নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙাল মস্তিস্কের বি উপনিবেশায়ন - ৪ঃ বাক স্বাধীনতা, প্রাচ্যে - পাশ্চাত্যে

২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫৩



১।

বর্তমান বিশ্বের মেটাল ব্যান্ড সমূহের মধ্যে জনপ্রিয়তম জার্মান ব্যান্ড রামস্টেইনের সূত্র ধরে আলোচনা শুরু করি। পাশ্চাত্য আর প্রাচ্যের 'সহনশীলতা', এবং 'বাক স্বাধীনতা' র সংজ্ঞা এবং প্রয়োগে তফাৎগুলো স্পস্ট করবার জন্যে এ লেখা। গবেষণালব্ধ ফলাফল নয়, আমার ব্যক্তিগত বোঝাপড়া। দ্বিমত হতেই পারে, ,সহনশীলতার গণ্ডিতে থেকে।
.
রামস্টেইন নামক উক্ত ব্যান্ড, নব্বইয়ের দশকে তাদের যাত্রার শুরু থেকেই রাজনীতি হোক বা যৌনতার মতো ইস্যু হোক - সবকিছু নিয়েই খুব এক্সপ্লিসিট গান তৈরি করতে থাকে। আমি তাদের গানের ভিডিও দেখে নই, বরং অডিও অ্যালবাম শুনে তাদের ফলো করা শুরু করি। সাধারণ, কিন্তু মারাত্মক হ্যাভি রিফে তাদের এক একটা গান তৈরি। ইউটিউবে তাদের প্রায় প্রতিটা গানেরই কমেন্ট সেকশন ডিজেবল করা থাকে, ম্যাচিওর কনটেন্ট বলে।

