নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;/ আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।/ উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,/ আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।_কাজী নজরুল ইসলাম
গতকাল পাশের প্রতিবেশী মারা গেলো, কয়েক দিন পর পর কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে, বাবাকে ওরা মামা ডাকে সেই সুবাদে আমার সিদ্দীক নানা হয় ৷
.
মানুষটা প্যারালাইজড হয়েছিলো কমপক্ষে পনের বছর আগে, এক সময় বন থেকে কাঠ কেটে নিয়ে আসতো, সেই কাঠ এখনো রয়ে গেছে ৷ ছোট ছেলে বলতেছে, আমার বাবার কেটে আনা কাঠ...!
.
চাকরি করতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ট্রান্সপোর্টে, বদলি হয়ে পরে ছেলে করে, অনেক বছর আগে প্রায় সময় আমাদের বাসায় এসে সুখের দুক্কের কথা বলতো ৷
.
সেই রকম সুঠাম দেহের মানুষ ছিলো ৷ বড় ছেলে আমার বন্ধু, একসাথে হাজারো স্মৃতি, শেয়ারে ফুজি ফিল্ম কিনে চলে যেতাম দূর বহুদূর ৷
.
এক রিলে ৩৬টা ফটো তোলা যেতো, ক্যামেরা ধার করা ৷ দুইজনে অাধা ঘন্টা ব্যাপী মুখে পাউডার মাখতাম, আমার সেই দিনগুলোর ছবিতে এখনো ছোপ ছোপ তিব্বত পাউডার লেগে আছে ৷
.
আমাদের এলাকার সবচেয়ে সুঠাম দেহের মানুষটি হঠাৎ বিছানা শয্যায়, বছরের পর বছর এটাই তার জীবন ছিলো, ছোট্ট একটি খুপরিতে পরিচিত কারো কন্ঠ শুনলে চোখে মুখে আনন্দ কচকচ্ করতো, শেষ কবে উঠে বসতে পেরেছে আমি জানি না ৷
.
প্রথম প্রথম অনেক কষ্ট করে লাঠিসোঠা দিয়ে একটু আধটু হাঁটতে পারতো ৷ আধা মাইল যেতে ঘন্টা খানেক ৷ এভাবে মাঝে মাঝে অফিস যেতো, দেখে আসতো পুরানো কলিগ ৷ পুরানো মায়া! বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাশ শেষে রাস্তার এপাশে ওপাশে দেখা হতো প্রায়,
.
আসসালামু আলাইকুম বললে ওয়ালাইকুম সালাম, ওয়া রহমাতুলিল্লাহি, ওয়া বারাকাতুহু, ওয়া মাগফেরাতু, ওয়া জান্নাতুহু বলে প্রায় এক মিনিট সালামের উত্তর দিতো ৷
.
তাই ওনাকে আমি শখ করে হলেও সালাম দিতাম, অনেকেই দিতো ৷ কেউ সালাম দিলে তার চোখে মুখে যেনো আনন্দের রেখা ফুটে উঠতো, হয়তো এই সালামের বরকতে সাতাশে রমজানের এমন অন্তীম মুহুর্তে আল্লাহ তার কাছে নিয়ে গেলেন!
.
কয়েক মাস আগে বাম পাশের প্রতিবেশী মুরুব্বী, আজ ডান পাশের প্রতিবেশী মুরুব্বি, এভাবে চলে যাচ্ছেন আমার ছোট বেলার দেখা সবচেয়ে সবল এবং চমৎকার মানুষগুলো ৷
.
ছোট বেলায় থুতনি পাঠানোর পর বাবা অফিস ছিলেন বাম পাশের দাদা কাঁধে করে নিয়ে গেছেন মেডিক্যালে, আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে, একদিন তাকেও আমি কারো কাঁধে করে চলে যেতে দেখেছি ৷
.
এভাবে পৃথিবীতে একজনের কাঁধে করে আরেকজনের ঠাঁই হয় ৷
.
এক পর্যায়ে শুকিয়ে যেনো কাঠ হয়ে গেছে ৷ শেষ যখন গত রাতে কান্নার আওয়াজ শুনে দেখতে গেলাম, মনে হলো নিষ্পাপ শিশু ৷ মুখে অক্সিজেন লাগানো ৷ হালকা শ্বাস নিচ্ছে...!
.
আশপাশে ঘিরে কেউ কোরআন শরীফ পড়তেছে, কেউবা কান্নাকাটি, জীবনের শেষ সমাধান ৷
.
সব সময় আমাকে আন্নে বলতো, এখনো কানে বাজে, আন্নে ভালা আছেননি?
.
লতা দিয়ে পস্রাব করতো দিনের পর দিন, গুটিশুটি হয়ে শুয়ে থাকাই ছিলো যেনো জীবনে নিয়তি ৷ জীবন নিয়ে অথচ আমাদের কতো বড়াই!
.
কেউ মরে গেলে জানাজা পড়ে এসে স্মৃতিচারণ করি, দুদিন আগে কলিগ নিয়ে লিখলাম, তারো কয়েকদিন আগে প্রিয় স্যার...দুদিন পর কাকে নিয়ে লিখবো জানি না! মৃত্যু এমনি ৷ কে কখন কেনো কিভাবে চলে যায় বলা যায় না ৷
.
কাছের মানুষ ছাড়াও আরো কিছু আগে ইরফান খান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামনন, অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরী...এভাবে কেবলি বিদায় নিয়ে লিখতে হচ্ছে ৷
.
'মসজিদ হইতে আযান হাঁকিছে বড় সুকরুণ সুর, মোর জীবনের রোজ কেয়ামত ভাবিতেছি কত দূর' কবর কবিতার লেখকও একদিন চলে গিয়েছে! থাকার কোন সুযোগ নেই ৷
২| ২২ শে মে, ২০২০ রাত ৮:২০
নেওয়াজ আলি বলেছেন: Excellent
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে মে, ২০২০ বিকাল ৪:২৮
রাজীব নুর বলেছেন: প্রতিদিন কোথাও না কোথাও মানুষ মরছেই। অবশ্য তার চেয়ে বেশি জন্মাছে।