নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য, লাল বোট

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ৯:৫৯

স্পীড বোট ছাড়বে না ৷ নদী উত্তাল ৷ লঞ্চের আশা করেও লাভ নেই ৷ নদী পার হওয়ার একমাত্র উপায় লাল মালের বোট ৷
.
তবুও সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছে এক ঝাঁক আবাল বৃদ্ধ বনিতা ৷ প্রতিকূল পরিবেশে শুরুতেই একজন লাল বোটে উঠতেই কবিতা আবৃত্তি করা শুরু করলো, 'আমি ঝঞ্ঝা, আমি ঘূর্ণী, আমি পথ- সম্মুখে যাহা পাই যাই চূর্ণী! বল বীর ৷ বল উন্নত মম শির ৷' মজার বেপার হলো, বোটের কিনারায় বসাতে সেটি একটু কাত হতেই পানির এক ঝাপটায় প্রথমে-ই বীর কাবু হয়ে ওমাগো! আল্লাহ্গো বাঁচাও! বলে চিৎকার চেঁচামেচি আরম্ভ শুরু করলো ৷
.
বীরের এই বেহাল দশা দেখে পাশে বসা পিচ্ছিও তার কান্নার সাথে সুর মিলিয়ে কাঁদতে আরম্ভ করেছিলো ৷
.
ঐদিকে বসেছে শাশুড়ী বউ ৷ দেখে মনে হচ্ছে বাড়ি থেকে সদ্য ঝগড়া করে বের হয়েছে ৷ একজন আরেকজনের মুখও দেখছে না ৷ পাশ ফিরে তাকিয়ে ছিলো ৷ পাঁচ মিনিট পর যখন হাওয়ার সাথে ঢেউয়ের তান্ডব শুরু হলো ৷ সাথে সাথেই বউ শাশুড়ী যুদ্ধ ভুলে গলাগলি শুরু করলো ৷ ভিজে চুপচুপ হয়ে থাকাতে তাদের কান্নার আওয়াজ শুনা গেলেও চোখের পানি ঢেউয়ের পানির সাথে মিশে একাকার ৷
.
আরো পাঁচ মিনিট পর মনে হলো আজ মনে হয় সবার জীবনের শেষ দিন ৷ খোলা মালের বোটে উপর থকে বৃষ্টি, পাশ থেকে ইয়া বড় বড় ঢেউ এসে আচড়ে পড়ছে ৷ তরী হেলছে দুলছে ৷ এই বুঝি এক্ষুনি ডুবে যাবে ৷
.
আরো কিছুক্ষণ পর চারদিকে কান্নার আওয়াজ ব্যতীত কিছু শুনা যাচ্ছিলো না ৷ অন্যদিকে নতুন বউ প্রথম নদী পারাপার করছে ৷ উঠার সময় বউটাকে দেখতে হেব্বী লাগছিলো ৷ দশ মিনিট ভিজার পর তার শাড়ি গায়ের সাথে লেপ্টে আছে ৷ মেকাপ খসে যাওয়ায় তাকে হুরপরী থেকে কোন এক সাদামাটা নারী মনে হচ্ছে ৷ কিভাবে যেনো মুহূর্তে সবার জীবন রঙ্গীন থেকে সাদাকালো হয়ে গেলো ৷
.
একটি মেয়েকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম ৷ সে নানুর বাড়ি বেড়াতে গেছে ৷ দেখে বললাম, সন্দ্বীপ কি প্রথম এসেছেন? বললো, হুম ৷ আর কথা বলে না ৷ যা বলি তাতেই হুম ৷ সুন্দরীদের এই এক মুদ্রাদোষ ৷ তবুও হাল ছাড়তে নেই বাবু ৷ আবারো বললাম, তিন নাম্বার সতর্ক সংকেত জেনেও কেনো নদী পার হচ্ছেন! বললো, সেমিস্টার ফাইনাল আছে ৷ সে একবারও বললো না, আপনি কেনো পার হচ্ছেন ৷ মনে মনে নিজেকে খুব অভাগা মনে হচ্ছে ৷ অদ্ভুত পাত্তাহীনতায় ভুগছি ৷ হুট করে কি যেনো মনে করে মেয়েটি হেসেছিলো ৷ হৃদয়ে দশ নম্বর সতর্ক সংকেত বয়ে গেছে ৷ টাইটানিকের নায়ক মনে হলো নিজেকে ৷ মুখোমুখি বসেছিলো ৷ সে ও ভিজে চলছে ৷ হাসি দেখে ক্রাশ খাওয়া একটি মেয়ে এতো বিশ্রী ভঙ্গিমায় দাঁত মুখ খিঁচিয়ে কান্না করছিলো যে হৃদয়ের সকল আবেগ নিভে গেলো ৷ বাবা তোমার দরবারে সব পাগলের মেলা ৷
.
এতোকিছু মধ্যেও দুইজন লোক ঝগড়া করে যাচ্ছিলো ৷ দশ টাকা বাড়তি ভাড়া সে দিবেই না ৷ আসল বীর ৷ ঢেউয়ের ঝাপটায় বারেবারে তাকে কাইত করে ফেললেও মনোবল চাঙ্গা ৷ ত্রিশ বছর আগে দুই টাকা দিয়ে নদী পার হওয়ার ইতিহাস থেকে আজকের দশ টাকা ভাড়া বাড়তি নেওয়া যে অপরাধ সে তার খিস্তি গেয়ে যাচ্ছে ৷ ভয়ে কান্না করতে থাকা এক লোককে খোঁচা দিয়ে বললো, আজ জীবন গেলোও ভাড়া আমি আগেরটা ই দিমু ৷
.
পরে বুঝতে পারলাম ৷ ভাড়া সে দিয়ে ফেলেছে বাড়তি দশ টাকা ফেরত চাইছে ৷ এই টাকা উদ্ধার করার জন্য কন্টাকদারের সাথে তার দফায় দফায় কথা কাটাকাটি চলছে ৷ কন্টাকদার বলছে মাঝির সাথে কথা বলতে ৷ এতোগুলো মানুষ ঠেলে সে চেষ্টা করছে মাঝির কাছে যাওয়ার ৷ পুরো বোটে এই এক লোক ভাবলেশহীন ৷ ভয় ডর আছে মনে হয়না তবে দশ টাকা উদ্ধারের জন্য তার আপ্রাণ চেষ্টা দেখে মায়া হচ্ছে খুব্ ৷
.
লাল বোটে অনেক কিছু হয়ে গেলো ৷ এপাশে যারা বমি করছে বোট কাত হলে তা গড়িয়ে ওপাশের যাত্রীদের পায়ে এসে লাগছে ৷ ভদ্রলোকের সেদিকে ভ্রূক্ষেপ নেই ৷ দুনিয়াটা অবিচারে ভরে গেছে ৷ সেদিনও নাকি সে দশ টাকা কমে সন্দ্বীপ গিয়ে ফিরেছে ৷
.
প্রায় এক ঘন্টা পর বোট তীরে আসলো ৷ অনেকে বলছে তাদের জীবনে এতো রুলিং তারা দেখেনি ৷ যেনো মৃত্যু থেকে ফিরে আসলো সবাই ৷ ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছে ৷ পকেটে এমনভাবে হাত দিলো যেনো সাধের দশ টাকা নেই ৷ উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ পুটলি নিয়ে হাঁটা শুরু করলো ৷ তার সাথে আবার দেখা রাস্তার মোড়ে ৷ দেখেই বললো, ভাইজান একই বোটে আসছেন ৷ একটা কথা বলি, এসব অবিচার মানা যায় না ৷ হুট করে বিনা নোটিশে দশ টাকা ভাড়া বাড়ানো এটা অন্যায় ৷ আমি বোট মালিক সমিতির অফিসে যাচ্ছি খোঁজ নিতে ৷ আজ তাদের একদিনতো আমার একদিন ৷
.
লোকাল সিএনজিতে উঠলাম ৷ বোট মালিক সমিতির অফিস জনপ্রতি পনের টাকার দূরত্ব ৷ সে আমার ভাড়াসহ ত্রিশ টাকা দিলো ৷ মুহূর্তে তার সম্বন্ধে ধারণা পাল্টে গেলো ৷ বহুত জোর করে কাজ হলো না ৷ ভাড়া আমাকে দিতেই দিলো না ৷ নেমে যেতে যেতে বললো, লাল বোটের লাল সুতা আমি বের করেই ছাড়বো ৷
.
পিছন থেকে তাকে দেখে মনে হচ্ছে, 'বল বীর - বল উন্নত মম শির! শির নেহারি' আমারি নতশির ওই শিখর হিমাদ্রির!' অথচ সে প্রথম পাবলিকের মতো কবিতা আবৃত্তি করে বোটে উঠেনি ৷ শেষ যখন তাকে পত্রিকায় দেখলাম সে প্লেকার্ড নিয়ে অনেকগুলো লোকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে ৷
.
মাঝপথে আমিও ভেবেছিলাম, কি কিপ্টুসরে বাবা ৷ মাত্র দশ টাকার জন্য....তখনো ভাবতে পারিনি লোকটি হাজার মানুষের লক্ষ টাকা বাঁচানোর জন্য কাজটি করেছিলো কিংবা কাজগুলো করে ৷ তোমাকে লাল সালাম ৷