দু' বছর আগে, ২০১৯ সালে তারা ডয়েচল্যান্ড নামে একটি গান রিলিজ দেয়, যাতে নির্মম সততার সাথে জার্মান জাতির হাজার বছরের ইতিহাসের কাঁটাছেড়া করা হয়েছে। সেটা একটু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যায় কতোগুলো ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে একটা জাতিরাষ্ট্র হিসেবে জার্মেনিয়ার উত্থান। ৯ খ্রিস্টাব্দে 'ব্যাটল অফ টয়টোবুর্গ ফরেস্ট' এ রোমানদের পরাজিত করবার মাধ্যমে জার্মান জাতির উত্থান। জেনারেল আর্মিনাসের নেতৃত্বে সে লড়াইয়ে এমন নির্মমভাবে রোমানদের জার্মানিক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সংঘবদ্ধ জাতিগোষ্ঠীরা পরাজিত করে যে, তারপর থেকে রাইন নদীর পূর্বপার্শে রোমানদের পা রাখার সাহস কখনোই হয় নি। বলা হয়ে থাকে, এই যুদ্ধে টয়টোবুর্গ বনের একটা গাছ ছিল না, যাতে মৃত রোমান সৈন্যদের লাশ ঝুলছিল না। এই টয়টোবুরগের যুদ্ধের নৃশংস দৃশ্যাবলীর মাধ্যমে গানের শুরু।
.
গানটা সাড়ে নয় মিনিট লম্বা। পুরো গানের বর্ণনা, বা গানে বর্ণিত ইতিহাসের আলোচনায় যাবো না। প্রথম - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, নাজিবাহিনীর দ্বারা ইহুদী, সমকামীদের ফাঁসীতে ঝুলানোর ভয়াবহ দৃশ্য এতে উপস্থিত। পরাজয়ের পর দুইভাগ হয়ে যাওয়া জার্মানিতে রাজনৈতিক নেতাদের সমালোচনা তো আছেই, আছে খোদ জার্মানি রাষ্ট্রের সমালোচনা। এক কৃষ্ণাঙ্গ নারীকে ভিডিওর আদ্যোপান্ত জার্মেনিয়ার মূর্ত রুপ হিসেবে দেখানো হয়। সে নিজে কখনো নৃশংস উপায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে শত্রুর ওপর। কখনো তাকেই তার দেশের দুর্নীতিগ্রস্থ রাজনৈতিকরা কেটে খায়। এই কেটে খাওয়ার ক্যানিবলিস্টিক দৃশ্য আছে ভিডিওতে। যখন ইহুদী আর সমকামীদের নাজিরা ফাঁসীতে ঝোলায়, জার্মানরূপী সে নারী পাশে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফোঁকে। কখনো জার্মেনিয়া নিজেই লাস্যময়ী হয়ে মারামারি লাগিয়ে দেয় দুই বলিষ্ঠ পুরুষের সাথে, ধরে নেয়া যায় তারা দুটো রাষ্ট্র। কখনো সম্ভাবনার প্রতীক হিসেবে জার্মানরূপী সে নারীমূর্তিকে গর্ভবতী দেখানো হয়। কিন্তু সে প্রসব করে কুকুরছানা।
.
এই ভিডিও দেখতে দেখতে আমার মনে প্রথম যে প্রশ্ন আসে, - বাঙ্গালী জাতিসত্ত্বার, বাংলাদেশের ইতিহাসের এমন রুথলেস কাঁটাছেড়া আমাদের পক্ষে আদৌ সম্ভব কি না।
.
মজার ঘটনা হচ্ছে, এই গান যে বছর রিলিজ পায়, সে বছরেই রামস্টেইন রাশিয়া সফর করে। রাশিয়া - জার্মানির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কি হয়েছিল, আমরা জানি। তবুও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রায় ৭০ বছর পর, রামস্টেইন রাশিয়ার মস্কোতে পারফরম করে ২০১৯ সালে। ভ্লাদিমির পুতিনের সরকারের নাকের ডগায়, স্টেডিয়ামে উপস্থিত লাখখানেক রাশান দর্শককে সঙ্গে নিয়ে রামস্টেইন চিৎকার করে গায় - 'Deutschland, Deutschland über allen!' বা 'জার্মানি, সবার উপর জার্মানি!'
.
ইউটিউবে মস্কোতে পারফর্মেন্সের ভিডিওর মন্তব্যের বক্সে মন্তব্যগুলো পড়লে হাসতে হাসতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। রাশান কেউ মন্তব্য করছেন - 'রাশিয়া দখল করার তরিকা ১০১ঃ শীতকালে আক্রমণের পরিকল্পনা করো না, আর রামস্টেইনকে পাঠিয়ে দাও।' কেউ বলছেন, 'আমার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সারভাইবার দাদাঠাকুর আজ বেঁচে থাকলে নির্ঘাত এই গান, আর ডয়েচল্যান্ড ডয়েচল্যান্ড শ্লোগান শুনে হার্ট ফেইল করে মারা যেতেন।' জেনোফোবিক মন্তব্য খুব কম দেখলাম।
.
এখানেই আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন - একই কাজ বাংলাদেশে, বা ভারতে, বা পাকিস্তানের মাটিতে সম্ভব কিনা। ক্রীড়ার ক্ষেত্রে হয়ত জাতীয় সঙ্গীত বাজায়। মেইনস্ট্রিম এন্টারটেইনমেন্ট হলে? কোন পাকিস্তানী ব্যান্ড ভারত / বাংলাদেশের মাটিতে পারফর্ম করতে এসে পাকিস্তান জিন্দাবাদ শ্লোগান দিতে পারবে? বা আমরা পারবো পাকিস্তানের মাটিতে গিয়ে এই শ্লোগান দিতে? উত্তর আমাদের জানা নেই। আমাদের কমনসেন্স বলে, এটা সম্ভব না।
.
এই গানের বিরুদ্ধে জার্মানির জিউইশ কাউন্সিল, জার্মানিতে থাকা ইসরায়েলের অ্যাম্বাসেডর, গভমেন্ট কমিশন অফ এন্টি সিমাটিজম - সবাই মিলে ইউটিউব থেকে এই গানের রিমুভাল চেয়েছেন, জার্মানিতে ব্যান্ডের শাস্তি দাবী করেছেন - ইহুদী জাতির উপর নিপীড়নের, হত্যাকাণ্ড পরিচালনার দৃশ্যাবলীকে রামস্টেইন তাদের বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছে বলে। কোন ব্যবস্থাই ব্যান্ডের বিরুদ্ধে নেয়া হয় নি। গানটাও বহাল তবিয়তে আছে। জার্মান সংস্কৃতির এম্বাসেডর হিসেবে জাত শত্রু রাশিয়ায় বুকের উপর জার্মানি জিন্দাবাদ জার্মানি জিন্দাবাদ নিজেরা গেয়ে এবং রাশিয়ানদের গাইয়ে এসেছে তারা।
.
জেনে রাখা ভালো, এই সুযোগ কিন্তু 'সিস্টেম অফ এ ডন' নামের আরেক ফেনোমেনা ব্যান্ড, তুরস্কের মাটিতে গিয়ে পায় নি। কারন সিস্টেম অফ এ ডন আর্মেনিয়ান জাতিস্বত্বার পক্ষে কথা বলে। তুরস্কের সরকার এই আর্মেনিয়ান অরিজিনের বিশ্ববিখ্যাত ব্যান্ডকে দেশে ঢুকতেও দেয় নি।
.
