নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাজিদ উল হক আবির

সাধু সাবধান ! ব্লগের মালিক বঙ্গালা সাহিত্যকে ধরিয়া বিশাল মাপের ঝাঁকি দিতে নিজেকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে প্রস্তুত করিতেছেন। সেই মর্মে তিনি এখন কিটো ডায়েটিং, ডন-বৈঠক ও ভারোত্তলন প্রশিক্ষণে ব্যস্ত। প্রকাশিত গ্রন্থঃ১। শেষ বসন্তের গল্প । (২০১৪)২। মিসিং পারসন - প্যাত্রিক মোদিয়ানো, ২০১৪ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী (অনুবাদ, ২০১৫) ৩। আয়াজ আলীর ডানা (গল্পগ্রন্থ - ২০১৬ ৪। কোমা ও অন্যান্য গল্প(গল্প গ্রন্থ, ২০১৮) ৫। হেমন্তের মর্সিয়া (কবিতা, ২০১৮) ৬। কাঁচের দেয়াল (গল্পগ্রন্থ, ২০১৯)

সাজিদ উল হক আবির › বিস্তারিত পোস্টঃ

সূতির খালের হাওয়া - ৬

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:০৯



চল্লিশ তম বিসিএসের রিটেনের রেজাল্টে ভেসে যাচ্ছে আমার নিউজফিড। রিটেন বিজয়ী যোদ্ধাদের শোকরানা আদায়ের জিকিরে ফেসবুক জুড়ে মিলাদ মাহফিলের পরিবেশ। যারা টিকেছে তারা তো বটেই, তাদের ফ্রেন্ডলিস্টের বাকিরাও আলহামদুলিল্লাহ , আলহামদুলিল্লাহ করছে। এক জুনিয়রের রিটেন উত্তীর্ণ হওয়ার পোস্টে দেখলাম আরও জুনিয়র একজন মন্তব্য করছে - 'ভাই, কতোটুকু পামপট্টি দিলে পররাষ্ট্র ক্যাডারে টিকে যাওয়ার পর আমাকে মনে রাখবেন?'

আমার ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ডিপার্টমেন্টাল জুনিয়রদের এ সংক্রান্ত পোস্টে লাভ সাইন দিলাম। তাদের চে' একটু কম ঘনিষ্ঠদের পোস্টে লাইক দিলাম। আর বাদবাকি যারা কেন আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টে আছে, আমার কোন আইডিয়া নাই, তাদের সেলিব্রেশন পোস্ট স্ক্রল করে এড়িয়ে গেলাম।

একটু পর মনে পড়লো, আমার স্কুল লাইফের এক ফ্রেন্ডও রিটেন দিয়েছিল। তাকে ম্যাসেঞ্জারে নক দেয়া মাত্র, সেও লাজুক স্বরে (বা শব্দচয়নে) জানালো তারও রিটেনের শিকে ছিঁড়েছে। আমার বন্ধু উত্তর দিচ্ছিল গাজীপুর থেকে। সে সরকারী পাট উন্নয়ন সংস্থার সহকারী পরিচালক। সরকারী প্রতিষ্ঠানে টেন্ডার কীভাবে ঘোষণা করতে হয়, এই সংক্রান্ত এক সপ্তাহের এক ট্রেনিং এ সে এখন ঢাকার বাইরে। তারটাও সরকারী চাকরীই, তবে তার এই পজিশনে পোষাচ্ছে না। তাই বিসিএস ক্রমাগত দিয়ে যাওয়া। চিন্তা করে দেখলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার চার - পাঁচ বছরের জুনিয়রদের সঙ্গে হয়তো ওর সিলেকশন হয়তো এবার হয়ে যেতে পারে। যদি নাও হয়, আমার বন্ধু জানালো, ও হাল ছাড়বে না। নিদেনপক্ষে একটা, বা কপাল ভালো থাকলে আরও দুটো বিসিএস সে অ্যাটেন্ড করতে পারবে।

আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা শেষ করে আমি কিছুক্ষন বসে রইলাম আমার কম্পিউটারের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে। চিন্তা করলাম, সরকারী চাকরি এমন কি বস্তু, যার জন্যে মানুষ নিজের পাঁচ বছরের জুনিয়রদের সঙ্গে একই র্যারঙ্কে কলিগ হিসেবে জয়েন করতে পারে? বা, তিন - চার বছরের ছোট কাউকে স্যার স্যার ডাকতে পারে, এক বা দুই বিসিএস আগে - পরে জয়েন করবার ফলে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রজীবনে আমার দেখা অত্যাশ্চর্য এক ব্যাপার হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরীর সামনে ছাত্রছাত্রীদের বিশাআআআআল লম্বা লাইন। যদি আপনি এই লাইনের কনটেক্সট না বোঝেন, তবে দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আপনি উচ্চাশা পোষণ শুরু করে দেবেন। ভাববেন, যে জাতির সন্তানেরা এতটা বিদ্যাশিক্ষায় আগ্রহী, গবেষণামুখী পড়াশোনায় আগ্রহী যে লাইব্রেরী খোলার আধা / একঘণ্টা আগে থেকেই তারা লাইব্রেরীর গেটে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকে, সে জাতির ভবিষ্যতের আকাশে লাল নীল দীপাবলি জ্বলছে। এরা কি পড়ে, কি গবেষণা করে - এটা আবিস্কার করার জন্যে লাইন ধরে লাইব্রেরীতে ঢুকলে দেখবেন, তাদের প্রায় ৯৫% মোটামোটা গাইড বই বের করে সরকারী চাকরি, বা ব্যাংক জবের প্রিপারেশন নেয়া আরম্ভ করছে। আমি যখন ক্লাসের ফাঁকে লাইব্রেরীতে ক্লাসের পড়ার জন্যে যেতাম, সিট পেতাম না তাদের জ্বালায় (এদের অনেকেরই ঢাবির বৈধ ছাত্রত্ব নেই, বা ছাত্রত্বের মেয়াদ শেষ)। সিট পেলেও আমার হাতে ডিপার্টমেন্টের পড়ার বই দেখে তাদের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করতো। আমার কয়েকজন ক্লাসমেটকে দেখেছি একদম প্রথম বর্ষ থেকেই গ্রুপ বানিয়ে বিসিএসের পড়া পড়তে। কিন্তু, সরকারী চাকরি আমার প্রায়োরিটি লিস্টে ছিল না বলেই আমি ওদের দলে ভিড়তে পারি নি। বিসিএসও, দেয়া হয় নি।

২০১৯ সালের জুনে বিয়ে করি। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারি করছি ততদিনে প্রায় তিন বছর। বিয়ের হুলুস্থুলের দিনগুলোতে, বাসাভর্তি এতো এতো আত্মীয়স্বজন, যাদের কারো সঙ্গেই প্রায় দেখা হয় না, বা হয়ে ওঠে না নাগরিক জীবনের অভিশাপে, বা নিজের অসামাজিকতায়, সবাই মিলে আমাকে প্রায় ঘিরে ধরে অনেক করে পরামর্শ দিলেন, বোঝালেন, আমার মতো ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকের সরকারী চাকরির জন্যে একেবারেই চেষ্টা না করাটা বোকামো হবে। ঠিকঠাক মতো চেষ্টা করলে অবশ্যই হয়ে যাবে। অনেকেরই হয়।
বিসিএস।

বিয়ের পর দুটো মাস আমার মাথায় ক্রমাগত ফ্ল্যাশব্যাক চলল আমার জীবন নিয়ে নেয়া সমস্ত সিদ্ধান্তের। প্রথমে রাগ হল ইংরেজি বিভাগে আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম স্যারের প্রতি। ক্লাসরুমে স্যার প্রায়ই বলতেন - "আমার বয়স কখনো বাড়ে না, কারন আমার প্রতিটি দিন শুরু হয় ক্লাসরুমে একঝাক সম্ভাবনাময় তরুণ - তরুণীর চেহারা দেখে। ওদিকে আমার বন্ধুদের মধ্যে যারা পুলিশে বা প্রশাসনে আছে, তারা সব বুড়িয়ে গেছে, কারন তাদের দৈনন্দিন ডিলিংসটা হয় ভেজাল আর অসাধু লোকদের নিয়ে।" বিসিএসের জন্যে আমার যে সব বন্ধু প্রিপারেশন নেয়া শুরু করে, তাদের নব্বুই শতাংশ জানতো, ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনা ওদের দিয়ে হবে না। সত্য সত্যই, তাদের মধ্যে যারা ক্যাডার হিসেবে পরে চান্স পেয়েছে, তাদের সিজিপিএ টেনেটুনে ৩। এদিকে আমরা চার - পাঁচজন যারা ডিপার্টমেন্টের পড়াশোনায় টিকে গেলাম, আমরা সবাই শিক্ষকতায় এলাম মনজুর স্যারের শিক্ষকতা নিয়ে এই রোম্যান্টিক কথা শুনে। স্যারের তথ্য সত্য, ভার্সিটির শিক্ষকদের দিন শুরু এবং শেষ হয় তরুণ ছেলেমেয়েদের ফেইস করার মাধ্যমে বটেই, কিন্তু ক্লাসরুমে সম্ভাবনাময় তরুণতরুণীর ব্যাপারটা একটা ফ্লুক। এই 'সম্ভাবনাময়' তরুণদের খুঁজে পাওয়া যায় মূলত প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ারিং বা মেডিক্যাল কলেজে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা সংক্রান্ত আদর্শ ও মূলনীতি অনেক ভিন্ন। জ্ঞানচর্চা, বা মেধালালনের চে' কর্মমুখী - বা আউটকাম বেইজড শিক্ষা এখন প্রাইভেট শিক্ষা ব্যবস্থার মূলমন্ত্র। কাজেই যে ইন্টেলেকচুয়াল স্ট্রাইভিং নিয়ে এ পেশায় এসেছি, তা মিইয়ে গেছে প্রথম কয়েক বছরেই। এছাড়াও, শিক্ষকতা পেশায় থাকা আমার বেশ কিছু কলিগ, ঢাকায় খুবই ডিসেন্ট উপায়ে জীবন কাটানোর মতো অর্থ উপার্জনের সুযোগ থাকা সত্যেও কানাডা, অ্যামেরিকায় পাড়ি জমাচ্ছে স্থায়ী সিটিজেনশিপ নিয়ে, কেবল মাত্র এই কারনে যে - তাদের মনে হচ্ছে, শিক্ষকতা পেশায় থাকার কারনে তাদের ভ্যালু দিচ্ছে না তাদের পরিবার পরিজন, এবং পারিপার্শ্বিক সমাজ।

