নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু সিদ

আবু সিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষা - ৬. শিক্ষার পদ্ধতি

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ সকাল ১০:৩৭

যে কোনো পদ্ধতির ফলপ্রসু প্রয়োগের জন্য কিছু নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলার দরকার হয়। এই নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলার সঠিক প্রয়োগের দ্বারাই কেবল একটি পদ্ধতি যথাযথ ক্রিয়াশীল থাকতে পারে। এই নিয়ম-কানুন ও শৃঙ্খলা কোনো পদ্ধতির উপাদানগুলোর উপস্থিতি ও গতিবিধি সঠিকভাবে কার্যকর রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষার পদ্ধতিতেও তাই প্রয়োজন এমন কিছু নিয়মের। শিক্ষার পদ্ধতির কিছু নিয়ম অধ্যায় পাঁচে বর্ণিত শিক্ষার উপাদানের সাপেক্ষে আলোচনা করা যায় -

ক. কর্তা বা শিক্ষার্ত্রী
কর্তা কোনো একটি শিক্ষা পদ্ধতির প্রধান চালিকা শক্তি হলেও তিনি স্বেচ্ছাচার করতে পারবেন না। যদি অনেকে এক সাথে শিক্ষা গ্রহণ করেন তবে সেক্ষেত্রে এটা আরও দরকারি। যেমন, গৃহ-শিক্ষকের কাছে শেখার ক্ষেত্রে শিক্ষার্ত্রী কিছু কিছু স্বেচ্ছাচারিতা করেও পার পেতে পারেন কিন্তু স্কুলে সেসবের কোনো সুযোগ নেই। অর্থাৎ, যদি কেবল স্কুল কেন্দ্রিক শিক্ষাকে বিবেচনা করা হয় তবে প্রত্যেক শিক্ষার্ত্রীকে কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। কোনোভাবেই স্বাধীনতাকে স্বেচ্ছাচারিতার পর্যায়ে নামিয়ে আনতে দেয়া যাবে না। যেমন, একজন শিক্ষার্ত্রী ক্লাসের মাঝখানে তার ডেস্কের ওপর পা তুলে যদি শিক্ষকের সাথে হেয়ালী করেন, মিস্টার জন! তোমার নাকি আমাশা হয়েছে? তাহলে বিষয়টাকে সাধুবাদ জানানোর কোনো সুযোগ নেই। এ জাতীয় স্বেচ্ছাচারিতা অবশ্যই অনুমোদনের অযোগ্য। কারন, তা কেবল বিশেষ ওই শিক্ষার্ত্রীর জন্যই নয় বরং তার সহ-শিক্ষার্ত্রীদের জন্যও ক্ষতিকর।

খ. শিক্ষার বিষয়
শিক্ষার বিষয় যা-ই হোক না কেন তা শিখবার ও শেখাবার কিছু নিয়ম-কানুন থাকবে। বিষয়ের ভিন্নতার কারনে নিয়ম-কানুনেও ভিন্নতা দেখা দেবে। যেমন, শিক্ষার বিষয় ’ভাষা’ হলে বর্ণ পরিচয়, উচ্চারণ, শব্দ গড়ন, ধ্বনি সচেতনতা ইত্যাদি বিষয়ে পৃথক পৃথক দৃষ্টি দিতে হবে। আবার, শিক্ষার বিষয় গণিত হলে সংখ্যা পরিচয়, দুই বা তার অধিক সংখ্যা নিয়ে কাজ এসব হয়ে উঠবে গুরুত্বপূর্ণ। তবে শিক্ষার বিষয় যাই হোক না কেন তাকে প্রতিদিনকার জীবনের সাথে সম্পৃক্ত করতে হবে। এতে শেখাটা যেমন অপেক্ষাকৃত সহজ হবে তেমনি শিক্ষার ফলপ্রসু প্রয়োগ শিক্ষার্ত্রীদের অধিক শেখার অনুপ্রেরণা যোগাবে। এছাড়া সম্ভব সকল উপায়ে শিক্ষার মাঝে জানার মাঝে আনন্দের সমাবেশ ঘটাতে হবে। এর ফলে শিক্ষা তাদের কাছে জীবন-বিচ্ছিন্ন কোনো প্রক্রিয়া হয়ে উঠবে না, বরং তা প্রতিদিনকার আহার নিদ্রা বা গল্প করার মতো উপভোগ্য হয়ে উঠবে।

