নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনু গল্পঃ আদুরীর চোখে লুকানো জল !

২৭ শে জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩৭

আদুরীর বাবা প্রতি মাসে এক হাজার টাকা সঞ্চয় করে, বছরে বার হাজার, অভাবের সংসারে খরচ করতে না চাইলে ও দুই হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়,বিপদের জন্য বছরে দশ হাজার টাকাকে বছরে তাদের একটি খুটি বলা যায়,
.
.
.
এভাবে সঞ্চয় বাড়ার সাথে আদুরীও বড় হতে থাকে, হিসাব রক্ষণের দায়িত্ব এখন তার কাধে, রাতে বাবা বাসায় ফিরলে আদুরীকে ডেকে বলে, 'আম্মু, আমাদের সঞ্চয় একাউন্টে কত জমা হয়েছে? ' বাবা দশ বছরে এক লক্ষ টাকা, এভাবে বিশ বছরে দুই লক্ষ টাকা জমা হলো,
.
.
.
একদিন আদুরীর বিয়ে ঠিক হলো, শিক্ষিত ছেলে, ভাল চাকরি করে, আদুরীর বাবার চোখে মেয়ের সুখের কথা ভেবে চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠে, হঠাৎ করে ছেলের বাবা বলে উঠল, 'ছেলের পড়া লেখা বাবদ অনেক খরচ হয়ে গিয়েছে, ছেলের বহুদিনের একটু সখ একটু লন্ডন গিয়ে একটা এক্সটা ডিগ্রী আনবে, আবার যৌতুক ভাববেন না........'
.
.
.
বিয়েতে তো অনেক খরচ, ওটা না হয় পেনশনের টাকা দিয়ে চালিয়ে দিবেন আদুরীর বাবা, কিন্তু এক্সটা তিন লক্ষ টাকা কোথায় থেকে দিবেন!? আদুরি বলল, 'বাবা বিয়েটা করব না ৷ ' বাবা বলল, 'না মা, এমন সম্বন্ধ কি বারবার আসে, আমাদের জমানো দুই লক্ষ আর এক লক্ষ ধার দেনা করলে হয়ে যাবে ৷' বাবা এক লক্ষ টাকা সঞ্চয় করতে তোমার দশ বছর করে লেগেছে, তোমার মনে আছে? তার মধ্যে এক লক্ষ টাকা ধার নিলে ওটা পরিশোধ করতে আরো দশ বছর লাগবে, তোমার কোন ছেলেও নাই, বাবা তুমি এই কাজ করো না, তোমার যদি অসুখ বিসুখ হয়ে যায় তখন কি করবে!? ' না মা আমার কোন অসুখ হবে না, তুই কিচ্ছু ভাবিস না, এই আমার দিকে তাকিয়ে দেখ, আমাকে খুশি লাগছে না? তোর সুখ আমাকে অসুখ থেকে বিরত রাখবে মা, নাইলে যে মা আমি কষ্ট পাবো! '
.
.
.
এভাবে একদিন ধুমধাম করে আদুরীর বিয়ে হয়ে গেল, স্বামী বাসর রাতে, আদুরীর কাছে এসে বলল, তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে! এক গ্লাস দুধ হাতে নিয়ে বলল, সারাদিন অনেক ক্লান্ত, খেয়ে নাও! একটু হাসি দিল আদুরী, দুধ মুখে দিবে এমন সময়, তার বাবার প্রিয় খাবার দুধের কথা মনে পড়ল, মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিঃস্ব বাবা কি রোজ এক গ্লাস দুধ খেতে পারবে ৷ ইচ্ছে হলো, বাবাকে একটা ফোন করতে, বুক ছিড়ে যাচ্ছে তার, পরক্ষণে হাসি মুখে নতুন বরের কথায় এক চুমুক দিয়ে বলল, আর খাবে না! ইচ্ছে করছে না! বাবা তুমি এসে দুধটুকু খেয়ে যাও, পছন্ড কাঁদতে ইচ্ছে করছে তার! তাকে আজ হাসতেই হবে! হয়ত মেয়েদের তাই অনেকে অভিনেতা বলে!
.
.
.
আদুরীর বাবা বাসায় আসলে কখনো বলত, ' মা, আজ মাথা ব্যাথা করছে ৷' কখনো, 'প্রেসারটা মনে হয় আজ একটু বেড়ে গেছে ৷' ইদানিং তার বাবার নতুন রোগ হয়েছে, ভালো আছি রোগ, ফোন করলেই বলে উঠে, 'মা, ভালো আছি ৷ ' .
.
.
.
এভাবে চলতে লাগল বাবা মেয়ের জীবন, স্বামীর কাছ থেকে পঞ্চাশ একশ টাকা হাত খরচ পেতে, পাশের দুটি মেয়েকে আরবি পড়াত আদুরী, সে ও মাসে একহাজার টাকা করে জমাতে লাগলো, এভাবে বছরে কিছু টাকা জমা করল, দেখতে দেখতে দুই বছর পেরিয়ে গেল, আদুরীর একটি মেয়ে হলো, পাঁচ বছর পর এক লক্ষ টাকা জমিয়ে সে বাবাকে দিল, বাবা নিতে নারাজ, অগত্যা না নিয়ে উপায় নেই,
.
.
.
একদিন বাবা মারা গেল আদুরীর, মা হীন মেয়েটি সেদিন বাবার হিমোগ্লোবিনের অভাব তা জানতে পারল, বিনা চিকিৎসায় মারা গেল তার বাবা, পাশের বাসার দাদুটি আদুরীকে সন্ত্বনা দিতে এসে একটি কাগজ ধরিয়ে দিল, 'আদুরীর মেয়ের নামে তার বাবার করা একটি স্থায়ী সঞ্চয় পত্র ৷' তখনি স্বামীর ফোন, হ্যালো আদুরী, মন ভালো হয়েছে? ইচ্ছে হচ্ছিল চিৎকার দিয়ে বলতে, তুমি আমার স্বামী না, তুমি কিলার, তুমি ডাকাত, তুমি একটা কীট..তোমার কারণে আমার বাবা মারা গেছে! কিন্তু না, আবার অভিনয় করে বলতে হলো, জান! ভালো আছি ৷ বাবার জন্য মন খারাপ লাগছে অনেক বলে ডুকরিয়ে কেঁদে উঠল ...

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.