এগুলো ইস্যু মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, সঙ্গে মাথায় এ প্রশ্নও ঘুরছিল যে - সরকারী চাকরি এমন কোন জাদুর চেরাগ, যার পেছনে ছুটতে ছুটতে জীবন যৌবন সব উজাড় করে দিচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়েরা? আমার ইংরেজি বিভাগের এক সহপাঠী ২০১৮তে সুইসাইড করে প্রত্যাশা মতো চাকরি না পেয়ে। তার পরিবারের, স্বজনদের কটূক্তি তার আর সহ্য হচ্ছিল না হয়তো। আমার মাথায় ঘুরছিল এ প্রশ্নও যে, আমার বর্তমান নিবাস, গ্রিন মডেল টাউনে আমার পরিবার সবচে শিক্ষিত - সংস্কৃতিমন্য পরিবারগুলোর একটি হওয়া সত্যেও কেন এখানে বাড়িওয়ালাদের মিটিং এ শেষ কথা বলেন পুলিশের একজন ওসি র‍্যাঙ্কে থাকা বাড়িওয়ালা, যার বেতনের পয়সা দিয়ে একটা ছ'তলা বাড়ি ঢাকা শহরের বুকে কখনোই তোলা সম্ভব না?

চাকরির নিরাপত্তা, এবং ইন্সট্যান্ট সামাজিক স্বীকৃতি - বিয়ের পর একটা গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে আমার চোখে ধরা দিলে আমি তিনবছর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মাস্টারির অভিজ্ঞতা, এবং ছয়অঙ্কের মাসিক স্যালারি শিটকে এক পাশে চাপিয়ে রেখে, একটা বিসিএসের কোচিং এ ভর্তি হই, ২০১৯ এর অগাস্টে। কারন, আমি কোন টেস্ট প্রপার প্রিপারেশন ছাড়া অ্যাটেন্ড করি না। অনেকে বাসায় বসে চাকরির ফাঁকে একটু একটু করে প্রিপারেশন নেন। আমি একটা সিস্টেমের মধ্যে না থাকলে কাজ করতে পারি না।

আমাকে কোচিং এর অফিসস্টাফরা বলেছিল, আপনি হাজার দুয়েক টাকা দিয়ে সিট বুক দিয়ে রাখুন। বাকি টাকা পরে কিস্তিতে পরিশোধ করতে পারবেন। আমার তখন পকেটে টাকার অভাব নেই (বর্তমান চাকরির সুবাদে), এবং (অন্তত সেই মুহূর্তে) পেছনে ফেরার কোন তাগিদ নেই। তেরো হাজার টাকা এককালীন পরিশোধ করে ক্লাসে ঢুকেছিলাম।

প্রথম দিন কোচিং এ ঢুকে একদম পেছনে গিয়ে বসলাম। শেষ এমন একটা কোচিং এ ঢুকেছি বছর দশেক আগে ইউনিভার্সিটি অ্যাডমিশন টেস্টের জন্য। এরপরে আর কোচিং এ ছাত্রত্বের অভিজ্ঞতা নেই। চাচ্ছিলামও না যে প্রথম দিনেই বিরূপ কোন অভিজ্ঞতা হোক। প্রবাদ আছে, তুমি যাও বঙ্গে, কপাল যায় সঙ্গে। আমার এমনি কপাল, মিনিট দশেকের মধ্যেই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি শিক্ষকতা করি, সে ইউনিভার্সিটির তিনজন শিক্ষার্থী আমার সঙ্গে এসে হাই হ্যালো করে গেলো। জানতে চাইলো যে আমি চাকরি ছেড়ে দিয়েছি কিনা। আমি তাদের প্রশ্নের সাঁড়াশী আক্রমনে বোকার মতো হাসলাম কিছুক্ষন। অগাস্টে বেশ গরম থাকে। অস্বস্তির ঘাম মুছলাম কয়েকবার। কপাল ভালো তারা সেলফি তুলতে চাইলো না। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা'র মতো আমার সেদিন বাংলার লেকচারারের কোন এক কারনে আমাকে বেশ পছন্দ হয়ে গেলো। একটার পর একটা প্রশ্ন করে আমাকে সবার সামনে সেলিব্রেটি (!) বানানোর দায়িত্ব কাঁধে নিলেন। আমি যত চেষ্টা করি সামনের জনের পেছনে লুকাতে, তিনি আমাকে টেনে বার করে এনে আরও বেশী প্রশ্ন করেন। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্ট যারা ছিল, তারা নিশ্চয়ই ভালো বিনোদন পেয়েছিল। আপনি, যিনি পড়ছেন, তিনিও নিশ্চয়ই আমার অবস্থা কল্পনা করে বিনোদন পাচ্ছেন।

