নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯) ৭।শহরনামা (উপন্যাস, মাওলা ব্রাদার্স, ২০২২), ৮। মুরাকামির শেহেরজাদ ও অন্যান্য গল্প (অনুবাদ, ২০২৩), ৯। নির্বাচিত দেবদূত(গল্পগ্রন্থ, ২০২৪), ১০। দেওয়ানেগির চল্লিশ কানুন/ফরটি রুলস অফ লাভ (অনুবাদ, ঐতিহ্য, ২০২৪)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া - ৪

২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১১:০১

যারা জানেন না, তাদের উদ্দেশ্যে আরেকবার উল্লেখ করে রাখি যে, সূতির খালের হাওয়া আমার ডায়রি। এখানে আমি আমার খুচরো চিন্তাভাবনা শেয়ার করি। সূতির খাল, ঢাকায় আমার বাসস্থানের পাশে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যাওয়া একটি জলাধার, যা এখন মৃতপ্রায় হলেও একসময় এটা বালু নদী আর বুড়িগঙ্গা নদীকে মিলিত করতো ধোলাইখালে। (সুত্রঃ ঢাকা পুরান, মিজানুর রহমান, প্রথমা প্রকাশনী)

আজকের গল্প শুরু করি আমার গতকালের ফেসবুকীয় এক সংশ্লেষণের সূত্র ধরে।

গতকাল আমার একটা চিন্তা ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেছিলাম যেটার সারাংশ এই - "জঙ্গি শব্দটারে খালি ধর্মীয় উগ্রতার সঙ্গে সম্পৃক্ত কইরেন না। যেকোনো মতবাদের প্রতি বিচার বিশ্লেষণ ছাড়া আবেগ, এবং অন্ধ সমর্থন যার থাকবে, সে একজন জঙ্গি / মিলিট্যান্ট সাপোর্টার।"

লেখার পীঠে একটা মন্তব্য জমা হল - "তাইলে কি মুক্তিযোদ্ধারাও জঙ্গি?"

আমি কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। প্রথমে যে প্রশ্ন আমার মনে এলো, তা হচ্ছে - এই প্রশ্ন ওর মাথায় আসলো কেন? যে প্রশ্নটা করেছে, সে আমার মাস্টার্স পাশ ছাত্র। আমি ওকে প্রায় ২ বছরের মত সময়কাল ধরে খুব ঘনিষ্ঠভাবে চিনি। ওর প্রাত্যাহিক জীবনের স্ত্রাগলের সঙ্গে পৌনঃপুনিক, এ প্রশ্নটি নয়। হতে পারে, আমাকে ও যুক্তির প্যাঁচে আটকাতে চেয়েছে, স্টুডেন্টরা তরুণ শিক্ষকদের সঙ্গে এই মজাটা প্রায়ই নেয়ার চেষ্টা করে। আমার এ ছাত্র ফ্রাঞ্জ ফানো নামক এক তাত্ত্বিকের কথা প্রায়ই আলপটকা তোলে। ফ্রেঞ্চ ঔপনিবেশিকতা বিরোধী লড়াইএ আলজেরিয়ানদের উগ্র - জঙ্গি - গেরিলা পদ্ধতিতে ফ্রেঞ্চ আর্মিদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামে লিপ্ত হওয়ার পেছনে যে থিওরিটিক্যাল থিঙ্কট্যাঙ্ক সবচে সোচ্চার ছিলেন, তিনি হচ্ছেন ফানো। ফানোর কোন লেখা যদি ও আসলেই পড়ে থাকে, তাহলে এটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা না যে পাকিস্তানী হানাদারদের বিরুদ্ধে যে সহিংস এবং রক্তাক্ত লড়াই আমাদের মুক্তিবাহিনী করেছে, সেটাকে তর্কের খাতিরেও নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করার কোন সুযোগ নেই। কারন, ঔপনিবেশিক শক্তির বিরুদ্ধে উপনিবেশ বিরোধী শক্তির লড়াইয়ের হাতিয়ার হতে পারে তার ধর্ম, তার জাতীয়তাবাদ, তার গায়ের রঙ্গ - যেকোনো কিছুই, এবং সে লড়াই সহিংস হবেই। ছিন্নমূল মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইকে এখন যে অর্থে জঙ্গি শব্দটি ব্যবহার করা হয়, সেই সংকীর্ণ, এবং নেতিবাচক অর্থে ব্যবহার করাটা মারাত্মক ভুল। এটা বোঝার জন্যে আরেকজন ফানো হওয়া লাগে না, খানিকটা মাথা খাটাতে পারলেই হয়। তবে পাকিস্তানীরা তাদের ইতিহাসে আমাদের মহান মুক্তিযোদ্ধাদের নেতিবাচক হিসেবেই উপস্থাপন করবে। কাজেই শুধুমাত্র তাদের পক্ষেই আমাদের স্বাধীনতার সৈনিকদের মিলিট্যান্ট, বা জঙ্গি হিসেবে উল্লেখ করা সম্ভব। তবুও, ঐতিহাসিক বা তাত্ত্বিক - কোনভাবেই তাদের এ ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য হবে না।