নিজেদের প্রশ্ন করা দরকার, কেন সারা পৃথিবীর বিতর্কিত লেখক - চিন্তক - বুদ্ধিজীবী - শিল্পীরা পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে আশ্রয় নেয়। এলিফ শাফাক, যার লেখা পড়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম, একজন ইউরোপিয়ান ভদ্রমহিলা যিনি রুমি আর শামসুদ্দিন তাব্রিজের মধ্যে আধ্যাত্মিক সম্পর্ককে এত অসাধারণভাবে ব্যখ্যা করেছেন, কেন তাকে তুরস্কে গ্রেফতারি পরোয়ানার মধ্য দিয়ে যেতে হয়? কেন তাকে ইংল্যান্ডকে নিজের বাসস্থান হিসেবে বেছে নিতে হয়?
.
বোঝা যায় আমাদের, আমাদের বলতে সারা পৃথিবীর মুসলিম, ভারতের হিন্দু, এবং মায়ানমারের বৌদ্ধ কমিউনিটির বাক স্বাধীনতার যে সংজ্ঞা, তার সঙ্গে ইউরোপের বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা মেলে না।
.
একটা প্রশ্ন থেকে যায়। মানলাম ইউরোপ ফ্রিডম অফ স্পিচের এক পরম রক্ষক। এখনও তলে তলে হয়তো তারা কট্টর ন্যাশনালিস্ট, কিন্তু আর্ট - কালচারের ক্ষেত্রে সে ছাড়টুকু তারা দিচ্ছে। কিন্তু মুসলিমদের কী তারা ভিন্ন চোখে দেখে?
.
প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ এই প্রশ্নও আমাদের ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার বা বিচার/জাজ করবার কোন কারন আমরাই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি কিনা। গতবছরের বয়কট ফ্রান্স ইস্যুর সঙ্গে মিলিয়ে চিন্তা করবার অনুরোধ।
.
২।
উল্লেখ করলাম রাশিয়ার বর্তমান প্রজন্মের জার্মানির সংস্কৃতিকে বুকে জড়িয়ে ধরার ঘটনা। বললাম জার্মানির সবচে বিখ্যাত ব্যান্ড রামস্টেইনকে রাশিয়ায় আমন্ত্রণ করে তাদের সঙ্গে 'জার্মানি জিন্দাবাদ জার্মানি জিন্দাবাদ' শ্লোগান দেয়ার গল্প, গানের তালে তালে। পাকিস্তান '৭১ এ তাদের যুদ্ধাপরাধের জন্যে আমাদের কাছে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চায় নি। যদি চায়ও, পাকিস্তানী কোন ব্যান্ড তারপর বাংলাদেশে এসে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলে চিৎকার করলে বাংলাদেশের মানুষ তাদের সঙ্গে গলা মেলাবে বলে মনে হয় না। অন্তত আমি পারবো না। '৭১এর ক্ষত এখনও শুকায়নি আমাদের মনে।
.
জাতীয়তাবাদ, ধর্ম - এ সমস্ত ইস্যুকে দক্ষিন এশিয়ার জনসাধারণ খুব সিরিয়াসলি ধারন করে ব্যক্তিজীবনে। পাশ্চাত্যের রাজনীতিবিদরা জাতীয়তাবাদ ও ধর্মকে নিয়ে যতটা সচেতন, তাদের রাজনীতির প্রয়োজনেই, তাদের আমজনতার মাথাব্যাথা অতটা নয়। বিশেষত ধর্মকে তাদের অধিকাংশই আর সিরিয়াসলি নেয় না। মনে হতে পারে যে আমি আন্দাজে কথা বলছি, বা ঢালাওভাবে মন্তব্য করছি। আমি সংস্কৃতির জগতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখি, আমি অনুরোধ করবো ইউরোপ - অ্যামেরিকায় স্যাক্রিলিজিয়াস, স্যাটানিক ব্যান্ডের সংখ্যা, তাদের কনসার্টে কি পরিমান মানুষ হয়, তারা কি ধরনের লিরিকের গান লেখে, এসমস্ত ব্যাপারে একটু খবর নিয়ে দেখতে। আমার সবচে পছন্দের ব্যান্ড ল্যাম্ব অফ গডের একদম প্রথম অ্যালবামের নামই ছিল 'বার্ন দা প্রিস্ট'। হেভি মেটাল জনরার সবচে পুরনো এবং সবচে বিখ্যাত একটি ব্যান্ড স্লেয়ারের সাম্প্রতিক একটা রিলিজের শ্লোগান হচ্ছে - 'গড হেইটস আস অল' ! এরকম অসংখ্য অসংখ্য উদাহরন দেয়া যাবে, যা থেকে বোঝা যায় পাশ্চাত্যে ধর্মভীরুতা কমে একদম তলানিতে ঠেকেছে। আমি জাজ করছি না। বলছি যে, এটা তাদের দীর্ঘদিনের চর্চা, এবং অবস্থা।
.
এসমস্ত ব্যাপারকে প্রাককথন হিসেবে বিবেচনা করলে ফ্রান্সে শারলে হেবদোতে আমাদের রাসুল (সঃ) কে নিয়ে আঁকা ব্যাঙ্গচিত্রের ঘটনাটি স্রেফ বিচ্ছিন্ন একটা ঘটনা বলে মনে হয় না। মনে হয়, তারা 'মত প্রকাশের স্বাধীনতা' -র যে ফর্ম প্র্যাকটিস করে, সেটার এক কন্টিনিউয়েশন।
.
পাশ্চাত্য থিঙ্কট্যাঙ্কের/দের মুসলিমদের অপছন্দ করবার একটা কারন হচ্ছে এই যে - পৃথিবীতে এই একটা ধর্ম, যার অনুসারীরা এখনও দাবী করে তাদের ঐশীগ্রন্থের আগমনের পর থেকে তাতে একবিন্দু সংযোজন - বিয়োজন হয় নি। এবং এই ধর্মের লোকরা খুব আক্ষরিক অর্থে তাদের ধর্মকে গ্রহণ ও পালন করে। ধর্মগ্রন্থের অকাট্যতা, এবং জীবনদর্শন নিয়ে মুসলিমদের এই সিরিয়াসনেসের সঙ্গে তারা একাত্মবোধ করতে পারে না, এবং মুসলিমদের সফট কর্নার বিবেচনায় খোঁচা দেয়ার মোক্ষম জায়গা হিসেবে ধরে নিয়ে মাঝেমধ্যে এই খেলাটা খেলে। মুসলিমদের আবেগের সবচে দুর্বলতার জায়গা, রাসুল (সঃ), এবং আল কুরআনকে নিয়ে তামাশা করে। এবং অধিকাংশ সময়েই তাদের কনশাস/সাবকনশাস প্রয়াস সফল হয়। ব্যাঙ্গচিত্র মুক্তি পাওয়ার পর প্রায়ই তাদের উপর মুসলিমদের হামলা চালানোর ঘটনা শোনা যায়। হয়তো সে ঘটনা তাদের দেশে সেই দিন, বা সে সময় অন্যান্য যে সমস্ত সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলছে, তার চে খুব বড় কিছু না। গণতন্ত্রের নামে যে বৈশ্বিক সন্ত্রাসের ফেরি তারা প্রত্যহ করে বেড়ায়, তার চেয়েও খুব বড়মাপের কিছু সে আক্রমন না। কিন্তু ইসলামের নামে যে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ পরিচালিত হয়, তা যে পরিমান মিডিয়া কাভারেজ পায়, সেটা সাধারণ সন্ত্রাসী তৎপরতার চে ৭৫৮ শতাংশ বেশী। (সূত্র)


