নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া - ২

০৫ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৫



পুরুষ হিসেবে সমাজের একটা সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে নারীদের কেমন আচরন করা উচিৎ এটা নিয়ে মন্তব্য করাটা আমি সমীচীন মনে করি না। ঐতিহাসিকভাবে,এমনকি এখনও নারীদের যেমনভাবে দমন, নিষ্পেষণ চলে, সারা বিশ্ব আমার প্রসঙ্গ নয়, কাজেই তার কথা বাদ দিই, খালি বাংলাদেশেই যে, আমার আসলে পুরুষ হিসেবে মুখও নেই সামাজিক - অর্থনৈতিক - রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীমুক্তির যেসকল সংগ্রাম চলছে, তার কোন সমালোচনা করার স্কোপ থাকলেও, তার সমালোচনা করবার। তবে ২০১৯ সালের একটা চলচিত্র নির্মাণ সংশ্লিষ্ট ওয়ার্কশপের কথা আমার প্রায়ই মনে পড়ে, বিরূপ কিছু অভিজ্ঞতার কারনে।

আমি দীর্ঘদিন যাবত বাসায় একটি স্টুডিও বসানোর পরিকল্পনা করে আসছি এবং তার জন্যে টাকা জমাচ্ছি, যাতে অন্তত আমার নিজের অরিজিন্যাল যে গানগুলো আছে, সেগুলি রেকর্ড করার একটা হিল্লে হয়। ২০১৯ সালের জুন / জুলাই মাসের দিকে আমার পার্সোনাল মেইলে জাতিসংঘের নারীসংক্রান্ত যে উইং বাংলাদেশে কাজ করে (ইউএন ওমেন বাংলাদেশ) তাদের তরফ থেকে, কিভাবে, বা কোন সূত্রে জানিনা, একটা মেইল আসে। মেইলটা সরাসরি তাদের অফিশিয়াল ইমেইল থেকে পাঠানো হয় নি। তাদের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির তরফ থেকে পাঠানো হয়েছিল। এমা ওয়াটসন ২০১৪ সালে মেন ফর ওমেন হ্যাশট্যাগে একটা মুভমেন্ট চালু করেন, যেখানে নারীদের অধিকার রক্ষায় পুরুষরা কিভাবে এগিয়ে আসতে পারে, এ নিয়ে একটা ক্যাম্পেইন হয়েছিল। বাংলাদেশে সে ওয়েভ পৌঁছুতে পৌঁছুতে ২০১৯ সাল লেগে যায়। যাক, সে ইমেইলটি ছিল একটা শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল সংক্রান্ত, মেন ফর ওমেন ইস্যুতেই। তারা প্রাথমিকভাবে স্ক্রিপ্ট চেয়ে পাঠায়। দেখলাম, পুরস্কারের মুল্য ৩০,০০০ টাকা। টাকাটা পেলে আমার স্টুডিওর কাজে লাগাবো এই ভেবে গুছিয়ে একমাস সময় নিয়ে একটা স্ক্রিপ্ট লিখে পাঠালাম। আরও একমাস পর একটা মেইল এলো ফাইনাল সিলেকশনের। দশজনকে নিয়ে দু'দিনের ওয়ার্কশপ হবে শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে। বিষয়, চলচিত্র নির্মাণ।

ইউনিভার্সিটি থেকে দু'দিনের ক্যাজুয়াল লিভ নিয়ে গেলাম ওয়ার্কশপ অ্যাটেন্ড করতে। গল্প লম্বা। গুছিয়ে বলতে গেলে অনেক কথা বলা লাগবে। তার চে' বরং যে জায়গা থেকে আমার বিরক্তির সুত্রপাত, সে জায়গাটুকুতে আসি।

