নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া - ৫

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:২৯



স্ত্রীর সঙ্গে টিভি সিরিজ দেখতে দেখতে রাতের খাবার খাওয়ার অভ্যাস হয়েছে করোনার কারনে ওয়ার্ক ফ্রম হোম শুরু হবার পর থেকে। ডাক্তার / ডায়েটেশিয়ানরা মানা করে টিভি দেখতে দেখতে খেতে। কিন্তু রাতের খাবার পরিমান নির্দিষ্ট থাকে, এবং হামহুম করে না খেয়ে ধীরে সুস্থে চিবিয়ে খাবার অভ্যাস রপ্ত করে ফেলেছি বলে সমস্যা হয় না। এছাড়াও, বাসায় থাকলেও সারাদিন যে যার কাজে ব্যস্ত থাকি, কাজেই রাতে টিভি সিরিজ দেখতে দেখতে খাওয়া, হাসিঠাট্টা করা আমাদের দাম্পত্য জীবনের অন্যতম অনুষঙ্গ।

দূর থেকে অ্যামেরিকার কালচার বোঝার এক অন্যতম অনুষঙ্গ হচ্ছে ওদের সিটকম, বা সিচুয়েশনাল কমেডিগুলো। ড্রামা, হিস্টোরি বেইজড সিরিজগুলির চে সিটকমে ওদের সংস্কৃতি, ওদের দৈনন্দিন জীবন, ওদের রঙ্গ রসিকতা, ওদের উৎসব, পালা পার্বণ ইত্যাদি ফুটে ওঠে আরও স্পষ্টভাবে। ব্যতিক্রম থাকতে পারে। তাছাড়া, টিভিতে হয়তো ঘটনা বাস্তবের চে' খানিকটা বাড়িয়েই দেখানো হয়। তবুও, পুরো মিথ্যার ওপর তো কিছু দাঁড়াতে পারে না।

করোনার শুরুতে দেখলাম ফ্রেন্ডস। ওটা শেষ করে ইয়াং শেলডন। এখন আছি 'হাউ আই মেট ইওর মাদার' নামের টিভি সিরিজের শেষ সিজনে। এই সিরিজটা এ নিয়ে আমার দ্বিতীয়বার দেখা। প্রথমবার, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় একা দেখেছি। এখন দেখছি স্ত্রী'র সঙ্গে। ছাত্রজীবনে সিরিজটার অনেক জোক, অনেক ক্যারেক্টারের প্রেজেন্টেশন যে মারাত্মক রেসিস্ট ছিল, বুঝি নি। এখন রাজনীতি সচেতনতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু চোখে ধরা পড়ে, কানে লাগে, মনে বাজে।

আমার আজকের ডায়রি এই সিরিজের রেসিস্ট দিকগুলো নিয়ে অতটা না, বরং সংস্কৃতিগত ভিন্নতা আমাদের মধ্যে কতোটা প্রকট সেটা বোঝাপড়ার একটা প্রচেষ্টা।

হাউ আই মেট ইওর মাদার নিউইয়র্ক নিবাসী পাঁচ বন্ধুর জীবন নিয়ে তৈরি। তারা তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী অর্জন শেষ করে চাকুরী জীবনে থিতু হওয়ার, আর জীবন সঙ্গী খুঁজে বের করার চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। এরমধ্যেই তাদের জীবনের বিবিধ ঘটন - অঘটন - দুর্ঘটন নিয়ে এ সিরিজ এগোয়।

এতে দেখানো হয়, প্রধান দুই পুরুষ চরিত্রের একজন (বার্নি স্টিনসন) তাদের ওপর জনের (টেড মোসবি) বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়ায়, (বা জড়ায় না, এটা নিয়ে বার্নি একটা ধাঁধাঁ রেখে দেয়), এবং এটা নিয়ে সারাক্ষণ তারা নিজেদের মধ্যে হাসিঠাট্টা করতে থাকে। আবার দেখা যায়, টেড নিজেও বার্নির বোনের সঙ্গে ওয়ান নাইট স্ট্যান্ডে জড়ায়, এবং এটা নিয়ে বার্নির সঙ্গে হাসিঠাট্টা করতে থাকে। আবার পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের এমন অচ্ছুৎ, অপাংক্তেয়ভাবে টেলি সিরিজটিতে উপস্থাপন করা হয়, বাংলাদেশে বড় যে কেউ তার সঙ্গে রিলেট করতে পারবে বলে মনে হয় না। পাঁচজন প্রধান নায়ক নায়িকাদের দুজন থাকে স্বামী - স্ত্রী, আর বাকি তিনজন (দুজন ছেলে, একটি মেয়ে) ক্রমাগত নিজেদের ভেতর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডেট করে, ক্যাজুয়াল সেক্স করে।

