নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবাইকে একদিন এই মায়া ছেড়ে হতে হবে অদৃশ্য।স্বাগতম অদৃশ্যের এই রহস্যময় ব্লগে্।জাতিকে লেখনীর মাধ্যমে সঠিক পথ দেখানোর ক্ষুদ্র প্রয়াস আমার এই ব্লগ।
'এই যে মেয়ে।শুনছো?এদিকে আসো।
হাসবা না একদম।হাসলে চিমটি দিব।
তোমাকে অনেকদিন যাবৎ একটা কথা বলব
ভাবছিলাম।তোমাকে
না আমি ভালবেসে ফেলেছি।দেখ একদম
রাগবে না কিন্তু।'
আজ সাহস করে এই কথাগুলোই
বলবে নির্ঝর।একটা শব্দও বাদ দিবে না।
আয়নার সামনে বারবার কথাগুলো বলার
প্রাকটিস করছিল নির্ঝর।সব ঠিকঠাক।এখন
শুধু তুবাকে বলতে পারলেই হয়।
তুবাকে অনেকদিন হলই ভালবাসে নির্ঝর।
তুবা বুঝতে পারে না।একই সাথে থাকে তবুও
বুঝতে পারে না।তাছাড়া অত্যন্ত ভদ্র আর
লাজুক ছেলে হিসেবে নির্ঝরের অত্র এলাকার
মায়েদের কাছে বিশেষ সুনাম রয়েছে।
পড়াশুনায়ও ভালো সে।বুয়েটে মেকানিক্যাল
ইঞ্জিনিয়ারিং তৃতীয় বর্ষ।
এসব আর ভাববে না নির্ঝর।তার সুনামের
দরকার নেই।তুবাকে সে বলবেই বলবে।
তাছাড়া অনেকদিন হল রাদটা খেপিয়েই যাচ্ছে।
সে নাকি পুরুষই না।একটা মেয়েকেই
ভালোবাসার কথা বলতে পারছে না।পুরুষত্ব
নিয়ে খোঁটা দেওয়া নির্ঝরের একদম অপছন্দ।
তুবা নির্ঝরদের পাশের বাসার ফ্ল্যাটে থাকে।
রোজ সকালে ছাদে আসে।গলা ছেড়ে সুর
তোলে।সেই সুর শুনে যে কেউ শ্বাস
আঁটকে মারা যেতে পারে।তবে নির্ঝরের খুব
ভালো লাগে।কি আগ্রহ নিয়ে গান গায়
মেয়েটা!আর গান গাওয়ার সময় চোখ বন্ধ
করে এক মনে গান গেয়ে যায়।নির্ঝর সব আড়
চোখে লক্ষ্য করে।গান শোনার জন্যই
মোটা একটা বই নিয়ে সেও রোজ
সকালে ছাদে যায়।আর আড় চোখে তুবার গান
গাওয়া দেখে।আজও যাবে।
বইটা হাতে নিয়ে পড়ার ছলে তুবাকে দেখবে।
আর সুযোগ পেলেই
সাজানো কথাগুলো বলে ফেলবে।
নির্ঝর ছাদে বসে আছে।এখনো তুবা আসেনি।
এতক্ষণে তো আসার কথা।মেয়েটা এবার
এইচ.এস.সি প্রথম বর্ষ।নির্ঝরের
কাছে মাঝে মাঝে আসে।অঙ্ক
দেখিয়ে নিয়ে যায়।নির্ঝর যখন ডান হাতের
তর্জনী দিয়ে চশমা ঠেলতে ঠেলতে অঙ্ক বুঝায়
তখন মেয়েটা হাসে।কেন হাসে কারণ এখনও
অজানা নির্ঝরের।ভাবছে আজ এটাও জিজ্ঞেস
করবে।কিন্তু আসছে না কেন মেয়েটা?
-এই যে ভাইয়া শুনছেন?
-আপনি এসে গেছেন?
-ভাইয়া,আপনি কি আজ অসুস্থ?
-নাতো।কেন?
-আপনি আমাকে আপনি আপনি বলছেন কেন?
আপনি তো তুমি করে বলতেন।
নির্ঝর বুঝতে পারছে তার পা কাঁপছে।অনুনাদ
বেশি হলে পা'টাই খুলে পড়বে।খুব নার্ভাস
লাগছে নিজেকে।
-না মানে।কিছু না।এমনি।তুমি গান গাও।
হাহাহা...।
-আপনি এভাবে কাঁপছেন কেন?কোন সমস্যা?
