![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। email: [email protected]
লেখক:মোঃ আবু মুসা আসারি
ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
চার্লি চ্যাপলিন—নামটি উচ্চারণেই শোনা যায় এক দীর্ঘশ্বাস, এক মৃদু হাসি, এক নীরব প্রশ্ন: ‘মানুষ কোথায় গেল?’ দুনিয়াব্যাপী ব্যস্ততাপূর্ণ, প্রযুক্তিনির্ভর ও কৃত্রিম বাস্তবতার যুগে দাঁড়িয়ে যখন আমরা নিজেদের খুঁজে ফিরি, তখনই নতুন করে ফিরে আসেন সেই নীরব চলচ্চিত্রের জাদুকর, যিনি কথার চেয়ে গভীরতর অর্থ রচনা করেছিলেন মুখভঙ্গি, দৃষ্টিভঙ্গি, আর হাস্যরসের ছন্দে।
জন্ম এবং যাত্রার সূচনা
১৮৮৯ সালের ১৬ এপ্রিল, লন্ডনের এক হতদরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন স্যার চার্লস স্পেনসার চ্যাপলিন। নাট্যজগত ছিল তাঁর পিতৃ-মাতৃসূত্রে প্রাপ্ত উত্তরাধিকার, কিন্তু দুর্ভাগ্য ও দারিদ্র্য তাঁকে জীবনের আসল মঞ্চে নামিয়ে আনে অতি অল্প বয়সেই।
তাঁর আত্মজীবনী My Autobiography (1964)-তে তিনি লিখেছিলেন—
"I was hardly aware of a world outside of poverty."
এই অভিজ্ঞতা তাঁর চলচ্চিত্রকে করে তোলে আরও মাটির কাছের, মানুষের হৃদয়ের আরও গভীরে প্রবেশযোগ্য।
নির্বাকের ভাষা: চ্যাপলিনের নতুন ব্যাকরণ
চলচ্চিত্রের শুরুর দিনগুলোতে শব্দ অনুপস্থিত ছিল, কিন্তু অভিব্যক্তির ব্যঞ্জনা ছিল প্রচণ্ড। চ্যাপলিন এই নীরবতাকেই রূপ দিলেন নান্দনিক বিদ্রূপে।
The Tramp চরিত্রটি সেই নিঃস্ব অথচ মর্যাদাবান মানবপ্রতিমা—যে একদিকে হাসায়, অপরদিকে কাঁদায়। The Kid (1921)-এ এক অনাথ শিশুর প্রতি তার পিতৃসুলভ স্নেহ এবং City Lights (1931)-এ অন্ধ ফুলওয়ালিকে ভালোবাসার মাধ্যমে দর্শক বুঝতে শেখে—ভাষা শুধু শব্দের নয়, হৃদয়েরও।
জেফরি ভ্যান্স তাঁর বই Chaplin: Genius of the Cinema (2003)-তে লেখেন:
"Chaplin’s body became the canvas of silent suffering and subversive satire."
মানবিকতার ব্যঙ্গচিত্র: প্রযুক্তি ও পুঁজির বিরুদ্ধে শিল্প
Modern Times (1936)—এ চ্যাপলিন দেখান শ্রমিক কীভাবে মেশিনে রূপান্তরিত হয়। conveyor belt-এর দৃশ্যটি আজও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানোর জন্য যথেষ্ট। প্রযুক্তির গ্ল্যামার নয়, বরং তার অন্তর্নিহিত ভয়াবহতা তিনি তুলে আনেন হিউমার আর আইরনির মধ্যে দিয়ে।
ডেভিড রবিনসন, Chaplin: His Life and Art (1985)-এ বলেন:
“Modern Times is not just a comedy. It is Chaplin’s scream against the mechanization of mankind.”
রাজনীতির প্রতীকী প্রতিবাদ: ‘The Great Dictator’
১৯৪০ সালে হিটলারের উত্থানকালে The Great Dictator যেন হয়ে ওঠে চার্লি চ্যাপলিনের পক্ষ থেকে এক বিশ্বমঞ্চের ভাষণ। শেষ দৃশ্যে তাঁর অসাধারণ বক্তৃতা, যেখানে তিনি বলেন—
“More than machinery, we need humanity.”
এই লাইনটি এখনো পোস্টার, বক্তৃতা এবং প্রতিবাদে ফিরে ফিরে আসে।
বিতর্ক, নির্বাসন ও পরিণতি
চ্যাপলিনের মানবিক মূল্যবোধকে অনেকেই তখন ‘কমিউনিস্ট প্রপাগান্ডা’ মনে করতেন। ১৯৫২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাঁর ভিসা নবায়ন করতে অস্বীকৃতি জানালে, তিনি স্থায়ীভাবে ইউরোপে চলে যান। যদিও ১৯৭২ সালে তিনি আবার ফিরে এসে একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের ‘Lifetime Achievement’ পুরস্কার গ্রহণ করেন—৭০ সেকেন্ড দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের অভিবাদন যেন একটি যুগের শ্রদ্ধাঞ্জলি।
আজকের যুগে প্রাসঙ্গিকতা: নিঃসঙ্গতার বিপরীতে চ্যাপলিন
আমাদের সময় প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হলেও হৃদয়ে নিঃস্ব। সোশ্যাল মিডিয়ায় হাজারো বন্ধু থাকলেও বাস্তবে আমরা নিঃসঙ্গ, বিষণ্ণ। সেখানে চ্যাপলিন আমাদের শেখান—একটি ছোট হাসি কীভাবে এক পৃথিবীর ভার লাঘব করতে পারে।
তিনি বলেছিলেন—
“To truly laugh, you must be able to take your pain, and play with it.”
এই দর্শন আমাদের শেখায়—কান্নাকে শক্তি করে তোলাই হল সাহস।
---
উপসংহার: একজন নীরব কবির জাগরণ
চার্লি চ্যাপলিন কোনো কিংবদন্তি মাত্র নন, তিনি ইতিহাসের এক শব্দহীন কবি, যাঁর প্রতিটি দৃশ্য ছিল এক একটি সামাজিক কবিতা। তাঁর সিনেমাগুলো যেন এক একটি দর্পণ—যেখানে আমরা দেখি নিজেদের মুখ, সময়ের প্রতিচ্ছবি, আর হারানো মানুষের স্পন্দন।
আজ যখন শিল্প এক যান্ত্রিক প্রলাপ, চ্যাপলিন তখন এক অনন্ত স্মারক—নীরবতা দিয়েও উচ্চারণ সম্ভব, হাসির আড়ালেও বিদ্রোহ সম্ভব।
---
তথ্যসূত্র:
1. Chaplin, Charles. My Autobiography. Simon & Schuster, 1964.
2. Robinson, David. Chaplin: His Life and Art. McGraw-Hill, 1985.
3. Vance, Jeffrey. Chaplin: Genius of the Cinema. Harry N. Abrams, 2003.
4. https://www.charliechaplin.com
5. https://www.bfi.org.uk
6. https://www.oscars.com
©somewhere in net ltd.