অংশ মুরশেদ সাহেব, আর তার এ বইয়ের সমালোচনা করে। হাজার বছর পূর্বে বাঙ্গালী জাতির অস্তিত্ব ছিল কিনা, বাংলা ভাষা বলতে আজ যা বোঝায়, তার অস্তিত্ব ছিল কিনা এ ধরনের প্রশ্ন উঠে এসেছে বারবার। আগ্রহী পাঠককে সিদ্ধান্ত নিতে হবে দুদিকের বয়ান পড়েই।

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


নববর্ষের শুভেচ্ছা।
গত ১ মাসে আপনি অনেক জ্ঞানী হয়ে গেছেন, সন্দেহ নেই।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনাকেও নববর্ষের শুভেচ্ছা। মন্তব্যের দ্বিতীয়াংশের সঙ্গে বেজায়রকম সহমত।

২| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: তেমন কোনো বই পড়া হয়নি, আপনি ভালো লিখেছেন।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৩৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ। পড়ুন। পড়লে আলোচনা করা যাবে। শুভকামনা।

৩| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৪৪

স্থিতধী বলেছেন: সবশেষ বইটি কেবল আমার পড়া আছে , খুব সম্ভব ২০১৫-১৬ এর দিকে পড়েছিলাম এবং এটা আমার প্রিয় বই গুলোর মাঝে একটি । সেকারনেই আমার আরেক বই পড়ুয়া বন্ধুর জন্মদিনে এই বইটা উপহার দিয়েছিলাম। তাঁরও ভালো লেগেছে বইটা । ঝরঝরে বৈঠকি ঢঙে লেখা ইতিহাসের নন – একাডেমিক বই । নীহার রঞ্জন সাহেবের বাঙ্গালির ইতিহাসের বইটি অনেক বেশী একাডেমিক লাগে, পড়তে গিয়ে এগুতে কষ্ট হয়, অবশ্য ওটা আমি কাঁচা বয়সে পড়ার চেষ্টার কারনে হয়তোবা । তুলনায় গোলাম মুর্শিদ সাহেবের বইটি অনেক পাঠক বান্ধব , একটা কন্টেক্সট ধরে ধরে ওনার ইতিহাসের আলোচনার যে কথা বললেন সেটা খুব সত্য এবং সেটা পাঠক কে সহজে আকৃষ্ট করতে পারে । নজরুল – রবীন্দ্র নিয়ে ওনার কিছু বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে । ওনার নজরুল সমালোচনার অংশটি সলিমুল্লাহ খানের ভালো লাগেনি বলে তিনি নানা জায়গায় এই বিষয়ে এই লেখকের বেশ নিন্দা করেন যা শ্যালো নিন্দার মতো লেগেছে কেবল । বাঙালি মাত্রই সমালোচক, আর সে বাঙালি যদি হয় বাম ঘরানার তবে কম করে সমালোচনার মাত্রা দু চিমটি বাড়েই । ফলে গোলাম মুর্শিদের সাথে বাঙালির ইতিহাস প্রসঙ্গে সলিমুল্লাহ খান ও ফরহাদ মযহারের প্রবল সমালোচনা মুখর হওয়াটা জেনে অবাক হচ্ছিনা ।

আপনার জন্য ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা রইলো ।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:৫৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার প্রতিও ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। আগামীকাল সকালে একটি বিস্তারিত মন্তব্য করবার ইচ্ছে রাখি।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:০৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ছড়িয়ে মন্তব্য করতে চাই না, সংক্ষেপে বলি। নজরুল ইসলামের সমালোচনার চেয়েও গোলাম মুরশেদ সাহেবকে মজহার - সলিমুল্লাহ ঘরানার লোকেরা বেশি অপছন্দ করেন তার "হাজার বছরের বাঙ্গালী" - কনসেপ্টের জন্যে। যেকোনো একটা জাতীয় ক্রাইসিসের মুহূর্তে জাতীয়তাবাদ লড়াইয়ের হাতিয়ার। সেই ক্রাইসিস চলে গেলে উক্ত জাতীয়তাবাদ দমন - পীড়নের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে, এই হচ্ছে মজহার - সলিমুল্লাহ ঘরানার মতবাদ। মুরশেদ উক্ত জাতীয়তাবাদকে স্রেফ সুপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন, তাই নয়, তার একটা হাজার বছরের ঐতিহাসিক কনটেক্সট তৈরি করছেন। কাজেই ফরহাদ - সলিমদের কূপিত হওয়া। বিস্তারিত জানতে ফরহাদ মজহারের ভাবান্দোলন বইটির সূচনার অধ্যায়টি পড়ুন। মুরশেদ সাহেব ও তার এ বইয়ের নাম ধরে প্রায় ৬০ পাতা জুড়ে সমালোচনা আছে তাতে। মুরশেদ সাহেব বামপন্থী বলে সলিম - মজহারের গাত্রদাহ, এর সঙ্গে আমি একমত নই। মজহার নিজেকে ভাসানীপন্থী বাম ঘরানার লোক বলে দাবী করেন।