-না না।একদম ঠিক আছি।হাহাহাহা...।
-আজও কি গান শুনতে ছাদে এসেছেন?
-না একদম না।আমি তো পড়তে এসেছিলাম।
এই যে বইটা দেখছ না?হাহাহাহা
মেয়েটা মনে হয় একটু মন খারাপ করে বসল।
গান শুনতে এসেছে এটা বললেই পারত সে।আর
নির্ঝরই বা কেমন?কথায় কথায়
হাহা করে হাসছে।মানুষ বেশি নার্ভাস
হলে সেটা অন্যকে বুঝতে দেয়
না বলে হেসে ফেলে।এই কাজটা মস্তিষ্ক
নিয়ন্ত্রণ করে।মস্তিষ্ক সবসময় চায়
তাকে বহনকারী মানুষটা যেন সবসময়
স্বাভাবিক থাকে।নিজেই নিজের মাথায়
একটা চড় বসিয়ে দিল নির্ঝর।বই ছাড়া তার
মাথায় আর কিছুই আসে না।
-ভাইয়া,ম্যাট্রিক্স করতে গিয়ে কিছু
সমস্যা ফেইস করতেছি।একটু সলভ
করে দিবেন।
-হ্যাঁ।দিব তো।এসো একদিন বাসায়।
দেখিয়ে দেব।হাহাহা......।
-আপনাকে না আজ সুন্দর লাগছে ভাইয়া।
নির্ঝর মাথা নিচু
করে তর্জনী দিয়ে চশমা ঠেলায় বিরতি আনল।
কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না সে।সম্ভবত
কানের স্নায়ুগুলো ভুল তথ্য
পাঠাচ্ছে মস্তিষ্ককে।
-ইয়ে মানে,ধন্যবাদ।
-হিহিহি...।
-তোমাকে না একটা কথা বলার ছিল।
-জি বলেন।
-ইয়ে মানে...।
-ঘামছেন কেন?সিরিয়াস বিষয়?কিছু
না ভেবে বলে ফেলুন।
-ইয়ে মানে।
আমি না তোমাকে ভালোবাসি.........অঙ্ক
করাতে আরকি।
-হিহিহি...।
ধরফর করে নেমে আসল বাসায়।আজ
কি সর্বনাশটাই না হতে চলেছিল।যদি মুখ
ফসকে বলে ফেলত
কথাটা,তাহলে কি কেলেঙ্কারিটাই না হত।
হঠাৎ রাদের ফোন।বসন্তের কাক...।
-হ্যালো দোস্ত,বলছস?
-হুম।
-কি কি বললি?
-তার ম্যাট্রিক্সের সমস্যা।একদিন বাসায়
এসে দেখে নিয়ে যেতে বললাম।
-হারামি।পড়াশুনা ছাড়া কিছু বুঝস না?ভাবীর
লজিং মাস্টার হয়ে থাক সারাজীবন।
গাধা ফোন রাখ।
নির্ঝর একটা বই পড়া শুরু করেছে।আনিসুল
হকের লেখা 'বেকারত্বের দিনগুলিতে প্রেম'।
রাদের নির্দেশ,বেশি বেশি করে রোমান্টিক বই
পড়লে নাকি মানুষ হিসেবে রোমান্টিক
হওয়া যায়।তবে নির্ঝর লক্ষ্য
করেছে,যখনি সে বইটা পড়তে ধরে তখনি তার
ঘুম পায়।আজ সে ঠিক করেছে খুব কষ্ট
করে হলেও বইটা শেষ করবে।তারপর সে নির্ঝর
থেকে রোমান্টিক নির্ঝর হয়ে যাবে।তখন
তুবাকে সব বলে ফেলবে।
খুব মন দিয়েই বইটা পড়ছিল নির্ঝর।
-ভাইয়া,আসতে পারি।
বই থেকে মাথা না সরিয়েই
-কোথায় আসবে?
-ভাইয়া,আমি তুবা।আসব ঘরের ভিতর?