সেই প্রথম, এবং সেই শেষবারের মতো বিসিএসের কোচিং এ পা রাখা। পেছনে চরম অস্বস্তিকর একটি দুপুর, এবং হাজার তেরো টাকা বিসিএসদেবের পায়ে প্রণতি দিয়ে সরকারী চাকরির চ্যাপ্টারে দাঁড়ি টানা।

আমি নিজেকে ধন্যবাদ দিয়েছি, এই কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতার ইতি টানবার জন্যে, বড়অঙ্কের টাকা একদম জলাঞ্জলি দেয়ার পরেও। নিজেকে পুনরায় একটা ভিন্ন আঙ্গিক থেকে প্রশ্ন করেছি যে, কেন একটা সফল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সসম্মানে শিক্ষকতা করার পরেও আমার পেশা বদল করবার হুজুগ মাথায় চেপেছিল।

উত্তর খুঁজে পেয়েছিলাম, হয়তো সমাজ একটা ফ্যাক্টর এখানে। বুদ্ধিবৃত্তিক পেশার মূল্যায়ন নেই। অবশ্য কোন পেশাজীবীই তার কর্মজীবনে এটা পুরোপুরি অনুভব করেন না যে, তার বা তার পেশার প্রকৃত মূল্যায়ন সমাজ করছে। কিন্তু বুদ্ধিবৃত্তিক পেশা, ধরুন শিক্ষকতা, গবেষণা, বা সৃজনশীল লেখালিখি - এই ধরনের বৃত্তির প্রাসঙ্গিকতাও এ দেশে নেই। আমাদের দেশে ফিল্ড স্পেশালিষ্টদের দিয়ে ডিসিশন নেয়ানোর রেওয়াজ খুব একটা নেই। সঙ্গে আছে অর্ধশিক্ষিত, বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে দূরে থাকা মানুষজনের হরিলুটের উদাহরন।

মাসখানেক আগের একটা সংবাদ চোখে পড়েছিল যে, আমাদের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের শতকরা ৬৪ ভাগ স্বশিক্ষিত। এনারা আমাদের মহল্লা, আমাদের পরিবেশ, আমাদের সমাজ, আমাদের দৈনন্দিন জীবন নিয়ে শেষ কথাটি বলেন সবসময়। আবার গতবছরের শেষদিকের একটা সংবাদ আমি আমার ডায়রির পাতায় লিপিবদ্ধ করে রেখেছিলাম - 'কক্সেসবাজারে ৭৫ টি সরকারী মেগা প্রকল্প বাবদ বরাদ্দ হওয়া টাকা থেকে ২০০০ কোটি টাকার হিসাব গড়মিল। অভিযোগের আঙ্গুল পৌর মেয়রের দিকে। জেলা প্রশাসন নির্বাক।'

আমি বা আমার মতো লোকজন, যারা পড়াশোনা করে একটা সুস্থ্য জীবন - জীবিকা নির্বাহ করাটাকেই অভীষ্ট লক্ষ্য বলে জেনে এসেছি সারাজীবন, যারা সরকারী নিয়ম মেনে দেশে বাস করছি, নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছি, কোন অবৈধ উপার্জন করছি না, এই ধরনের বিচার বিহীন হরিলুটের খবর যখন আমরা পাই - তা আমাদের মনে কেমন প্রভাব ফেলে?

যারা এসমস্ত হরিলুটের সঙ্গে জড়িত, তাদের কলিজা কি দিয়ে তৈরি, আমার মতো আমজনতার সেটা বোঝা সম্ভব হবে না হয়তো, কাজেই চোখ বন্ধ করে থাকি। দিনের শেষে একশো পৃষ্ঠার মতো পড়তে পারলে, একহাজার শব্দ লিখতে পারলে, আর সঙ্গীতের পেছনে আধা - একঘণ্টা সময় দিতে পারলে সে দিনকে সার্থক বিবেচনায় শান্তির ঘুম দিতে পারি। আমার নিজের জীবন নিয়ে আমার তেমন একটা কষ্ট নেই, কারন আমি নিজেই নিজের জন্যে এই বুদ্ধিবৃত্তিকতার জীবন বেছে নিয়েছি।