.
মুসলিমদের এভাবে অভিযুক্ত করবার একটা সাধারণ রাজনৈতিক কারন আমরা আন্দাজ করতে পারি। পুঁজির ফ্লো ঔপনিবেশিক কাল থেকেই পশ্চিমমুখী, ফলে নানা বর্ডার ব্যারিয়ার দিয়েও পশ্চিম অভিমুখী মানুষের ঢল থামানো যাচ্ছে না। তাদের এক বড় অংশ মুসলিম অভিবাসী। আরব। আফ্রিকান। সাউথ এশিয়ান। ইউরোপের সাধারণ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই অভিবাসী বিরোধী আক্রোশ বাড়ছে। অভিবাসীরা ভাগ বসাচ্ছে নেটিভদের ইকনোমিতে। আর এ অভিবাসীদের মধ্যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদের অভিযোগ আছে হোস্ট দেশের কালচারকে রেস্পেক্ট না করার। একজন ল্যাতিন, একজন কৃশাঙ্গ খৃষ্টান, একজন ভারতীয় হিন্দু, এশিয়ান হয়তো মিলে যেতে পারছে ইউরোপ - অ্যামেরিকা - অস্ট্রেলিয়ার সংস্কৃতির সঙ্গে, মুসলমানরা খুব শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও তাদের ধর্ম এবং ধর্মীয় সংস্কৃতি নিয়ে। ধর্মকে নিয়ে সদা হেলাফেলা করা ইউরোপিয়ানদের এটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে। তারা মুসলিমদের জন্যে অভিবাসনের নিয়মে পরিবর্তন আনছে, বা আনার চেষ্টা করছে। এবং যে মুসলিমরা এখনও আছে তাদের দেশে, তাদের ওপর সারভিলেন্স/নজরদারী বাড়াচ্ছে।
.
তাদের এ মনভাবের জন্যে আমি তাদের দোষ কীভাবে দিই? ভারত বা চীন থেকে যারা আমাদের দেশে কাজ করতে আসছে, তাদের আমরা বাংলাদেশীরা কোন দৃষ্টিতে দেখি? রোহিঙ্গারা প্রথম প্রথম যখন এসে উদ্বাস্তুর মতো উঠলো বাংলাদেশে, তাদের প্রতি প্রাথমিক যে প্যান ইসলামিক চেতনায় অনেকের ভালোবাসা উথলে উঠেছিল, এখনও কি সে ভালোবাসা অটুট আছে, না কি রোহিঙ্গা শব্দটি এখন গালি হিসেবে পথেঘাটে ব্যবহৃত হচ্ছে? তাদের এথনোগ্রাফির দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে যে - তারা জাতিগতভাবেই সহিংস কিনা। তাদের দেখা হচ্ছে গলার কাঁটা হিসেবে। কাজেই পাশ্চাত্যও যে মুসলিম অভিবাসীদের অপত্যস্নেহের চোখে দেখবে, সে আশায় গুড়েবালি।
.
যখন আমি ইসলামোফোবদের সাথে সাধারণ মুসলিমদের তর্ক দেখি, খেয়াল করি যে একটা হাস্যকর ভুল প্রায়ই মুসলিমরা করে। তারা নাস্তিক্যের ছদ্মবেশে থাকা ইসলামোফবদের প্রায়ই বলে - "আপনি কীভাবে 'এটা' বা 'ওটা' বলতে পারেন! জানেন কুরআন কি বলেছে এই ব্যাপারে?!" কথা হচ্ছে, কোরআনকে তো ইসলামোফোবরা মানে না। তাদের কুরআনিক রেফারেন্স দেয়ার মতো অনর্থক কাজ আর কি হতে পারে? এই মুসলিমদের যদি বেদ বা বাইবেলের রেফারেন্সে কিছু বলা হয়, তারা কি তা মেনে নেবে? আমার মনে হয়, ফ্রান্স বা পাশ্চাত্যের রাজনৈতিক প্রয়াসকে ইসলামিক সেন্টিমেন্ট দিয়ে ডিল করবার চেষ্টাও মুসলমানদের একই রকম একটা ভুল। তারা মুসলিমদের সেন্টিমেন্টের উপর ভিত্তি করে তাদের কোন পলিসি নির্ধারণ কখনোই করবে না, যদি না এখানে বাণিজ্যের কোন ব্যাপার থাকে।
.
ফ্রান্স বা অন্য যেকোনো ইউরোপিয়ান দেশকে নৈতিকভাবে বেড় দেয়ার একটা সহজ উপায় হচ্ছে, তাদের ঔপনিবেশিক ইতিহাসের উপর সহজ দু' একটা বই পড়া। বেশী দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই, এই ষাটের দশকে আলজেরিয়ার ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ বিরোধী ইতিহাস পড়লেই জানা যায়, জাতি হিসেবে ফ্রান্স কতোবড় চোদনা ছিল।
.
ইউরোপে যখন এমন একটা আপহিভেল হয়, যেমনটা আমরা দেখলাম গত বছরের নভেম্বর - ডিসেম্বরে, তখন বাংলাদেশী মুসলিমদের চোখ রাখা উচিৎ ইউরোপিয়ান ইসলামিক স্কলারদের দিকে। ইউরোপে যে মুসলিমরা বাস করছে তাদের চোখ দিয়েই আমাদের ইউরোপে মুসলিমদের অবস্থা বুঝতে হবে। নিজেদের আবেগ দিয়ে না। ইউরোপিয়ান দেশগুলোর কন্স্যুলেটের সামনে তাদের পতাকা পুড়িয়ে না। আমার আপনার আত্মীয়স্বজন ঐদেশের সরকারের বৃত্তি নিয়ে পড়তে যায়। কেউ কাজ করতে যায়। কেউ খয়রাত করতেও যায়। এটা যেন আমরা না ভুলি।
.
ইউরোপের জনগন আর দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিমরা সমান না। এ অঞ্চলের মুসলিমদের সামনে পড়ে আছে অন্তত দুশো বছরের দায়িত্ব, নিজেদের ঢেলে সাজানোর। জ্ঞানে, প্রযুক্তিতে, শিল্পে, সাহিত্যে নিজেদের সমৃদ্ধ করার। গালি দেবো ইসরায়েলকে, আবার নতুন নতুন ঔষধ আবিস্কারের জন্যেও তাকিয়েও থাকবো হাভাতের মতো ওদের দিকেই? কি দুর্ভাগ্যজনক বিষয়!

