নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গলা উঁচু করিও না,শব্দকে শক্তিশালী কর।_মাওলানা রুমি

আবদুর রব শরীফ

‘উহারা প্রচার করুক হিংসা বিদ্বেষ আর নিন্দাবাদ;/ আমরা বলিব সাম্য শান্তি এক আল্লাহ জিন্দাবাদ।/ উহারা চাহুক সংকীর্ণতা, পায়রার খোপ, ডোবার ক্লেদ,/ আমরা চাহিব উদার আকাশ, নিত্য আলোক, প্রেম অভেদ।_কাজী নজরুল ইসলাম

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সম্ভাবনার মৃত্যু

১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১০:২০

পলাশ সাহার ট্র্যাজেডি: একটি অসম প্রেম, এক আসমান ব্যবধান এবং কিছু নির্মম বাস্তবতা

পলাশ সাহার মা ও ভাইয়ের সাক্ষাৎকার শুনে মন ভার হয়ে আসে। জানা যায়, তিনি বিয়ে করেছিলেন এক অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে—মাত্র এইচএসসি পাস করেছে, অনার্সে ভর্তি হয়েছে কিনা তাও নিশ্চিত করে বলতে পারেন না তার ভাই। আর পলাশ সাহা নিজে ৩৭তম বিসিএসের পুলিশ ক্যাডার, মাস্টার্স শেষ করে এর আগেও চাকরি করেছেন। এই দুইজন মানুষের বয়স, মানসিকতা, অভিজ্ঞতা এবং জীবনের বাস্তবতা যেন আকাশ-পাতাল দূরত্বে।

এই বয়সে মেয়েরা অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়। তারা সহজেই রেগে যায়, আবার ছোট্ট একটি আদরে গলে যায়। এটা তাদের স্বাভাবিক আচরণ। কিন্তু এত বড় একজন মানুষ—একজন এএসপি—এমন কচি বয়সের মেয়ের এসব আচরণ বুঝে ওঠা কি সহজ? তার পেশাগত দায়িত্ব, সামাজিক মর্যাদা, কাজের চাপ—এসব কিছুই ওই ছোট্ট মেয়েটির বোধের বাইরে। ফলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মানসিক দূরত্ব তৈরি হওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—এই বৈষম্য শুধু বয়সের নয়, শ্রেণিগতও। মেয়েটি এসেছে নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে, যেখানে অর্থনৈতিক অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী। পলাশের মা নিজেও ছোট বয়সে স্বামী হারিয়ে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে বড় হয়েছেন। এমন নারীরা পরবর্তীতে যখন শ্বাশুড়ি হন, অনেক সময় অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে কঠোর ও নির্মম হয়ে ওঠেন। এখানে বিষয়টি আলাদা ছিল না বলেই মনে হয়।

সব মিলিয়ে পলাশ এক চরম দুর্বিষহ সংসার জীবনের মধ্যে পড়েছিলেন। কচি বয়সী বউ, মা’র অনমনীয়তা, পরিবারিক চাপ—সব মিলে কোথাও প্রশান্তির ঠাঁই ছিল না। একজন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে একটা পক্ষের মমতা, সহানুভূতি, ভালোবাসা দরকার হয়। পলাশ সে আশ্রয় কোথাও পায়নি।

সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় যখন ভাবি, এই মেয়েটি এখন কী অনুভব করছে? মামাবাড়িতে বড় হওয়া, সদ্য সাবালিকা এক শিশু, হয়তো সে বুঝতেই পারছে না—সে কী হারিয়েছে। বুঝলেও হয়তো ভাষায় প্রকাশ করতে পারছে না। স্বামীর মর্মান্তিক বিদায় ও নিজের ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা—সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে রয়েছে সে।

পলাশ ভাই যদি অন্যভাবে মারা যেতেন—দুর্ঘটনায় বা অসুখে—তবুও হয়তো এই মেয়েটিকে আমরা দেখতে পেতাম। কিন্তু হয়তো তখন শ্বশুরবাড়ি থেকে কোনো দাবি জানাতেও পারত না। সে কারণেই হয়তো তিনি মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন—"সব স্বর্ণ বউয়ের"।

এই ঘটনা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়—বয়স, শ্রেণি, অভিজ্ঞতা ও মানসিক পরিপক্বতার ভারসাম্যহীনতা একটি সম্পর্ককে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। যেতে যেতে পলাশ সাহা আমাদের অনেক কিছু শিখিয়ে গেলেন। এটা শুধু একটি মর্মান্তিক মৃত্যুর গল্প নয়, এটি আমাদের সমাজের বহুস্তরীয় সংকটের এক নির্মম দলিল।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই মে, ২০২৫ সকাল ১১:২০

নতুন বলেছেন: একজন পুলিশ অফিসারের আত্নহত্যা করার পেছনে তার মানুষিক অবস্থার দূবলতার প্রমান দেয়।

অবশ্যই এই সমস্যার সমাধান অন্য ভাবেও করা যেতো।

মানুষিক ঝামেলার জন্য কাউন্সিলিংএর ব্যবস্থা থাকা উচিত। যখন কেউ নিজেকে পুরোপুরি নিরুপায় অবস্থায় খুজে পায় তখন সে ভালো কারুর সাথে আলোচনা করতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.