আত্মীয়স্বজনরা সবসময় আমার - আমাদের ভালো চায়, এটা আমি মনে করি না। প্রতিবেশী বা সমাজ তো আরও অনেক পরের বিষয়। তবে সবচে বেশী কষ্টটা তখনই হয়, যখন দেখি মূল্যায়নটা জীবনে যারা আসলেই ম্যাটার করে, সেই পরিবার পরিজনদের কাছ থেকে আসে না। অল্প কিছুদিন আগের একটা ঘটনা শেয়ার করে আজকের ডায়রি শেষ করি।

আমাদের বাড়িতে দরজা আর চৌকাঠ সাপ্লাই দেয় যে ব্যবসায়ী - সে এই লাইনে নতুন। প্রচুর কথা বলে। ব্যাবসায়ে ভালো করার এটা একটা পূর্বশর্তও বোধয়। সে কোন একভাবে ভূমি মন্ত্রনালয়ে ঢুকেছে। ছোটখাট চাকরি করে একটা সেখানে। আমার সমবয়সী, বা বয়সে একটু ছোট।

কয়েকদিন আগে রাতে চৌকাঠ দিয়ে যাওয়ার সময়ও সে খুব ফুটানিসহ একটা একটা গল্প আমারে বলল একবার, আমি সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে শুনলাম, আমার বাবারেও একই গল্প বলল একবার, এবং আমার মা নেমে আসলে তারেও বলল একবার। গল্পের প্রেক্ষাপট তার ভূমি মন্ত্রণালয়ে চাকরী। তার পাঁচ ভাইবোনের সবাই বিবিধ সরকারি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত। কারন তার কোন এক চাচা গতটার্মে মন্ত্রী ছিলেন। তার তদবিরে কাজ হয়েছে।

সেই থেকে আমার মা গজগজ করছে। গতকালও বললেন জীবনে করলিটা কি? সরকারি চাকরী করতে পারতি। তারপর লম্বা একটা ফিরিস্তি, সরকারি চাকরি করলে কি কি করতে পারতাম জীবনে, আর না করার ফলে কি কি হারাইলাম। আমার কপাল ভালো, ঐ কাঠ ব্যবসায়ী চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। ফার্স্টক্লাস গেজেটেড অফিসার হলে মায়ের শানটিং আর থামত বলে মনে হয় না।

আমি একজন লেখক - পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল - সঙ্গীতকার হইতে চেয়েছি আজীবন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার আজ আমার পাঁচ বছর। আমি আমার মা'রেই আজ পর্যন্ত বোঝাতে পারি নাই আমি কি করতে চাই আমার জীবন নিয়ে। যদিও আমার জীবনে আল্লাহর রহমতে কোন অভাব নাই, উপার্জিত পয়সাও পাই পাই হালাল, কিন্তু আপনজনদের এরকম অবুঝ আচরন কষ্ট দেয়। কথার মাধ্যমেই যে ক্ষত তারা মনের মধ্যে তৈরি করে দেন, সেটার দাগ আজীবন থাকে।
.
ধরেন আপনি লেখক হবেন, বা আপনি মিউজিক করবেন, অথবা আপনি সিনেমা বানাবেন, কিংবা আপনি বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় ভূমিকা রাখবেন। ধরেন এইটাই আপনার স্বপ্ন। এই লাইফস্টাইলের প্রাথমিক সমস্যা হচ্ছে ব্যতিক্রমী পথে আপনি সমমনা বন্ধু পাবেন খুব কম। লেখালিখি হোক, ছবি আঁকা হোক, সিনেমা বানান হোক, গবেষণা করা হোক - এধরনের পথে স্বীকৃতি অর্জন কঠিন, প্রায় গোটা একটা জীবন লেগে যায়, তবুও মানুষ কাজরে ভ্যালু দেয় না এরকম উদাহরন আছে। তবুও, দলবেঁধে মাটি কামড়ে পড়ে স্ট্রাগল করছি, দুমুঠো খাবার জুটলে খাচ্ছি নইলে উপাস দিচ্ছি, কিন্তু সন্ধ্যায় বা রাতে দলবেঁধে বন্ধুরা সব একত্র হয়ে একজায়গায় বসে নিজের স্বপ্ন ভাগাভাগি করছি, আড্ডা মারছি সিনেমা নিয়ে, গান নিয়ে, সাহিত্য নিয়ে, গবেষণার বিষয় নিয়ে - এরকম একটা বান্ধবে পরিপূর্ণ পরিবেশ পেলে স্ট্রাগলের কষ্ট কমে অর্ধেক হয়ে যায়। বাংলাদেশে এখনও এই পরিবেশটা অ্যাভেইলেবল হয় নাই। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো বাসার মানুষজনই প্রতিমুহূর্তে আপনাকে এটা ফিল করাতে প্রস্তুত যে, আপনার জীবনের বেসিক্যালি কোন ভ্যালু নাই। এমতাবস্থায় আপনি সমাজের কাছে চাইবেনই বা কি, আর সমাজ বদলানোর স্বপ্নই বা দেখবেন কীভাবে?
.
তবুও দিন বদলাবে একদিন হয়তো, এই আশায়ই আমরা বাঁচি ...