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৮/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: শাপলার বৈজ্ঞানিক নাম খুঁজতে খুঁজতে
ছোট কন্যা সকাল থেকে নাকাল;
মোবাইলে এ সার্স ইঞ্জিন ওপেন হয়তো, ওটা হয় না।
শেষমেষ ফলাফল যা দাঁড়ায়, নেটেই ডাটা শেষ।
ইন্টারনেট ঘাটতে ঘাটতে বাচ্চারা এখন
সব উদ্ধার করে ফেলছে।

-------------- মাঈন উদ্দিন জাহেদ।

২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:১০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: জাহেদ সাহেবের চেহারা সুন্দর। মাত্রই গুগল করলাম।

২| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪২

মোঃমোস্তাফিজুর রহমান তমাল বলেছেন: বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়ের অবতাড়ণা করেছেন।এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ। সহনশীলতা এবং বাকস্বাধীনতার সংজ্ঞা প্রাচ্য, বিশেষ করে ভারতীয় উপমহাদেশে ও পাশ্চাত্যে আসলেই ভিন্ন প্রকৃতির। উপমহাদেশের মানুষ মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়াশীল। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেই যদি বলি বাকস্বাধীনতা নির্ভর করে মেজরিটির সন্তুষ্টির ওপর সেটা মাইনরিটির জন্য ক্ষতিকর হলেও তাতে কারো কোনো বিকার থাকে না। আর পাকিস্তানি ব্যান্ডের ভারতে পারফর্ম বা বাংলাদেশে পারফর্ম করা বিয়ে যেটা বললেন, সেক্ষেত্রে বলব ভারত/বাংলাদেশে বসে পাকিস্তান জিন্দাবাদ বলা সম্ভব না। তিক্ত অতীত হোক আর জাতীয়তাবাদ হোক। তবে প্যান ইসলামিজমের কারণে কিছু মানুষের সামনে সুযোগ বা সহানুভূতি পাবে পাকিস্তানি ব্যান্ডের গায়কেরা।ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও সামগ্রিক পরিসরে এটা সম্ভব না।

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: পঠনে ও বিস্তারিত মন্তব্যে ধন্যবাদ। আলোচনার সঙ্গে রিলেট করতে পেরেছেন জেনে ভালো লাগলো। আমরা অনেক সময় আমাদের নিজেদের আবেগ দিয়ে অন্যের আচরনকে ব্যাখ্যা করতে যাই। তখন কষ্ট পাওয়া ছাড়া কোন গত্যান্তর থাকে না। বাংলাদেশের মুসলিমদের সেটা স্মরণ করিয়ে দেয়া, এবং সে প্রেক্ষিতে নিজের করণীয় নির্দেশক - এ লেখা।

৩| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনি কি লেখেন, কেহ পড়তে চাহে না কেন?