চলচিত্র নির্মাণের ওয়ার্কশপ জুতা খুলিয়ে কেন করানো লাগবে, আমার মাথায় ধরল না, কিন্তু সবাইকেই বাধ্য করানো হল জুতো খুলে ওয়ার্কশপের জন্যে ভাড়া নেয়া রুমে প্রবেশ করতে। শিল্পকলার নাট্যশালার ঝাড়া হাত পা ফ্লোর। কোন কার্পেটও নেই। খালি মেঝেতে সবাই জুতো ছাড়া ঘুরে বেড়াচ্ছি খারাপ লাগছিল না। কিন্তু উদ্বোধনী পর্বে ইউএন ওমেন বাংলাদেশের তরফ থেকে যে দুজন নারী ফ্যাসিলিটেটর আমাদের সঙ্গে সংযুক্ত হলেন তাদের একজনও জুতো খুললেন না। হাইহিলের জুতো ঠকঠকিয়ে ঔপনিবেশিক প্রভুর কেতায় তাদের রুমে ঢোকাটা রুমের মধ্যে একটা শ্রেণীবৈষম্য প্রকট করে তুলল। আমরা একদল জুতোছাড়া, আর তারা দু'জন জুতো পায়ে। তখন একজন কথা বলছিলেন, মাইক হাতে। উক্ত দুই ভদ্রমহিলার একজন এসেই যেভাবে তার হাত থেকে মাইক নিয়ে গিয়ে নারীবাদের উপর খুব বেসিক লেভেলে বক্তৃতা দেয়া শুরু করলেন, আমার বিরক্ত লাগলো। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে আমার পড়াশোনা। সাহিত্যতত্ত্ব, নারীবাদী সাহিত্য ও সাহিত্যতত্ত্বের উপর আমাদের শত শত মার্ক্সের কোর্স ছিল। আমার একাধিক পেপার আছে জুলিয়া ক্রিস্তেভার কাজের ওপর। তবুও চুপ রইলাম এটা ভেবে যে আমার জন্যে কথাগুলো নতুন না হলেও বাংলাদেশের নব্বই - পঁচানব্বই শতাংশ পুরুষদের জন্যে নারীবাদী তত্ত্ব একটা অপরিচিত জিনিস। অনেকের জন্যে রসিকতার বস্তু ও। কাজেই এধরনের প্রিমিটিভ আলোচনা বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক।

ভদ্রমহিলা যতক্ষণ ধরে আমাদের নারীবাদে ব্যাপটাইজ করতে থাকলেন, আমি খেয়াল করে তাকে রিড করলাম। তার পোশাক, তার চিবিয়ে চিবিয়ে বলা ইংরেজির একসেন্ট - সবকিছু থেকেই একটা এলিট সমাজের বাসিন্দার আভা ঠিকরে বেরুচ্ছিলো। তার কথায়, বক্তৃতায় একদল 'অশিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত' পুরুষদের বিপ্লবী নারীবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করবার এত উগ্র আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছিল যে, তার কথার মাঝে নাক গলানোর কোন সুযোগ বা সাহস, প্রথম এক ঘণ্টায় আমাদের কারই হয় নি। মধ্যিখানে আমাদেরকে দুইভাগে ভাগ করে দুটো ভিন্ন ভিন্ন ওমেন এম্পাওয়ারমেন্টের নাটিকা, তার বক্তৃতার মধ্যেই করিয়ে নিলেন তিনি, যাতে আমার কাছে আমার ভূমিকা পরিপূর্ণভাবে বাদরনাচের বাঁদরের মতো মনে হল। কারন, আমার পক্ষে মত প্রকাশের কোন সুযোগ ঐসময় ছিল না। আমি এই অভিনয়ে অংশ নিতে চাই কি চাই না - এটা জিজ্ঞেস করবার সৌজন্য আমাকে তারা দেখায় নি। হয়তো আমি বলতে পারতাম, আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে লেকচার দেয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ ফেলে এসেছি সিনেমা বানানো নিয়ে একটি ওয়ার্কশপে অংশ নেবার জন্যে, নিজে নেচেকুঁদে দেখানোর জন্যে নয়। আমি যদি জানতাম যে এসবকিছুর মধ্য দিয়ে আমার যেতে হবে, আমি কস্মিনকালেও এই প্রতিযোগিতায় স্ক্রিপ্ট পাঠাতাম না। কিন্তু এসব বললে পুরো পরিবেশ নষ্ট হয়ে যেতো বিধায় তার সেশনে উচ্চবাচ্য করলাম না। খালি প্রচণ্ড রাগে আর অপমানে আমার পুরো মুখ লাল হয়ে উঠলো।