গ. শিক্ষার হাতিয়ার
নদীতে মাছ ধরতে গেলে যেমন মাছধরার জাল, বর্শা, নৌকা এসব হাতিয়ারের প্রয়োজন তেমনি যে কোনো শিক্ষা-ব্যবস্থায় হাতিয়ার আবশ্যক। হাতিয়ার ব্যতিত শিকার করা বা মাছধরা যেমন নিস্ফল হয়ে দাঁড়ায় তেমনি শিক্ষার হাতিয়ার ব্যতিত ’শিক্ষা’ অসম্পূর্ণ বা অনেকক্ষেত্রে অর্থহীন হয়ে পড়ে। শিক্ষার হাতিয়ার কী হবে তা শিক্ষার বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।

হাতিয়ার শিক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় হলেও অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশে এটাকে অকেজো বা অর্থহীন বলে উপেক্ষা করা হয়। যেমন, ইতিহাসের পাঠদানের ক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ের সাথে মানচিত্রের ব্যবহার শিক্ষার্ত্রীদের মনোযোগ বাড়িয়ে তুলতে পারে। বাংলাদেশের মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেও ছাত্র ছাত্রীরা মানচিত্রের বিষয়ে অজ্ঞ থাকেন। অথচ মানচিত্র ব্যবহার করে যদি শিক্ষক-শিক্ষিকারা পাহাড়পুর বা ময়নামতির প্রাচীন ঐতিহ্যের ইতিহাস পড়াতেন তাহলে শিক্ষার্ত্রীরা তা মনে রাখতে পারতেন সুদীর্ঘ সময় ধরে।

ঘ. সহায়ক
পঞ্চম অধ্যায়ে সহায়ক-কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রথমত, পরিবেশ। যে কোনো শিক্ষার ক্ষেত্রে ভালো বা অনুকূল পরিবেশ একান্ত প্রয়োজন। অনুকূল পরিবেশ কোনো নিয়ম-নীতিতে আবদ্ধ নয় তবে অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে কিছু নিয়ম-নীতি প্রয়োগের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। এই নিয়মাবলী শিক্ষার্ত্রী এবং শিক্ষক উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। যেমন, যে কোনো শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্ত্রীদের মনোযোগ এবং শিক্ষকের আনন্দঘন সহযোগিতা শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারদিককার পরিবেশও শিক্ষার অনুকূলে থাকতে হবে - আর এর নিশ্চয়তা দেবে সমাজ ও রাষ্ট্র। যেমন, স্কুল বা কলেজ চলাকালে একদল উড়নচ-ী মানুষ এসে কখনও বলতে পারেন না যে ’ যাও যাও ক্লাস হবে না - আজকে হরতাল!’

প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রক্রিয়ায় ’শিক্ষক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকেন। ভূমিকার কারনে তাকেও শিক্ষার্ত্রীদের মতো কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। যেমন, শিক্ষক কখনও স্বেচ্ছাচারিতা করতে পারবেন না। তিনি হঠাৎ করে নোটিশ জারি করতে পারেন না যে আজ তার ক্লাস হবে না! শিক্ষার্ত্রীদের ভুল শেখানোর অধিকার তাকে দেয়া হয়নি। তাদের সাথে তার যে কোনো ধরনের যোগাযোগই হবে ইতিবাচক। অন্যদিকে, শিক্ষার্ত্রীরা পরীক্ষা পিছানোর নামে নামবেন না অর্বাচীন কোনো আন্দোলনে। অর্থাৎ, শিক্ষার্থী যেমন নিজেকে ক্রমাগত সংশোধন করে চলবেন শিক্ষককেও তেমনি নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি অতিক্রম করে এগোতে হবে Ñ জাতি ও রাষ্ট্র অপরিসীম বিশ্বাসে তাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তোলার দায়িত্ব তাদের হাতে অর্পণ করেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.