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: কি লিখি এইটা তো বলা মুশকিল চাচা। কতোকিছুই তো লিখি। যে লেখার পীঠে মন্তব্য করলেন, এটা আমার একটা সারজিকাল সিরিজ। বাঙাল মুসলমানদের চিন্তার প্যাটার্ন নিয়ে কাঁটাছেড়া করার প্রয়াস। বই আকারে এই সিরিজটা পরে বেরুবে ইনশাআল্লাহ। আর ব্লগে আমার লেখা মানুষ পড়ে না, তা না। অনেকেই পড়ে, খুব মনোযোগ দিয়েই পড়ে। তবে, মন্তব্য করে না। এতে আমার আপত্তি নাই। আমার ব্যাপারে নেতিবাচক একটা ধারনা ব্লগে তৈরির ব্যাপারে আপনারও ভূমিকা ছিল। আপনি আমার লেখা, পড়া - মন্তব্য করা বন্ধ না করলেও, আপনার মন্তব্যে যাদের ব্রেইনওয়াশ হইসে , তারা হাজিরা দেয়া বন্ধ করসে। এতেও আমার আপত্তি নাই। আমার লেখা মানুষ ৫০ - ১০০ - ২০০ বছর পরেও ফিরে এসে পড়বে, এই আত্মবিশ্বাস আমার আছে। কারন, লেখক হিসেবে আমি সৎ। আমার একমাত্র দায়বদ্ধতা আমার মাটির কাছে। এবং প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে আমি প্রাসঙ্গিক লেখা লিখি। অতীতকে টেনে এনে বর্তমানকে অ্যানালাইসিস করি, এবং সেটা ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাই। ঢাকা থেকে শুভসকাল।

৪| ২০ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: জাহেদ সাহেবের চেহারা সুন্দর। মাত্রই গুগল করলাম।

কবিতা কেমন? চেহারার মতো সুন্দর?

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ও বদ্দা, এইটা কবিটা হইছে না যে! এইটা ছড়া হইছে।

৫| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২২

কোলড বলেছেন: Mozart created one of my most favorite composition in 1779
https://www.youtube.com/watch?v=utlN41x2Fv4
What were people in "Muslim" Bangla doing in 1779? They were barely surviving if not shitting in open field.
Your comparative study is a bit unkind.
Even now I doubt anyone in South Asia can make a music like that one or that movie by Eric Rohmer.
But an incisive article from you as usual.

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:২০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: Dear Mr. Cold, it's a pleasure to have you in this discussion.

Allow me to clarify a thing at first, I didn't mean that - Muslim population of Bangladesh are reactionary by themselves only, rather, it's a gesture we've imbibed from Pak - Indo subcontinent's population's nature in general. Calcutta riot in 1950s can be a good example to explain what I meant here. Then again, why were our predecessors shitting under open sky in 18th century, that's a different political question, very important indeed, but not very contextual here.

I was trying to pose that, being a reactionary always means being a subordinate. Bengal Muslims must realize it by now and stop reacting violently, which will bring no good result, except giving West, and Hindu Extremist opportunity to portray Global Muslims as illiterate, irrational, arrogant fools, and to use this portrayal politically. .

Wishing you a nice day ahead!

৬| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:২৩

কোলড বলেছেন: Violin Sonata K378 by Mozart

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: Thanks for sharing the piece of Music. As it has come to the point of Music, I would like to add a few point here. From my understanding, its only the classical music of Pak - Indo subcontinent which can pose a serious challenge to western cultural aspects. Probably sir you know about the Baroque musician Johann Sebastian Bach who is considered as the first popular and big figure in Western classical music. We had Tanseen who was born almost 200 years before Bach. Raga Darbari Kanada, Raga Miyan Ki Malhar, Raga Todi and many other heavenly ragas are created by him. If you want to consider Bengal solely, We had Baba Alauddin Kha saab, born and brought up in Brahmanbaria, even contemporary great Ustad Vilayet Kha saab, who was born in Gouripur, Mymensing.

This is my gift to you. [link|https://www.youtube.com/watch?v=hRVGUBYIiRU&t=53s|A sitar rendition of Raga Vairabi। Its a raga played in Diva ditiya prahar, exactly the time when I am typing this from bangladesh. Sitar maestro Vilayet Kha sa'ab. and his son Ustad Sujat Kha sa'ab are sharing stage here.

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: Ustad Vilayat Khan & Ustad Shujaat Khan- Bhairavi

৭| ২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪৮

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:

ক্যাজুয়াল স্টাইলে লেখলেও অনেক মূল্যবান লেখা।
সবই বলেই দিয়েছেন। ফ্রান্স কতবড় ** সেটাও বলেছেন। আর কী বলবো?

