![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
'সারদামঙ্গল' কাব্য'টি বিহারীলাল চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কাব্য। ঊনবিংশ শতাব্দীতে গীতিকবিতার সুরমূর্ছনা তার কাব্যে প্রথম শোনা গিয়েছিল। তথাপি প্রশ্ন জাগে মঙ্গলকাব্যের সাথে সারদামঙ্গল এর সম্পর্ক আছে কিনা, আর পঞ্চম স্বর্গের শেষ পংক্তিতে আছে-
"সারদামঙ্গল এর গান গাও কৌতুহলে"
-তবে কি মঙ্গলকাব্যে কবিতাগুলির সাথে সারদামঙ্গল যোগ আছে।
মঙ্গলকাব্য মধ্যযুগের কাব্য, সেখানে দেবতাদের মাহাত্ম্য পূজা প্রচার মোখ্য- প্রত্যেক মঙ্গলকাব্যের গঠন একই। বর্ণনা, গ্রন্থ উৎপত্তির করন, দেব খন্ড, মানবখন্ড, এছাড়া যে মানুষটিকে নিয়ে দেব-দেবীর পূজা করা হবে তিনি এক অভিশপ্ত চরিত্র, মঙ্গলকাব্যে থাকে নায়িকার বারোমাসা বর্ণনায় নিপুণতা, পতিনিন্দা নায়ক এর ভয় প্রদর্শন, বিচিত্র অলৌকিক প্রসঙ্গ। শুধু তাই নয় ক্ষমতার উৎস বলে তিনি যেমন সর্বনাশ করতে পারে তেমনি রাজা করে দিতে পারে এই সবই মঙ্গলকাব্যের বৈশিষ্ট্য। মঙ্গলকাব্যের আত্মপ্রচারের নির্দেশ আছে দেবতাদের স্বপ্নাদেশ কবিরা মঙ্গল কাব্য রচনা করেন।
অপর পক্ষের সারদামঙ্গল কাব্যের সারদা পৌরাণিক দেবী নন, তিনি মানুষ শ্রেষ্ঠ। বাল্মিকীর কাব্য সৃষ্টির প্রেরণা ব্রহ্মার যে মানুষ কন্যা- তিনিই হলেন কবির মানুষী। তার সঙ্গেই তাঁর 'মিলন-বিরহ লীলা'। তার চেতনা সমগ্র চেতনাকে আচ্ছন্ন করেছে। তার বেদনায় খুবই আনন্দিত হয়েছেন কবি। এই সবই হয়েছে কবির মনোরাজ্যে বাস্তবে নয়। বিহারীলালের ভাবনায় যে সারদা তার সাথে মঙ্গলকাব্যের কোনো দেবী'রি মিল নেই।
দ্বিতীয়ত, কোন ধর্মীয় ধর্মীয় বিশ্বাস থেকে সারদামঙ্গল লেখা হয়নি। কবির ধর্ম ও অর্থলাভ এর কামনা কোনটাই ছিল না। কবিতা লিখতে গিয়ে কোন দেবতার স্বপ্নাদেশও পাননি। একান্ত মনের আনন্দে নিতান্ত ভালো লাগা ও মন্দ লাগার উপর ভিত্তি করে তিনি কাব্য রচনা করেছেন, তাই তার কাব্যটি হয়েছে আত্মকথন ও গীতিকবিতা- মঙ্গলকাব্যের কোন আত্মকথন গীতি কবিতার সুর শোনা যায়নি।
তৃতীয়ত, সুরতাল যোগে মঙ্গলকাব্য গীত হতো- সারদামঙ্গল সেভাবে গীতে হতো না। একাকী বসে পাঠ করার জন্য লেখা যদিও প্রত্যেক স্বর্গর প্রথমে গান তালের সংযোগে লিখিত ছিল। মঙ্গলকাব্য যেভাবে লিখিত অর্থাৎ বন্দনা, গ্রন্থ উৎপত্তির কারণ- রয়েছে তা সারদামঙ্গল নেই। সেখানে কবি ও সারদার মিলন বিরহের কথা বর্ণিত । মঙ্গলকাব্যে সমাজ জীবনের কথা আছে- এখানে রয়েছে কবি মনের একটি ভাবনা। তাকে ছাড়া তিনি কিছুই ভাবেনি- কোনো পার্থিব জিনিস চাননি কবি। তিনি শুধু মানুষলোকে সারদাকে পেতে চেয়েছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে- বলা যায় কোন দিক দিয়ে এটি মঙ্গলকাব্য নয়।
সবশেষে পাঠকের মনে প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক যে, সারদামঙ্গল কাব্যের নাম কতটা যুক্তি যুক্ত ? - এর কারণ সারদামঙ্গল বন্দনামূলক কাব্য। কবি সারদাকে কখনো দেবীরূপে। কখনো মানবী রূপের। কখনো প্রেয়সী বালিকার রুপের দেখেছে। মঙ্গলকাব্যের সাথে সারদামঙ্গল মিল খুঁজে পাওয়া যায় প্রত্যেক স্বর্গের আরম্ভে একটি করে গীত আছে দেখে। সারদামঙ্গল এর কবি সারদাকে পরম শ্রদ্ধা ভক্তি ও প্রেমি বরণ করতে চেয়েছে কখনো পেয়েছেন কখনো পাননি। পাওয়া না পাওয়া শিল্প বেদনা বিনিয়োগ হয়েছে শেষে। কবি'তাকে পেয়েছেন। তাই সারদাকে পাওয়ার মধ্য দিয়েই সারদামঙ্গল কাব্যের নামকরণের সার্থকতা হয়েছে।