৪| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৬

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: বইগুলো লিষ্ট করে রাখলাম।
কাইন্ডলি আমাকে কিছু ভালো বইয়ের তালিকা দিকে উপকৃত হতাম।

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ভালো বই কিছু নেই ভাই। যেমন নেই প্রকৃত ইতিহাস বলে কিছু। সবকিছুই দৃষ্টিভঙ্গী, আর প্রেক্ষাপটের ওপর নির্ভর করে। আমার পৃথিবী দেখার দৃষ্টিভঙ্গী হচ্ছে ব্রাহ্মণ্যবাদ, ও বৈশ্বিক সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী চাষাভুসা বাঙ্গালী মুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গী। ভালো বই বলতে আমি সেগুলোই রেফার করবো, যা আমার দৃষ্টিভঙ্গীতে ভালো।

বাংলা সাহিত্যের জন্যে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শহিদুল জহির, হাসান আজিজুল হক পড়তে পারেন। প্রবন্ধে ডঃ আহমদ শরীফ, আহমদ ছফা, ডঃ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ইতিহাসের জন্যে উপরের দুটো বই। বাংলার চিন্তার ইতিহাসের জন্যে রায়হান রাইন সাহেবের বইগুলো কিনতে পারেন। পাশ্চাত্য দর্শনের জন্যে সোফির জগত। পৃথিবীর ইতিহাসের এক কাউন্টার ন্যারেটিভ পাবেন ইউভাল নোয়াহ হারারির সদ্য প্রকাশিত তিনটি বইয়ে। এইতো।

৫| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি নিজের বইগুলো পড়েন?

০১ লা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পড়ি।

৬| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: ভেরি গুড। প্রতিটা বই গুরুত্বপূর্ন। সময়টা ভালো লাজে লাগিয়েছেন।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সময় কাজে লাগানোর জন্যে বই পড়ি, ব্যাপারটা এমন না। শামসুর রাহমান তার ঢাকা বিষয়ক স্মৃতিকথায় লিখেছিলেন, কিছুদিন বইয়ের সংস্পর্শে না থাকলে তার নিজেকে প্রস্তরযুগের মানুষের মত লাগে। আমারও বইয়ের সংস্পর্শে না থাকলে অনেকটা সেরকম অনুভূতি হয়।

৭| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:০৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমার বই পড়া এখন হয় না। একেবারেই হয় না। অথচ আমি প্রচুর পড়তে চাই।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনার আফসোস আপনাকে মোকামে মঞ্জিলের দিকে নিয়ে যাক এই কামনা করি।

৮| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৪৮

মেরুভাল্লুক বলেছেন: গত পাঁচ মাসে আমার পড়া বই এর সংখ্যা এক অথবা দুই। কাজের চাপে পড়া হয় না। আবার এত বই একসাথে জমে আছে, কোনটা রেখে কোনটা পড়ব এই অবস্থা

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৫৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: কাজের চাপ নেই, পৃথিবীতে এমন কেউ নেই। সবই প্রেফারেন্সের ব্যাপার। যখন ওয়ার্ক ফ্রম হোম ছিল না, আমার পুরো বছর জুড়ে বই পড়া হত ঢাকা শহরের ট্রাফিকে। তাতেও অনেক পড়া হয়ে যেতো।

৯| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৪

স্থিতধী বলেছেন: মুরশেদ সাহেব বামপন্থী বলে সলিম - মজহারের গাত্রদাহ.....