আমি ভাবছি অন্য কথা। উপনিবেশবাদের সুবিধা (গরিব শোষণ) নিয়ে পশ্চিমারা আজ অনেক আধুনিক, এটা সত্য।
তারা যতই উদারতার ভান করুক, আগামির বিশ্ব পশ্চিমাদের নয়। তৃতীয় বিশ্ব বলতে আর কিছু নেই।

জার্মানির প্রতি রাশিয়ার উদারতা অথবা তৃতীয় বিশ্বের দেশের প্রতি ইউরোপের উদারতা
অথবা জার্মানদের এখনকার অতিমাত্রার সেকুলারিজম,উদারতা আর আন্তর্জাতিকতাবাদীতা
অথবা জাপানিদের অতিমাত্রায় ভদ্র জাতিতে পরিণত হবার পেছনে যে গুরুতর ঐতিহাসিক পাপ রয়েছে।
তারা সবাই পাপমোচনের চেষ্টা করছে, সেটি মনে রাখা দরকার।
সতের শতকের ইউরোপের ধর্মের নামে যে খুনাখুনি আর পৈশাচিকতা হয়েছে, সেটি কোন তৃতীয় বিশ্বের দেশে আজও হয় নি।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সমীকরণ বদলেছে। মুসলিম শরণার্থী অথবা সন্ত্রাসবাদ মাত্র কয়েকটি কারণ।
ইউরোপিয়ানরা নিজেরাই বলতে শুরু করেছে যে, তারা সবাই উদারপন্থী নন।

সাম্প্রতিক মিউনিখ সিকিউরিটি কনফারেন্সের রিপোর্ট দেখলে বুঝতে পারবেন, ১) তারা আর এখন আর 'পশ্চিমা' বলে লেবেলড হতে চায় না; ২) ইসলামভীতি অথবা নিজ ধর্ম বা জাতিতে অতিরিক্ত অহংকারী হয়ে ইউরোপ এখন যে সেই সতের শতকের দিকে ধাবিত হচ্ছে - সেখান থেকে তারা মুক্তি চায়। 'উয়েস্টলেসনেস' অর্জন করতে চায় পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রনায়করা।

পশ্চিমা দেশগুলোতে যারা বিরোধীদলে আছে তাদের অধিকাংশই আল্ট্রা-রাইট এবং "জার্মান জাতি সর্বশ্রেষ্ট" এরকম মতবাদে বিশ্বাসী। তারা ক্ষমতায় আসলে হান্টিংটনের 'ক্ল্যাশ অভ সিভিলাইজেশন' সত্য হয়ে যেতে পারে।
পশ্চিমাদের সম্পর্কে আমাদের যে অবসেশন, সেখান থেকে বের হয়ে আসা উচিত।


চমৎকার লেখাটি দিয়ে অনেক চিন্তার খোরাক যোগালেন।
চাঁদগাজী ভাইয়ের অসুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে লেখাগুলো তার মতো ছোট আকৃতিতে লেখবেন।
আমি জানি উনি ভালো পাঠক কিন্তু লম্বা পোস্ট লেখেনও না, আমার মতে, পড়েনও না।
হাহাহা!

২১ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৫০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: প্রিয় মাঈনউদ্দিন ভাই, ভালো লাগলো আপনার বৃহৎ, এবং সুচিন্তিত মন্তব্য আমার লেখার পীঠে পেয়ে। অনেক শুকরিয়া। আশা করি ভালো আছেন।

আপনার মন্তব্যে অনেক কিছু জানলাম। সেই সূত্র ধরে এতোটুকু যোগ করি যে, পশ্চিমা বিশ্বে, বা পুরো বিশ্বেই ইদানিং উগ্র ডানপন্থী শক্তির উত্থান, জাতীয়তাবাদ/ধর্ম/ পুঁজির নামে হচ্ছে, সে সম্পর্কে আমি ওয়াকেফহাল। নিউ নাজিজম, হোয়াইট সুপ্রিমিজম, বা বিবিধ ফ্যাসিস্ট রেজিমের উত্থান, তাদের রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হওয়া, সোশ্যাল মিডিয়াতে রেসিস্ট কনটেন্ট, মন্তব্যে ছয়লাব হয়ে যাওয়ার অবস্থাও আমার নিজের চোখেই দেখা। কাজেই পশ্চিমা হলেই যে তাদেরা সকল মানবীয় ক্ষুদ্রতা আপনাতেই শরীর - মন থেকে ঝরে পড়ে যায়, এটা আমিও বিশ্বাস করি না। বরং আমার এই সিরিজের একদম প্রথম যে লেখাটি ছিল, তাতে আমি দেখানোর চেষ্টা করেছি, ১৮শ শতকে তাদের শিল্পবিপ্লব থেকে নিয়ে হালের ওয়েলফেয়ার সোসাইটি - অনেকাংশেই বৈশ্বিক ঔপনিবেশিক লুটতরাজের মাধ্যমে অর্জিত। তাদের র‍্যাশনালিস্ট বা যুক্তিবাদী আমরা বলি বটে, তাদের অঞ্চলেও বিজ্ঞানীদের ধর্মগ্রন্থের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল।

চতুর্থ পর্বে এসে আমার চেষ্টা ছিল, আমাদের প্রাচ্যের, বা আরও স্পষ্ট করে বলতে গেলে বাংলাদেশের মুসলিমদের রিঅ্যাকশনারি জনগোষ্ঠী হয়ে ওঠার কুফলের ওপর আলোকপাত। আপনার মন্তব্য আমার লেখাটিকে মোহরাঙ্কিত করে দিলো। আমি আনন্দিত।