উক্ত ভদ্রমহিলার সেশন শেষ হলে উনি দয়া করে যখন বললেন, আপনাদের কারো কোন প্রশ্ন আছে কি না, আমি হাত তুললাম। আমি হাত তুলে বললাম ম্যাডাম, একটি প্রশ্নই আমার কেবল। আপনাদের ব্যানারে "নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে পুরুষ" স্লোগানটির পাশে যে কার্টুন আকারে পুরুষ ফিগার , তারা সবাই এরকম ম্যাসক্যুলিন, সিক্স প্যাক্স অ্যাবসওয়ালা হ্যান্ডসাম হাঙ্ক কেন? আপনারা জেন্ডার প্যারীটি নিয়ে কাজ করেন, এরকম উগ্র মেইল বডি স্টেরিওটাইপিং কেন আপনাদের চোখ এড়িয়ে যাবে? রেসিজমের ব্যাপারে নিতান্ত অশিক্ষিত যারা, তাদের এ ভুল হতে পারে, আপনরা মানুষদের রেসিজম, স্টেরিওটাইপ, লিঙ্গ বৈষম্য শেখান, আপনারা কেন এই ভুল করবেন? যদি তারা এই ভুল করে, তবে অশিক্ষিত বাঙ্গালী পুরুষ সাদা চামড়ার, উন্নত শারীরিক কাঠামোর জীবনসঙ্গিনী খোঁজা বাদ দেবে কোন দিন?

ভদ্রমহিলা কিছুক্ষন আমতা আমতা করলেন। ব্যাপারটাকে জাস্টিফাই করার বৃথা চেষ্টা করে পরে স্বীকার করে নিলেন কাজটা ভুল হয়ে গেছে। একজন ভুঁড়িওয়ালা, টেকোমাথা পুরুষও তার স্ত্রীর জীবনে দেবদূতের মতো আগত হতে পারে।

দুদিনের ওয়ার্কশপ শেষ হবার পর তারা আমাদের প্রত্যেককে নিজ নিজ ফিল্ম শেষ করবার জন্যে মাত্র পাঁচহাজার টাকা করে অফার করে। আমি বললাম, এটা তো আপনারা আমাদের এক্সপ্লয়েট করছেন। কোন প্রতিষ্ঠিত নির্মাতা লাখখানেক টাকার নীচে স্ক্রিপ্টের কাজে হাত পর্যন্ত দেবে না, আপনারা স্ক্রিপ্ট আমাদের কাছ থেকে আদায় করে নিয়ে ফিল্মের জন্যে অফার করছেন মাত্র পাঁচ হাজার টাকা? পরে আর এই ওয়ার্কশপের কোন হিল্লে হয় নি। আমাদের কেউই, যদ্দুর জানি, টাকা নেয় নি, বা কোন চলচিত্র বানিয়ে জমা দেয় নি।

আমার তরফ থেকে শেষকথা হচ্ছে এই যে, নারীবাদী হোক, সমকামী হোক, রাজনৈতিক হোক বা অন্য যেকোনো ধরনের আন্দোলন - আমার মত হল, তার আন্দোলনের ঝাণ্ডা যদি সমাজের এলিট ক্লাসের হাতে থাকে, সেটা সফল হবার নয়। অক্টোবর বিপ্লব কোন এলিট ক্লাসের আন্দোলন ছিল না। বাংলাদেশের নারীবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীর পেশাজীবী, কর্মজীবী, শিক্ষার্থী, বা গৃহিণীদের হাতেই থাকুক। এলিট সমাজের মানুষ কখনো এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের ক্রাইসিস বুঝবে না। এলিট সমাজে জন্মানো, বড় হওয়া একজন নারীর পক্ষেও একইভাবে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত সমাজের নারীর ক্রাইসিস বোঝা সম্ভব নয়। বরং পাশ্চাত্য থেকে ধার করে আনা পাশ্চাত্যমুখী নারীবাদ লৈঙ্গিক বোঝাপড়া ও সমতায় আরও ফাটল তৈরি করবে।