আমি বিস্তারিত না লিখে সংক্ষেপে উত্তর দিলাম - "পাকিস্তানীদের বয়ানে"

এই যে প্রশ্ন আমাকে করা হল, চিন্তা করে দেখুন - এই প্রশ্নটা কি মারাত্মক বিপদজনক একটি প্রশ্ন। আলপটকা নিজের স্মার্টনেস শো করতে কেউ একজন এই প্রশ্নটি করেছেন বটে, কিন্তু অসতর্কভাবে এ প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনা করলে ছাত্র - শিক্ষক দুজনে মিলে রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা খেয়ে জেলে গিয়ে জওহরলাল নেহরুর মত গ্লিম্পস অফ ওয়ার্ল্ড হিস্টোরি লিখতে হবে।

এই গল্প হচ্ছে আমার আজকের ডায়রির প্রিমাইস, যে গ্রাউন্ডের ওপর দাঁড়িয়ে আমি আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছি।

আমার বক্তব্য হচ্ছে - যদিও ফেসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি (তথাকথিত) "মুক্তআলোচনা" র প্লাটফর্ম, তবুও এখানে সব ধরনের আলোচনা, সবধরনের প্রশ্নের গ্রহণযোগ্যতা নেই। কেউ প্রশ্ন করলেই সে প্রশ্নের জবাব তাকে দিতে হবে, এই বাধ্যবাধকতাও কারো নেই।

সাধারণ একটা উদাহরণ আগেও দিয়েছি, আবারো দেই, রাস্তাঘাট, পাড়ার টং দোকান, ইভেন ক্লাসরুমও তো মুক্ত আলোচনার একটা ক্ষেত্র, নয় কি? ধরুন, বাসে চলতে চলতে, বা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, চায়ের দোকানে চা পান করতে করতে - আপনার দিকে বন্ধুদের কাছ থেকে ধেয়ে আসা সমস্ত প্রশ্ন, সমস্ত মন্তব্য কি আপনি সমান গুরুত্বের সাথে নেন? বা, আপনি কি এটা ফিল করেন যে, ডান বাম থেকে যে মন্তব্য বা প্রশ্নই ধেয়ে আসছে আপনার দিকে, তার সমস্ত কিছুরই জবাব আপনার দিতে হবে? আর যদি উত্তেজক, অভব্য মন্তব্য, বা প্রশ্ন অপরিচিত কারো তরফ থেকে আসে? আপনি খুব ঠাণ্ডা মাথায় পরিশীলিত ভাষায় তার জবাব দেন সবসময়ই?

নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করুন। আপনার বাবা - মা- বড় ভাই বা বোন আপনার সব প্রশ্নকে সমান গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সবসময়? যদি না নিয়ে থাকেন, তার কারন কি শুধু এটাই ছিল যে - তারা মুক্ত আলোচনায় আগ্রহী ছিলেন না, নাকি কখনো কখনো আপনার প্রশ্নটাই কোন অর্থবহ প্রশ্ন ছিল না, এমনটাও ঘটেছে? একজন শিক্ষক ক্লাসরুমের ভেতর যখন বুঝতে পারে, একটা বা দুটা শিক্ষার্থী স্রেফ স্মার্ট সাজার জন্যে উল্টোপাল্টা প্রশ্ন করছে, আপনার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে চিন্তা করুন, আপনার শিক্ষক এমন শিক্ষার্থীদের সব প্রশ্নের জবাব দিতেন? নাকি তাদের সতর্ক করে দিতেন?

সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের কারো কারো মাঝে এই এক উদ্ভট, অদ্ভুত, এবং অবাস্তব দাবী প্রায়ই দেখতে পাই। অনেকের ধারনা এই যে- আপনি যে মুক্তমনা, আপনি যে উদারপন্থী, আপনি যে মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী - এটা প্রমান করবার জন্যে যতরকম উৎকট উদ্ভট, যৌক্তিক অযৌক্তিক, শালীন অশালীন প্রশ্ন আসবে, তার সবই নাকি ঠাণ্ডা মাথায়, গুছিয়ে সুন্দর করে জবাব দিতে হবে।

আমি এর সঙ্গে একমত নই। আমি এটা মনে করি না লেখকের টেম্পারমেন্ট না বুঝে, লেখার মূলভাব না বুঝে যে কোন একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেই তার জবাব দিতে হবে।