বাকি রইল চাঁদগাজী সাহেবের মন্তব্যটা। আমার কেন যেন মনে হয়েছে, উনি ইতিবাচক নিয়তে মন্তব্যটি করেছেন, যদিও ওনার ফ্রেইজিং যথেষ্ট আক্রমনাত্মক। ওনার সঙ্গে গত এক বছরের মিথস্ক্রিয়া আমাকে এটা বুঝতে সাহায্য করেছে। উনি ওনার মত করে ব্লগ ও ব্লগারদের ভালো চান। সেটা আমারও একসময় সহ্য হতো না। এখন মেনে নিয়েছি।

আপনি ভালো থাকেন, যেখানেই থাকেন না কেন। ঢাকা থেকে ভালোবাসা, এবং শুভরাত্রি।

৮| ২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:৪১

হাসান রাজু বলেছেন: র‍্যামষ্টেইন এর গান যখন প্রথম শুনেছি তখন এর লিরিক পাইনি কোথাও। শুধু মিউজিক, কম্পোজিশনে মুগ্ধতা ছিল। ডু-হাস্ত, ইচ উইল, লিংক ২,৩,৪, এর ভিডিও দেখে ভাবতাম গানের লিরিক ও কি এমনই অর্থপূর্ণ? কারন, কারা জানি কখন রটিয়ে দিয়েছিল ব্যান্ড-রকের কোন লিরিক দরকার হয়না বা লিরিক খুব একটা মানসম্পন্ন হয় না। কিন্তু এদেশে বাংলা ব্যান্ড, কিংবা বিশ্ব সংগীতে রক ব্যান্ডের লিরিকের মান এবং গুন একেবারে উপরের সারিতে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক কিংবা মেটাল গানের লিরিক এতই উচ্চ মানের যে অন্য কোন গানে এত স্পষ্ট ভাবে আসেনা।
যাক এখন সময় পাল্টেছে ইউটিউবে গানের লিরিক আবার সাবটাইটেল ও পাওয়া যায়।

মূল প্রসঙ্গে আসি। আপনার লেখার শেষ পৌনে তিন লাইনের সত্যটা সব বাঙালি মুসলমানরা যখন অনুধাবন করতে পারবে সেদিন তাদের অনুভূতি বলিষ্ঠ হবে, যত্রতত্র, যার তার নিজস্ব কর্মকাণ্ডে নিজেদের অনুভূতিকে ঘায়েল হতে দেবে না। নিজেদের প্রস্তুত করার প্রয়াসটা নেজেদের ভেঙ্গে পরার আগেই করে নিতে পারবে।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:১২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: মন্তব্যে ধন্যবাদ। ওয়েস্টের ব্যান্ডগুলোর পলিটিকাল কনশাসনেস প্রখর। মেটালিকার 'ওয়ান' , মেগাডেথের 'পিস সেলস বাট হু'জ বায়িং' , ড্রিম থিয়েটারের 'ইন দা নেইম অফ গড' ইত্যাদি গান স্মরণ করছি। লিস্ট আরও বিশাল বড় করা সম্ভব। ওদের কালচারাল ইন্ডাস্ট্রি ব্রড স্পেকট্রামে যতটা লিবারাল, ওদের সামগ্রিক রাজনীতি অতটা লিবারেল কিনা - এ প্রশ্ন থেকেই যায়।

বাংলাদেশের প্রথম দিকের ব্যান্ড গানে খুব অর্থবহ, বা সমাজ সচেতনতামূলক লিরিকের এক সময় আসলেই কম ছিল। লিরিক বালছাল কিছু একটা হলেই হয়, রাগি রাগি কিছু শব্দ একটার পাশে আরেকটা উল্টোপাল্টা বসিয়ে দিলেই মেটাল গানের লিরিক হয়ে যায়, এমন একটা মন্তব্য ক্রিপটিক ফেইট ব্যান্ডের ভোকাল - বেইজিস্ট সাকিব সাহেব, অর্থহীনের সুমন সাহেবের বরাতে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন একবার, মনে পড়ে। বাংলা ব্যান্ড গানের লিরিক সত্যিকার অর্থে কাব্যিক হয়ে ওঠে আর্টসেলের হাত ধরে বলে আমি মনে করি। ওদের অনিকেত প্রান্তর গানের 'আলোকে চিনে নেয় আমার অবাধ্য সাহস' - এ লাইন দেখলাম ছাত্র ইউনিয়ন দেয়ালে চিকা হিসেবে ব্যবহার করছে। মোহিত হয়ে গেছি দেয়ালে এই গানের লাইন দেখে।

৯| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১২:৫২

রিম সাবরিনা জাহান সরকার বলেছেন: ব্লগের এই দুর্দিনে এমন লেখা অভাবনীয়।

২৪ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:৫২

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। আপনি জার্মানিতে পিএইচডি করছেন সম্ভবত। সুযোগ হলে রামস্টেইনের লাইভ কনসার্ট অ্যাটেন্ড করার আর অভিজ্ঞতা শেয়ার করবার অনুরোধ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.