রীতিমত লাফ দিয়ে উঠল নির্ঝর।হন্তদন্ত
হয়ে বাম হাতের
তর্জনী দিয়ে চশমাটা ঠেলে দিয়েই
বিছানা থেকে উঠে পড়ল।
-হুম আসো।
মেয়েটা আজ অনেক সেজেগুজে এসেছে।আড়
চোখে লক্ষ্য করেছে নির্ঝর।পাশের বাসায়
আসতেই এত সাজুগুজু,না জানি দেশের
বাইরে গেলে কি করবে?নির্ঝর ভাবছে।
মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে তার ভালোই লাগে।
আবার লজ্জাও পায় একটু একটু।
একটা মেয়ে নিয়ে সারাক্ষণ ভাবে সে,যদি কেউ
জেনে ফেলে।ভাবনায় ছেদ পড়ল।
-ভাইয়া আপনার অঙ্ক দেখিয়ে দেওয়ার
কথা ছিল!
-ও হ্যাঁ।
-আচ্ছা ভাইয়া আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
-হুম।কর
-আপনি সবসময় মাথা নিচু করে থাকেন কেন?
আর বারবার চশমাটা উপরে ঠেলেন,আমার খুব
হাসি পায়।
-আসলে অভিকর্ষ,বুঝলে?অভিকর্ষের
প্রভাবে মাথাটা নিচু হয়ে থাকে।আমার
গ্রাভিটি একটু বেশি কিনা?
-ইস!আপনি এত ব্যাখ্যা করেন ক্যান,বলেন
তো?আজ বাণিজ্য মেলা।যাবেন আমার
সাথে?
-ইয়ে মানে।
-ইয়ে মানে কিছু না।আপনি যাচ্ছেন আমার
সাথে,ব্যাস।একটা
পাঞ্জাবী পড়ে তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিন।
গরু খোঁজার মত খুঁজে খুব
কষ্টে আলমারি থেকে একটা পাঞ্জাবী বের
করল নির্ঝর।সম্ভবত কোন স্বহৃদয়বান
ব্রিটিশ পাঞ্জাবীটা তার জন্য রেখে গিয়েছিল
জাদুঘরে।আজ
প্রয়োজনে কাজে লেগে যাচ্ছে সেটা।
বাড়ি থেকে বের হয়েই
রিকশা নিয়ে সমস্যা দেখা দিল।তুবার
ইচ্ছে,তারা একই রিকশায় যাবে।আর নির্ঝর
তো ভয়ে এখনি কাঁপাকাঁপি শুরু করে দিয়েছে।
কেউ দেখে ফেললে কি হবে?তাছাড়া একই
রিকশায় দুজন!এতো অসম্ভব।তুবা জোর
করেই নির্ঝরকে একই রিকশায় তুলল।
মেলায় দেখার মত কিছুই নেই।শুরুর
দিকে মেলা তেমন জমজমাট থাকে না।তবুও
ঘুরে ঘুরে দেখছে দুজন।মাঝে মাঝে পরিচিত
কারো সাথে দেখা হলেই নির্ঝর তুবার কাছ
থেকে দুইহাত দূরে সরে গিয়ে দাঁড়ায়।ব্যাপারট
া তুবার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং।
পিছন থেকে কে যেন 'এই বইখোর,এই বইখোর
বলে ডাকছে।'দুজনই পিছন ঘুরে তাকাল।
নির্ঝরের স্কুল লাইফের ফ্রেন্ড,অতসী।বই
খোর নামটা অতসীর দেয়া।আগে এই
নামে ডাকত নির্ঝরকে।আর নির্ঝর চুপ
করে থাকত।কোনদিন প্রতিবাদও করেনি এমন
একটা বিশ্রী নাম দেওয়ার জন্য।
-কিরে বইখোর,তুই মেয়েখোর হলি কবে?
-কি সব আজেবাজে কথা বলছিস?
-এখন আজাবাজে,না?পাশের মেয়েটা কে?
বোন তো নিশ্চয়ই নয়।গার্লফ্রেন্ড?
-আরে না না।কি সব বলিস?গার্ল-ফ্রেন্ড
হতে যাবে কেন?
-ওরে আমার বইখোর খোকা রে।কিছুই বুঝ
না তুমি,না?
'হ্যাঁ,আমি নির্ঝরের গার্লফ্রেন্ড।',
রাগীমুখে গড়গড় করে বলে ফেলল তুবা।
কথাটা শুনেই তুবার দিকে তাকাল নির্ঝর।
মেয়েটা রেগে গিয়েছে হঠাৎ করে।রাগার কারণ
বুঝতে পারছে না নির্ঝর।সে তার অধিকার
আদায় করে ফেলেছে,ব্যাপারটা কিছুটা এরকম।
হয়ত অতসী গার্ল-ফ্রেন্ড বলার
কারণে রেগে গেছে।যাকে তাকে এভাবে সবার
সামনে গার্লফ্রেন্ড বলা যায় নাকি?অতসীটার
বুদ্ধি যে কবে হবে?