এগুলো সবচে স্থূল বা মোটাদাগের প্রসঙ্গ, যা একজন ভেতো বাঙ্গালী হিসেবে আমার চোখে লেগেছে। বন্ধুবান্ধবের বাবা-মা'কে নিজের বাবা মা হিসেবেই বিবেচনা করে বড় হয়েছি। বন্ধুবান্ধব একটা আরেকটার বোনের সঙ্গে প্রেম করার চেষ্টা করে নাই তা না, কিন্তু এর ফলশ্রুতিতে "তোরে আমি ভাই ভাবছিলাম, ভাই!' এই সংলাপ সহ ঝগড়াঝাটি, হাতাহাতি হয়েছে। তারপর, হয়তো সম্পর্ক হয়েছে পারিবারিক ভাবে, বিয়েও হয়তো হয়েছে। হয়তো বলছি, কারন আমার পরিচিত সার্কেলে আমি আসলে দেখি নাই বন্ধুর বোনের দিকে সিরিয়াসলি প্রেমের নজরে কাউকে তাকাতে। আর "তোর বোন আর আমি তো ব্যাং ব্যাং করে বেড়াচ্ছি" - এই ধরনের ডায়লগ যদি এক বন্ধু আরেক বন্ধুরে রসিকতা করেও দেয়, সে রসিকতা খুনোখুনি পর্যন্ত গড়াতে পারে। একই সার্কেলে ঘুরে ফিরে ডেট করবার, ক্যাজুয়াল সেক্স করবার সংস্কৃতি এখনও চালু হয় নি বাংলাদেশে।

একটা বিষয় খেয়াল করবেন, আমি জাজ করছি না। আমি বলছি না পাশ্চাত্যের শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই অভ্যাসগুলো আছে বলে তারা ভালো, বা মন্দ। আমি এটাও বলছি না যে আমাদের মূল্যবোধ তাদের চে ভিন্ন বলে আমরা মানুষ হিসেবে তাদের চে ভালো।এবং, অনেক প্রবাসী বাঙ্গালীর হয়তো মনে হতে পারে, 'কিরে ভাই, এ তো পাশ্চাত্যের মেইনস্ট্রিম কালচার না। আমি তো নিজে প্রবাসকালে চোখে এমন কিছু দেখি নাই।' হয়তো আসলেই এ অবাধ যৌন স্বাধীনতা ( জাজ করবার উদ্দেশ্যে শব্দটা ব্যবহার করছি না) আসলেই তাদের সবার মধ্যে এক পরিমান ছড়ায় নি।

কিন্তু কিছু হলেও তো আছে? নতুবা, সিটকম ইতিহাসের সবচে ব্যবসাসফল একটা সিরিজে কীভাবে এইসমস্ত গল্প প্রচারিত হয়? কেউ তো আপত্তি করে নাই। কেউ তো মামলা করে নাই তাদের নামে, সংস্কৃতি গেলো গেলো রব তুলে।

যৌন স্বাধীনতার মতই , তাদের একাংশের ভেতর ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে হাসিঠাট্টা করার প্রবণতাও হয়তো আছে।

বাক স্বাধীনতার নামে ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়ে টিটকারী মারা আমাদের দক্ষিণ এশিয়ার আমজনতার সংস্কৃতি নয়। আমরা অশিক্ষিত। 'মাথামোটা গরুখোর', বা 'গোমাতাভক্ত' । তাই ধর্মভীরুতা কম বেশী আছে আমাদের মধ্যে। কেউ প্র্যাকটিস করে, কেউ করে না। কিন্তু মানুষের ধর্মবিশ্বাস নিয়ে টিটকারি মারাটা আমাদের মেইনস্ট্রিম কালচার না।

একেবারেই যে কেউ টিটকারি মারত না, তা না। কেউ কেউ মারত। তবে তাদের নিয়ত থাকতো দাঙ্গা বাঁধানো। ইতিহাস সাক্ষী।

ইদানিংকালে একটা গোষ্ঠীর আকাঙ্খা, বাক স্বাধীনতার নামে আমজনতার ধর্মবিশ্বাসকে টিটকারী মারা জায়েজ করা।

যারা বাক স্বাধীনতা চর্চার নামে ধর্মীয় মূল্যবোধকে টিটকারি মারা প্রমোট করতে চান, তারা খণ্ডিতভাবে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটা আচরনকে আমাদের সঙ্গে পরিচয় করায়ে দিচ্ছেন। উপরে টিভি সিরিজ থেকে যে উদাহরনগুলি দিলাম, একদিন তারা বাক স্বাধীনতার নামে সেগুলিও প্রমোট করা শুরু করবে আশা করি। আমাদের সাহিত্যে, সিনেমায়, সিরিজে আমাদের বন্ধুরা আমাদের মায়েদের সঙ্গে ফ্লারট করবে। আমরা আমাদের বন্ধুদের বোনেদের সঙ্গে ঘুমায়ে তাদের সঙ্গে হাসিঠাট্টা করব। ফ্রেন্ডরা মিলে অরগির আয়োজন করবো। বুড়া বাপ মা'র সঙ্গে মুখ অন্ধকার করে বছরে একবার দেখা করতে পারলে করবো, না করতে হইলে বলবো আল্লায় বাচাইসে। বুড়া আত্মীয় স্বজনরে ভাগাড়ে নিয়া ফেলব। তাদের সঙ্গে কোন আড্ডায়, আলাপচারিতায় যাওয়ার চে দৌড়ায়ে পালাতে গিয়ে গাড়ির নীচে চাপা পড়া প্রেফার করবো। তারপরই কেবল আমরা ধর্মান্ধ, অশিক্ষিত, মধ্যযুগীয় বর্বর বাঙ্গালীরা পূর্ণাঙ্গ সংস্কৃতিমনা হব। আমাদের এখনও আলোকিত হওয়া বাকি।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪১