উক্ত ওয়ার্কশপের একটি ছবি। উপরে যে ফ্যাসিলিটেটরের সমালোচনা করেছি, এনি উনি নন। একদম উপরের পোস্টারের সত্যতা নিরূপণে এ ছবি দেয়া। ইউএন ওমেন বাংলাদেশের ফেসবুক পেইজে গেলে এই ওয়ার্কশপের ওপর আরও ছবি ও তথ্য পাবেন।

দ্রুতগতিতে ব্লগেই টাইপ করলাম। সকালে আরও এডিট করে পরিমার্জিত করার আশা রাখি লেখাটি। সূতির খালের হাওয়া আমার ধারাবাহিক ডায়রি।)

স্ক্রিপ্টটিও ব্লগে শেয়ার করলাম। কেউ আমাকে রচয়িতার সম্মাননা দিয়ে এটার ওপর ফিল্ম বানাতে চাইলে আমার আপত্তি নেই।



পাখি নম্বর আট


সাজিদ উল হক আবির


চরিত্রাবলি



খুশী
খুশীর স্বামী জায়েদ
খুশীর শ্বশুর দেওয়ানসাহেব
খুশীর শাশুড়ি
খুশীর ভাসুর
খুশীর ভাসুরের স্ত্রী
খুশীর ভাসুরের সন্তান
হাবলু
শাহিন ভাবী
দুই - তিনজন অতিরিক্ত শিশুশিল্পী




সিকোয়েন্স - ১
[সময়ঃ ভোরবেলা, স্থানঃ ঢাকা শহর]

(নেপথ্যে আজানের শব্দে স্ক্রিনের আঁধার কাটবে। প্রথমে স্ক্রিনে ভেসে আসবে সুবহে সাদিকের পর আকাশের আঁধার কেটে গেলে যে আবছা আলো-ছায়া মিলিয়ে ভোর হয়, এমন একটি ভোরের দৃশ্য। ক্যামেরা একটু নিচ থেকে জুম করা থাকবে একটি বাড়ির ছাদে। ছাদের ওপর দিয়ে কিছু কবুতর বা অন্যকোন পাখি উড়ে যাবার দৃশ্য দেখা যাবে।)

সিকোয়েন্স - ২
[সময়ঃ সকাল সাড়ে ছ'টা, স্থানঃ একটি ফ্ল্যাটবাড়ির রান্নাঘর]

(নেপথ্যে ঘড়ির টিকটক আওয়াজের সাথে পর্দায় ভেসে উঠবে প্রথমে একটি ঘড়ি, যাতে বেজে থাকবে সকাল সাড়ে ছ'টা। এরপর ক্যামেরা স্থির হবে ঢাকা শহরের একটি বাড়ির রান্নাঘরে। শব্দ করে একটি টোস্টার থেকে দুটো পাউরুটি বের হয়ে আসবে। একটি মেয়ে ত্রস্ত হাতে টোস্টেড পাউরুটি দুটো বের করতে গিয়ে প্রথমে আঁচে হাত পুড়ে গেছে এমন একটা ভঙ্গীতে হাত ঝাঁকি দেবে। পরে একটি প্লেটে, গোটা আট-দশ টোস্টেড পাউরুটির ওপর নতুন দু' পিস রেখে বের হয়ে যাবে রান্নাঘর থেকে। ক্যামেরা ফোকাস করবে চুলার ওপর রাখা চায়ের কেতলির ধোঁয়ায়। এমন সময় নেপথ্যে বেজে উঠবে পণ্ডিত নিখিল ব্যানারজির সেতারে রাগ টোড়ীর ধুন।)