রিকশায় দুজন পাশাপাশি।তুবা এখনও
রেগে আছে।রাগার
কারণটা এখনো অজানা নির্ঝরের কাছে।
-আচ্ছা তোমার বাবার
টাকটা কখনো দেখেছ?
-কেন?আপনার টাক নেই?
-না বলছিলাম যে,তোমার বাবার
টাকটা না অনেক বড়।আমি তো ভাবছি এখন
থেকে মানব পতাকা তৈরির জন্য জাতীয়
প্যারেড গ্রাউনড লাগবে না।তোমার বাবার
টাকটা হলেই চলবে।
-হিহিহি...।
মেয়েটার রাগটা একটু কমেছে।স্বস্তির নিশ্বাস
ছাড়ল নির্ঝর।তবে নিশ্বাস যেন
পুরোপুরি ছাড়া হল না।একটু আঁটকেই রইল
শ্বাসনালীতে।রাগার কারণটা এখনো অজানা।
-আচ্ছা ওই মেয়েটা কে?
-ও?ও তো অতসী।আমার ছোট বেলার বন্ধু।
-ও আপনাকে বইখোর বলছিল কেন?
-এমনিই বলে।ফান করেই বলে।
-আর আপনি ওকে কিছুই বলেন না!তাইতো?
যে কেউ আপনার সাথে ফান করবে,অন্য
নামে ডাকবে আর আপনি কিছুই বলবেন না!
-ইয়ে মানে।কি বলব?
-কি বলবেন মানে?রাগ হবেন।আর যেন
কোনদিন আপনাকে ওই নামে ডাকতে না শুনি।
শুধু আমি আপনাকে নিরু বলে ডাকব।
-নিরু!!!
-হ্যাঁ নিরু।তুমি আমার নিরু।নির্ঝরের ছোট্ট
একটা কিউট ডাকনাম,নিরু।
বাসায় পৌঁছতে পৌঁছতে সন্ধ্যা লেগে গেল।
নিরু নামটা মন্দ নয়।ভালোই নাম
দিয়েছে মেয়েটা।
রাত্রে আনিসুল হকের বইটা নিয়ে বসল
নির্ঝর।আজ শেষ করবে,যেভাবেই হোক।হঠাৎ
ফোন।নিশ্চয়ই বসন্তের কাকটা ফোন
দিয়েছে।না,আননোন নাম্বার।
-হ্যালো,নিরু
-কে?তুবা?
-হুম।একটু ছাদে আসবে?
-এত রাতে!
-একটু তারা গুনব তোমার সাথে।
-তারা তো ইনফিনিটি।গণা সম্ভব না।
-ধ্যাত!বোকা কথাকার।আসো না একটু।
-আসছি......।
আকাশে চাঁদ নেই।অসংখ্য তারা।ধ্রুব তারাও
আছে।সেই তারার কখনো স্থান পরিবর্তন হয়
না।তাই ধ্রুব।তারাদের মেলায় তার দামটা যেন
একটু বেশিই বেশি।চাঁদহীন আকাশটা আজ
নানা রঙ্গে রঞ্জিত।তারাদের
রঙ্গে নিজেকে সাজিয়েছে আকাশ।কোথাও
সাজের এতটুকু ত্রুটি নেই।এই সাজ বেশিক্ষণ
থাকবে না।ভোর হলেই চলে যাবে।তখন
আকাশ আবার আগের মত রুক্ষ হয়ে যাবে।
পৃথিবীকে শাসন করতে নেমে যাবে।আবার রাত
হলে শান্ত হয়ে যাবে।নানান
সাজে পৃথিবীকে মানাবে।
রেগে থাকা পৃথিবী আকাশের সাজ দেখেই
ভুলে যায় আকাশের কঠোরতা।
-তুবা,একটা কথা।
-বল
-ভালোবাসি তোমাকে।অনেক ভালোবাসি।
-বলতে এত সময় লাগালে যে?
-বলতে সাহস হয়নি।
-আজ হঠাৎ?
-ভালোবাসো আমায়?
-অনেক...।
-ইনফিনিটি?
-ধ্যাত,বোকা।হিহিহি।
©somewhere in net ltd.