(ছবিসুত্রঃ দা ডেইলি স্টার)

মন্তব্য ২৫ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৩৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়েছি।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৩৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শুকরিয়া। লেখাটা আরও একটু এডিট করবো। এই বিষয়ে কিছু কথা বলা বাকি রয়ে গেছে। ব্লগেই টাইপ করে পোস্ট করায় এলোমেলোও হয়েছে খানিকটা।

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১০:৪৫

চাঁদগাজী বলেছেন:



আপানার পেশা নিয়ে আপনি ও আপনার স্ত্রী খুশী থাকলে, বাকীদের কথা শুধু শুনে যাবেন; শিক্ষকতায় বাংলাদেশে বিপুল সম্ভাবনা আছে।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৪৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ আবারো, চাচা। আমার প্রফেশন নিয়ে আমার তেমন কোন অস্বস্তি নেই। বাকীদের কথা কেবল শুনে যেতে বলছেন বটে, কিন্তু আমাদের দেশের রীতি তো অমন না। আমরা বাবামায়ের কথা দ্বারা প্রভাবিত হই প্রচণ্ডভাবে। আমাদের এখানে এখনও প্যারেন্টিং নিয়ে আলোচনা - সমালোচনা শুরু হয় নি, কিন্তু ভদ্রতা বজায় রেখে এই আলোচনা শুরু করা দরকার। আমি ক্লাসরুমে প্রতিনিয়ত আমার শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে থাকি নিজের পছন্দের রাস্তায় হাঁটতে, কিন্তু পারিবারিকভাবে যে প্রচণ্ড মানসিক পীড়নের মধ্য দিয়ে আমি গেছি - যাই এখনও, আমার অবাক লাগে।

৩| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:০৭

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




আমার কেনো জানি মনে হচ্ছে আপনার বিসিএসে টিকে যাওয়ার সম্ভবনা ছিলো। আপনাকে ছোট একটি টিপস দিয়ে যাই “বিসিএস” টিকে যাওয়া দলে তাদের পাবেন যারা পাবলিক জনপ্রিয় না। নিজের শক্তিতে চলুন - “বল বল বাহুবল, জল জল নদীর জল” আশা করি কোচিংয়ে এটি পড়েছেন অথবা অন্যদের পড়িয়েছেন।

পোস্টে লাইক+++

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৩:৫৫

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনুপ্রেরণাদায়ক মন্তব্যে ধন্যবাদ, মুরুব্বী। ব্লগে উদাসী স্বপ্ন অ্যান্ড গং এর সঙ্গে যখন আমার বাদানুবাদ চলছিল তখন থেকেই আপনাকে লক্ষ্য করেছি। ভালো লাগছে আপনাকে এখানে পেয়ে।

জনপ্রিয়তা প্রয়োজন বটে, জনপ্রিয়তা না থাকলে আপনি আপনার মতাদর্শকে সামনে বাড়াতে পারবেন না, মানুষের উপকার করতে পারবেন না। অনলাইনে খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, ফেসবুকে আউটস্পোকেন সরকারী কর্মকর্তাদের কিন্তু বিশাল ফ্যান বেইজ আছে। কাজেই সরকারী কর্মকর্তারা যে আজকাল আর জনপ্রিয় নন ব্যাপারটা অমন না। তারা এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে যদি জনগনের উপকার আরেকটু বেশী করতে পারেন, আমি সত্যিই খুশী হব। তবে, মবের মধ্যে জনপ্রিয়তা আমার প্রায়োরিটি লিস্টে দ্বিতীয়তে। প্রথমত আমার একটা অর্থবহ জীবন দরকার। আর আমার কাছে অর্থবহ জীবন মানে বাংলাদেশের মানুষের চিন্তার জঞ্জাল সাফ করতে থাকা। আশীর্বাদ করবেন যাতে নৈতিকতার জায়গা থেকে এই দায়িত্ব পালনে বিচ্যুত না হই।