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৪

শাহিন-৯৯ বলেছেন:

মানুষ যখন মহাবিপদের খুব কাছাকাছি চলে আসে তখন মানুষের ভিতর এক ধরণের ভয় করে তখন সে দ্বিগবিদ্গিক শূণ্য হয়ে পড়ে শুধু থাকে চোখের জল আর আল্লাহ নাম।

লেখাটায় কিছুটা সম্ভবত হুমায়ুন আহমেদ এর আমার আছে জল উপন্যাসের কিছুটা উপাদান আছে, তবে চমৎকার লেখনী।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: হুমায়ূন আহমেদ এর হিমুর একটা পড়ে ছিলাম। লঞ্চে অনেক মজার ব্যাপার স্যাপার ঘটে।

যাই হোক, ব্লগে আপনাকে অনেক দিন পর দেখলাম।

৩| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১:১১

রামিসা রোজা বলেছেন:
এই ভয়ঙ্কর সিচুয়েশনে বারো রকম মানুষের কতইনা ঘটনা
রটনা । পড়ে কিছুটা মিশেল আনন্দ পেলাম।

৪| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৪৪

প্রেক্ষা বলেছেন: এরপর থেকে শাশুড়ী-বউদের ঝগড়া হলে লাল বোটে উঠিয়ে দিতে হবে তাহলে আবার মিলমিশ হয়ে যাবে।

মানুষের জন্য ভাবে বা মানুষের জন্য কাজ করতে চায় এমন লোকের বড়ই অভাব।

আপনার লেখনী অসাধারণ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.