উহু, মুরশেদ সাহেব বামপন্থী আমি ঐ সেন্সে বলিনি, উল্টোটা বুঝিয়েছিলাম । মুর্শিদ সাহেবের চেয়ে মযহার ও সলিমুল্লাহ সাহেব অনেক বেশীভাবে বামপন্থী স্কুল অফ থটের মানুষ। আর তাই জাতীয়তাবাদ, আমলাতন্ত্র , ধর্ম ইত্যাদি রাজনৈতিক, পৌরনীতিক , সামাজিক ইস্যুগুলোতে বামরা সবসময় কিছু ভিন্ন আরগুমেন্ট আনেন। সেটা করতে গিয়ে প্রায়ই বিরোধিতার খাতিরে বিরোধিতা টাইপ শ্যালো বক্তব্য রেখে বসেন । মুর্শিদ সাহেবের বইটি জাতীয়তাবাদের হালে পানি দেবার মতো খুব শক্ত বই সেটা পড়ে মনে হয়নি । অনেকেই বইটিকে বাঙালির সামগ্রিক ইতিহাস বোঝার জন্য একটি সুখপাঠ্য প্রবেশিকা বই হিসেবে ধরেন, সেটাই বরং অনেকটা সঠিক মনে হয়েছে ।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: একটা বই তার শিরোনামে দাবী করছে বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের বয়স হাজার বছর - আর আপনি বলছেন সে বই জাতীয়তাবাদের হালে পানি ঢালছে না? আর, সলিমুল্লাহ খান বামপন্থী? দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টা ভদ্রলোক বদরুদ্দিন উমরের চৌদ্দগুষ্ঠি উদ্ধার করে গালাগাল করেন। শাপলা চত্বরের ঘটনার পর থেকেই তিনি আওয়ামী ঘরানার বুদ্ধিজীবী। ফরহাদ মজহারের অনেকগুলি পরস্পর বিরোধী দাবীর একটি হচ্ছে তিনি একই সঙ্গে ভাসানীপন্থী বামপন্থী, তিনি ইসলামী বামপন্থী, তিনি নিত্যানন্দপন্থী বামপন্থী - ইত্যাদি। ফরহাদ ক্রুকেড, কিন্তু কখনোই শ্যালো নন।

১০| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:০৫

স্থিতধী বলেছেন: বাংলাদেশের বামপন্থীধারা কত গুলো ভাগে বিভক্ত তা নিশ্চয়ই জানেন।খুব- ই স্বাভাবিক, বদরুদ্দিন উমর কে এনারা সবাই একি ভাবে বিশ্লেষণ করবেন না, যার যার ধারা আর ব্যাক্তিগত চিন্তা বা এজেন্ডা ওতে মেশাবেন। সলিমুল্লা খান এবং ফরহাদ মজহার এই দুজনের একটি জায়গাতে প্রবল মিল আছে বেশ ভিন্ন পথের মানুষ হলেও; আইকনক্লাস্টিক হবার চেষ্টা করে কিছু সেন্সেইশনাল পারস্পেক্টিভ/ বক্তব্য কে সামনে রেখে আলোচিত হওয়া । আর যিনি ক্রুকড হতে পারেন, তাঁর মাঝে মাঝে শ্যালো হওয়াটা আশ্চর্যজনক নয় মোটেও ।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:১২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আমার উপরের মন্তব্যে প্রস্তাবিত কোন প্রশ্ন / স্টেটমেন্টের ( মুরশেদ ও বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদের প্রোপাগেশন, সলিমুল্লাহ খান বামপন্থী কি না) যথাযথ উত্তর আপনার প্রতিমন্তব্যে পাই নি। যেহেতু যাদের নাম মেনশন করা হচ্ছে, তাদের কোন স্পেসিফিক প্রবন্ধ / বইয়ের সুত্র ধরে আপনি মন্তব্য করছেন না, ব্যক্তিগত মতামতের উপর ভিত্তি করে এই আলোচনা আর সামনে টানার আগ্রহ পাচ্ছি না।

১১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

তারেক ফাহিম বলেছেন: বই জমে আছে ৫টা পড়তে পারিনা, সময়ের অভাবে।


১২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: জনাব, আমার দুটা মন্তব্যের খুব সুন্দর উত্তর দিয়েছেন। এজন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।

১৩| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৫৬

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
পড়তে আমারও বেশ লাগে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.