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপনার ওখানে খালের পানি মনে হয় দুষিত, উহা থেকে অক্সিজেন আসছে না।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৪৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: কেন?

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৭

চাঁদগাজী বলেছেন:



সবাই বলছেন যে, বাংলাদেশে বাকস্বাধীনতা নেই, আপনি বলছেন, মানুষ বাকস্বাধীনতার নামে ধর্মকে টিটকারী করছেন; আপনি পরিমাণ মতো অক্সিজেন পাচ্ছেন তো? আপনি আবার খালের পারে থাকেন; ঢাকার খালের পানি!

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আপনি অনলাইন স্ফেয়ারে কাউকে দেখেন নাই কাক্কু, বাক স্বাধীনতা প্রমোট করার নামে মানুষের বিশ্বাস নিয়ে টিটকারি মারাকে জায়েজ করতে?

৩| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৯

চাঁদগাজী বলেছেন:


আপনি সক্রেটিস, নিউটন, এডিসনের বিশ্বাসকে টিটকারী মেরে দেখেন, ফলাফল কেমন হয়; দেওয়ানবাগীর বিশ্বাসকে টিটকারী করছেন অনেকলোকজন, কিন্তু মওলানা ভাসানীর বিশ্বাসকে কেহ টিটকারী করছেন না।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ওরে কাক্কু আমার, উপরের প্রশ্নের হ্যাঁ, না এ জবাব দেন।

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আর টিটকারী মারারে সর্বাংশে খারাপ বললাম কই? দেখেন, আজকে George Orwell, Collected Essays, বইয়ের সূচনায় টিটকারী মারারে উত্তম কাজ বইলা একটা বানী পাইসি - "A dirty joke is not, of course, a serious attack upon morality, but it is a sort of mental rebellion, a momentary wish that thing were otherwise." । আমি বলতেসি, এই মহান রেবেলরা তাদের বিদ্রোহরে আর একধাপ সামনে আগায়ে নিয়ে যাক।

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫৩

রাজীব নুর বলেছেন: সিরিজ গুলো কোথা থেকে দেখেন? নেটফ্লিক্স?

'বেওয়াচ' নামে একটা আমেরিকান সিরিজ ছিলো। ঐ সিরিজ আমার খুব ভালো লাগতো। বিশেষ করে পামেলা কে। বিকিনি পড়ে সমুদ্র বিপদে পড়া লোকদের সাহায্য করতো। পামেলাকে খুব ভালো লাগতো।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৫৩

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সার্ভারে দেখি। স্টার ওয়ার্ল্ডেও দেখি। আমার ছেলেবেলার হার্টথ্রব ছিল ড্রিউ ব্যারিমোর, চার্লিস অ্যাঞ্জেলস সিনেমা থেকে।

৫| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:০৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ইদানিংকালে একটা গোষ্ঠীর আকাঙ্খা, বাক স্বাধীনতার নামে আমজনতার ধর্মবিশ্বাসকে টিটকারী মারা জায়েজ করা।
আমি নিয়মিতই আপনার এই সিরিজে। ভালোলাগা !

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ সকাল ১০:১৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধর্মরে নিয়া টিটকারি মারার অভ্যাসটা বিচ্ছিন্নভাবে তৈরি হবে না আপা, যেহেতু এটা পাশ্চাত্য সংস্কৃতির একটা অংশ। এটার সঙ্গে বাপ - মা'র সঙ্গে সম্পর্করে টিটকারি মারা, নিজের বৈবাহিক জীবনরে টিটকারি মারা, নিয়ন্ত্রিত যৌনজীবনরে টিটকারি মারা, মুরুব্বিদের, শিক্ষকদের, আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সম্পর্করে টিটকারি মারা , আই মিন, আপনার ইগোর একাকী নিজের মতো করে বেড়ে উঠতে যা কিছুই একটা লিমিট সেট করে দেয়, বা বাধা সৃষ্টি করে - তার সবকিছুরেই টিটকারির চোখে দেখা শিখতে হবে।

ভালো লাগলো আপনারে মন্তব্যের ঘরে পেয়ে। নিজের যত্ন নিয়েন।

৬| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৬

মেহেদি_হাসান. বলেছেন: সিরিজটা লিষ্ট করে রেখেছি সময় করে দেখবো।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১:৫৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.