সিকোয়েন্স - ৩
[সময়ঃ সকালবেলা, স্থানঃ দেওয়ান বাড়ির ছাদ, দেওয়ান বাড়ির ভেতরের ভিন্ন দুটি কক্ষ]

(সেতারের সুর কমে আসবে, নেপথ্যে ভেসে আসবে খুশীর কণ্ঠ)

"আমি দেওয়ান বাড়ির ছোট বউ, খুশী - যদি জানতে চান । দেওয়ান বাড়িতে আমার প্রতিদিনের গল্প শুরু হয় সকাল সাড়ে ছ'টায় , এই রান্নাঘরে। নাস্তা বানানোটা ঠিক আমার দায়িত্ব না। ঘরের কাজে সাহায্য করবার জন্যে লোক আসে, আর আমাকে তাদের কাজ তদারক করা লাগে। পরে তৈরি নাস্তা টেবিলে পরিবেশন করার কাজটা আমি করি। কোন কোন দিন যে ফরমায়েসি কিছু রান্না করি না, তাও না। যেমন আমার হাতে পাঁচফোঁড়ন দেয়া সবজি আমার শ্বশুরআব্বার খুব পছন্দ, আজকে সেটা আমাকে বানাতে হচ্ছে। আবার আমার ভাসুরের ছোট বাচ্চাদুটো আমার করে দেয়া ডিমভাজি খেতে খুব পছন্দ করে। এমন কোন রহস্য আছে ডিমভাজিতে তা নয়। স্রেফ ব্ল্যাক পিপার অ্যাড করি। তা আলাদা স্বাদ তৈরি করে। আমার আগে রান্নার কাজ আমার ভাসুরের স্ত্রী, মানে আমার ভাবী করতেন। আমি বিয়ে করে আসার কিছুদিন পর আমি তাকে সাহায্য করা শুরু করলাম। তার বাচ্চা হবার পর এখন আর তিনি সকালে উঠে রান্নাঘরে আসতে পারেন না। আমার একারই কাজ করতে হয়।

(এই বক্তব্য যখন নেপথ্যে চলতে থাকবে তখন ভেসে আসবে তিনটি দৃশ্য। প্রথমটিতে , যখন দেওয়ানবাড়ির কথা ভেসে আসবে, তখন বাড়ির ছাদে বয়স্ক জনাব দেওয়ানকে দেখানো হবে। তিনি বাড়ির ছাদে বসে সকালের রোদে পেপার পড়ছেন, বা কবুতরদের খাবার দিচ্ছেন। এর পরের দৃশ্যে দেখানো হবে খুশীর শাশুড়ি - মিসেস দেওয়ানকে। বৃদ্ধা ভদ্রমহিলা। নিজ কক্ষের একটি কোনায় চেয়ারে বসে নামাজ পড়ছেন, তসবিহ গুনছেন। আর একটি দৃশ্য, যখন খুশীর ভাসুরের কথা বলা হবে, তখন রুমের মধ্যে খুশীর ভাসুরকে দেখা যাবে নাক ডেকে ঘুমাতে, আর ভাবী তার বাচ্চাদুটিকে স্কুলের ইউনিফর্ম পরাচ্ছেন জোর করে।)

সিকোয়েন্স - ৪
[সময়ঃ সকাল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির ড্রয়িং - ডায়নিং রুম]

"এসবকিছুর ডামাডোলে আমার আজকের দিন শুরু হলেও আজকের দিনটা আর দশটা দিন থেকে ভিন্ন। আজ আমার গ্রাজুয়েশন ডে। আমার কনভোকেশন।"

(পর্দায় খুশীর ব্যস্ততা দেখা যায়। টেবিলে নাস্তা সরবরাহ করতে করতে দেখা যায় যে ভাবী তার বাচ্চাদুটোকে টানতে টানতে খাবার টেবিলে নিয়ে আসছেন। আর মা তসবিহ হাতে বসে আছেন ডায়নিং এ। )