শুভকামনাসহ।

৪| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:২৭

আমি সাজিদ বলেছেন: দিন বদলাবে অবশ্যই সাজিদ আবির ভাই৷ সব জায়গায় মেধা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হবে৷ সরকারি চাকরি মানে পাওয়ার প্র‍্যাকটিসের আর ব্যপার থাকবে না। ছোটবেলা থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরযন্ত পাওয়া সব সার্টিফিকেট আর কালচারাল একটিভিটিতে মেধার মূল্যায়ন হবে। ছয় মাস দরজা বন্ধ করে পড়ে বাকিদের দেখিয়ে দিলামে আর সারাজীবন রাজত্ব করলাম এই মাইন্ডসেটে সবাই আদাজল খেয়ে লাগবে না। সরকারি বেসরকারি চাকরি - সরকারি কোন ক্যাডারে চাকরি এসব আর ভেদাভেদ থাকবে না। এখন অদ্ভুত উটের পেছনে দেশ চলছে তো তাই এই বিসিএস আমলা পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেট এই পদবীগুলোর দাম বেশী। একটা আক্ষেপ কাজ করে। আমার আরও ছয় বছর বয়স আছে এই পরীক্ষা দেওয়ার। যেভাবে ব্র‍্যান্ডিং শুরু হয়েছে আমি আগ্রহ পাই না।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ, সাজিদ। প্রথম শ্রেণীর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগগুলো কন্ট্রাকচুয়াল হয়। ৩ - ৫ বছরের। এরমধ্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক রিসার্চ রান না করলে কন্ট্রাক্ট রিনিউয়াল করা হয় না। এর ফলাফল ভালো। ঠ্যাকায় পড়ে রিসার্চ করতে করতেও অনেকে নিজের পছন্দের রাস্তা খুঁজে পায়। গবেষণাবিমুখ জাতির জন্যে এগুলো ফাউন্ডিং স্টেপস। ইন জেনারেল চাকরির ক্ষেত্রে এ ধরনের বদল কথা আপনি বলছেন, সেটা তৃতীয় বিশ্বে আদৌ আসবে কিনা, বা আসলে কবে আসবে - তার কোন নিশ্চয়তা নেই। একক কোন আত্মত্যাগে, বা বলিদানে এ পরিস্থিতি, বা জনগনের মাইন্ডসেট বদলাবে না। জীবনের মূল্য অনেক। কাজেই, দেশে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে বিসিএসের সুযোগ থাকলে অবশ্যই দেবেন। নতুবা বাইরে প্র্যাকটিস করা একটা অপশন। আমার কিছু বন্ধুবান্ধব এখানে ডিগ্রী নিয়ে পরে ইংল্যান্ডে গিয়ে ওখানে প্র্যাকটিসের পরীক্ষা দিয়ে থিতু হয়ে গেছে।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৯

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: আর, আমাকে নিয়ে করা আপনার অসম্ভব অশালীন কিছু মন্তব্য এদিকে সেদিকে এখনও জ্বলজ্বল করছে। এগুলো চোখে পড়লে কোন আত্মমর্যাদা সম্পন্ন লোকের পক্ষে প্রতিমন্তব্যে যাওয়াটা অসম্ভব। তবুও উত্তর দিলাম, কারন আলোচনায় আগ্রহী মানুষকে ফিরিয়ে দেয়া আমার চরিত্রের বিপরীত। আপনার আমাকে সরি বলতে সমস্যা, অন্তত যাদের পোস্টে আমাকে গালিগালাজ করেছেন, তাদের পোস্টে গিয়ে মন্তব্যগুলো মুছে দেয়ার অনুরোধ করুন। ভদ্রতার বিপরীতে এতটুকু ভদ্রতা আশা করতে পারি না?

৫| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা পড়তে ভালো লাগে।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:২৮

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই। খুব খুশী হলাম আপনার মন্তব্যটি পেয়ে।

৬| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১:৫৭

আমি সাজিদ বলেছেন: ভুল বললাম। সার্টিফিকেট ভিত্তিক মেধার মূল্যায়নটা নাই হোক। নাহলে আমাদের পরিবর্তনের চেষ্টার কি দাম থাকলো? আমরা যদি একই গোয়ালে যাই?

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: সার্টিফিকেট ভিত্তিক মেধার মূল্যায়ন প্রয়োজনীয়। আপনি যে জায়গায় পড়াশোনার সুযোগ পেয়েছেন, তা কারো দয়ায় না, নিজের যোগ্যতায়। হাজার হাজার প্রতিদ্বন্দ্বীকে হারিয়ে। সেটার মূল্যায়ন হোক।

৭| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ২:২৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: আপনার লেখায় আকর্ষণ আছে। পড়ে ভালো লাগে

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৩৪

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: অনেক শুকরিয়া নেওয়াজ ভাই। শুভকামনা আপনার প্রতি।

৮| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:১১

কালো যাদুকর বলেছেন: এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পরে গেল, আমার বিসিএস বন্ধুরা অনেকেই ভাল করেছে। যেহেতু নাম বললে চিনবেন,এজন্য নাম বলা যাবে না। তাছাড়া আমিও বেনামি লিখছি। তো ,আমাকেও সকাল বিকাল আপনজনের কাছ থেকে কথা শুনতে হয়।
রবার্ট ফ্রস্ট বলেছেন:

The Road Not Taken
------
Two roads diverged in a yellow wood,
And sorry I could not travel both
And be one traveler, long I stood
And looked down one as far as I could
To where it bent in the undergrowth;

Then took the other, as just as fair,
And having perhaps the better claim,
Because it was grassy and wanted wear;
Though as for that the passing there
Had worn them really about the same,
------

কাজেই একটু কস্ট হলেও আপনার প্রফেশনটি ইনটারেস্টিং হওয়ার কথা।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৪১

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: জানেন কি, রবার্ট ফ্রস্টই প্রথম কবি, যাকে অ্যামেরিকান প্রেসিডেন্সিয়াল ইনঅগারেশন প্রোগ্রামে কবিতা পাঠের জন্যে দাওয়াত দেয়া হয়? ওনার সহজ, কিন্তু খুবই মিনিংফুল কবিতা - তার সময়ে ইংরেজি কবিতার চেহারা বদলে দিয়েছিল।