এর সঙ্গে, আমি এটাও অনুভব করি না যে সোশ্যাল মিডিয়ায় কেউ বাধ্য - ইন্টারঅ্যাক্টিভ ইউজে। মানে, আপনি ফেসবুকে বা ব্লগে একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছেন, তার অর্থ এই নয় যে এখন বাধ্যতামূলকভাবে আপনার গিয়ে গিয়ে সবার পোস্টে মন্তব্য করে বেড়াতে হবে, বা নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা ব্লগারদের উৎসাহ দিয়ে বেড়াতে হবে। ( এই উৎসাহ দেয়ার কাজটা অনেকেই করেন। যেমন রাজীব নূর ভাইয়ের কথা মনে আসছে এই মুহূর্তে। রাজীব ভাইয়ের প্রতি সেই কৃতজ্ঞতা থেকে আমি তার সকল অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্যের অপ্রাসঙ্গিক জবাব দিয়ে তাকে পাল্টা উৎসাহ দেয়ার চেষ্টা করি।) সত্য বলতে কি, সবার ক্ষেত্রে আপনি এটা আশাও করেন না। ধরেন আপনি সাদাত হুসেইনের, বা ব্রাত্য রাইসুর ফ্যান। অনেক কষ্ট করে তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে ফ্রেন্ড হিসেবে ঢুকলেন। আপনি কিন্তু তাদের ক্ষেত্রে আশা করবেন না, বা তাদের ক্ষেত্রে এটা বলবেন না যে - সাদাত হসেইনের বা ব্রাত্য রাইসুর দায়িত্ব যে তারা ইন্টারঅ্যাক্টিভ ফেসবুকিং করবে। আমার পোস্টে এসে কমেন্ট না করলে আমিও করবো না। কিছুদিন তাদের প্রোফাইলে লাইক কমেন্ট করে পাসায় না থাকলে একদিন দেখবেন তাদের ফ্রেন্ডলিস্ট থেকেও গাপিস হয়ে গেছেন (আখতারুজ্জামান আজাদ নামের এক কবির ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা আমার ফেসবুকে হয়েছিল)। তারা তো তাদের প্রোফাইলে জমা পড়া মন্তব্যের ৯৫ % তে রেস্পন্সও করে না।

নিয়ম তো সবার জন্যেই এক হওয়া উচিৎ। যদি সেলিব্রেটি সোশ্যাল মিডিয়া ইউজারদের ব্যাপারে আপনি - আমি এটা মানতে পারি যে, তারা সবার সঙ্গে ইন্টার‍্যাক্ট করে না, একই কাজ যদি অন্য কেউ করে, সে যদি "সেলিব্রেটি" না ও হয়, তার বিরুদ্ধে দাঁত খিঁচিয়ে মন্তব্য করাটা কি যৌক্তিক?

ইন্টার‌্যাকশন হয় সমপর্যায়ে, বন্ধুমহলে, বা একটা কম্ফোরট জোনের মধ্যে। এটাও বোঝা প্রয়োজন।

'অমুকে শালা একটা স্নব, নিজেরে কি কেউকেটা মনে করে আল্লাহমালুম!' এসব আবেগি চিন্তা বাদ দিন। ফেসবুক বা ব্লগে যদি এমন নিয়ম করা হয় যে - মাসে এতোগুলো কমেন্ট না করলে আর কেউ অ্যাকাউন্ট সচল রাখতে পারবে না, শুধুমাত্র তখনি কারো ইন্টার‌্যাকশনের লেভেল দিয়ে তাকে আইনত পরিমাপ করা যাবে। তার আগ পর্যন্ত সবার উচিৎ, নিজের মত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে থাকা, এবং অন্যকারো সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকা, যদি না সে নিজে থেকে এসে আপনার (পোস্ট/লেখার) পেছনে আগুন দেয়। সবাই সবকিছু আপনার মত করে দেখবে না, ভাববে না, এটা স্বীকার করে নেয়ার মধ্যেই ম্যাচুরিটি।




মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৪৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর আল কায়েদা নিয়ে বক্তব্যের প্রতিবাদে বাংলাদেশ সরকার দাবী করেছে বাংলাদেশে এই দলের অস্তিত্ব নাই। কিন্তু র‍্যাব-পুলিশ বাংলাদেশে আল কায়েদা সদস্য গ্রেপ্তারের সংবাদ আগে গণমাধ্যমে দিয়েছে। তাহলে আল কায়েদা বলে তখন কাদের গ্রেপ্তার করেছিলো ?

২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:২৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: নেওয়াজ ভাই, আমার পোস্টের কমেন্ট বক্সকেই পোস্টের টেস্টিং গ্রাউন্ড বানায়ে ফেললেন!
যাই হোক, আপনার এই প্রশ্নের উত্তর আমার জানা নাই। আমি দুঃখিত। চাঁদগাজি সাহেবের জিজ্ঞেস করতে পারেন, বা রাজীব নূর ভাইরে। ওনারা এগুলি ব্যাপার ভালো বুঝেন।

২| ২২ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: সূতির খাল নাম ভালোই।
বালু নদীতে আমি ভ্রমন করেছি।

২৩ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:২১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: দেখেন তো রাজীব ভাই, নেওয়াজ ভাইয়ের প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারেন কি না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.