সিকোয়েন্স - পাঁচ
[সময়ঃ সকাল, স্থানঃ খুশীর ওয়াশরুম, দেওয়ানবাড়ির বিবিধ কক্ষ]

"যদিও আজকে আমার কনভোকেশন, কিন্তু মনের মধ্যে একটা কষ্টও কাজ করছে। আজকের দিনটা আমার বহুল আকাঙ্খিত একটা দিন। কিন্তু এই দিনটা পর্যন্ত আসতে আমার শ্বশুরবাড়িতে রীতিমত যুদ্ধ করার প্রয়োজন হয়েছে। অনেকটা আমার আর আমার স্বামী জায়েদের দ্বৈত চেষ্টায়, আগ্রহে, উৎসাহে এই বৈরি পরিবেশে পড়াশোনা শেষ করে আমি আজ গ্রাজুয়েশনের সনদ নেবো।'

(পর্দায় দেখা যাবে জায়েদের সাথে খুশীর সাংসারিক জীবনের কিছু দৃশ্য। একটায় ঘরভর্তি মেহমান, জায়েদ খুশীকে রান্নাঘরে রান্নায় সাহায্য করছে; দ্বিতীয়টিতে জায়েদ ধোয়া কিছু কাপড় খুশীর হাতে তুলে দিচ্ছে ছাদে মেলে দেয়ার জন্যে, যাতে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন খুশী হয় এবং ভাবে যে খুশী নিজেই কষ্ট করে কাপড় ধুয়েছে; তৃতীয় দৃশ্যে দেখা যাবে খুশী তার পড়ার টেবিলে পড়ছে আর জায়েদ তার পাশে কফির মগ এনে রেখে খুশীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।)

সিকোয়েন্স - ৬
[সময়ঃ সকাল, স্থানঃ খুশীর ওয়াশরুম, খুশীর ঘরের বারান্দা]

(নেপথ্যে খুশীর বর্ণনা ভেসে আসতে থাকবে ...)

"কিন্তু জায়েদ মাত্র গতমাসেই জার্মানি চলে গেলো পিএইচডি করতে। আজ আমার একার বিজয়ের দিন না, আমার স্বামীরও বিজয়ের দিন। কিন্তু জায়েদ তো সাত সমুদ্র তের নদীর ওপারে!"

(পর্দায় দেখা যাবে খুশী তার রুমের ওয়াশরুমে মুখে পানির ঝাপটা দিচ্ছে। এর পরের দৃশ্যে খুশী একদৃষ্টিতে ওর সামনের আয়নায় তাকিয়ে আছে। তারপরের দৃশ্যে দেখা যাবে সে তার রুমের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে। খানিকটা উদাস, খানিকটা দুখী।)

সিকোয়েন্স - ৭
[সময়ঃ সকাল/বিকেল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির ছাদ]

"প্রত্যেক সেমিস্টারের রেজাল্ট যেদিন দিত, আমি আর জায়েদ মিলে একটা ব্যক্তিগত রিচুয়াল পালন করতাম। রেজাল্টের দিন ঠিক সকাল বেলা কোথা থেকে ও যেন একটা পাখি ধরে নিয়ে আসতো খাঁচায় করে। তারপর সে পাখিকে আমরা দুজন মিলে উড়িয়ে দিতাম আকাশে। পাখি ছাড়া শুন্য সে খাঁচাগুলি বারান্দায় এনে পাশাপাশি সাজিয়ে রাখতো জায়েদ। আমার দিকে হেসে বলত, এই অবমুক্ত পাখির খাঁচা নাকি আমার বিজয়ের ট্রফি। এদের প্রতীকী তাৎপর্য আছে। খুব যে তলিয়ে বুঝতাম ও কি বলতে চাইতো - এমনটা না। কিন্তু খুশী হতাম ওর ছেলেমানুষি কাণ্ড কারখানা দেখে।"

