নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ।\nemail: [email protected]

মো: আবু মুসা আসারি

ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন বিভাগ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। email: [email protected]

মো: আবু মুসা আসারি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি মানেই ভেজা রাস্তায় ছাতা, আর ঘরের ভেতরে খিচুড়ির সুবাস।

২১ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪৮



বৃষ্টির দিনে খিচুড়ি: এক বাঙালি হৃদয়ের স্বাদ ও স্মৃতি

বর্ষার প্রথম বৃষ্টি নামলেই মন যেন কেমন একটা করে ওঠে। জানালার কাঁচে টুপটাপ বৃষ্টির শব্দ, চারপাশে ধোঁয়াটে মেঘ, মাটির সোঁদা গন্ধ—আর সঙ্গে সঙ্গে মনে পড়ে যায় একটিই নাম: খিচুড়ি।

এই খাবারটির সঙ্গে যেন জড়িয়ে আছে আমাদের শৈশব, পারিবারিক ঐতিহ্য আর আবেগের মেলবন্ধন। কিন্তু কখন, কীভাবে এই খিচুড়ি বাঙালি জীবনের এমন অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠল? কেন বৃষ্টির দিনে বাঙালির প্রথম পছন্দ হয় খিচুড়ি?


খিচুড়ির ইতিহাসের পাতায় ফিরে দেখা

খিচুড়ির শিকড় বহু প্রাচীন। ভারতীয় উপমহাদেশে খিচুড়ির ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব যুগের। আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ থেকে শুরু করে মুঘল আমল পর্যন্ত এই খাবারটি ছিল নানা রূপে জনপ্রিয়। আকবরের দরবারে ঘি, কাজু ও মাংস মিশিয়ে পরিবেশিত হতো শাহী খিচুড়ি। বাংলার ঘরে ঘরে সেটাই রূপ নিয়েছে আমাদের চেনা ভুনা খিচুড়ি বা সহজ-সরল ডাল-চাল খিচুড়িতে।খিচুড়ি (বা খিচুড়ি) হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার একটি বহুল প্রচলিত খাদ্য, যার মূল উপাদান চাল এবং ডাল। এটি ভারতের প্রাচীন রন্ধনশৈলীর অন্যতম নিদর্শন। খিচুড়ির ইতিহাস ১৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত পুরনো, যখন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থ ও প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে একে সহজপাচ্য, স্বাস্থ্যকর এবং ত্রিদোষ নিরাময়কারী খাবার হিসেবে বিবেচনা করা হতো।মুঘল আমলেও খিচুড়ি ছিল রাজকীয় খাবার। সম্রাট আকবর খিচুড়ি খুব পছন্দ করতেন, বিশেষ করে যখন তার মধ্যে ঘি, মাংস এবং শুকনো ফল যোগ করা হতো। মুঘল দরবারের রান্নাঘরে খিচুড়ি ছিল নানাভাবে রূপান্তরিত—সাধারণ কষ্টিপাথরের চুলায় রান্না হওয়া সাদামাটা খিচুড়ি থেকে শুরু করে সমৃদ্ধ 'শাহী খিচুড়ি' পর্যন্ত।

বাংলাদেশে খিচুড়ি মূলত দুই রূপে পরিচিত—সাদামাটা খিচুড়ি (চাল-ডাল দিয়ে রান্না) এবং ভুনা খিচুড়ি (তেলে ভাজা মসলা ও মাংস সহযোগে)। গ্রামবাংলার হিন্দু ও মুসলিম উভয় সংস্কৃতিতে খিচুড়ি পবিত্রতা, উৎসব এবং স্বাস্থ্যকর খাবার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

বৃষ্টির দিনে খিচুড়ির টান কেন এমন গভীর?

১. নরম-মসলাদার গরম খাবার = বর্ষার পরম আরাম

বৃষ্টির দিনে শরীর থাকে শীতল, মন থাকে একটু অলস। সেই সময় এক বাটি গরম খিচুড়ির মসলাদার ঘ্রাণ মানে হলো মানসিক শান্তি ও শারীরিক উষ্ণতার এক অপূর্ব সংমিশ্রণ। খিচুড়ির সঙ্গী ডিম ভাজা, বেগুনি, আলুর চপ বা পাঁপড় যেন স্বাদে আনে অতিরিক্ত প্রাণ।

২. সহজ, ঝটপট রান্না

বাজারে যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ বর্ষাকালে। খিচুড়ির জন্য প্রয়োজন হয় শুধু চাল, ডাল আর কিছু সাধারণ মসলা। বাড়তি থাকলে পেঁয়াজ, সবজি বা ডিম দিলেই হলো। রান্নায় সময় কম লাগে, স্বাদে কমতি নেই।

৩. পারিবারিক স্মৃতি আর আবেগ

শৈশবে মা-ঠাকুরমার হাতে রান্না খিচুড়ির স্মৃতি অনেকেরই মনের গহীনে গেঁথে আছে। বাইরে বৃষ্টি ঝরছে, আর ভেতরে খিচুড়ির সুগন্ধে ভরে যাচ্ছে ঘর—এই অভিজ্ঞতা যেন সময়ের সাথে আরো মধুর হয়ে ওঠে।

৪. স্বাস্থ্যকর ও হালকা খাবার

বর্ষায় অনেকেই ঠান্ডা, হজমের সমস্যা, সর্দি-কাশিতে ভোগে। খিচুড়ি এমন এক খাবার, যা হালকা, তৃপ্তিদায়ক এবং সহজপাচ্য। তাই বর্ষার সময় এটা নিরাপদ ও পুষ্টিকর একটি বিকল্প।

খিচুড়ি মানেই এক গল্পের শুরু

খিচুড়ি শুধু একটি রান্না নয়, এটি একটি অনুভব—যেখানে বৃষ্টি, বাঙালির হৃদয়, পরিবার এবং সংস্কৃতি একসাথে গলে যায়। সেই প্রথম ফোঁটা বৃষ্টির মতোই খিচুড়িও বাঙালির জীবনে এক অদ্ভুত সুখানুভূতির জন্ম দেয়।

তাই হয়তো, যতবার বৃষ্টি নামে, ততবার আমরা খিচুড়ির কথা ভাবি। আর ভাবতে ভাবতেই রান্নাঘর থেকে ভেসে আসে সুগন্ধ।

শেষ কথা

এই বর্ষায় যদি জানালার বাইরে ঝরতে থাকে বৃষ্টি, তাহলে আর দেরি নয়—চাল-ডালটা ধুয়ে দিন, একটা পাতিল চড়িয়ে দিন চুলায়। আর ঘরভর্তি করুন খিচুড়ির ঘ্রাণে, গল্পে আর বৃষ্টিভেজা মুহূর্তে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.