নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ।\nemail: [email protected]

মো: আবু মুসা আসারি

ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। email: [email protected]

মো: আবু মুসা আসারি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বরবাদ সিনেমা রিভিউ

১৪ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:৪৮

বরবাদ: এক অস্বীকৃত সন্তানের ছায়ায় প্রাচীন পাপের পুনর্জন্ম
✍মো: আবু মুসা আসারি

কিছু গল্প ধ্বনিতে নয়, জন্ম নেয় নীরবতায়। কিছু প্রতিশোধ হয় না সশব্দ, বরং ছায়ার মতো পিছু নেয় চুপিসারে। কিছু অপরাধ শুধুই সমাজের চোখে অপরাধ নয়—সেগুলো আত্মার গভীরে বসে থাকা অস্ফুট দীর্ঘশ্বাস। “বরবাদ” এমন এক গল্প, যা উচ্চারণে আসে না, অনুভবে গাঁথা থাকে। এ সিনেমা যেন এক দীর্ঘ আত্মস্বীকারোক্তি, যেখানে পিতা এবং পাপ পাশাপাশি বসে থাকে—কিন্তু কেউ কাউকে চোখে চোখ রেখে চিনে নিতে পারে না।

এই গল্পে কোনো হিংস্রতা নেই, নেই রক্তের হলিউডীয় উত্তাপ, বরং আছে মনুষ্যত্বের ক্লান্তি। এক সময়, এক ভুল, এক অব্যক্ত ভালোবাসা, আর সেই থেকে জন্ম নেওয়া এক সন্তান—যাকে সমাজ চেনে না, যার পরিচয় নেই কোনো নথিতে, অথচ সে আছে, পুরোমাত্রায়, নীরব উপস্থিতিতে, অস্তিত্বে। তার অস্তিত্ব যেন এক মৌন অভিশাপ—অদৃশ্য, অথচ অমোচনীয়।

শাকিব খান এখানে তারকামণ্ডলীর বাইরে, নিজের গড়ে তোলা ভাবমূর্তি থেকে সরে এসে অভিনয় করেছেন এক পরাজিত পিতার ভূমিকায়। তিনি বাহ্যিক সাফল্যে মোড়া, অথচ অন্তর্দাহে পুড়ে যাওয়া মানুষ। তার চরিত্রটি ঠিক যেন সমাজের সেই পুরুষদের প্রতিনিধি—যারা ভুলের দায় মুছে ফেলতে চায় সংসারের সুগন্ধি দিয়ে, অথচ হৃদয়ের ভেতরে জমা থাকে এক অন্তর্লীন অনুতাপ। শাকিবের অভিনয়ে ছিল ভারসাম্য—তিনি চিৎকার করেন না, দৃষ্টিতে ক্লান্তি ধরান; তিনি অনুতাপের ভাষা বলেন না, তার চেহারায় তা লেখা থাকে।

সন্তান চরিত্রটি—নামহীন, অথচ উপস্থিতির ভারে স্পষ্ট—এখানে কেবল এক মানব চরিত্র নয়, বরং পিতার অপরাধবোধের শারীরিক রূপ। সে প্রতিশোধ নিতে আসে না, আসে দাঁড়িয়ে থাকতে—যেন এক জীবন্ত আরোপ। এই চরিত্রটি যেন দর্শকের সামনে তুলে ধরে এক অনন্ত প্রশ্ন—জন্ম কি কেবল রক্তে ঘটে, না তা পরিচয়ের মাটিতেও শিকড় গাঁথে?

নারী চরিত্র—ইধিকা পালের নিঃশব্দ বর্ণমালা—এই সিনেমার সবচেয়ে সংবেদনশীল স্তর। তিনি যেন প্রেমিকার থেকেও বেশি—তিনি সাক্ষী, তিনি সহচর, তিনি নির্বাক সহনশীলতার প্রতীক। তার প্রেম কোনো প্রত্যাশা নয়, বরং একধরনের উপলব্ধি, যেখানে সম্পর্কের ভাঙন ও পুনর্গঠনের মাঝখানে সে নিজেকে তুলে দেয় এক বিপরীত মানবিক শক্তি হিসেবে।

চিত্রনাট্য শব্দ দিয়ে নয়, দৃশ্য দিয়ে গড়ে ওঠে। বাতাসে ওড়ে দৃষ্টির উত্তাপ, অপ্রকাশ্য সত্যের ভার; সংলাপহীনতা হয়ে ওঠে সবচেয়ে উচ্চকণ্ঠ প্রতিবাদ। একটি দৃশ্যে সন্তান পাশে দাঁড়িয়ে, পিতা পাশে বসে—কিন্তু কেউ কিছু বলে না। এই অব্যক্ত ব্যবধানেই তৈরি হয় সিনেমার হৃদয়, যেখানে দর্শক অনুভব করে এক ধরণের গভীর, কাঁপুনিময় শোক।

সিনেমাটির সবচেয়ে বড় অর্জন—তার নির্মোহ নীরবতা। আজকের সময়ের ‘চিৎকারে পূর্ণ’ বাণিজ্যিক সিনেমার ভিড়ে এটি যেন এক নিঃশব্দ নির্জনতা, যেখানে সত্য বলে না, শুধু অনুভব করায়। ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর কখনো কখনো অতিরিক্ত আবেগ ছুঁয়ে যায়, তবে বেশিরভাগ সময়েই তা দৃশ্যের মেজাজের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, কখনো মৃদু, কখনো করুণ, কখনো শুধু নিঃশ্বাসের মতো স্পষ্ট।

“বরবাদ” শব্দটির অর্থ ‘ধ্বংস’—কিন্তু এই সিনেমায় ধ্বংস কেবল বাহ্যিক নয়, এটি এক অভ্যন্তরীণ শুদ্ধির প্রক্রিয়া। এটি আমাদের বলে—কেউ বরবাদ হয় সমাজে নয়, সে বরবাদ হয় নিজের চোখে। এক পিতা নিজের সন্তানের দিকে তাকিয়ে নিজেকেই চিনতে পারে না, আর সেই অচেনা নিজের মুখটিই তার ধ্বংস।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.