(পর্দায় দেখান হবে চারটি দৃশ্যঃ এক, পাখির খাঁচা আড়াল করে দাঁড়িয়ে আছে জায়েদ; দুই, খুশীর সামনে পাখির খাঁচা ও পাখি উন্মোচন, খুশীর উচ্ছল হাসি; তিন, খুশী - জায়েদ মিলে পাখি ওড়ানো; চার, শুন্য সাতটি খাঁচা)

"এদিকে আজকে আমার কনভোকেশন। জায়েদ নেই। কেউ খাঁচায় করে পাখিও নিয়ে আসবে না। আট নম্বর পাখিটাও ওড়ানো হবে না। একটা চক্র পূর্ণ হতে গিয়েও হবে না।"

- "বউ মা! বউ মা! কোথায় গেলে?"


(পর্দায় শাশুড়ির ডাকে খুশীর চকিত ফিরে তাকানোর দৃশ্য। তারপর বাড়ির ভেতরে খুশীর ছুট।)

সিকোয়েন্স - ৮
[ সময়ঃ সকাল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির ডায়নিং]

(পর্দায় দেখা যাবে - খাবার টেবিলে সবার নাস্তা প্রায় শেষ। শাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছেন কিছু ভেজা কাপড় হাতে।)

- "এই কাপড়গুলো ছাদে মেলে দিয়ে এসো তো বউ মা।"

( পর্দায় খুশীর শাশুড়ি কাপড়গুলো খুশীর হাতে ধরিয়ে দেবেন। খুশী খানিকটা অবাক হয়ে তার শাশুড়ির মুখের দিকে তাকাবে এই ভর সকালে ধোয়া কাপড় আর তাদের ছাদে মেলে দেয়ার কাজ পেয়ে।)

সিকোয়েন্স - ৯
[সময়ঃ সকাল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির সিঁড়ি]

সিঁড়ি ভেঙ্গে ওপরে উঠতে গিয়ে সিঁড়িতে প্রথম দেখা হয় ওপরের ফ্ল্যাটের ক্লাস ফাইভ পড়ুয়া পিচকু - হাবলুর সাথে। খুশীকে দেখা মাত্রই সে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে বলে - "কংরাচুলেশনস খুশী আন্টি!!"

খুশী খুব অবাক হয়ে ওকে জড়িয়ে ধরবে। তারপর ওর মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে প্রশ্ন করবে - "কেন রে?"
জবাবে হাবলু কিছু বলবে না। দুষ্ট একটা হাসি দিয়ে খুশীর আগল গলে বেরিয়ে ছুট লাগাবে।

সিকোয়েন্স - ১০
[ সময়ঃ সকাল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির ছাদ]

ছাদে উঠলেই দেখা হয় তাদের ভাড়াটে শাহিন ভাবীর সাথে। তিনিও ছাদে কাপড় মেলে দিচ্ছেন। খুশীকে দেখা মাত্রই তিনিও ছুটে এসে জড়িয়ে ধরলেন খুশীকে। বললেন - "কংরাচুলেশনস ছোট ভাবী"!

খুশী বিস্ময়ের রেশ কাটতে না কাটতেই দেখে যে পাশের দালানের ছাদে একদল বাচ্চা ছেলেমেয়ে "কংরাচুলেশনস খুশী আন্টি!" - লেখা প্ল্যাকার্ড উঁচু করে ধরে লাফাচ্ছে।

সিকোয়েন্স - ১১
[ সময়ঃ সকাল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির ছাদ]

বাতাসে ছাদে মেলে দেয়া একটা পর্দা খানিকটা উড়ে গেলেই তার আড়ালে দেখা যায় খুশীর শ্বশুর - দেওয়ান সাহেব চাদর মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি হাত মেলে দাঁড়াতেই খুশী ছুটে গিয়ে তার বুকে ঢুকে পড়ে ছোট্ট একটি পাখির মত।
দেওয়ান সাহেব বলেন