আমার প্রফেশন নিয়ে আমার আপত্তি নেই। সরকারী চাকরি যারা করেন, তাদের প্রতিও কোন ঈর্ষা নেই। জাস্ট পরিবারের লোকজনের অসহনশীল আচরন নিয়ে কষ্টে ভুগি মাঝেমাঝে। সেটাই তুলে ধরলাম, গল্পটা কেবল আমার একার নয়, এই বিবেচনায়। আপনার সহানুভূতিশীল মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ।

৯| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:১১

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আসলে কাছের মানুষদের খুশি করা বা আত্মীয় বন্ধুদের প্রাউড ফীল করানো মাঝেমাঝে আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব মনে হয়, যারা একটু অফবিট জীবন বেছে নেয়।
দিন বদলাবে !! হয়ত বদলাবে, হয়ত এই যে দিন শেষে দুই চার লাইন লিখতে পেরে, চমৎকার একটা গান শুনতে পেরে অথবা পছন্দের একটা সাহিত্য পড়তে পেরে নিজেকে সফল মনে হওয়া, আত্মতৃপ্তি পাওয়া। কেউ তো বলুক ওর প্রকাশিত বই নেই তো কি হয়েছে, সবকিছু সামলে লিখে আনন্দ পাচ্ছে সেটাই বা কম কি ?

লেখায় ভালোলাগা।

২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৪:৪৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: জীবনানন্দ দাস যখন মারা যান, অনেক উঠতি কবি সাহিত্যিক এসে তার বাসায় ভিড় জমান, এবং আফসোস করতে থাকেন বাংলা সাহিত্যের বড় ক্ষতি হয়ে গেলো বলে। জীবনানন্দ দাসের স্ত্রী তাদের প্রশ্ন করেন, তোমাদের দাদাবাবু বাংলা সাহিত্যের জন্যে অনেক কিছু রেখে গিয়েছেন বুঝলাম, আমার জন্যে কি রেখে গেলেন বলো তো?

অনেক ধন্যবাদ আপা, আপনার সুন্দর মন্তব্যে। শাহাদুজ্জামানের লেখা জীবনানন্দ দাসের আত্মজৈবনিক উপন্যাস একজন কমলালেবু সুন্দর একটা বই। না পড়া হলে পড়ে দেখতে পারেন।

১০| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ বিকাল ৫:৪৬

আমি সাজিদ বলেছেন: ব্যক্তিগত পর্যায়ে আঘাত দেওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করতে আমার আপত্তি নেই৷ আমি করছি। তবে আখেনাটেন ভাইয়া ও আপনার মন্তব্য প্রতিমন্তব্যের ব্যাপারে আমার ধারনা একই থাকবে। আমি ওখানে গিয়ে কিছু বলব না। আমি লেখকদের ভিন্ন আঙ্গিকের ভাবনার সাথে প্রতিনিয়ত নিজের ভাবনাকে তুলনা করতে চাই৷ এজন্যই আপনার ব্লগে আসা। আশা করি আপনিও সহব্লগারদের সাথে সুন্দর মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আরও চমৎকার লেখা উপহার দিবেন। শুভ কামনা।

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১০

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ধন্যবাদ। আমার মনে হয়, প্রাথমিকভাবে এতটুকুই যথেষ্ট। শুভেচ্ছা।

১১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৯:১৭

কালো যাদুকর বলেছেন: ইনঅগারেশনের ব্যাপারটা জানতাম না। আমি এই জানুয়ারীতে যে কবিতাটি জো বাইডেন -এর অনুষ্ঠানে পড়া হয়ছিল 'সেটি অনুবাদ করেছি। পড়ে দেখতে পারেন Click This Link

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৭

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: শেয়ার করবার জন্যে ধন্যবাদ। পড়ে মতামত দিচ্ছি।

১২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ১১:৫২

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রাজীব ভাই। খুব খুশী হলাম আপনার মন্তব্যটি পেয়ে।

এ বছর কি আপনার কোনো বই বের হচ্ছে?

২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:১৬

সাজিদ উল হক আবির বলেছেন: ২০১৪র নোবেল লরিয়েট প্যাত্রিক মোদিয়ানোর মিসিং পারসন উপন্যাসটা আমার অনুবাদে পাওয়া যাচ্ছে এখন। ২০২০ এ সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী কবি লুইস গ্লাকের কবিতা অনুবাদ করছি। এটাও এবছর ছাপার হরফে আসার কথা। আরও কিছু কাজ করছি, দেখা যাক। আমার এতবড় মার্কেট নেই যে এক বছরে ৩ - ৪ টি বই বের করবো, আর তার বিক্রি নিশ্চিত করবার দায়িত্ব কাঁধে নেবো। প্রশ্নে ধন্যবাদ, রাজীব ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.