- "কংরাচুলেশনস মা! আজ তোমার কনভোকেশনের দিন না? তুমি আমাদের গর্ব। জায়েদ তো জার্মানি থেকে আসতে পারবে না, আমরা পুরো পরিবার একসাথে তোমার কনভোকেশনের অনুষ্ঠানে যাবো। তুমি নীচে গিয়ে প্রস্তুতি নাও।"

সিকোয়েন্স - ১২
[ সময়ঃ সকাল, স্থানঃ দেওয়ানবাড়ির ছাদ]

খুশী নীচে নামতে যাবে, এমন সময় দেওয়ান সাহেব পেছন থেকে ডাক দেবেনঃ

- " বউমা!"

খুশী পেছন ফিরে তাকানো মাত্র দেখল দেওয়ান সাহেব হাতে একটা পাখিসহ খাঁচা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন।

- "আট নম্বর পাখিটা ওড়ানো তো বাদ পড়ে গেলো ..."

(এই কথার প্রেক্ষিতে খুশীর উছলে পরা হাসির দৃশ্য দেখানো হবে। এরপরের দৃশ্যটি হবে কয়েকটি স্ন্যাপশট। ক্যামেরার ষ্টীল পিকচার। প্রথম দৃশ্যে - খুশী তার কনভোকেশন গাউন পরে কিছু বন্ধু-বান্ধবের সাথে ছবি তুলছে। দ্বিতীয় দৃশ্যে খুশী কনভোকেশন গাউন পরে শুন্যে ঝাঁপ দিচ্ছে আর ছবি তুলছে খুশীর শ্বশুর। তৃতীয় দৃশ্যে খুশীর সাথে ওর পুরো শ্বশুরবাড়ির পরিবার।

এই দৃশ্যগুলোর নেপথ্যে ভেসে আসবে কথাগুলো, পুরুষকণ্ঠে -

বাংলাদেশে অনেক স্কুল কলেজ ইউনিভার্সিটিগামী মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায় তাদের পড়াশোনা শেষ হবার আগেই। আর বিয়ের পর তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনের দ্বার রুদ্ধ করে দেয়া - বাংলাদেশের নারীদের মানবাধিকারের বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা প্রচলিত একটি সাংসারিক সহিংসতা। কিন্তু, আপনার সন্তানের মা যিনি হবেন - তার শিক্ষার ভার নিতে আপনার কার্পণ্য করা কেন? একজন শিক্ষিত মা-ই পারেন পরিবারের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে, নিজের সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে এবং সর্বোপরি একটি শিক্ষিত জাতি গঠন করতে। তাই আসুন, প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, বিবাহের জন্যে ছেদ পড়বে না বাংলাদেশের আর একটি মেয়েরও উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে। আর এ উপলক্ষে একজন পুরুষ ও একজন স্বামী হিসেবে আপনি সবার আগে এসে দাঁড়াবেন আপনার স্ত্রীর পাশে।)


[সিনেমার সমাপ্তি]


মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:১৯

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কোন পুরস্কার পেয়েছিলেন?

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: টুকটাক কিছু পুরষ্কার আছে স্যার। কিন্তু লেখক হিসেবে অন্যের কাছ থেকে পুরস্কৃত হবার চে' আমার কাছে বেশী সম্মানজনক হচ্ছে নিজেকে নিজে পুরস্কৃত করা। তার অর্থ , প্রতিদিন নিয়মিতভাবে একটা নির্দিষ্ট সময় ব্যক্তিগত পড়াশোনা এবং লেখার কাজে নিমগ্ন থাকা। সৃজনশীলতার পথে আমৃত্যু হেঁটে চলতে পারাটাই সৃজনশীল ব্যক্তির জীবনে সবচে বড় পুরষ্কার।

২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:২৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি একজন প্রতিভাবান মানুষ।

০৬ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:৩৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনিও একজন প্রতিভাবান মানুষ স্যার!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.